Sunday, May 29, 2011

মমতাতন্ত্র


সেদিন মাধ্যমিকের কৃতীছাত্রদের সাথে সবে কথা বলা শুরু করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য।

প্রথম দুটো বাক্যের পরে তৃতীয় বাক্য আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী...।।

কাল পূর্নেন্দু চ্যটার্জির সাথে বৈঠক শেষে পার্থ চ্যাটার্জি জানালেন, আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে জানাব!

অমিত মিত্র প্রতিদিনে মমতা ব্যনার্জিকে বানালেন মার্টিন লুথার কিং!

বাকী সব মন্ত্রীরাই দেখছি প্রমাণ করার আপ্রান চেষ্টা করছেন, তারা কতটা মমতাময়ী! কে কত বড় ভাই তা প্রমান করার ইঁদুর দৌড় দেখতে পাচ্ছি মমতার সমস্ত মন্ত্রীদের মধ্যে।

মমতা পশ্চিম বঙ্গের জন্যে জোর কদমে কাজ শুরু করছেন-দলতন্ত্র ভাঙছে-হাঁসপাতালে কিছুটা গতি আসছে- শিল্পপতিরা আসতে চাইছেন-ব্যাঙ্ক সরকারকে লোন দিয়ে চাইছে। খুব ভাল কথা। আমিও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে ১০ এ ১০ দিচ্ছি। কিন্ত তার মানে এই নয় দলতন্ত্রের বিবর্তিত রূপ হবে মমতাতন্ত্র! সেটা রাজ্যে একধরনের নতুন অগণতান্ত্রিক দিদিবাদি ফ্যাসিজম এর সূত্রপাত হিসাবেই গণ্য হবে।

মমতা ব্যানার্জির সাথে ইন্দিরা গান্ধীর দারুণ মিল। দুজনেরই রাজনৈতিক দর্শন হল "বেনিভোলেন্ট ডিক্টেটরশিপ" বা উপকারী স্বৈরাচার। অর্থাৎ সমস্যার সমাধানের জন্যে ইনারা মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রীকতাকে বিশ্বাস করেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন পশ্চিম বঙ্গের লোকজনকে অধিকার দিয়েছে-কিন্তু তা জনসেবা দিতে সম্পূর্ন ব্যর্থ। তাই সমস্ত সরকারী হাঁসপাতালে পরিকাঠামো বলে আর কিছু নেই।

এই নাই এর নৈরাজ্য এই রাজ্যে।

সেখান থেকে রাজ্যকে একবিংশ শতকে ফেরানোর জন্যে দুটোপথ খোলা-স্বৈরাচারী শাসন অথবা আমেরিকার মতন "সিস্টেম" কে প্রতিষ্ঠা করা। মমতা ইন্দিরার পথকেই বেছে নিলেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন ভারতে লোকেরা যতটা অধিকার সচেতন, তার সিকেভাগ দ্বায়িত্ব সচেতন না। বস্তুত তার এমার্জেন্সির মূল কারনটাই ছিল, একটা ভেঙে পড়া দেশকে সামাল দেওয়ার জন্যে সিস্টেমের ওপর নির্ভর না করে, স্বৈরতন্ত্রের পথে সমাধান খোঁজা। ইন্দিরা গান্ধী পরে নিজেই তার পদ্ধতির ভুল স্বীকার করেছেন।

মমতা রাজ্যের হাল এই স্বৈরাচারী শাসনের মাধ্যমেই ফেরাচ্ছেন-ভাল কথা। মুসোলিনী, হিটলার বা স্টালিনের আমলে ইটালী, জার্মানী এবং রাশিয়ার দুর্দান্ত উন্নতি হয়েছে-এগুলো সব সত্য। এবং হিটলার ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে কড়া হাতে শাসনযন্ত্রকে সচল করেছিলেন, তার জন্যে আকুন্ঠ সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছিলেন জার্মান নাগরিকদের কাছ থেকে, আজ মমতাও জনগণের কাছ থেকে সেই ভালোবাসা, সমর্থন পাচ্ছেন। মুসোলীনিও কম জনপ্রিয় ছিলেন না-স্টালিনের ভক্ত রাশিয়াতে আজও আছে। কারন এরা সুদক্ষ দেশপ্রেমী শাসক-কিন্ত এদের অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কি আমাদের কাম্য?

পশ্চিম বঙ্গে মমতার স্বৈরাচারী শাসনের ফলে পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিসেবার হাল আস্তে আস্তে ফিরবে-সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এবং আমরা দেখছি জনগণের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে রাজ্যের হাল ফেরানো পছন্দ করছেন। ১৯৩৩ সালের থার্ড রাইখ এবং 1922 সালে মুসোলিনীর ক্ষমতায় আসার পর বিদ্ধস্ত ইটালী এবং জার্মানীতে "স্বৈরাচারী" শাসনের প্রতি মানুষ আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। আজ পশ্চিম বঙ্গেও একই ঘটনা। তারা সত্যিই ভাল প্রশাসন উপহার দিয়েছিল, যা তাদের আগের সমাজতন্ত্রী পার্টিগুলি পারে নি। এর পরের করুণ ইতিহাস সবার জানা।

এবং দুটি ক্ষেত্রেই বামপন্থীরা ইটালি এবং জার্মানীতে গণতন্ত্র ফেরাতে ব্যার্থ হয়। মমতার বিরুদ্ধে এখন এই রাজ্যের প্রাত্তন সিপিএম একদম চুপ। ওদের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কোঠায়-কারন সিপিএম এই রাজ্যের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ভূতের মুখে রামনাম আর কবে বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে? পশ্চিম বঙ্গের আজকের ইতিহাসে সেই জার্মানী এবং ইটালীর ছায়া- বামপন্থী ব্যর্থতা-ফ্যাসিবাদের জনপ্রিয়তা এবং সেটা ঠেকাতে বামপন্থার আবার ব্যার্থতা। কারন তাদের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কিছু নীচে।

মনে রাখতে হবে দেশের এবং কোষাগারের হাল ফেরাতে ফ্যাসিজম জলদি ফল দেয় বটে কিন্ত তা দীর্ঘদিন টেকে না। হিটলার, স্টালিন, মুসোলিনি সবার পতন হয়েছে। কিন্ত আমেরিকান গণতন্ত্র এবং তার সিস্টেমের সাফল্যই গোটা পৃথিবী নিতে বাধ্য হয়েছে। এর মূল কারন, আমেরিকানরা উন্নত সিস্টেমে বিশ্বাস করে। ব্যাক্তিভজনা এখানে অচল। ওবামা যত ভুল করছে, এখানকার মিডিয়া তাকে একদম ছিন্নপত্র বানিয়ে দিয়েছে। মমতার ক্ষেত্রে পুরো উলটো-পশ্চিম বঙ্গের সব মিডিয়া এখন তার সাথে। কোন নিউজ পেপার বা মিডিয়াতে তার সমালোচনা নেই।

এই ধরনের সিস্টেম দীর্ঘদিন ভাল থাকতে পারে না, যেখানে চেক এন্ড ব্যালান্স নেই।

No comments: