Sunday, May 8, 2016

আদর্শবাদ এবং গণতান্ত্রিক প্রসেস

আজকাল কিছু হলেই সিপিএম এবং বামপন্থীরা গেরুয়া জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। আরে বাবা গেরুয়া জুজুটা কি?  তারা ফ্যাসিস্ট? দাঙ্গা বাধাবে? সাধারন জনগণের মুশকিল এই যে-যারা এই জুজুর ভয় দেখাচ্ছে তাদের আমলে লোকের গণতান্ত্রিক অধিকার কতটা সুরক্ষিত ছিল?  আর তাদের আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কম হলেও পার্টি দাঙ্গা কি কম হয়েছে? পরিসংখ্যান বলছে রাজনৈতিক দাঙ্গায় পশ্চিম বঙ্গে যত লোক মরেছে গত দুই দশকে, কাশ্মীরে তার থেকে অনেক কম লোক মরেছে জঙ্গীবাদের উত্থানে। যদি ধণপ্রানের গণিতিক হিসাবই  চরম মুল্যায়ন বলে ধরা হয়, সাম্প্রদায়িক এবং জঙ্গীদের থেকে অনেক বেশী ভয়াবহ এই রাজনৈতিক দাঙ্গা। 


যেদলগুলির উৎস কট্টর কোন আদর্শবাদি পজিশন (ভারতে যেমন বিজেপি বা সিপিএম) তারা গোটা পৃথিবীর গণতন্ত্রের ইতিহাসে কোনদিনই ভাল কিছু করতে সমর্থ হয় নি। ফেয়ার ইলেকশন হলে ক্ষমতার কাছাকাছিও থাকতে ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ সময়।  সেই অর্থে গণতন্ত্রের ইতিহাসে সিপিএমের ৩৪ বছর এবং গোটা ভারতে বিজেপির ক্লীন সুইপ খুব ব্যতিক্রান্ত ঘটনা।

   ইউরোপ এবং আমেরিকার গণতন্ত্রের ইতিহাসে কমিনিউস্ট এবং কট্টর জাতিয়তাবাদি দক্ষিনপন্থী দলগুলি কখনোই খুব ভাল পজিশনে ছিল না। ইদানিং ইসলামিক  জঙ্গীবাদের উত্থানে এবং অর্থনীতির বিপর্য্যয়ে তারা একটু হালে পানি পেয়েছে।

    গণতন্ত্রের ইতিহাসের সেই ইঙ্গিতে বরং মমতার মতন পেটি বুর্জোয়া দলগুলির ক্ষমতা দখলই স্বাভাবিক ঘটনা। সিপিএম বা বিজেপির শাসন আসলেই  উল্টোরথ। 

   এর কারন কি?

একটু চোখ খোলা রাখলেই পরিস্কার হবে বিজেপি এবং সিপিএমের তোলা ইস্যুগুলি তাদের বেসের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও সাধারন জনগণ মোটেও সেইসব নিয়ে উৎসাহিত নয়।  তাদের মূল লক্ষ্য রোটি রোজগার, রাস্তা, নিরাপত্তা। মমতা সাধারন জনগণের জন্য রুটি এবং রাস্তার ব্যপারে ভাল কাজ করেছেন। কিন্ত রোজগার এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থ। ফলে এবারের ভোটে মমতার ভাগ্য নির্ধারিত হবে সেই ভিত্তিতেই। আইন শৃঙ্খলার অবস্থা আরেকটু ভাল হলে এবং পশ্চিম বঙ্গে শিল্প এলে, মমতাকে ভাবতেই হত না সেকন্ড টার্মে জন্য। এসব সারদা, নারদ, ব্রিজ কেলেঙ্কারী-কোনটাই আটকাত না।

  যেসব সুশীলরা মমতারাজকে লুম্পেনরাজ, সিন্ডিকেটরাজ বলছেন তাদের সাথে একমত নই।  শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে স্কুলের পরীক্ষায় কম মার্কস বা ডাক্তারদের কমিশন খেয়ে রুগীকে ফতুর করার ধান্দা-এগুলোও কি সিন্ডিকেটবাজি না? শুধু বেকার ছেলেরা মাল মশলা সাপ্লাইএর সিন্ডিকেট খুললেই দোষ?  শিক্ষক, অফিসার, ডাক্তার কে নিজেদের ডোমেনে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে না?    সুশীল অধ্যাপকদের কাছে না পড়লে মাস্টার ডিগ্রিতেও মার্কস পায় না ছাত্র ছাত্রীরা। এসব সুশীল সিন্ডিকেটদের কথা লেখা হয় না কেন?    ঘুন যখন একটা গাছে ধরে তখন গোড়ায় ঘুন লাগবে, অথচ শাখা প্রশাখা ভাল থাকবে এমনটা হয় নাকি? সিন্ডিকেট পশ্চিম বঙ্গের সকল শাখা প্রশাখায়।


   যদি এবার মমতা হারেন ও, তার আশাহত হবার কারন দেখি না। হারলে তিনি হারবেন রোজগার এবং নিরাপত্তা জনিত ব্যর্থতায়। সেটা কংগ্রেস এবং সিপিএম এসে ভাল কি করতে পারবে, তাই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারন পশ্চিম বঙ্গের ইনফ্রাস্টকারচার এত বাজে এবং পিছিয়ে আছে, এখানে শিল্প আসাটা খুব কঠিন বর্তমানে।  সরকারি চাকরি দিতে গেলে সরকার দেওলিয়া হবে।  প্রচুর ধার করে সিপিএম আমলে কিছু কিছু চাকরি দেওয়া হচ্ছিল-কিন্ত সেটাও ত একটা আনসাসটেনেবল প্রসেস। সুতরাং যেখানে মমতা ব্যর্থ হয়েছেন, সেখানে জোট সফল হবে, এমনটা ভাবার কারন এখনো হয় নি। ফলে মমতা হারলেও, আবার ভাল ভাবেই ব্যাক করবেন।



 

No comments: