Sunday, December 18, 2011

অযৌত্বিকতার সন্ধানে

(১)
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে সর্বত্র ইস্যুভিত্তিক, আদর্শভিত্তিক বিতর্ক। ভিন্নমতের উৎসকি-এই প্রশ্নটা যেকোন তর্ককারীকে প্রশ্ন করলে, স্বভাবসিদ্ধ উত্তর আসবে অন্যপক্ষের অজ্ঞতা। মার্ক্সবাদী হলে বলবে শ্রেণী অবস্থান-অর্থাৎ আমরা সমাজের সে ক্লাসে অবস্থান করি- সেই ক্ষুদ্র কোনের দৃষ্টিতে দেখা অভিজ্ঞানই মতপার্থক্যের কারণ। অন্যদিকে ধার্মিকরা প্রত্যেকেই পরিবার এবং সমাজ থেকে যা শিক্ষা এবং নৈতিকতার আচরন পায়, সেই খুঁটি ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। আমরা যুক্তিবাদিরা তাদের যুক্তিহীন প্রথানির্ভর আচরনের জন্যে "নিম্নমানের" বা নীচুবুদ্ধির মানুষ বলে মনে করি।

কিন্ত ভিন্নমতের উৎস কি তাই? অন্যপক্ষের অজ্ঞতা? আমরা কি কখনো গভীরে গিয়ে ব্যপারটা নিয়ে ভেবেছি?

(২)
সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত যে কোন সিদ্ধান্তই আমরা নিই না কেন-সেটা ঠিক না বেঠিক আমরা কি করে বুঝবো? একটু গভীরে গিয়ে ভাবলে দেখা যাবে, এই ঠিক বা বেঠিক ব্যপারটা পরম কিছু না। সবটাই স্থান-কাল-এবং তার পরেও জীবনের উদ্দেশ্য নির্ভর।

উদাহরণ দিচ্ছি। ধরা যাক -আমাদের একটা উদ্দেশ্য "সৎ থাকা" ।
এখান থেকেই শুরু করি-কারন এই উদ্দেশ্য নিয়ে দ্বিমত থাকা সম্ভব না। এবার ধরা যাক দাঙ্গার সময় অন্য ধর্মের কেও আপনার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। দাঙ্গাকারীরা -যারা আপনার ধর্মের লোক-আপনার বাড়িতে এলে কি আপনি তাদের সত্যি কথা বলবেন? সৎ কথা বলতে গিয়ে তাদের ধরিয়ে দেবেন খুনিদের কাছে? ৯৯% ক্ষেত্রেই, দেখা যাবে, আপনি সততার থেকে "প্রাণ" বাঁচানোর "উদ্দেশ্য" কে ওপরে রেখেছেন।

অর্থাৎ যেকোন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেই অনেকগুলো উদ্দেশ্যের "সংঘাত" থাকে। আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি। ভারতে মাওবাদিদের বা নক্সালদের কার্যকলাপ। "খতম" লাইন ঠিক কি না-তাই নিয়ে ভারতের কমিনিউস্টদের মধ্যেই আছে দীর্ঘ বিতর্ক। এবং তার মূলে গেলে দেখা যাবে-সেই স্থান-কাল পাত্র। অর্থাৎ বিহার, ঝারখন্ড বা ঐ ধরনের আদিবাসিদের গ্রামে লোকেরা যে অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে বাঁচে, তাতে হাতে বন্দুক নিয়ে খতম লাইনে যাওয়াটাকে অনেকেই যৌত্বিক বলে মনে করে। অন্য স্থানে এবং কালে অবস্থান করা কোলকাতার সৌখিন বামবাবুরা তাদের যুক্তিকে "ভুল" বলে প্রমাণ করবে কি করে? এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখায় যে মাওবাদিদের হাতে মারা গেছে সেই সর্বহারা শ্রেণীর লোকজন। আর তোলা দিয়ে টিকে আছে ঠিকাদাররা। তাহলে কমিনিউজমের কি হইল?

আসলে স্টালিন থেকে অধুনা "শহিদ" কিশেনজির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে-আদর্শের থেকেও "বেঁচে" থাকার চেষ্টাটাই সিদ্ধান্তকে সব থেকে বেশী প্রভাবিত করে। এই বেঁচে থাকা গোষ্টিগত ভাবে বা ব্যক্তিগত ভাবে হতে পারে। একজন সেনা নিজের প্রাণ দেয়, দেশের লোককে বাঁচাতে। এতে নতুন কিছু নেই। প্রতিটা প্রজাতিই এই ভাবে বাঁচার চেষ্টা করে। ভারতের মাওবাদিদের কমিনিউস্ট ভাবলে ভুল হবে -এদের অধিকাংশই অত্যাচারিত আদিবাসী। হাতে বন্দুক পেয়ে, একটু ভাল ভাবে বাঁচার চেষ্টা করছে।

(৩)
তাহলে জীবনের সব উদ্দেশ্যই কি "জৈবিক" যুক্তিবাদে সিদ্ধ?

আজকাল অনেকেই "চাইল্ডলেস বা চয়েস" থাকছে। এর পেছনে কি কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে? অনেকেই ভাবতে পারেন, পৃথিবীতে এত লোক-এই ট্রেন্ড ও সেই "গোষ্টিগত" ভাবে বাঁচার প্রয়াস। রসদ বাঁচিয়ে। সমস্যা হচ্ছে এই প্রবণতা বেশী ইউরোপের উন্নতদেশগুলিতে-যেখানে জনসংখ্যা দ্রুত হারে কমছে-কিন্ত তাদের লোক দরকার!

তাহলেত চাইল্ডলেস বাই চয়েস রাষ্ট্র বা জৈবিক- কোন যুক্তিবাদেই সিদ্ধ না। তবে চাইল্ড লেস বাই চয়েসের পুরুষ মহিলারা ভুল? তাদের অধিকার নেই নিজের পছন্দের ওপর?

অথবা ধরুন আত্মহত্যার অধিকার। কিছু কিছু দেশ দিয়েছে, অধিকাংশ দেশ দিচ্ছে না। আমারা জীবন শেষ করার অধিকার আমার নেই! এটাই অধিকাংশ রাষ্ট্রের আইন। এর পেছনে যুক্তি এই যে "প্রাণ" এত মহার্হ্য যে প্রাণটা যার, তারো অধিকার নেই সেই প্রাণ নেওয়ার। অর্থাৎ "প্রাণের" মূল্যই অন্তিম " উদ্দেশ্য" হিসাবে ধরা হচ্ছে। মাওবাদিদের খতম লাইনের বিরুদ্ধেও সেই "প্রাণের" দামের যুক্তিটাই সবার আগে আসে।

কিন্ত এটা কি ধরনের যুক্তিবাদ? সব প্রাণই ত মরণশীল-ক্ষণস্থায়ী। সেই ক্ষণস্থায়ী, মরণশীল প্রাণকে আমরা এত মুল্যবান হিসাবে দেখি কেন?

ইতিহাসই বোধ হয় কারন। প্রানকে " ক্ষণস্থায়ী মরণশীল" আলোকে দেখতে গিয়ে স্টালিন-হিটলার যা করেছেন, সেটাই যথেষ্ট বোঝার জন্যে প্রাণ কেন মুল্যবান। কিন্ত তাই যদি হয় তাহলে চাইল্ড লেস বাই চয়েস বা আত্মহত্যার অধিকার কিভাবে সিদ্ধ হয়?

(৪) এই সমস্যাগুলোর মূল এই যে জীবনের আসলেই কোন পরম উদ্দেশ্য নেই। থাকতে পারে না। কারন প্রতিটা জন্মই ক্ষনস্থায়ী। সবকিছুর মৃত্যু অবধারিত। নক্ষত্র, পৃথিবী মানুষ-সবকিছুই একদিন শেষ হবে।

মুশকিল হচ্ছে এইভাবে ভাবতে গেলে, বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় ভাল কিছু করার ইচ্ছাও। থাকে না নৈতিকতার ভিত্তি।

ফলে দেখা যাবে সব ধর্মীয় দর্শনে নানান রকমের রূপকথা সৃষ্টী করে মানুষকে "আশ্বস্ত" করা হয়েছে, নশ্বর জন্ম ক্ষনস্থায়ি বটে-কিন্ত স্বর্গের জীবন চিরস্থায়ী। বৌদ্ধ ধর্মের পুনঃজন্মবাদও ঠিক একই কারনে। যদি কেও জানে এটাই একমাত্র জীবন এবং পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু থাকতে পারে না-কোন ধর্মীয় দর্শনের ভিতই দাঁড়াবে না। নৈতিকতার ভিত ও থাকবে না। ফলে পরজন্ম বা স্বর্গের অনন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্মগুলো মানুষকে তার জীবনে উদ্দেশ্য নিয়ে আশ্বস্ত করায়। স্বর্গ বা পরজন্ম যতই অযৌত্বিক গাঁজাখুরি হোক না কেন-নৈতিকতা ভিত্তিক সামাজিক বিন্যাসের বিবর্তনে এদের গুরুত্ব আছে। কারন জীবনে উদ্দেশ্য না থাকলে নৈতিকতার কোন দর্শনই টেকে না। আর জীবনের পরম উদ্দেশ্যের যেহেতু কোন যুক্তিবাদি বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই-সেহেতু জীবনের সব উদ্দেশ্যই আপাত, ক্ষণস্থায়ী এবং কিছুটা অযৌত্বিকও বটে। সামাজিক বিবর্তনে ধর্মের আগমন মূলত এই পথেই। কারন পশুকুলে "জীবনের উদ্দেশ্য" জৈবিক-তাদের এত ভাবতে হয় না। কিন্ত মানব সমাজের প্রতিষ্ঠাতে শুধু জৈবিক উদ্দেশ্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে ঈশ্বর, স্বর্গ, অনন্ত জীবনের ধারনাগুলি "নির্বাচিত" হয়-কারন তা নীতিভিত্তিক সমাজের ভিত্তিপ্রস্তর ছিল এক সময়।

১০০% যৌত্বিক জীবন বলে তাই কিছু সম্ভব না। আমদের প্রত্যেকেরই জীবনের উদ্দেশ্য আছে যার কিছুটা জৈবিক [ জিনের সূত্রে পাওয়া] কিছুটা সামাজিক ( যা ধর্ম , পরিবার বা সামাজিক আইন থেকে এসেছে) এবং বেশ কিছুটা নিজেদের স্বতন্ত্র চিন্তা। আবার আমাদের জীবনকালের মধ্যেই এই উদ্দেশ্যের বিবর্তন হয়। যৌবনে যে কমিনিউস্ট গেরিলা হওয়ার স্বপ্ন দেখে, পৌঢ়কালে সে মহানন্দে বণিক হিসাবে অর্থ সংগ্রহে ব্যস্থ। জীবনে ধাক্কা পেয়ে আস্তিক থেকে নাস্তিক, নাস্তিক থেকে আস্তিক হয় লোকে। সবার মনেই কিছু দ্বন্দ থাকে। যার মনে যত বেশী চিন্তার দ্বন্দ থাকবে, সে তত দ্রুত বেশী আরো গভীর উপলদ্ধি্র জগতে প্রবেশ করতে সমর্থ হবে। কারন মনে দ্বন্দ না থাকলে নতুন চিন্তার সংশ্লেষ অসম্ভব।

এই সমস্যাটি ও নতুন কিছু না ভারতীয় দর্শনে। অদ্বৈতবাদিরা "মায়ার" ধারনা - জগৎ মিথ্যা, ব্রহ্ম সত্য-অথবা এই বর্তমান জগত আসলেই "আপাত সত্য" -এই ধারনা বহুদিন থেকেই বহন করত। সমস্যা হচ্ছে, ভারতের ইতিহাসের ওপর মায়াবাদের প্রভাব ঋণাত্মক। নিউটন, কোপার্নিকাসদের জন্ম নালন্দাতে না হয়ে, হয়েছে ইউরোপে। কারন, সব দর্শনের এবং ধারনার ধাত্রীভূমি হচ্ছে মানুষ। সুতরাং মানুষের বস্তুবাদি "সারভাইভালের" উন্নতি না করে,কোন দর্শন বা ধারনাই টিকতে পারে না। সুতরাং আমরা চাই বা না চাই- একটা "অযৌত্বিক" বিশ্বাস নিয়ে আমাদের চলতেই হবে। আর সেটা হচ্ছে সবার ওপর মানুষ সত্য। এর কষ্টিপাথরেই বিচার করতে হবে সমস্ত ধর্ম, আদর্শ এবং দর্শনকে।

Thursday, November 3, 2011

গ্রীসের সংকট -সমাজমুখী অর্থনীতির অবসান?

(১)
ছমাস আগের ঘটনা। মেরিল লিঞ্চের এক উচ্চপদস্ত কর্তার বক্তব্য শুনতে এসেছিলাম ক্যাপিটাল আই আই টির একটা পার্টিতে। বিষয় সরকারি বন্ডে ইনভেস্টমেন্ট। কেন করবেন?
উনি বার বার করে বোঝাছিলেন কেন মিউনিসিপ্যাল বন্ডে ইনভেস্ট করা উচিত। আমি একবার থাকতে না পেরে বল্লাম-সেটা কি করে ঠিক হবে? ক্যালিফোর্নিয়াতে অনেক মিউনিসিপালিটি দেওলিয়া ঘোষনা করেছে! আর আপনি বলছেন সেখানে ইনভেস্ট করতে?
ভদ্রলোক বললেন, তেমন আর হবে না। প্রতিটা মিউনিসিপালিটি তাদের খরচ সংস্কার করছে, আয় বুঝে ব্যায় করবে।
আমি বললাম, আপনাদের কথা তারা মানবে কেন?
উনি বললেন, না মেনে ওদের উপায় কি? না মানলে ওরা মিউনিসিপালিটি চালাতেই পারবে না। স্কুল, হাসপাতাল সব বন্ধ হবে।
গ্রীসকে নিয়ে গত দুমাসে যে নাটক হল এবং আজকে যেভাবে প্যাপান্দ্রিও লেজগুটিয়ে রেফা্রএন্ডামের বদলে, লোন প্যাকেজ মেনে নিতে বাধ্য হলেন, তাতে বুঝলাম, মেরিল লিঞ্চের ওই ভদ্রলোক ঠিকই বলেছিলেন।
(২)
যেদিন প্যাপান্ডিও রেফারেন্ডামের ঘোষনা করলেন, সেদিন স্যোশাল মিডিয়াতে তথা কথিত কিছু বামপন্থী লাফাচ্ছিল এবার ধনতন্ত্রের কবল থেকে বেড়িয়ে গ্রীসের লোকেরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেবে। আমি অবশ্য জানতাম সেটা হবে না-আসলে প্যাপান্ডিও ক্ষমতায় এসেছিলেন এই সব বামেদের লেজ নাড়িয়ে। তারপর দেখেছেন, গ্রীসের হাঁড়ির হাল এত খারাপ, ধার না করলে, সেনা বাহিনীর বেতন পর্যন্ত হবে না। আন্দোলন করে, চলছে না চলবে না বলে ত আর কর্মীদের মাইনে দেওয়া যাবে না। যাইহোক, শেষে চাপ খেয়ে, তাকেও ব্যায় সংকোচ, অর্থাৎ সামাজিক খাতের নানান ব্যায় হ্রাস করতেই হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে ইনি আবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, ব্যায় সংকোচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। ফলে নিজেদের দলের চাপে একটু সমাজতান্ত্রিক বীরত্ব দেখাতে গিয়েছিলেন রেফারেন্ডামের মাধ্যমে। কিন্ত বিধি বাম। তাতে গ্রীসের ঘরে ঘরে চুল্লী বন্ধ হত। সারকোজি সহ ইউরোপিয়ান নেতারা গ্রীসকে খরচের খাতায় ফেলে দিতেই, প্যাপান্ডি আবার ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে, সব বাতিল করে, ডিল মেনে নিলেন। কারন উনি যে পথে চলছিলেন, তাদের গ্রীসের ধ্বংশ ছিল অনিবার্য্য-সেনা বিদ্রোহের ও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তার থেকে খরচ কাট ভাল।
(৩)
হিসাবটা খুব সহজ। পৃথিবীতে কোন সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক সিস্টেম টেকে নি- টিকতে পারবেও না। কারন এরা যে সিস্টেমটা চাচ্ছে, তাতে উৎপাদন ব্যবস্থার নিম্নগামী হতে বাধ্য। ইউরোপে একটা লোককে কাজে নেওয়া এবং কাজ না পারলে, ছাড়ানো বেশ কঠিন কাজ। তারপরে এত বেশী বেকার ভাতা, পেনসন স্কীম চালু আছে -একজন লোক কাজ করলেও যা পায়, কাজ না করলেও তাই পাবে। কাজ করলে, তার ৫০-৬০% উপায় ট্যাক্সে যায় তাদের খাওয়াতে যারা কাজ করে না। এমন অবাস্তব সিস্টেম বেশীদিন চলতে পারে না। কিন্ত চলছিল ধার নিয়ে। গ্রীচের জিডীপি ২২০ বিলিয়ান ডলার-আর ধার ৩৩০ বিলিয়ান ডলারের কাছাকাছি। এখন যেই আর কেও ধার দেবে না, এই সিস্টেমের কঙ্কালটা ইটালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স সবার মধ্যে থেকে বেড়িয়ে আসছে। বৃটিশরা ২০০৮ সালেই ব্যায় সংকোচ করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। নইলে বৃটেন সবার আগে টসকাতো।
(৪)
সমস্যা হচ্ছে পৃথিবীটা হয় অতিবাম বা অতিডানে ঘুরছে। যার কোনটাই এই সব সমস্যার সমা্ধান না। পাবলিক হেলথ, শিক্ষা-এসবের দ্বায়িত্ব সরকারকে নিতেই হবে। হ্যা-টাকাটা যাতে ঠিক ঠাক খরচ হয়, তার জন্যে কমিনিউনিটি বা পাবলিক প্রাইভেট ভেঞ্ছার করা যেতে পারে। কিন্ত পেনশন, বৃদ্ধদের সম্পূর্ন চিকিৎসার খরচ একটা জাতিকে পঙ্গু করতে বাধ্য। শিশুদের চিকিৎসা বা শিক্ষার যেখানে টাকা নেই, সেখানে বৃদ্ধদের পেছনে বেশী খরচ করা একটি জাতির জন্যে আত্মহত্যা। আমেরিকাতে একজন বৃদ্ধর পেছনে সরকারের খরচ, একজন শিশুর পেছনের খরচের প্রায় ১৪ গুন। ইউরো্পেও প্রায় তাই। আর বৃদ্ধদের ভাল রাখতে গিয়ে, একেকজন শিশুর ওপর চাপছে বিদেশী ঋণের বোঝা। এখন একজন লোক চাকরি করে ৩০ বছর-আর তাকে পেনসন দিতে হবে ৪০ বছর! এই সিস্টে্ম প্রকৃতির নিয়মেই টিকতে পারে না। অবসরের বয়স ৭০ হোক বা সরকার পেনসনের স্থলে ৪০১(ক) এর মতন স্কীম চালু করুক। অবাস্তব মানবিক সিস্টেম ( যা বামেরা বলে) বা চূড়ান্ত বাস্তববাদের নামে বাজারের অত্যাচার কোনটাই আমাদের কাম্য না। সমাধান পেতে গেলে আমাদের বাস্তববাদি হতে হবে।

Thursday, October 20, 2011

গদ্দাফির মৃত্যুঃ স্বৈরাচারের পতন পৃথিবী জুরে আসন্ন


(১)

গদ্দাফির লিবিয়া-হিরক রাজার দেশে

যেদিন লিবিয়াতে গণবিদ্রোহ শুরু হল, 15 ই ফেব্রুয়ারী। সবে টিউনিশিয়া এবং মিশরে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রায় সেই দিনই লিখতে যাচ্ছিলাম, এবার আরব বসন্ত লিবিয়াতে। সাদ্দাম হুসেনের পর মধ্যপ্রাচ্য বা উত্তর আফ্রিকার আরেকটা সব থেকে বড় নর-জানোয়ারের পতন আসন্ন।

তবে পতন এত সহজে আসল না। গদ্দাফি এবং তার পরিবার গত চল্লিশ বছরে লিবিয়ার সম্পদ এবং বাণিজ্য কব্জা করে বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। শুধু তাই না, লিবিয়ার লোকজন বিদ্রোহ করতে পারে এই আশঙ্কাতে তার পরিবার আফ্রিকান, পাকিস্তানী বাংলাদেশীদের নিয়ে এক বিরাট প্রাইভেট আর্মিও পুষত। ফলত ফেব্রুয়ারী মাসে লিবিয়ান সেনা বাহিনী যখন বিদ্রোহীদের ওপর গুলি চালাতে অসম্মত হয়, তখন এই সব ভারাটে সৈন্য দিয়েই নিজের দেশের লোক মেরেছে গদ্দাফি। ফলে গৃহযুদ্ধ ছিল আসন্ন, এবং সেই যুদ্ধে ন্যাটো যখন বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়ায় তখন গদ্দাফির পতন ছিল সময়ের অপেক্ষা। তৈল সমৃদ্ধ একটা দেশ-যাদের জিডিপি বেশ বেশী-কিন্ত সেখানে চিকিৎসা, শিক্ষা, কৃষি প্রায় সব ধ্বংস হয়েছে গদ্দাফি শাসনে।

যদিও অনেকেই সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে দেখাবে উত্তর আফ্রিকাতে শিক্ষা এবং জিডিপিতে লিবিয়া এগিয়ে, কিন্ত এটা ভুললে চলবে না, উত্তর আফ্রিকাতে মাথাপিছু তেলের সম্পদ লিবিয়াতেই সব থেকে বেশী। সুতরাং তেলের টাকার সদ্বাব্যবহার করলে, লিবিয়ার অবস্থা হওয়া উচিত ইউরোপের দেশগুলির সমগোত্র।

গদ্দাফি বিরোধিতা ছিল আইনত নিশিদ্ধ এবং মৃত্যুদন্ড ছিল তার সাজা!

হ্যা লিবিয়া ছিল সেই হিরক রাজার দেশ-যেখানে ইংরেজি এবং ফ্রেঞ্চ পড়ানো হত না সরকারি স্কুলে। বিদেশীদের সাথে কথা বলার জন্যে প্রশাসনের অনুমতি লাগত। সরকারি টিভি এবং নিউজপেপার ছারা অন্য কিছুর অনুমতি ছিল না লিবিয়াতে।
তবে গদ্দাফি একটা ছোট্ট ভুল করেছিলেন। স্যোশাল মিডিয়ার যুগে মেইন স্ট্রিমে সেন্সর করে কিছু হয় না। ফেসবুক, টুইটারের মাধ্যমে লিবিয়ানরা অনেকদিন থেকেই সংঘবদ্ধ হচ্ছিলেন।

গদ্দাফির হাতে অনেক সময় ছিল তৈল সম্পদ ব্যবহার করে লিবিয়ার ২০% বেকারত্বকে কমানো। চিকিৎসা, শিক্ষা কৃষির উন্নতি করা।

কিছুটা বুঝেছিলেন গদ্দাফি-উন্নয়নের কিছু কাজ শুরু করেছিলেন। বন্ধুবর সাদ্দাম হুসেনের মৃত্যুর পর, ওর মাথায় ঢুকেছিল, আমেরিকা আর বৃটেনকে হাতে রাখতেই পারলেই, মারে কে! ফলে আমেরিকাকে প্রায় আড়াই বিলিয়ান ডলারের ঘুঁষ আর বৃটেনকে দেড় বিলিয়ান ডলার খাইয়ে, আমেরিকা এবং বৃটেনকে হাত করে ফেলেছিলেন গদ্দাফি। আমেরিকা তার ওপর থেকে সন্ত্রাসবাদি তকমা তুলে নিয়েছিল। বৃটেন ও তাই। চিরকাল আমেরিকা বিরোধিতা করার পরে, যখন দেখলেন আর উপায় নেই, ঠিক টাকা দিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে মাখো মাখো একটা সম্পর্ক তৈরী করে ফেলেছিলেন গদ্দাফি।

কিন্ত বিধি বাম! আরব বসন্তের জোয়ারে আমেরিকাও বাধ্য হল তার বিরুদ্ধে যেতে। বিশেষত প্যান এম বম্বিং এ যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাদের পরিবার ওবামা প্রশাসনের ওপর নিরন্তর চাপ রেখেছিল গদ্দাফিকে হটানোর জন্যে। নইলে গদ্দাফি বাম হাতে আমেরিকাকে আরো পাঁচ বিলিয়ান ডলার দিতে রাজি ছিলেন ন্যাটোকে তুলে নেওয়ার জন্যে!

(২)
বিশ্বের সফলতম এবং বৃহত্তম গিরগিটীর জীবনী

গদ্দাফি চরিত্র নিয়ে লিখতে বসলে দস্তভয়েস্কিও হাত তুলে দিতেন। আমি অনেকদিন ধরেই ওর জীবনী পড়ছিলাম। সত্যিই এই চরিত্র বিশ্বইতিহাসে ইউনিক।

এই লোকটা একাধারে চূড়ান্ত রকমের ইসলামিক মৌলবাদি যে প্রকাশ্যে সর্বত্র বলে বেড়াত ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম এবং খ্রীষ্ঠান ধর্ম "ডাইল্যুটেড" -অন্যদিকে যখন ইসলামি মৌলবাদিরা আশির দশকে
তাকে হত্যার চেষ্টা শুরু করে-তখন থেকে পালটি খেয়ে এই লোকটাই হয়ে গেল ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ বিরোধি। তার আগে পর্যন্ত সে নিজে ছিল ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের সব থেকে বড় টাকা জোগানদার!

আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থা সিয়ার সাথে তার সম্পর্ক অদ্ভুত। সিয়া এত সাহায্য আর কারুর কাছ থেকে পায় নি! তাই আজ যখন কিছু কিছু বাম বাঙালী তাকে আমেরিকান সম্রাজ্যবাদ বিরোধি এক চরিত্র বলে হিরো বানানোর চেষ্টা করছে-তাদের দুটো তথ্য জানা উচিতঃ

এক -১৯৮০ থেকে প্যান এম বোম্বিং- সিয়া আফ্রিকা এবং ইউরোপের প্রচুর রাষ্ট্রনেতা এবং জার্নালিস্টদের হত্যা করেছে গদ্দাফির ঘাতক বাহিনী কাজে লাগিয়ে। গদ্দাফির অন্যতম বড় সমর্থক ছিল আমেরিকা। দীর্ঘদিন।
কেন গদ্দাফি-আমেরিকার সম্পর্ক ভেঙে শত্রুতা শুরু হল-সেটা লম্বা কাহিনী।

দুই-১৯৮৪ সালে তাকে খুন করার জন্যে বৃটিশ ইন্টালিজেন্সের ছক ও ভেস্তে দেয় সিয়া! কারন? কারন লিবিয়ার টাকা খাটত অনেক কমিনিউস্ট "বিপ্লবী" পার্টিতে। ব্রাজিল থেকে অস্ট্রেলিয়া-অনেক জায়গাতে কমিনিউস্ট আন্দোলনে টাকা ঢালতেন গদ্দাফি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এগুলো গদ্দাফি করত সিয়ার নির্দেশে। কারন ওইসব পার্টিগুলিতে লিবিয়ান ইন্টালিজেন্সির মাথাগুলি ঢুকে যেত। আর খবর পাচার হয়ে যেত সিয়ার কাছে।

যাইহোক, রঙ বদলাতে এমন ওস্তাদ সার্কাসের খেলোয়ার বিশ্বে আর আসে নি।
গদ্দাফি শুরু করছিল প্যান আরব স্যোশালিজম প্রতিষ্ঠার জন্যে। সে খেলা জমলো না-আরব নেশন তৈরী হল না। তখন সে শুরু করল, প্যান আফ্রিকান জাতিয়তাবাদ। সেখানে অবশ্য গদ্দাফির কিছু সাফল্য আছে।

আরো মজার ব্যাপার হল, চাদ আক্রমন করে লিবিয়া যখন খুব একটা সুবিধা করতে পারল না-রাতারাতি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে গদ্দাফি তাদের ত্রাতা হিসাবে আবির্ভুত হয়েছিলেন। তাদের জন্য ঘরবারি বানানো থেকে অনেক কিছুই দিতে চেয়েছিলেন যাতে তার প্যান আফ্রিকান নেতার ইমেজে চোট না লাগে।

১৯৭০-১৯৮০, এক নাগাড়ে তিনি টাকা দিয়েছেন বিশ্বের অনেক মুসলিম সন্ত্রাসবাদি সংস্থাকে। আবার যখন নিজের দেশের ইসলামিক মৌলবাদিরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, হঠাৎ করে পাশ্চাত্যের কাছে নিজের ইমেজ বানালেন ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে।

মোদ্দা কথা রং বদল করার ব্যপারে গদ্দাফি ছিলেন অদ্বিতীয়। ফলে যে আমেরিকা তার প্রাসাদ বম্বিং করেছিল এবং লিবিয়ার ওপর নিশেধাজ্ঞা আনে-শেষে বিরাট টাকার বিনিময়ে, তাদের সাথেই ঘনিষ্ট হবার চেষ্টা করেছেন। আবার একদম শেষের দিকে যখন তার মনে হয়েছে গণতন্ত্রকে বেশীদিন টুটি চিপে রাখা যাবে না-তখন ২০০৯ সালে তিনি ঘোষণা দেন কিছু কিছু মন্ত্রীর জন্যে নির্বাচন হবে! যদিও তা কোনদিনই হয় নি।
মোটামুটি হাওয়া মোরগ ছিলেন গদ্দাফি-ঠিক ঠাক সময়ে রং বদলাতে তার জুরি মেলা ভার।

গদ্দাফি এবং তার পরিবারের নিষ্ঠুরতা বা লালসা নিয়ে শব্দ খরচ করে লাভ নেই। তবে গিরগিটির শেষ রং টা নিয়ে না লিখে পারছি না।

গদ্দাফির দেশে অবৈধ সঙ্গমের শাস্তি হচ্ছে শরিয়া আইন অনুযায়ী ৫ বছরের জেল আর বেত্রাঘাত। আর এই গদ্দাফিই বিদেশে ভ্রুমন কালে বিদেশীনী সাংবাদিকদের সাথে শোয়ার ব্যপারটা রুটিন করে ফেলেছিলেন। তার ফর্মুলা ছিল সিম্পল-যদি আমার ইন্টারভিউ চাও, আমার সাথে শুতে হবে! শরিয়া আইন অবশ্যই তার জন্যে চলবে না। কারন এই সব সাংবাদিকদের সাথে শোয়ার ব্যপারটা তার কাছে এক সময় এমন প্রেস্টিজের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়, বিদেশ সফর শেষে ফিরে এসে উনি গুনতেন এবার কজন হল এবং সেটা নিয়ে তার তাবুতে টোস্টিং ও হত!

যাইহোক হুগো শ্যাভেজ এবং ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন গদ্দাফির সমর্থক! কারন গদ্দাফি আমেরিকার বিরুদ্ধে এক সময় সন্ত্রাসের চেষ্টা করেছে। বেশ এক দশক আমেরিকা বিরোধিতা চালিয়েছিলেন গদ্দাফি এবং সাদ্দাম হুসেনের উৎখাতে পর বুঝেছিলেন আমেরিকা বিরোধিতা মানে নিজের কবর খোঁজা। সেই মত টাকা ঢেলে পালটিও খেয়েছেন ঠিক সময়ে। গুগো শ্যাভেজ বা ফিদেলের পিঠ চাপড়ানোতে পিঠ বাঁচবেনা-এটা বুঝতেন গদ্দাফি।

অধিকাংশ বাম বাঙালী এবং ইসলামিস্ট ন্যাটোর বিরুদ্ধে গদ্দাফির সমর্থক ছিল। ইসলামিস্টদের ব্যপারটা
বোধগম্য। তবে বামেদের সমর্থনটা আরেকটা বামপন্থী অগভীরতার ফল। গদ্দাফি লোকটা কে, সেটা জানার কোন চেষ্টাই তারা করে নি।


Saturday, October 15, 2011

ইসলাম এবং একটি কচলানো লেবুর গল্প

(১)

আমার এই প্রবন্ধটি মুক্তমনার পাঠক এবং যুক্তিবাদি গুরুভাইদের জন্যে। তাদের জন্যে একদম এক্সক্লুসিভ রচনা।

আজকাল নানান কারনে লেখার সময় প্রায় নেই-শুধু একটু আধটু ব্লগ পড়ি। কিন্ত সৌদি আরবে ৮ বাংলাদেশীর শিরোচ্ছেদকে কেন্দ্রকরে যেভাবে নানান বাংলাদেশী ব্লগে ইসলাম এবং ইসলাম বিরোধি গোষ্টর বিতর্ক হচ্ছে, তাতে দুটো জিনিস আমাকে ভীষন পীড়া দিল। তাই দুটো কথা লিখছি-

প্রথমত একদল মনে করে এর জন্যে ইসলাম দায়ী। আরেকদল মনে করে, ইসলামের এমন নিষ্টুর আইন বিধান সমাজের জন্যে ভাল।

দ্বিতীয়ত গোটা ঘটনাটা কেও ইতিহাস ধরে , ইতিহাসের প্রগতি থেকে বিচার করলো না। আরবে এক সময় বৃটিশরা ক্ষমতায় ছিল। তারা কেন সেখানে বৃটিশ আইন চালু করল না? কেন মধ্যপ্রাচ্য আদিম যুগে থেকে গেল? এর জন্যে কি শুধু ইসলাম দায়ী? যুক্তিবাদিদের দাবী সেই রকমই।

বিতর্ক লেখালেখি ভাল জিনিস। বিরক্ত হয়েছি অন্য কারনে। বর্তমান বিশ্বে অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট, গ্রীস-ইটালিতে সরকার বিরোধি আন্দোলন, অর্থনৈতিক মন্দা, মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক জাসমিন বিপ্লব, তীব্র খাদ্য সংকট এবং পরিবেশ বিপর্যয় চলছে। এইসব বর্তমান ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসের পরিবর্তন অনুঘটক। মুক্তমনা সমাজে এই নিয়ে খুব বেশী চিন্তা ভাবনা দেখি না। শুধু ইসলাম পেটানোতে লোকের উৎহাস বেশী।

ঢাকা এবং কোলকাতা দুটিই বসবাসের অযোগ্য শহর। এগুলোকে বসবাসযোগ্য করা নিয়ে কোন চিন্তাভাবনা ব্লগে দেখি না। শুধু ব্লগের পর ব্লগ ইসলাম নিয়ে। যতদোষ নন্দঘোষ টাইপের আনক্রিটিক্যাল লেখাতে ভর্ত্তি হচ্ছে মুক্তমনা।

(২)

ইসলাম কি?

ইসলাম প্রেমীদের কাছে তা সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, ইসলাম বিরোধিদের কাছে তা সর্ব নিকৃষ্ট ধর্ম।

তাতে অসুবিধা নেই। কিন্ত একজন যুক্তিবাদি, বিজ্ঞান মনস্ক মানুষের কাছে "ইসলাম" কি তাহলে?

বিজ্ঞানে ধর্মের অস্তিত্ব নেই। সমাজ বিজ্ঞানে ধর্ম একটি বিবর্তিত সাংস্কৃতিক মিম। সেলফ অর্গানাইজেশন বা সমাজ/রাষ্ট্র গড়ার জন্যে কিছু নির্বাচিত মিম। সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্মের জন্যে এককালে ইহাদের দরকার ছিল। আজকে উন্নত যোগাযোগ এবং বাজারের যুগে তা অর্থহীন। কারন গোটা বিশ্বই একটি ক্ষুদ্র গ্রামে পরিণত হতে চলেছে। আজকে মানুষ সমাজ বদ্ধ হচ্ছে স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে-বাজারের মাধ্যমে। রাষ্ট্রর ধারণাটাই উঠে যেতে চলেছে। এবং আস্তে আস্তে রাষ্ট্রের সীমানা দুর্বল হচ্ছে বাজারের চাপে। ত্রিশ বছর আগেও ইসলাম নিয়ে মাতামাতি ছিল না। কারন আরবের তেলের পয়সা ছিল না। সবটাই একটা বাজারের প্রোডাক্ট। টাকা এল, মাদ্রাসা খুললো-কিছু গরীবের সংস্থান হল। তাহলে ইসলামে পেট চালাতে পারে-এমন ধারনা পেল সবাই। ফলে মধ্যযুগীয় আরবিক ধারনাও ফিরে এল। তেল শেষ হলে আরবের খাওয়ানোর ক্ষমতা চলে গেলে, এসব উৎপাত ও যাবে। যদি কোন হিন্দু গরীবকে খাওয়াতে পারে, তাহলে সেই সর্বহারা হিন্দুয়ানীতে বিশ্বাস করবে, ইসলাম খাওয়ালে সে ইসলামের ভক্ত হবে। কালকে যদি ২৫ লাখ বাংলাদেশী ভারতে আইন মেনে ভাল কাজ পায়, তারাও ভারতীয় সিস্টেমের দিকেই ঝুঁকবে। সুতরাং যেসব বাংলাদেশীরা আরবের টাকায় সংসার প্রতিপালন করে, তাদের আরবের প্রতি দুর্বলতা থাকা স্বাভাবিক।

ইসলামের বর্তমান উৎপাত খুব সাময়িক একটা এবারেশন। যা কিছু উন্নত উৎপাদন দিতে ব্যার্থ-তা দীর্ঘদিন চলতে পারে না। যা করলে পেট চলে, বেঁচে থাকা যায়, মানুষ সেটাকেই ধর্ম হিসাবে নেয়। কলকাতার ঝি লোকাল ট্রেন গুলোতে দেখা যাবে দরিদ্র কবলিত অঞ্চলগুলি থেকে কপালে বিশাল সিন্দুর লাগিয়ে ঝিয়েরা বাবু-বিবিদের বাড়িতে কাজ করতে আসে। এদের অনেকেই মুসলমান-কিন্ত কাজের জন্যে হিন্দু সেজে এসে কাজ করে। দীর্ঘদিন কাজ করার পরে হিন্দুয়ানী রপ্ত ও করে ফেলে।

আমি কিছুক্ষণ আগেই একটা মুদির দোকান থেকে ফিরলাম। দুই পাকিস্তানি মহিলা এর মালিক এবং ভাল চালাচ্ছে। এরা যখন শুরু করেছিল, দোকানের দুদিকে মক্কা মদিনার ছবি, কোরানের আয়াত ইত্যাদি ছিল। কিন্ত কাস্টমাররা ত সব শিখ আর হিন্দু। টাকাও এদের পকেটেই বেশী। আর তার ওপর পাশেই একটা ভারতী মুদির দোকান। দুবছরে এই দুই মহিলা দোকানের ডেকরেশন সব বদলে দিয়েছে। আগে ঢুকলে বোঝা যেত এটা মুসলমানীদের দোকান-এখন সেসব চিহ্ন নেই। মালকিন কারা না জানলে, ঢুকলে মনে হবে এটা আরেকটা ভারতীয়র দোকান। এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না- আমি এমন অনেক কেস দেখেছি।

ভারতে আমার বাড়ীর সামনে নদী পেরোলেই মুসলমান গ্রাম। সেখানে আগে ইসলামের গন্ধ ছিল না। সবাই হিন্দু শহরে এসে জীবিকা নির্বাহ করত। ১৯৯০ সাল থেকে আরবের টাকায় সেখানে মসজিদ, মাদ্রাসা হয়ে, তারা আর ভারতে থাকে না, নিজেদের বেশী আরবীয় বলেই মনে করে। যেদিন আরবের টাকাতে আর এসব চলবে না-সেদিন আবার আগের জায়গাতেই ফিরে যাবে।

সবর্ত্র আমি এটাই দেখছি, ধর্ম পেট চালানোর ক্ষমতা না দিলে, সেই ধর্ম এমনিতেই লোপ পায়। গুটিকয় শিক্ষিতলোকের ধর্মবিলাস দিয়ে ধর্ম নির্নীত হয় না। বাঙালী মুসলমানরা কি ধরনের মুসলমান? ১৮৮০ সালের আগে বাংলা ভাষাতে লেখা কোন কোরানই ছিল না। গিরীশ ভাই নামে এক হিন্দু প্রথম ফার্সী থেকে কোরানের বঙ্গানুবাদ করেন। এর কারন কি? আসলে অসংখ্য বাঙালী মুসলমানদের কাছে ইসলাম ছিল এক সহজিয়া ধর্ম- হিন্দু জাতিভেদ থেকে বাঁচার উপায়। কিন্ত আরবের সংস্কৃতিকে অত জড়িয়ে ধরার প্রয়োজন তাদের হয় নি। কারন সেই সংস্কৃতি থেকে তাদের বাঁচার উপাদান কিছুই ছিল না।

তাই আমরা দেখি ১৬০০ খ্রীষ্ঠাব্দ থেকে মুসলমান বাঙালী কবিরা হিন্দু উপাখ্যান নিয়েই সাহিত্য রচনা করেছে-কোরানের বঙ্গানুবাদ করে তারা সময় নষ্ট করে নি। কোরান হদিস তাদের র‍্যাডারেই ছিল না। হয়ত বিংশ শতাব্দির আগে অধিকাংশ বাঙালী মুসলমান জানতই না কোরান বলে এক গ্রন্থের কথা। কারন তারা ছিল নিরক্ষর এবং বাংলা ভাষাতে কোরান তখনো কেও লেখে নি। তাদের কাছে ইসলাম ছিল এক সাম্যের ধর্ম-যেখানে জাতের কারনে তাদের সমাজে ছোট হয়ে থাকতে হত না। অর্থাৎ ইসলাম ছিল তাদের বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এবং সেই বাঙালী ইসলামের সাথে কোরানের কোন সম্পর্ক ছিল না। থাকলে ১৬০০ সালের আগেই যখন আরাকানে বাঙালী মুসলমানরা কাব্য রচনা করছেন-তখনই বাংলাতে কোরান লেখা হত।

আমার বক্তব্য এটাই বিজ্ঞানে ধর্ম বলে কোন কিছু নেই। সমাজ বিজ্ঞানে যা আছে তা হচ্ছে "বেঁচে থাকার জন্যে সাংস্কৃতিক উপাদান" যা বিবর্তনের পথে নির্বাচিত ।

ইসলাম বা যেকোন ধর্মকে ধর্ম বলে মানা এবং দেখা হচ্ছে সব থেকে বড় অবৈজ্ঞানিক যুক্তি। সুতরাং একজন ধর্ম বিরোধি যখন ইসলামকে একটি ধর্ম হিসাবে দেখে এবং ধর্ম হিসাবে তার বিরোধিতা করে-তার যুক্তিও একজন ধার্মিকের সমান অবৈজ্ঞানিক।

(৩)

প্রতিটা মানুষের পরিধি সীমিত। মুক্তমনার অধিকাংশ লেখক বয়সে নবীন। তারা ইসলামিক সমাজের অবিচার, অনাচার এবং অত্যাচার দেখে বড় হয়েছে। এতে তাদের যুক্তিবাদি মন বিদ্রোহী হয়েছে এবং তারা মুক্তমনাতে ইসলাম বিরোধি লেখালেখি করছে। এমন ঘটনা হিন্দু ধর্মে ঘটেছিল ১৮২০-৩০ সালে ডিরোজিওর শিষ্যদের মধ্যে। কিন্ত তাদের যুক্তিবাদি চেতনাতে হিন্দু ধর্ম উঠে যায় নি। বড়জোর বিবর্তিত হয়েছে। এর কারন হিন্দু ধর্মের কিছু কিছু "এলিমেন্ট" এই দেশের মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে দরকার ছিল। এই প্রথম এলিমেন্টটার নাম হিন্দু জাতিয়তাবাদ যা বৃটিশ বিরোধি আধুনিক আন্দোলনের প্রথম ধাপ। ইতিহাস খুব ভাল ভাবে পড়লে বোঝা যাবে বিবেকানন্দ, দয়ানন্দ সরস্বতীদের উত্থানের পেছনে একটা বড় কারন বৃটিশ বিরোধি আন্দোলন, বৃটেনের হাত থেকে স্বাধীন হওয়ার আকাঙ্খা।

তাহলে যুক্তিবাদি আন্দোলন শ্রেষ্ঠতর হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু ধর্মটা ডিরোজিওর শিষ্যদের হাত থেকে টিকে গেল কি করে?

এখানেও প্রথমে উঠে আসবে বেঁচে থাকার টেকনিক। মানুষ সমাজবদ্ধ ভাবে বেঁচে থাকে। ধর্ম সেই সামাজিক আইনগুলো - পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য, সন্তানের প্রতি দ্বায়িত্ব, সমাজের প্রতি দ্বায়িত্ব-এই যুথবদ্ধতা শেখায়। যা গুরুত্বপূর্ন সাপোর্ট সিস্টেম তৈরী করে। বেঁচে থাকার জন্যে এগুলি দরকার। ধর্ম বিরোধি ঋণাত্মক আন্দোলনে এগুলি গুরুত্ব না দিলে, ধর্ম বিরোধিতা ফালতু। এই কারনে রিচার্ড ডকিন্স ফোরামে নাস্তিকদের মধ্যে পেরেন্টিং, স্যোশালাইজেশন ইত্যাদি বিষয়গুলির ওপর বেশী জোর দেওয়া হয়-এই সাপোর্ট সিস্টেম না তৈরী হলে ধর্মকে তোলা অসম্ভব।

এমন নয় যে এই সাপোর্ট সিস্টেম বা সামাজিক আইনগুলির জন্যে ধর্ম অপরিহার্য্য। মোটেও তা না। ধর্ম নিরেপেক্ষ আইনের ভিত্তিভূমি বৃটেনের ইউলিটেরিয়ান আন্দোলন। যা এই ধরনের যুথবদ্ধতার আইনগুলির ভিত্তিভূমি রচনা করেছিল। যদিও অনেকেই মনে করেন, তা খ্রীষ্ঠান ধর্মের সংস্কার আন্দোলন থেকে জন্ম নেওয়া। তেমনই ইসলামের সংস্কার আন্দোলন থেকে ইউলেটেরিয়ান ধরনের ধর্ম নিরেপেক্ষ আইনের জন্ম হতে পারে উন্নততর সমাজের জন্যে। সবটাই সেই উন্নততর উৎপাদনের প্রয়োজনে বিবর্তিত হয়।

(৪)

তাহলে উন্নততর উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্যে ইসলাম বদলাচ্ছে না কেন? খ্রীষ্ঠানরা বদলেছে, হিন্দুরা ধর্ম থেকে আস্তে আস্তে সরে আসছে-মুসলমানরা বদলাচ্ছে না কেন?

আসলে মধ্যপ্র্যাচ্যের তেল ইসলামি বিশ্বের আধুনিক অগ্রগতির দারুণ ক্ষতি করেছে। যদ্দিন মধ্য প্রাচ্যে তেলের আবিস্কার হয় নি তদ্দিন মিশর, ইরান, ইরাকে সর্বত্র আধুনিক বাম ভাবধারার রাজনৈতিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪০ সাল থেকেই যা উপনিবেশ বিরোধি আন্দোলন থেকে উদ্ভুত। কিন্ত মধ্য প্রাচ্যে তেলের আবিস্কারের সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বের তিনটি ক্ষতি হয় যা মুসলিমদেরকে আজও মধ্যযুগে আবদ্ধ করে রেখেছে-

এক- বৃটেন এবং আমেরিকা এই সব প্রগতিশীল আন্দোলনগুলিকে ছুড়ি মারে-কারন এগুলি ছিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলন যা তৈলখনিগুলির জাতিয়তকরন চেয়েছিল। এতে বৃটিশ এবং আমেরিকার তেলের কোম্পানীগুলি নিজেদের ব্যবসা হারাবার আকাঙ্খায় এই প্রগতিশীল আন্দোলন ধ্বংস করে,সেখানে বশংবদ ডিক্টেটরিয়াল শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

দুই- এইসব প্রগতিশীল আন্দোলনের উৎস ছিল দুটি-পেটের ক্ষিদে এবং উপনিবেশ থেকে মুক্তির আকাঙ্খা। ইসলাম দিয়ে পেটের ক্ষিদে মিটবে না-এটা ১৯৩০-১৯৬০ অব্দি এই সব আন্দোলনের নেতারা বুঝেছিলেন। তারা বুঝেছিলেন, চাই আধুনিক রাষ্ট্র। হোসেন মুবারক থেকে বার্থ পার্টি-সব এই চিন্তাধারার ফসল। কিন্ত তেলের ডলার আসতেই আসল সহজ জীবন-খাবার বিলাস ব্যসন সব সস্তায় এবং সুলভে পেয়ে গেলে-লোকে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে বেশী ভাবার সময় পায়। ফলে ধর্ম আবার চেপে বসল এদের ঘারে।

তিন- এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে জন সংখ্যাও বাড়তে থাকে গুনিতক প্রগতিতে। ফলত সেই সমৃদ্ধি তারা ধরে রাখতে পারে নি। ইরান এবং মিশরে -বিশেষত উত্তর আফ্রিকাতে খাবারের তীব্র সংকট শুরু হয়েছে। সেই সংকট থেকে, আজকের জাসমিন বিপ্লব ছিল আসন্ন।

মোদ্দা কথা লোকজনকে খাওয়াতে না পারলে কোন ধর্ম, কোন রাজনৈতিক সিস্টেম টেকে না। তেলের টাকায় ইসলামিক বিশ্ব তাদের জনগণকে খাওয়াচ্ছিল-এখন আস্তে আস্তে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। যা ফলশ্রুতি স্বরূপ সেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে বিপ্লব হচ্ছে। এবং নিজেদের বাঁচাতেই তাদের শ্রেষ্ঠতর সিস্টেম বেছে নিতে হবে।

পেটের আগুনই তাদের ঠিক পথের সন্ধান দেবে।

(৫)

আমার শুধু একটাই অনুরোধ -ইসলাম নামে এই কচলানো লেবুর চর্চা মুক্তমনাতে কমালে ভাল হয়। পরিবেশ, নগর ব্যাবস্থা, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব, শ্রমিক শোষন-ইত্যাদি বিষয়গুলি ইসলামের থেকে অনেক বেশী জ্বলন্ত। এই বিষয় গুলি নিয়ে বেশী চর্চা হৌক।

নইলে মুক্তমনা ব্লগটি কচলানো লেবুতে পরিণত হবে।

সেই চিন্তাধারাই টেকে, যে চিন্তাধারা উন্নততর উৎপাদনের জন্ম দিতে সক্ষম। এটিই বিবর্তন বিধাতার আইন।

Sunday, September 11, 2011

কমিনিউস্ট চিন্তাধারার বৃত্তীয় ভুল



(১)

ফেসবুক বা স্যোশাল নেটওয়ার্কের রাজনৈতিক চর্চাকারীদের মধ্যে বাম বা ডান মনোভাবা সম্পন্ন লোকেদের একবল্গা লজিকের সাথে আমরা কমবেশী সবাই পরিচিত। পার্টিভক্ত অন্ধ, ধর্মান্ধ, তাত্বিক অন্ধ ইত্যাদি ভক্তিভাবের প্রকাশ শুধু বাঙালী না পৃথিবীর সব দেশে, সব সমাজেই দৃশ্যমান। ধর্মে অন্ধ হয়ে বিবর্তনকে অস্বীকার করা বা পার্টিতে অন্ধ হয়ে স্টালিন বা কমিনিউজমের নৃশংস ইতিহাসকে বুর্জোয়া মিডিয়ার ছল বলা, মূলত একই মানসিক ব্যধির দুই পিঠ।

কিছুদিন আগে ব্রেভিককে নিয়ে লিখতে গিয়ে,আমাকে অনেকের কাছেই ব্যখ্যা করতে হয়েছে কেন দক্ষিনপন্থী হিন্দুত্ববাদি বা ইসলামিস্টদের সাথে "বামপন্থী" কমিনিউস্টদের একসারিতে রেখেছি। এদের অনেকেই বামঘেঁসা বা কমিনিউস্ট প্রীতির আঁতুরঘরের গন্ধমাখা লোকজন। এদের বক্তব্য কমিনিউস্টরা যদি খারাপ কিছু করেও থাকে তা মেহনতি মানুষের জন্যেই করেছে। সেখানে ধর্ম শোষক শ্রেনীর সহায়ক ছারা অন্য কিছুত না!

সমস্যা হচ্ছে, যারা সিপিএমের এই ৩৫ বছরের দুস্বপ্নের দিনগুলি পশ্চিম বঙ্গে কাটিয়েছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই মানবেন পার্টি এই রাজ্যে শোষক শ্রেনীর শত্রু না, বন্ধুই ছিল। অন্যথা, কিছু সম্ভব ছিল না। হয় ও নি। এটা ত সাম্প্রতিক বাস্তব।

ইতিহাসে তাকালে দেখা যাবে, ধর্ম মাত্রেই প্রতিবাদি আন্দোলন হিসাবে ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে। স্যোশাল জাস্টিস এবং ইনজাস্টিস সব কিছুই হিন্দু এবং ইসলাম ধর্মগ্রন্থগুলির উপপাদ্য। আমেরিকার রিপাবলিকান বা টি পার্টি ছারা আর কোন সামাজিক আন্দোলন বা আদর্শবাদ আমার জানা নেই যা গরীব দরদি না। বস্তত ধর্ম গ্রন্থগুলির মধ্যে ধর্মীয় সমাজতন্ত্রের বা ভাববাদি সমাজতন্ত্রের ছোঁয়া সব সময় ছিল-এবং তার পরেও তারা শাসক শ্রেনীয় সহায়ক হিসাবেই আবির্ভূত। মার্ক্স কথিত বস্তুবাদি সমাজতন্ত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি-লেনিনিজম সব থেকে কুখ্যত শাসক এবং অত্যাচারীদেরই জন্মদাত্রী। এবং একটু ভাবলে দেখা যাবে, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরনের জন্যে এমনটা হওয়ারই কথা।
এই নিয়েও আগেই বিস্তারিত লিখেছি-কিভাবে একটি বাম আন্দোলন আস্তে আস্তে দক্ষিন পন্থী আন্দোলনে ইউ টার্ন নিয়ে থাকে ( যা ধর্ম, লেনিনবাদ , মাওবাদ সবার জন্যেই প্রযোজ্য )।

(২)

আমি এই প্রবন্ধ লিখছি সম্পূর্ন অন্য কারনে। বহুদিন থেকেই দেখছিলাম, কমিনিউস্টরা কমিনিউস্ট ইতিহাসের সব নির্মম দিক নিয়ে গর্ব করে। সাঁইবাড়ির খুনী থেকে স্টালিনের খুন গুলিকে এরা শ্রেণীযুদ্ধে " প্রয়োজনীয়" মনে করে। এবং এটাই পার্টি লাইন।

সমস্যার শুরু এখান থেকেই। কারন এদের মতবাদ বা কমিনিউজমের শাস্বত মতবাদ হচ্ছে কমিনিউজমই আসল
মানবতাবাদ। মার্ক্স ব্যাপারটাকে এভাবে লিখেছিলেনঃ

“... communism, as fully developed naturalism, equals humanism, and as fully developed humanism equals naturalism; it is the genuine resolution of the conflict between man and nature and between man and man – the true resolution of the strife between existence and essence, between objectification and self-confirmation, between freedom and necessity, between the individual and the species. Communism is the riddle of history solved, and it knows itself to be this solution”..

কমিনিউজমের উৎস সন্ধানে, বা মানুষ কেন কমিনিউস্ট হতে চায়, তার মূলে ঢুকতে গেলে, এই বাক্যটির গুরুত্ব অপরিসীম।

কারন যারা কমিনিউজমের বিশ্বাস করে, তারা মনে করে কমিনিউজমই হচ্ছে একমাত্র রাজনৈতিক আদর্শবাদ যা মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে প্রকৃতির, অস্তিত্বের সাথে প্রয়োজনীয়তার, স্বাধীনতার সাথে প্রয়োজনীয়তার, ব্যাক্তির সাথে প্রজাতির দ্বন্দের অবসান ঘটাতে সক্ষম। এবং কমিনিউজম হচ্ছে সেই প্রাকৃতিক দর্শন ( যা প্রকৃতি বিজ্ঞানকে অনুসরণ করে আসে)।

কমিনিউস্টরা ধর্মীয় বা ব্যক্তি স্বতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে যে মানবতার সংজ্ঞা তাতে "বিশ্বাস" করে না। মানুষ তাদের কাছে সমাজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। লুইস আলথুজার নামে একজন ফ্রেঞ্চ স্ট্রাকচারালিস্ট ( যিনি একজন অন্ধ স্টালিন ভক্ত ছিলেন), বুর্জোয়া দের দেওয়া মানবতার সংজ্ঞাকে ( অর্থাৎ সবার ওপর মানুষ সত্য ) মানবিক বিভ্রম বলে আখ্যায়িত করেছেন!

“humanism” means the illusion that individual human beings are autonomous, thinking subjects, whereas for structuralists (and poststructuralists), individual human beings are nothing but unconscious agents of structural forces, in much the same way as organisms are agents for the spread of a disease. Thus structuralists associate humanism with a naive and unproblematic conceptions of language and consciousness, and illusory belief in the autonomy of human beings.

অর্থাৎ হে কমিনিউস্ট বৃন্দ- বর্তমান সমাজের মানবিকতার ব্যখাতে ভুলিও না-কমিনিউজমের সেই সোনার ম্যাজিক বলই আসল মানবিকতা! সাঁইবাড়ির প্রনব সাঁই বা ষষ্টি দুলেদের কুপিয়ে কাটা সেই মহান মানবিক সমাজের প্রতিষ্ঠার জন্যেই দরকার!

(৩)

আলথুজারকে নিয়ে চিন্তা নেই-ভদ্রলোক বিজ্ঞানের দর্শন বিশেষ কিছু বুঝতেন না। যা লিখেছেন, তা বিজ্ঞান এবং প্রাকৃতিক দার্শনিকদের চোখে বালখিল্যই হবে। এই প্রবন্ধ লেখা এই কারনে, যে মার্ক্সের ওই মারাত্মক দাবি-কমিনিউজম হচ্ছে সকল বিভেদের সমাধান, সেটা কতটা বালখিল্যতা বা হাস্যকর তা বিচার করা।

প্রথমেই বিশ্লেষণ করা দরকার বিভেদ কেন?

মার্ক্সত, ইয়ে মানে হেভিওয়েট দার্শনিক। তার একবাক্যের ওজন চোদ্দমন। সাধারন মাথাতে ঢোকাতে গেলে কিলোতে ঢোকানোই ভাল। উনার দাবীগুলিকে ১, ২, ৩...এইভাবে ভাংলে গোঁজামিল, বা যুক্তির বৃত্তীয় ভুল খুব সহজে ধরা যাবে,

উনার প্রথম দাবী-কমিনিউজম একধরনের ন্যাচারালাজিজম বা প্রাকৃতিক দর্শন। যেসব দর্শন ভাবে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে যাবতীয় প্রশ্নের মিমাংসা করা যায়, তাদের বলে প্রাকৃতিক দর্শন। প্রথম দাবীটিই ভুল। কমিনিউজম বিজ্ঞানের দর্শনের প্রথম ধাপ-ফলসিফিকেশন উপপাদ্যটিই মানে না। ফলসিফিকেশনের সাদামাটা মানে আ) সব তত্ত্বই ভুল হতে পারে ক) তাই সব তত্ত্বের বাতিলযোগ্যতার পরীক্ষা দরকার। মার্ক্সীয় বিপ্লবের তত্ত্ব সর্বত্রই ভুল প্রমাণিত-তবুও কমিনিউস্টদের চোখে তা বাতিলযোগ্য না! এটি বহুচর্চিত -স্যার কার্ল পপার এবং মার্ক্সীয় অপবিজ্ঞান নিয়ে আগে অনেক লিখেছি।

এরপরে যদি ধরেও নিই, কমিনিউজম বিজ্ঞানভব (!), তারপরে রাউন্ড টুতে প্রশ্ন আসবে, মানুষে মানুষে বিভেদের কি কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র -বা কার্য কারন সূত্র সম্ভব?

খুব সহজ ব্যপার। বাইরে চোখ রাখুন-দেখবেন দুজন পুরুষ মারামারি করে মূলত সম্পদ এবং নারীর অধিকার নিয়ে। "শ্রেণী" যুদ্ধের একমাত্র কারন না-নারী, জাতি, প্রজাতি-আরো অনেক কিছুই বিবাদের কারন হতে পারে। এই জটিল সিস্টেমকে কোন বৈজ্ঞানিক সূত্রে বাঁধা সম্ভব না।

আরেকটা উদাহরন দিচ্ছি। পাওলি দাম নামে এক বাঙালী "মেইনস্ট্রুম" অভিনেত্রী, ছত্রাক নামে এক সিনেমাতে সম্পূর্ন নগ্ন শয্যদৃশ্যে অভিনয় করে বেশ সামাজিক ঝড় তুলেছেন। রক্ষণশীল বনাম প্রগতিশীল বাঙালীরা দ্বিধাভিকক্ত।

কে ঠিক? এর বিচারে কোন বিজ্ঞান বা যুক্তিবাদ চলে না। কারন পাওলি দাম নগ্ন হয়ে ঠিক করেছেন না ভুল করেছেন, তার ফলসিফিকেশন সম্ভব না। কারন এটা ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন। অর্থাৎ এই বিভেদের মূলে যেতে "একক" কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র ব্যর্থ।

আরো উদাহরণ দিচ্ছি। ধরা যাক কমিনিউজম এসেই গেল। কিন্ত তার মানে ত এই নয় রক্তমাংসের মানুষগুলো সব রোবট হয়ে গেল। তখন কমিনিউস্ট সমাজে যদি একজন সুন্দরী মেয়েকে দশজনের ভাল লাগে, তাহলে কি হবে? তাহলে দশজনের মধ্যে গন্ডোগলের সম্ভাবনা নেই? নাকি কমিনিউজমে সাম্যবাদের সূত্র মেনে দশপুরুষই নারীটিকে ভোগ করবে? বা "কমিউন" ম্যারেজ চালু হবে? মানে দশটা পুরুষ দশটা নারীকে বিয়ে করবে! তাতেও কি গন্ডোগল কমবে বলে মনে হয়?

মোদ্দা কথা এমন এক জটিল সামাজিক সিস্টেমের কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র হয় না। সেখানে সমাজের কার্যকারন সব বুঝিয়াছি এবং তার বৈজ্ঞানিক সূত্র আবিস্কার করিয়াছি এমন দাবী বেশ বালখিল্যতাই বটে।

এবার আসি রাউন্ড তিনে। মার্ক্স আরো দাবী করছেন, কমিনিউজম মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য এবং বিধেয়র মধ্যে বিভেদ মেটাবে। এটা সত্যই আরো বড় গোলা।

জীবনের উদ্দেশ্য কি এই প্রশ্নটা যুক্তিবাদ এবং বিজ্ঞানের বাইরে। যদি ধরে নেওয়া যায়, জীবনে উদ্দেশ্য বিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়, অর্থাৎ জেনেটিক সারভাইভালই আমাদের উদ্দেশ্য, তাহলে বিজ্ঞান কিন্ত মানব সমাজ এবং মানবতার অনেক কিছুই ব্যখ্যা করতে পারবে না। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই দেখি যদি, দুই সন্তানের মধ্যে একজন পঙ্গু হয়ে জন্মায়, মা কিন্ত পঙ্গু সন্তানকেই বেশী যত্ন করে যদিও এটা জেনেই যে সে প্রজননে অক্ষম। আলট্রুইজম বা উপকারিতা বেঁচে থাকার উপায় বটে কিন্ত অনেক ধরনের আলট্রুইজম বা উপকারীতার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাই সম্ভব না। এটা ঠিক যে জীবনের উদ্দেশ্যের ৯০% জীববিজ্ঞানদিয়ে ব্যখ্যা করা যায়-কিন্ত যে সন্নাসী হতে চাইছে-তার ব্যখ্যা কি? অনেক দম্পতিই আজকাল চাইল্ডলেস বাই চয়েস থাকছে-তার পেছনেই বা কি যুক্তি?

তাদের জীবনের উদ্দেশ্যকি ভুল যেহেতু তা "ন্যাচারালাজিম" না???

যে ড্রাগ, নারী আসক্ত হয়ে জীবন কাটাচ্ছে সেও কি ভুল?

এই ঠিক বা ভুলের মাপকাঠি কি করে ঠিক করবে? আর ৫০০ মিলিয়ান বছর বাদে সৌর জগত সম্পূর্ন ধ্বংস হবে-আরো সূদূরে এই মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে, আবার বিন্দুতেই শেষ হবে। সুতরাং কে কি করল, তাতে মহাবিশ্বের ইতিহাস বদলাচ্ছে না। জীবনটা সাময়িক,সময়ের খুব ক্ষুদ্র স্কেলে করা জ্যাঠামি। কে সন্নাসী হয়ে কাটাল, কে পরকিয়া করে কাটাল-কে বেশ্যাগৃহে কাটাল-তাতে মানুষ এবং মহাবিশ্বের ভবিষ্যত কিছুই বদলাবে না।

সুতরাং ঘুরেফিরে আমরা সেই বৃত্তেই ফিরে আসি-সেখানে মানুষই একমাত্র সত্য। মানুষের হাতে তৈরী ধর্ম বিজ্ঞান কমিনিউজম, ক্যাপিটালিজম কোন তত্ত্বই মানুষের থেকে বড় হতে পারে না। অন্তিম বিচারে এর সবকিছুর ওপরেই মানবতার জয় ঘোষিত হবেই। সুতরাং কোন আদর্শবাদের দোহাই দিয়ে অমানবিক কোন কাজই সমর্থনযোগ্য না-এবং তা সব থেকে বড় অশিক্ষার ও কুশিক্ষার পরিচয়।

Thursday, August 4, 2011

আরেকটি বিশ্বমন্দার সামনে আমরা দাঁড়িয়ে?


[১]

আমি অর্থনীতিবিদ নই। কিন্ত নিয়তি এতই নিঠুর, অর্থনীতির চোরাবালিতে হাঁটতে থাকা নশ্বর জীব আমরা। না বুঝলে, যেকোন মুহুর্তে চোরাবালিতে শেষ হয়ে যেতে পারে সমস্ত জীবনের সঞ্চয়। এই বাজার অর্থনীতিতে আমরাও পণ্য। যত তাড়াতাড়ি এই উপলদ্ধি মাথার মধ্যে ঢোকে, ততই ব্যক্তিগত জীবনে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। বাজারের সাপলুডোর সাথে আমাদের সবার ওঠানামা।
২০০৮ সালের সাবপ্রাইম ক্রাইসিস কিভাবে গোটা বিশ্বে থাবা ফেলেছিল, সেই আতঙ্ক কাটতে না কাটতে খুব সম্ভবত আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমরা ঢুকতে চলেছি। আজ বিশ্বের বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জ ডাওজোন্স পড়েছে ৫০০ পয়েন্ট। মাত্র তিন দিনে গোটা বছরের আয় উড়ে গেছে শেয়ার বাজারের ইনভেস্টরদের। কিন্ত কেন শেয়ার বেচছেন ইনভেস্টরা রা? বাজার কেন আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছে?

[২]
এবার সমস্যার শুরু ওয়েলফেয়ার ইকনমিক্স বা জনকল্যানকারি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি নামক টাইমবোমটি থেকে। প্রতিটি দেশের রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষমতায় এসে স্যোশাল ওয়েলফেয়ার বা নানান সামাজিক স্কীম এবং সামরিক খাতে দেদার ব্যায় করে, যা তাদের আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। বাকী টাকা মেটানো হয় ধার করে। এই করতে গিয়ে আমেরিকার দেনা প্রায় ১৪ ট্রিলিয়ান ডলার যা তার জিডিপির সমান। ব্যাপারটা এভাবে ভাবা যেতে পারে। আমেরিকার জিডিপি ১৪ ট্রিলিয়ান ডলার এবং ট্যাক্স ও অন্যান্য বাবদ সরকারের উপায় প্রায় ২ ট্রিলিয়ানের কাছে। মানে একটি পরিবারে ধরুন উপায় এক লাখ টাকা, কিন্ত তার দেনা 7 লাখ টাকা। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠবে, সেই পরিবারটি দেনা শোধ দেবে কি করে? কারন ৭ লাখ টাকার সুদই অনেক। যদি ৫% হারেও সুদ দিতে হয়, তাহলেও সরকারের উপায়ের ৩৫% চলে যাবে সুদ মেটাতে-এবার তার সাথে মূল আমানত মেটানোর দায় যোগ করলে, উপায়ের ৭০-৮০% চলে যেতে পারে শুধু ধার শোধ করতে!

তবে আমেরিকান সরকারের সুদের সমস্যা কম-কারন এই মন্দার বাজারেও সবাই আমেরিকান সরকারের বন্ড কিনতে চায়, যেহেতু সবাই মনে করে, আমেরিকান সরকার দেওলিয়া হতে পারে না। সেই জন্যে আমেরিকাকে ১ বা ২ % সুদে পৃথিবীর সব দেশ এবং সেই দেশের ব্যঙ্করাও ধার দেয়। আমেরিকান সরকারি বন্ড হচ্ছে অধুনা পৃথিবীর সিন্দুক। যেখানে টাকা রাখলে সব "সেফ"-পতনের সুযোগ নেই।

আর এই জায়গাটাতেই সমস্যা। আমেরিকান আইন অনুযায়ী আমেরিকান সরকার একটি লিমিটের বাইরে ধার করতে পারে না। এবং সেই লিমিট বাড়াতে হলে কংগ্রেস ও সেনেটের অনুমতি লাগে। আমেরিকান সরকার জনস্বাস্থ্য খাতে এমন হারে টাকা খরচ করছিল, যে হুহু করে বাড়ছিল দেনা। ফলে এদেশে টিপার্টি বলে একটি রক্ষণশীল আন্দোলণের জন্ম হয়। যাদের বক্তব্যই হল, এই ভাবে চললে সরকার দেওলিয়া হয়ে যাবে এবং বেহিসাবী সরকারি খরচ চলবে না। গত ২০১০ সালের কংগ্রেস নির্বাচনে তারা ৬০ জনকে জেতাতে সমর্থ হয় এবং যার ফলে কংগ্রেসে ডেমোক্রাটরা সংখ্যালঘু। ফলে, গত সপ্তাহে ডেটলিমিট বা ধারের পরিসীমা বাড়াতে গিয়ে ওয়াশিংটনে চলে টানা দুই সপ্তাহের নাটক। এবং মোটামুটি ধারের লিমিট বাড়ালেও ঠিক হয়, সরকার খরচ কমাবে প্রথম ধাক্কায় প্রায় ৯০০ বিলিয়ান ডলার, দ্বিতীয় ধাক্কায় ১২০০ বিলিয়ান ডলার।

[৩]
এই মন্দার বাজারে আমেরিকান সরকার যদি এত খরচ কাটে তার ফল কি হবে?
এমনিতে আমেরিকাতে ৯% চাকরি সরকারি বা সরকারের অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। কিন্ত এর প্রভাব আমেরিকান অর্থনীতির ওপর হবে দীর্ঘস্থায়ী। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গবেষণা, ডিফেন্স সর্বত্র এর প্রভাব পড়বে। সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে স্বাস্থ্য বা বায়ো রিসার্চে। উচ্চশিক্ষার জন্যে যারা আমেরিকাতে আসতে চাইছে, তাদের আসা খুব কঠিন হয়ে যাবে। কারন তারা আসে টিচিং এসিস্টটেন্ট হিসাবে এবং সেই টাকাট আসে হয় সরকার থেকে বা ছাত্রদের টিউশন থেকে। আর ছাত্রদের টিউশন আসে স্টুডেন্ট লোন থেকে। এখন সর্বত্রই কাটছাঁট।

আমি ওয়াশিংটন ডিসির খুব কাছে থাকি এবং এখানে সরকারি ছাঁটের প্রভাব হবে আরো বেশী। শুধু ৯০০ বিলিয়ান ছাঁটাইতেই এই রাজ্যের ২৫০,০০০ লোক কাজ হারাবে যেহেতু এই রাজ্যে সরকারি কর্মচারী বা সরকারি অনুদানে চলা চাকরি সব থেকে বেশী। যা এই রাজ্যের মোট কর্মক্ষম লোকের সংখ্যার প্রায় ১৫-২০%।

ফলে আমেরিকার সামনে কি দিন আসছে বলার অপেক্ষা রাখে না।

[৪]

কিন্ত প্রশ্ন উঠবে, কেন তাহলে সরকারি অনুদানে ছাঁটাই হচ্ছে? সবাই একমত, আয়ের সাথে ব্যয় মেলাতে হবে। কিন্ত তাহলে বড়লোকদের ওপর বেশী ট্যাক্স না কেন? পৃথিবীর ৪০% ধনী আমেরিকাতে! তাদের ওপর বর্ধিত কর না চাপিয়ে কেন ছাঁটাই করা হবে সরকারকে?
এই বিতর্কই এখন আমেরিকান রাজনীতির সর্বত্র জুরে। প্রতিদিন টিভি খুললে এই বিতর্কের ট্রেন চলতেই থাকে, স্টেশনের দেখা মেলে না!

রিপাবলিকানদের দুটি মূল বক্তব্য,

(১) টাক্স বাড়ালে অর্থনীতি এবং চাকরির বৃদ্ধি কমবে। কারন আমেরিকাতে ৭০% চাকরি দেয় ছোট ব্যবসা। তাদের ওপর বর্ধিত কর, অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলবে।

(২) ইউরোপে ট্যাক্স বাড়িয়েও, লোন ডিফল্ট আটকানো যাচ্ছে না। গ্রীসকে অক্সিজেন দিয়ে চালানো হচ্ছে। ইটালী এবং স্পেন প্রায় লোন ডিফল্টের পথে। সুতরাং সরকারি খরচ ছাঁটাই এর বিকল্প নেই।
বলাই বাহুল্য (১) এর সপক্ষে কোনদিন কোন সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রমাণ আমি দেখি নি।

(২) এর যুক্তিতে সারবত্তা আছে। খরচ ছাঁটাই কিছুটা করতেই হবে। খরচে রাশ না কমালে, শুধু ট্যাক্স বাড়িয়ে এই বিপদ এড়ানো যাবে না, তা সত্য। এটা নিয়েও কোন বিতর্ক নেই। বিতর্ক এখানেই যে ট্যাক্স না বাড়িয়ে শুধু সরকার ছেঁটে কি এই কাজ করা ঠিক? বিশেষত এমন মন্দার সময় এখন।

তাহলে রিপাবলিকানদের বক্তব্য কেন শুনতে হচ্ছে? যেখানে আমেরিকার ৬০% লোক সরাসরি বলছে বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স বসুক?

এটি আসলেই প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের দুর্বলতা। দু বছর আগে ডেমোক্রাটদের হাতেই ছিল সেনেট এবং কংগ্রেস। তখন বড়লোকদের ওপর বর্ধিত কর বসাতেই পারত তারা। সেটা না করে, গত ৮০০ দিনে কোন বাজেটই পাশ করে নি তারা। তার বদলে শুধু সরকারি খরচ বাড়িয়ে গেছে।

ডেমোক্রাটদের এই ডবল স্টান্ডার্ড বা দ্বিচারী বা দ্বিমুখী আচরন, আজকের ক্রাইসিসের জন্যে অনেক অংশে দায়ী। ডেমোক্রাটদের ভোটার বেস হচ্ছে গরীব অংশ-যাদের সরকারি চিকিৎসা এবং শিক্ষা দরকার। ফলে তারা সরকারি খরচ বাড়িয়েছে, তাদের ভোট বেস অক্ষুণ্ণ রাখতে। তাতে আপত্তি নেই। কিন্ত সেই বর্ধিত খরচের জন্যে বর্ধিত আয় দরকার। তার জন্যে বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স বসানো নিয়ে কোন বিল তারা আনলো না। ফলে সরকারের সংকট শুরু হল এবং সেটা দেখিয়ে রিপাবলিকানরা জিতে গেল।

কিন্ত ধণীদের ওপর কেন কর বসালো না ডেমোক্রাটরা? তারাত ডেমোক্রাটদের ভোট দিচ্ছে না! তাহলে ? রহস্যটা কি?

এটা আমেরিকান রাজনীতির কালো দিক। নির্বাচনী ফান্ড এই দেশে মূলত ধনীরাই দিয়ে থাকে এবং নির্বাচনে লড়তে গেলে ডেমোক্রাট বা রিপাবলিকান পার্থীদের সেই ধনী শ্রেনীর কাছেই হাত পাততে হবে। এবং প্রতিটি ধনী ব্যক্তি এই দেশে দুই পার্টির নির্বাচনী তহবিলে টাকা দেয়। তাদের টাকাতেই লড়তে হয় নির্বাচন। তাদের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষমতা আসলেই নেই ডেমোক্রাটদের। তারা ধণী শ্রেনীর বিরুদ্ধে বড় বড় ডায়ালোগ দিয়েই খালাস-যা তোকে ছেরে দিলাম টাইপের ঢপবাজি ওবামাও অনেকদিন চালাচ্ছেন। আসল সত্যি কথাটা আমেরিকান জনগণও জানে।

[৫]
আমেরিকান বাজেট ছাঁটাই আসু মন্দার একমাত্র কারন না। এর সাথে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া-- ইটালি লোন ডিফল্ট করতে পারে। গ্রীসের মতন ছোট দেশকেই বাঁচানো যাচ্ছে না-এর ওপর তার থেকে প্রায় দশগুন বড় একট অর্থনীতি দেওলিয়া হলে, ইউরোপের ব্যাঙ্কিং সিস্টেম ধ্বসে যাবে। ইউরোপে ওয়েল ফেয়ার অর্থনীতির দিন শেষ। সরকার সেখানে আরো বেশী ছাঁটাই করবে। ইউরোপে শিক্ষা,স্বাস্থ্য এসব আর বিনামূল্যে কেও পাবে না। সেদিন শেষ।

তবে মন্দের ভাল এই যে বর্তমানে বেসরকারি কোম্পানীগুলি লাভজনক এবং সেখানে মন্দা নেই। মন্দার সময় তারা প্রচুর ছাঁটাই করেছে-ফলে মন্দার পরবর্তী বাজারে প্রতিটা প্রাইভেট কোম্পানীর অবস্থা বেশ ভাল এখন। বর্তমানের মন্দা মূলত বেহিসাবী রাজনীতির জন্যে। রক্ষণশীল বা উদারপন্থী-কেওই একটি মধ্যম গ্রাউন্ডে আসতে চাইছে না। কিছুটা সরকারি খরচ ছাঁটাই, এবং কিছুটা কর বৃদ্ধি-এই ভাবেই এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। ডেমোক্রাটরা এখন তাই বলছেন-কিন্ত যখন তাদের হাতে ক্ষমতা ছিল-তখন বিল পাশ করেন নি কেন?
তবে অবস্থা যেদিকেই যাক, আমেরিকার খারাপ অর্থনীতি মানে গোটা বিশ্বের নাভিশ্বাস উঠবে।

Monday, August 1, 2011

সংশোধিত বামপন্থী



৩০,০০০ ভোটে হারার পর গৌতম বাবুর উপলদ্ধি, এই বাম বাজারে খাবে না।
বাজারে চালাতে নতুন প্রোডাক্ট- সংশোধিত বাম। সেটি পেটে দেয় না পাতে খায়, উনিই জানেন-কিন্ত রাজ্যবাসী প্রশ্ন করতেই পারেন, সংশোধিত বাম মানে আরো বাম না ডান দিক? কোন দিক সেটি?

পশ্চিম বঙ্গে বামপন্থী তিন প্রকার।
বামাদর্শে বিশ্বাসী কিন্ত মাঠে নেমে রাজনীতি না করে, ধনতন্ত্রের সেবাদাস হয়েই জীবন কাটাবেন। এদের বামপন্থা মৃণাল সেনে আটকিয়ে। এরা অনেক আগেই সিপিএম ছেরে তৃনমূলে।
পারিবারিক আদর্শের কারনে বাম রাজনীতি করেন বা বিশ্বাস করেন-সিপিএমের তথাকথিত বাম এই গোষ্ঠির। এদের বাম সিপিএম এবং গণশক্তির আঠাতে আটকে আছে।
বামাদর্শে বিশ্বাসী এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতি করেন-এরা খ্যাপাটে নক্সাল। সিপিএমের ঘোর শত্রু।
তাহলে গৌতমবাবু যে বামেদের সংস্কারের কথা বলছেন-তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর বাম-মূলত পারিবারিক ঐতিহ্যে বাম। কিন্ত এদের মূল সমস্যা -এরা স্বাধীন চিন্তার মালিক নন। পলিটখুড়োরা পাঁজি দেখে যা ব্যখ্যা দেবে, সেটাই এরা মানে। পলিটখুড়ো যখন বলেছিল টাটার পা চাটতে-এরা তখন সেটাকেই সঠিক এবং বাস্তববাদি বাম বলে ঊদবাহু নেত্য করেছে।
এই অধঃপতিত বামেদের একটাই সংস্কার সম্ভব। স্বাধীন চিন্তা এবং যুক্তির বিকাশ যাতে দল বেঁধে পলিটখুরোরা বখলেসে টান খেয়ে ঘেও ঘেও না করে। চিন্তা এবং যুক্তিশক্তির বিকাশ হলে, মানুষ সাধারনত বিচক্ষন হয়-ডান বা বাম হয় না-সোজা পথে চলে। তবুও বাম সংস্কারের এটাই একমাত্র পথ। বকলেস বাঁধা কুকুরগুলিকে মানুষ হতে হবে-নইলে সিপিএমের সমর্থক এবং সিপিএম মানে পশ্চিম বঙ্গের জনগণের কাছে ঘেও ঘেও করা হার্মাদ কুকুরের ইমেজই ভেসে ওঠে।

Monday, July 25, 2011

ব্রেভিক এবং মুসলিম বিদ্বেশী দক্ষিণপন্থার উত্থান



(১)
তিন বছর আগের ঘটনা। আমার একজন ড্যানিশ সহকর্মীর সাথে লাঞ্চ খাচ্ছি- বোধ হয় সেদিন কোন একটা কিছু ইসলামিক চরমপন্থী ঘটনা ঘটেছে। ফলত ইসলামিক চরমপন্থী এবং ইউরোপে মুসলিম অভিবাসন সমস্যার প্রসঙ্গ এসেই গেল। আমি খুব অবাক হলাম। ওর মতন একজন উচ্চশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ, ডেনমার্কে মুসলিম অভিবাসন নিয়ে এত ক্রদ্ধ-যে ও দরকার হলে বন্দুক নিয়ে গৃহযুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত। ক্রোধের কারন এন্ডলেস লিস্ট। এবং যার মূলে আছে মুসলিমদের ড্যানিশ সংস্কৃতিকে সম্পূর্ন অস্বীকার করে, ডেনমার্ককে ইসলামিকরনের চেষ্টা। ওর বক্তব্য ওরা কিছুতেই ড্যানিশ হবে না, ড্যানিশ সংস্কৃতিও মানবে না-দেশটাকে পাকিস্তান বানাবে।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন মানসিকতা আমি ভারতে হিন্দুত্ববাদিদের মধ্যে দেখতে অভ্যস্ত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইসলামিকরনে প্রশয় দেয় সেই দেশের লিব্যারাল এবং বামপন্থী গোষ্ঠি। ফলে ইসলাম এবং কমিনিউজমের বিরুদ্ধে যুব সমাজের ক্রমবর্ধমান রাগ পৃথিবীর প্রায় সব অমুসলিম দেশেই ( যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা ৫-১০% বা তারও বেশী ) ক্রমঃবর্ধমান। দিল্লীতে একটা তরুণ ছেলের কথা শুনে প্রায় অজ্ঞান হবার জোগার। বিহারের এক দাঙ্গায় কিভাবে নিজের হাতে মুসলমানদের পুড়িয়ে মারাতে অংশ নিয়েছিল-সেই কথা গর্ব করে সে বলে বেড়ায়! শুধু তাই না। আমেরিকা এবং ইউরোপের অনেক উচ্চশিক্ষিত (যারা আমার সহকর্মীও বটে) আমার কাছে নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে গেছে। কারন তাদের নেতারা ইউরোপে যা পারে নি, বা আমেরিকাতও যা পারে না- মুসলমানদের গণনিধন- তা নরেন মোদি করে দেখিয়েছে বটে!

সুতরাং ইউরোপের প্রবল মুসলিম বিদ্বেশ-যা এতদিন শুধু কথাতে বুঝেছি, আজ গোটা বিশ্ব বুঝল এন্ড্রেস ভেরিং ব্রাভিকের গণহত্যার মাধ্যমে। কমিনিউস্ট তথা কালচারাল মার্ক্সিস্টদের প্রতি তার ঘৃণা এত গভীরে, বামপন্থী তরুণ তরুণীদের একটি পলিটিক্যাল ক্যাম্পের ওপর নির্বিচারে গুলি চালালো।

আমি অবাক হইনি। আমার সেই ড্যানিশ বন্ধুটির কথা মনে পড়ছিল-ইসলামের বিরুদ্ধে তার এত রাগ, সে মনে করে বন্দুকের নলই একমাত্র সমাধান-কারন লেবার পার্টি ইউরোপে মুসলিমদের আরো বেশী প্রশয় দিচ্ছে এবং তারা ড্যানিশ সংস্কৃতি ধ্বংশ করছে। ব্রেভিকের ম্যানিফেস্টোও তাই- তার ধারনা মুসলিমরা আর দুদিন বাদে নরওয়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে এবং নরওয়ে বলে কিছু থাকবে না। ওটা ইউরোপের পাকিস্তান হবে। সুতরাং সে কুর্কীতি করে জনগণ ও মিডিয়া দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছে। আজকেও সে বলছে-কোর্টরুমকে তার আদর্শবাদি যুদ্ধের প্রচারের জন্যেই ব্যবহার করবে!

(২)

ব্রেভিকের দক্ষিন পন্থী আদর্শ নিয়ে কিছু লেখা দরকার। সে ইসলামের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন গড়তে চেয়েছিল-এবং দেখা যাচ্ছে ভারতের হিন্দুত্ববাদি, ইস্ত্রায়েল, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের দক্ষিণপন্থী মুসলিম বিদ্বেশীদের সাথে ইমেলে তার যোগাযোগ ছিল। সে মোটেও অন্ধ ধার্মিক না- যদিও নিজেকে সে ক্রীষ্ঠান ইউরোপের রক্ষকর্ত্তা বলেই ঘোষনা দিয়েছে। এবং তার কাছে খ্রীষ্ঠান ইউরোপ একটা রাজনৈতিক ধারনা যেখানে খ্রীষ্ঠান ধর্মের ভিত্তিতে ইউরোপে ঐক্য আসবে। যা ক্রুসেডের সময় থেকে একটি প্রচলিত সাংস্কৃতিক রাজনীতি। এমন কি ধর্মীয় রাষ্ট্রও সে তার ম্যানিফেস্টোতে চাই নি-খুব পরিস্কার ভাবেই "ইসলাম মুক্ত" ধর্মনিরেপেক্ষ লিব্যারাল স্টেটই চেয়েছে। তার রাজনৈতিক মতবাদ বিজেপির অন্যপিঠ- ধর্ম সেখানে জাতীয়তাবাদের প্রতীক। এবং অনেক ব্লগেই, ব্রেভিক বিজেপির কিছু বিশিষ্ঠ লেখকদের আকুন্ঠ প্রশংসা করেছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থানের জন্যে-- যে ইসলাম বিরোধি অবস্থান তার দেশের রাজনীতিবিদরা নিতে ব্যার্থ হচ্ছে বলে সে মনে করে। অর্থাৎ খুব স্পষ্ট ভাবেই ব্রেভিক এক রাজনৈতিক যোদ্ধা। একজন জেহাদি বা নক্সাল ( কমিনিউস্ট উগ্রপন্থী) যে কারনে হত্যাকান্ড চালিয়েও "সমাজ এবং দেশের জন্যে" বিরাট কিছু করছে বলে গর্ব বোধ করে-তার থেকে ব্রেভিকের হত্যাকান্ড আলাদা কিছু না। এটি খুবই পরিস্কার একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড এবং দক্ষিনপন্থী উগ্রপন্থাই এর জন্যে দায়ী।

(৩)
কিন্ত এই উগ্রপন্থা কেন? এই ক্ষেত্রে কমিনিউস্ট, হিন্দুইস্ট বা ইসলামিস্ট মৌলবাদি থেকে খ্রীষ্ঠান উগ্রপন্থী ব্রেভিক আলাদা কেও না। নক্সাল, জিহাদি, হিন্দুত্ববাদি বা খ্রীষ্ঠান উগ্রপন্থীদের মধ্যে কিছু প্যাটার্ন আমরা অবশ্যই দেখি

# পৃথিবীতে জাস্টিস নেই-বিচার নেই!
স্যোশাল মিডিয়ার দৌলত কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট এবং ক্রীষ্ঠান মৌলবাদিদের আদর্শ এবং মৌলবাদি হিসাবে তাদের বিশ্বাসকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য (!) থেকে মনে হয়েছে-এদের মনের গভীরে "ইনজাস্টিস" ব্যাপারটা ভীষন ভাবে উত্তেজিত করে।
জাস্টিসের প্রথম ধাপ আইডেন্টিটি বা নিজেকে একটি গ্রুপের বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করা। যেমন কমিনিউস্টদের ক্ষেত্রে এটি হয় শ্রেণীগত পরিচয়-তাদের ধারনা পৃথিবীতে শোষন আছে-এবং এই শোষন এবং অসাম্যটা একটা বিরাট বড় ইনজাস্টিস-এবং সেই ইনজাস্টিস টিকিয়ে রাখছে কিছু বড়লোক। সুতরাং এই জাস্টিসের দাবীতে সব কিছুই জায়েজ! মাই খুন পর্যন্ত।
ব্রেভিকের ব্যাপারটাও টাই। তার কাছে তার নরওয়েন পরিচিতিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এবং সেই পরিচিতি যারা ধ্বংশ করতে চাইছে-তারাই শত্রু। নরওয়েকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে শত্রকে খুন করতে হবে! সে এক অলীক যুদ্ধক্ষেত্রের যোদ্ধা। যুদ্ধে খুন করে সে শহীদ হতে চাইছে! একদম জিহাদিদের মতন।

একজন মুসলিম জিহাদির কাছে তার মুসলিম পরিচয় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন-এবং গোটা পৃথিবী বিশেষত আমেরিকা তাদের ওপর অত্যাচার করছে ইরাক আর আফগানিস্তানে-এটাই তাদের মনকে উত্তেজিত করে। যদিও বাস্তবে আমেরিকা বসনিয়া এবং আফগানিস্তানে মুসলমানদের মুক্তই করেছে!


# সে এক মহান কার্যে নিয়োজিত মহান যোদ্ধা
সে ইনজাস্টিসের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছে! সুতরাং সে মহান! মানবিকতার মাপকাঠি সেখানে চলবে না! প্রতিটি হিন্দু, কমিনিউস্ট, ইসলামিস্ট, খ্রীষ্ঠান ভাবে, সে মহান পথের পথিক-কারন এই আদর্শগুলিই পৃথিবীকে "জাস্টিস" এনে দেবে! যদিও তারা একবার ও ভাবে না বা শিক্ষার অভাবে জানে না ( বা জানালেও বিশ্বাস করে না), তাদের এই সব মহান আদর্শগুলিই পৃথিবীতে সব থেকে বড় বড় ইনজাস্টিস এবং নরহত্যা ঘটিয়েছে।

# একদিন গোটা পৃথিবী তার আদর্শের পদতলে আসবে
আদর্শে বিশ্বাসীদের জন্যে এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তার আদর্শই একদিন জিতবে, পৃথিবীতে রাজত্ব করবে-এমন ভ্রান্ত বিশ্বাসের বলি না হলে কিছুতেই একজন তরুণ তার আদর্শের জন্যে প্রাণত্যাগ করতে পারে না। এই চরম আত্মবলিদানের পজিশনে সে তখনই পৌঁছায়, যখন এই ফাইনাল জাস্টিস বা সবকিছুর পরে জাস্টিস আসবেই-এবং আসবে তার আদর্শের মাধ্যমে-এই ধারণা, তার মাথার মধ্যে ভীষন ভাবে পোক্ত হয়। ব্রেভিকের ম্যানিফেস্টো থেকে কমিনিউস্ট ম্যানিফেস্টো বা কোরান বা বাইবেল-সবকিছুই মানুষের মাথা ন্যাড়া করে এই ফাইনাল জাস্টিসের গল্প দিয়ে। আমি দেখেছি কমিনিস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট সবাই এই ব্যাপারে ভীষন রকমের এক। কার্বন কপি।

# একটা পিঁপড়ে মরলেও, সে সেটাকে তার আদর্শের সাদা কালো ফিল্টার দিয়ে দেখবে!

এদের সামাজিক বাস্তবতাতে পোস্ট মডার্নিজমের স্থান নেই সেখানে-সবই রাজনৈতিক বাস্তবতা। যেমন মুসলিম অভিবাসদের ক্ষেত্রে অসলোতে মোটে ৬০% লোক নিজেদের মুসলিম বলে রেজিস্টার করে-বাকি রা নিজেদের মুসলিম বলে না। অর্থাৎ মুসলিম সমাজেই এমন প্রচুর লোক অসলোতেই আছে, যারা তাদের ইসলামিক পরিচিতির চেয়ে নরওয়ের পরিচিতিই বেশী তুলে ধরতে ইচ্ছুক-এটা কিন্ত ব্রেভিকের ম্যানিফেস্টোতে নেই। দুনিয়া তার কাছে সাদা কালো। কোন মুসলিম অভিবাসী
নরওয়ের সংস্কৃতি গ্রহণ করে না তার মতে!

আমেরিকায় থাকা কোন বাঙালী কমিনিস্টদের বিরুদ্ধে লিখলেই বাঙালী কমিনিউস্টদের কাছে সে শিয়ার চর। মহম্মদের সমালোচনা করলেই সে ইসলামের শত্রু!

জাস্টিসের জন্যে খুন করা পবিত্রকাজ

১৯৭০ সালে বর্ধমানে সিপিএমের লোকেরা সাঁই ভাতৃদ্বয় বলে দুই কংগ্রেস সমর্থকে হত্যা করে তাদের মুন্ডু নিয়ে তাদের মায়ের সামনে নেচে ছিল। নেতৃত্বে ছিল, সিপিএমের কিছু প্রাত্তন মন্ত্রী। এই হত্যাকান্ড নিয়ে আমি যতবার সিপিএমের সমর্থকদের সাথে বিতর্কে গেছি-দেখেছি, তাদের কারুর কোন অনুতাপ নেই। বুক ভরে গর্ব করে। এমন কি ষষ্টি দলুই বলে এক প্রান্তিক কৃষকের চোখ খুবলে মেরেছিল বেশ কিছু সিপিএম হার্মাদ। আমি কোন সিপিএম সমর্থকের মধ্যে কোন অনুতাপ দেখি নি। নিন্দা করতেও দেখিনি। সাইরা বা দলুইরা কংগ্রেসের সমর্থক মানে তারা শ্রেণীশত্রু-সেটাই তাদের একমাত্র পরিচয়! ঠিক একই কারনে মুসলিম দুনিয়া ভারতে ঘটে যাওয়া ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মোটেও অনুতপ্ত না-তাদের অধিকাংশ গোপনে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ সমর্থনই করে। ঠিক একই কারনে মোদির আমলে ঘটা মুসলিম নিধন নিয়ে কোন হিন্দুত্ববাদি অনুতপ্ত না-বরং গর্বিত।

ব্রেভিকের অনুতাপহীন খুনী মানসিকতা বুঝতে-এগুলো বুঝতে হবে। সেন্স অব ইনজাস্টিস এবং শত্রুর ধারনা কি করে মানুষকে পশু বানাতে পারে। আজকে খুব পরিস্কার ভাবে বলার দিন এসেছে কমিনিউজম, ইসলামিজম, হিন্দুত্ববাদ, খ্রীষ্ঠান মৌলবাদ মানুষকে পশু বানায়-মানুষ করে না। মানুষ হওয়ার শিক্ষাটা আদর্শের পথে আসে না।

# তাদের শত্রুরা সব সময় শত্রুতা করছে-সবকিছুই তাদের বিরুদ্ধে চক্তান্ত
ব্রেভিকের মনে দৃঢ় বিশ্বাস মুসলিমরা নরওয়ে দখল করার চক্রান্ত করছে! কারন তারা ইঁদুর বিড়ালের হারে অসলোতে বংশ বৃদ্ধি করে! এবং তার কাছে এটা মুসলিম দুনিয়ার চক্রান্ত। যদিও বাস্তব এই যে ইউরোপের মুসলমান অভিবাসীদের মধ্যে বংশবৃদ্ধির হার বেশী কারন সোশ্যাল সিকিউরিটি। আমেরিকান মুসলিমদের বংশ বৃদ্ধির হার আমেরিকানদের সমানই। কারন এদেশে সবাইকে খেটে খেতে হয়। অর্থাৎ এই ধরনের কোন চক্রান্ত কোথাও নেই- মুসলিম অভিবাসীদের ফ্যামিলি সংস্কৃতির কারনে, তারা বেশী বংশ বৃদ্ধি করে-এটাকেই সে "পরিকল্পিত" চক্রান্ত বলে ভাবছে!

ঠিক একই জিনিস কমিনিউস্টদের মধ্যে দেখা যাবে। আমেরিকা যাই করুক তাই সাম্রাজ্যবাদি চক্রান্ত! মুক্ত বাণিজ্যের কারনে সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এবং চাকরী হারিয়েছে আমেরিকানরাই বেশী-সব থেকে বেশী লাভ করেছে ভারত। তবুও তা ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ! এই হচ্ছে চক্রান্ত তত্ত্বের মহিমা। আসলে এদের চিন্তার প্যাটার্নে শত্রু, ইনজাস্টিস এবং চক্রান্তের অস্তিত্ব জরুরী। নইলে এরা এদের "আত্মবলিদান" বা "ত্যাগের" পেছনে কোন কারন খুঁজে পাবে না।

# তারা কিছু সংস্কৃতির ব্যাপারে কিছু "বিশুদ্ধতার" ধারনাতে বিশ্বাসী-এবং সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিবর্তন তারা মানতে পারে না।

সমস্যা হচ্ছে এদের কে বোঝাবে জীবনের পরম লক্ষ্য বলে কিছু থাকতে পারে না। তাই একটি সংস্কৃতি, অন্যটির চেয়ে বাজে বা অনুন্নত এই ধারনার বলি হওয়াটা বোকামো। প্রতিটা সংস্কৃতির ভালো খারাপ দিক আছে এবং সাংস্কৃতি বিবর্তনের উদ্দেশ্য দুটি সংস্কৃতির সংশ্লেষ -বিরোধ না।

আমেরিকাতে যেমন চৈনিক এবং ভারতীয় সংস্কৃতির সংশ্লেষণ হয়েছে-বিরোধ ঘটেনি। ভারতীয়, চিনা খাবার, মার্শাল আর্, যোগ ব্যায়াম অনেক কিছুই আমেরিকার মূল সংস্কৃতি প্রবাহে ঢুকেছে। ইসলাম এবং কমিনিউস্টদের ক্ষেত্রে সংশ্লেষণ বলে কোন বস্তু হতে পারে না-কারন তাদের মধ্যে "বিশুদ্ধ" ধারনাটির বিশাল প্রভাব। চোখের সামনে একজন লোক যতই দেখুক ১২০০ মিলিয়ান মুসলিমের ১২০০ মিলিয়ান ধর্ম-এবং বিশ্বের প্রতিটা লোকের ধর্ম কার্যত আলাদা হতে বাধ্য- সে নামেই যত মুসলমান বা হিন্দু হোক-তবুও ইসলামিক বিশুদ্ধতা, হিন্দু বিশুদ্ধতা নিয়ে এরা চিন্তা করে যাবেই। দুটো কমিনিউস্ট পাবেন না, যারা কমিনিউজম বলতে একই জিনিস মানে বা বোঝে-তবুও এদের মধ্যে ১০ বার স্নান করে বিশুদ্ধ থাকার প্রবণতা প্রবল। সবটাই মানসিক রোগ।

ব্রেভিকের ও ধারনা বিশুদ্ধ ইউরোপের উত্তরধিকার বিশুদ্ধ খ্রীষ্ঠান সংস্কৃতি! এটা মিথ। জিহাদিদের ধারনা বিশুদ্ধ ইসলামিক সমাজ, মহম্মদের রাজত্বে আরব! হিন্দুত্ববাদিদের বৈদিক সমাজ। কমিনিউস্টদের কাছে স্টালিনের রাশিয়া। এসবই মিথ। কিন্ত মিথের ওপর ভিত্তি করে, আত্মবলিদান ও হত্যাকান্ড ঘটানো, পৃথিবীর ইতিহাসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন দিক। হিটলার থেকে আজকের ব্রেভিক-সবাই সেই "মিথ" ভিত্তিক যোদ্ধা। যার পরিণতি ভয়ংকর।

আমি কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট এবং ব্রেভিকের মতন সাংস্কৃতিক মৌলবাদিদের আলাদা করে দেখি না-কারন এদের সবাই মানুষ এবং মানুষ হিসাবে কেওই আলাদা হতে পারে না। শুধু ইনজাস্টিসের ধারনাটা এদের মধ্যে আলাদা। কিন্ত এদের মনের গঠন সম্পূর্ন এক-এটা আমার বহুদিনের নিজস্ব অভিজ্ঞতা।
বিশ্বাসের ভিত্তিতে এরা হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে এবং ঘটিয়ে যাবে। সুতরাং বিশ্বাস এবং মিথমুক্ত পৃথিবী চাই!

Sunday, June 12, 2011

উচ্চশিক্ষা মানে প্রেসিডেন্সি-পশ্চিমবঙ্গ মানে কোলকাতা?


গত কুড়িদিন ধরে নতুন সরকার, অনেক কিছুই করার চেষ্টা করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন পাহাড় বা জঙ্গল মহলের ক্ষেত্রে সমাধান এসেছে দ্রুত-কারন সমস্যার উৎপত্তির মূলেই ছিল সিপিএম। বা অসাধু অত্যাচারী সিপিএম নেতাদের প্রতি প্রান্তিক এবং ভাষা সংখ্যালঘুদের চূড়ান্ত অবিশ্বাস। এবং সেটা হয়েওছে সঙ্গত কারনে।

এর মধ্যেই কলকাতার জন্যে নেওয়া হচ্ছে একগুচ্ছের প্রকল্প। এর সবগুলোই ভীষন ভাবে দরকার ছিল-কারন কোলকাতার নাগরিক জীবনের মান ভারতের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর শহরের মধ্যেও আসে না।

অন্যদিকে উচ্চশিক্ষা বলতে প্রেসিডেন্সির হৃতগৌরব কি করে ফেরানো যায়-তাই নিয়ে বঙ্গ সমাজের উচ্চপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের প্রচুর মতামত এবং মিডিয়া ফ্ল্যাশ চোখে পড়ল। গত ২০ দিনে উচ্চশিক্ষা মানেই প্রেসিডেন্সি বা প্রেসিডেন্সি মানেই উচ্চশিক্ষা-এমনটাই মনে হয়েছে!

কিন্ত পশ্চিম বঙ্গ মানেই কোলকাতা না বা প্রসিডেন্সি মানেই উচ্চশিক্ষা না।

বাকি জেলাশহর, মফঃশহর এবং গ্রামের কোন সমস্যা নেই? কোলকাতায় জলের স্তর যাতে না নামে তার জন্যে অর্ডিনান্স তৈরী হল-অথচ গ্রামে গ্রামে যে ডিপটিউবয়েলের জন্যে জলস্তর নামছে-জলাশয় বুঁজিয়ে চাষাবাদ হচ্ছে-তার বিরুদ্ধে কোন উচ্চবাচ্য নেই! প্রতিটা মফঃশরে এমনকি জেলা শহরগুলিতে বাসস্টান্ড ও বাসপরিশেবার বেহাল অবস্থা। আপাতত সেই দিকে চিন্তা নেই কারুর। দিদি কোলকাতার হাঁসপাতালে গেলেন-বরাদ্দ এল। কিন্ত গ্রামের স্বাস্থ্যপরিশেবার হাল কি? সেখানেত ডাক্তারবাবুরা গরু তাড়াতে তাড়াতে প্রেস্ক্রিপশন লিখছেন এখনো!

আর উচ্চশিক্ষা বলতে প্রেসিডেন্সির হাল ফেরাতে যে সময় নষ্ট হচ্ছে আমার চোখে তা দৃষ্টিকটূ এবং ভুল পথ। রাজ্যের কলেজগুলো থেকে যে সব ছেলে মেয়েরা পাশ করে বেড়চ্ছে তাদের অধিকাংশ না লিখতে পারে একলাইন ইংরেজি, না দুলাইন বাংলা। এবার ভাইপো-ভাইজিদের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের জন্য পড়াতে গিয়ে দেখলাম অত্যন্ত নিম্নমানের নোট বই এর ছড়াছরি। পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা নালন্দার ধ্বংশাবশেষ। এর জন্যে সার্বিক ভাবে পঠন পাঠনের সংস্কার দরকার-ইংরেজীর মান উন্নয়নের জন্যে বৃটিশ কাউন্সিলের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে সব লেভেলে। কারন ইংরেজিতে দক্ষতা না থাকলে-এই গ্লোবাল অর্থনীতিতে বাংলার ছেলেরা আরো পিছিয়ে পড়বে। প্রেসিডেন্সি থেকে আরেকটা অমর্ত্য সেন বার করার থেকে, বাংলার ছেলেরা যাতে বিশ্বঅর্থনীতির সাথে যুক্ত হতে পারে সেই চেষ্টা করতে হবে দ্রুত। ব্রাত্যবসুকে আমার আপাতত একজন ক্লুলেস ভবঘুরে মন্ত্রীর মতই মনে হচ্ছে যিনি সংস্কৃতি দপ্তর না পেয়ে উচ্চশিক্ষার চেয়ারে বসে শুধু নিজের প্রাত্তন কলেজকেই দেখতে পাচ্ছেন।

Tuesday, May 31, 2011

অসীম দাশগুপ্তর ধাপ্পাবাজি বামফ্রন্ট পতনের অন্যতম কারন


রাজ্যের দেনা এই মুহূর্তে ২ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।

অসীম বাবু দাবী করছেন- এই দেনা এত বেশী লাগছে কারন "এর অধিকাংশই ক্ষুদ্র সঞ্চয় ঋণ"।
রাজ্যের লোক খুব ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে জমাচ্ছে, তাই রাজ্যের দেনা এত বেশী।

রাজ্যের লোক চীট ফান্ড ছেরে রাজ্যকে ধার দিচ্ছে-এটা ভাল সিস্টেম। কিন্ত সেই ধারটা কোন কাজে লাগিয়েছেন অসীম
বাবু? ওই ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের টাকাটা যদি রাজ্যের উন্নয়নের কাজে যেত-তাহলে সেটা ভাল ইনভেস্টমেন্ট। কারন সেক্ষেত্রে সেই উন্নয়ন থেকে বর্ধিত হারে রাজস্ব আসত রাজ্যের হাতে-তাই দিয়ে ধার শোধ হত। কিন্ত সেটাত হয় নি-রাজ্যকর্মচারীদের মাইনে দিতেই চলে গেছে সব টাকা। অমিতবাবুর দেওয়া তথ্য থেকে আমরা জানলাম, এই রাজ্য মাথাপিছু উন্নয়ন বাজেট সব থেকে কম। কারন মাইনে দিতে হচ্ছে ধার করে।

ধার- আমি মারোয়ারী, ব্যাঙ্ক বা ক্ষুদ্রঋণ-যার কাছ থেকেই নিই না কেন -সেটা ধারই। এবং সেই টাকা উন্নয়নে ইনভেস্ট না করে , মাইনে দেওয়া মানে সাংঘাতিক বিপর্যয়। ওই টাকাটা যার কাছ থেকেই ধার নিই না কেন-তা শোধ দিতে হবে-এবং সুদও দিতে হবে। সুতরাং সেই ধারের টাকাটা যদি আমি এমন খাতে ব্যয় করি, যাতে বর্ধিত রাজস্ব আসার পথ না খোলে, তাহলে তা সাংঘাতিক বিপদ। রাজ্যে লোকেরা টাকাটা ত দান করে নি!

মন্টেক সিং, মনমোহন এবং প্রণব বাবু বারবার অসীম বাবুকে বুঝিয়েছেন, স্বল্প সঞ্চয়ের টাকা ধারের টাকা। ওটা রাজস্ব না। তাই ওই গুপি দিয়ে রাজস্ব ঘাটতি মেটানো দেখাবেন না। অসীম বাবু শোনেন নি। এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন ক্ষুদ্র ঋণ আর ব্যাঙ্কের ঋণ আলাদা!

ফল এই যে, দেনার চাপে আজকে কাহিল রাজ্য- মাইনে দিতেও ধার করতে হচ্ছে বাজার থেকে। অসীম বাবুর কথা শুনে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাত্তন অর্থনীতির শিক্ষক শুধু হেঁসেছেন-নিশ্চয় আশ্চর্য্য ও হয়েছেন কি করে এক জন " অর্থনীতিবিদ" এই ধরনের পাতি ধাপ্পাবাজি চালিয়ে এসেছে এতদিন।

এর ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ বামফ্রন্ট সরকার নিজে। বেতন দিতে গিয়ে, কোন মন্ত্রকেই কোন টাকা ছিল না। সবাই নামেই ছিল মন্ত্রী-একটা টাকাও তাদের দিতে পারেন নি অসীম বাবু। এই নিয়ে তাদের মধ্যেও ক্ষোভ ছিল। কিন্ত পার্টির জন্যে কিছুই বলতে পারেন নি মন্ত্রীরা-শুধু ভোটে দাঁড়িয়ে জ্যন্ত ভুত হয়েছেন জনগণের হাতে।

ধাপ্পাবাজির ফল আর কোন কালে ভাল হয়েছে? তবে সিপিএম এর থেকেও শিক্ষা নিল না। এখনো চেঁচাচ্ছে রাজ্যের হাল ভাল ছিল। এই ধরনের মিথ্যে কথা বললে কি লোকে শুনবে? এর থেকে ভুল স্বীকার করে শিক্ষা নিলেই জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখবে।

Monday, May 30, 2011

মুসলমানদের আর কতোদিন মুসলমান হিসাবে দেখবে রাজনৈতিক নেতৃত্ত্ব?

মমতা ব্যনার্জি ক্ষমতায় আসার পর, তার অন্যতম সিদ্ধান্ত, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে মাদ্রাসা শব্দটি লাগানো। নির্বাচনী
প্রতিশ্রুতি। বা ধর্মীয় সুড়সুরি দিয়ে সংখ্যালঘু ভোট টানার চেষ্টা-কারন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ইসলামিক ছাত্র ইউনিয়ানের সেটিই ছিল নাকি দাবী। ভোটের আগে সিপিএম এবং তৃণমূল-দুটি দলই মুসলমানদের মন পেতে, ঢালাও ভাবে সাম্প্রদায়িকতার চর্চা করেছে বাংলার রাজনীতিতে। সেই ধরনের অনেক ধর্মীয় তোষনের মণিমুক্তোর, এটি একটি ছোট মুক্ত।

আপাতত বিধি বাম। আনন্দবাজারের খবর অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে "মাদ্রাসা" শব্দটির যোগ করায় আতঙ্কিত-এবং তারা পরীক্ষা বয়কট করছে। আনন্দবাজারের রিপোর্টঃ

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সঙ্গে ‘মাদ্রাসা’ শব্দটি যুক্ত করার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পরীক্ষা বয়কট শুরু করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবারের পরে সোমবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিষ্ট্রার ও পরীক্ষা নিয়ামককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। এর আগে শুক্রবার ওই পড়ুয়ারা মহাকরণের সামনেও বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন।

আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের রাগ খুব স্বাভাবিক। তারা সেখানে এসেছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজার হতে। সেখানে ডিগ্রির আগে মাদ্রাসা শব্দটা জুরলে, তাদের অসুবিধা সাংঘাতিক। এমনিতেই মুসলমান নাম থাকলে, ভারতে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি পাওয়া খুব মুশকিল। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে যদি মাদ্রাসা শব্দটা বসে, তাহলে অবস্থা কি হবে সহজে অনুমেয়।

এই সমাজে তাদের ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার হিসাবেই বেঁচে থাকতে হবে-মুসলিম ডাক্তার বা মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে নয়। এটা তারা ভালো বোঝেন। কিন্ত বোঝেন না মমতা ব্যানার্জি সহ এই রাজ্যের সমস্ত হিন্দু নেতৃত্ব। তারা মুসলমানদের উপকার করতে গিয়ে হয় দেন ৩০০ মাদ্রাসার উপহার ( সিপিএমের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি) বা একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের আগে মাদ্রাসা জুরে সংঘালঘুদের সুরসুড়ি দেওয়া। স্বাধীনতার পরে, এটাই হিন্দু রাজনৈতিক নেতৃত্ব করে এসেছে-এবং তাতে হিন্দু-মুসলমানদের দূরত্ব আরো বেড়েছে।

হিন্দু মুসলমান পরিচয়টা টেকানোর জন্যে রাজনীতি আজকে বিপজ্জনক। কেরালাতে কমিনিউজমের এত চাষাবাস হয়েছে সেখানে হিন্দু খ্রীষ্ঠান এবং মুসলিম ভোটের বিভাজন সম্পূর্ন এবং ধর্মীয় পার্টিগুলি দারুন রেজাল্ট করেছে। আসামে প্রধান বিরোধি পার্টি এখন একটি ধর্মীয় মৌলবাদি দল। "মুসলমানরা" আলাদা এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করেই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল এবং সেই বৃত্ত থেকে আজও আমাদের রাজনীতিবিদরা বেড়তে পারলেন না। কারন তারা মুসলমানদের মানুষ হিসাবে না ভেবে মুসলমান হিসাবেই ভেবে চলেছেন।

কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি-কেওই এর ব্যতিক্রম না।

Sunday, May 29, 2011

মমতাতন্ত্র


সেদিন মাধ্যমিকের কৃতীছাত্রদের সাথে সবে কথা বলা শুরু করেছেন শিক্ষামন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য।

প্রথম দুটো বাক্যের পরে তৃতীয় বাক্য আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী...।।

কাল পূর্নেন্দু চ্যটার্জির সাথে বৈঠক শেষে পার্থ চ্যাটার্জি জানালেন, আমাদের নেত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলে জানাব!

অমিত মিত্র প্রতিদিনে মমতা ব্যনার্জিকে বানালেন মার্টিন লুথার কিং!

বাকী সব মন্ত্রীরাই দেখছি প্রমাণ করার আপ্রান চেষ্টা করছেন, তারা কতটা মমতাময়ী! কে কত বড় ভাই তা প্রমান করার ইঁদুর দৌড় দেখতে পাচ্ছি মমতার সমস্ত মন্ত্রীদের মধ্যে।

মমতা পশ্চিম বঙ্গের জন্যে জোর কদমে কাজ শুরু করছেন-দলতন্ত্র ভাঙছে-হাঁসপাতালে কিছুটা গতি আসছে- শিল্পপতিরা আসতে চাইছেন-ব্যাঙ্ক সরকারকে লোন দিয়ে চাইছে। খুব ভাল কথা। আমিও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতাকে ১০ এ ১০ দিচ্ছি। কিন্ত তার মানে এই নয় দলতন্ত্রের বিবর্তিত রূপ হবে মমতাতন্ত্র! সেটা রাজ্যে একধরনের নতুন অগণতান্ত্রিক দিদিবাদি ফ্যাসিজম এর সূত্রপাত হিসাবেই গণ্য হবে।

মমতা ব্যানার্জির সাথে ইন্দিরা গান্ধীর দারুণ মিল। দুজনেরই রাজনৈতিক দর্শন হল "বেনিভোলেন্ট ডিক্টেটরশিপ" বা উপকারী স্বৈরাচার। অর্থাৎ সমস্যার সমাধানের জন্যে ইনারা মূলত ক্ষমতার কেন্দ্রীকতাকে বিশ্বাস করেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন পশ্চিম বঙ্গের লোকজনকে অধিকার দিয়েছে-কিন্তু তা জনসেবা দিতে সম্পূর্ন ব্যর্থ। তাই সমস্ত সরকারী হাঁসপাতালে পরিকাঠামো বলে আর কিছু নেই।

এই নাই এর নৈরাজ্য এই রাজ্যে।

সেখান থেকে রাজ্যকে একবিংশ শতকে ফেরানোর জন্যে দুটোপথ খোলা-স্বৈরাচারী শাসন অথবা আমেরিকার মতন "সিস্টেম" কে প্রতিষ্ঠা করা। মমতা ইন্দিরার পথকেই বেছে নিলেন। ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন ভারতে লোকেরা যতটা অধিকার সচেতন, তার সিকেভাগ দ্বায়িত্ব সচেতন না। বস্তুত তার এমার্জেন্সির মূল কারনটাই ছিল, একটা ভেঙে পড়া দেশকে সামাল দেওয়ার জন্যে সিস্টেমের ওপর নির্ভর না করে, স্বৈরতন্ত্রের পথে সমাধান খোঁজা। ইন্দিরা গান্ধী পরে নিজেই তার পদ্ধতির ভুল স্বীকার করেছেন।

মমতা রাজ্যের হাল এই স্বৈরাচারী শাসনের মাধ্যমেই ফেরাচ্ছেন-ভাল কথা। মুসোলিনী, হিটলার বা স্টালিনের আমলে ইটালী, জার্মানী এবং রাশিয়ার দুর্দান্ত উন্নতি হয়েছে-এগুলো সব সত্য। এবং হিটলার ক্ষমতায় আসার পর যেভাবে কড়া হাতে শাসনযন্ত্রকে সচল করেছিলেন, তার জন্যে আকুন্ঠ সহযোগিতা এবং ভালোবাসা পেয়েছিলেন জার্মান নাগরিকদের কাছ থেকে, আজ মমতাও জনগণের কাছ থেকে সেই ভালোবাসা, সমর্থন পাচ্ছেন। মুসোলীনিও কম জনপ্রিয় ছিলেন না-স্টালিনের ভক্ত রাশিয়াতে আজও আছে। কারন এরা সুদক্ষ দেশপ্রেমী শাসক-কিন্ত এদের অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কি আমাদের কাম্য?

পশ্চিম বঙ্গে মমতার স্বৈরাচারী শাসনের ফলে পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিসেবার হাল আস্তে আস্তে ফিরবে-সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এবং আমরা দেখছি জনগণের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা-সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এই স্বৈরাচারী পদ্ধতিতে রাজ্যের হাল ফেরানো পছন্দ করছেন। ১৯৩৩ সালের থার্ড রাইখ এবং 1922 সালে মুসোলিনীর ক্ষমতায় আসার পর বিদ্ধস্ত ইটালী এবং জার্মানীতে "স্বৈরাচারী" শাসনের প্রতি মানুষ আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। আজ পশ্চিম বঙ্গেও একই ঘটনা। তারা সত্যিই ভাল প্রশাসন উপহার দিয়েছিল, যা তাদের আগের সমাজতন্ত্রী পার্টিগুলি পারে নি। এর পরের করুণ ইতিহাস সবার জানা।

এবং দুটি ক্ষেত্রেই বামপন্থীরা ইটালি এবং জার্মানীতে গণতন্ত্র ফেরাতে ব্যার্থ হয়। মমতার বিরুদ্ধে এখন এই রাজ্যের প্রাত্তন সিপিএম একদম চুপ। ওদের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কোঠায়-কারন সিপিএম এই রাজ্যের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ভূতের মুখে রামনাম আর কবে বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে? পশ্চিম বঙ্গের আজকের ইতিহাসে সেই জার্মানী এবং ইটালীর ছায়া- বামপন্থী ব্যর্থতা-ফ্যাসিবাদের জনপ্রিয়তা এবং সেটা ঠেকাতে বামপন্থার আবার ব্যার্থতা। কারন তাদের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কিছু নীচে।

মনে রাখতে হবে দেশের এবং কোষাগারের হাল ফেরাতে ফ্যাসিজম জলদি ফল দেয় বটে কিন্ত তা দীর্ঘদিন টেকে না। হিটলার, স্টালিন, মুসোলিনি সবার পতন হয়েছে। কিন্ত আমেরিকান গণতন্ত্র এবং তার সিস্টেমের সাফল্যই গোটা পৃথিবী নিতে বাধ্য হয়েছে। এর মূল কারন, আমেরিকানরা উন্নত সিস্টেমে বিশ্বাস করে। ব্যাক্তিভজনা এখানে অচল। ওবামা যত ভুল করছে, এখানকার মিডিয়া তাকে একদম ছিন্নপত্র বানিয়ে দিয়েছে। মমতার ক্ষেত্রে পুরো উলটো-পশ্চিম বঙ্গের সব মিডিয়া এখন তার সাথে। কোন নিউজ পেপার বা মিডিয়াতে তার সমালোচনা নেই।

এই ধরনের সিস্টেম দীর্ঘদিন ভাল থাকতে পারে না, যেখানে চেক এন্ড ব্যালান্স নেই।

Saturday, May 21, 2011

ওবামা, মমতা এবং "চেঞ্জ"



(১)
সেটা ২০০৮ সালের জানুয়ারী। ওবামা বনাম হিলারি যুদ্ধ তুঙ্গে। আমি হিলারি ক্যাম্পের হয়ে কাজ করতে নামি। ওবামার চেঞ্জ ব্যাপারটা তখনই কেমন গোলমেলে মিডিয়া ম্যাজিক মনে হত। ইনসিওয়ারান্স এজেন্টদের হাতের পুতুল জো বিডেনকে ভাইস প্রেসিডেন্টিয়াল রেসের জন্যে ডাকতেই বুঝলাম- ওবামা ম্যাজিক দেখে লজ্জা পেতেন জাদু সম্রাট পি সি সরকার। কি সুন্দর সবাইকে বোঝালেন আসলেই আমি তোমাদের একজন। তারপর ইরাক, আফগানিস্তান থেকে একটাও সেনা সরল না ( দেশের সরকারগুলোই নাকি চায় না)।

ওয়াল স্ট্রীটের ডাকাতদের বিরুদ্ধে দু একবার হুঙ্কার ছারলেন। ব্যাস। সেটাই চেঞ্জ! এদিকে আমেরিকাতে রিপাবলিকান অধ্যুসিত রাজ্যগুলিতে শিক্ষকদের ছাঁটাই অব্যাহত। তাদের ট্রেড ইউনিয়ান করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হল। ওবামা এখনো চেঞ্জ চেঞ্জ করছেন না হয়ত লজ্জায়। চেঞ্জ ফেঞ্জের রেঞ্জ ফেলে এখন তিনি পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানে ড্রোন দিয়ে আরো দু একটা আল কায়দা ঘায়েল করে, পরের বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার ফন্দি আটছেন। বুশপোলা এত সফিস্টিকেটেড ছিল না-সে ইরাক আক্রমন করেই জনপ্রিয় হওয়া পছন্দ করেছে। চেঞ্জের রেঞ্জ ফেলে শত্রুর পেছনে কাঠি নেরে,জাতিয়তাবাদি জালে যা ওঠে আর কি। চেঞ্জ ফেঞ্জ অনেক কঠিন ব্যাপার! কে যাবে ব্যাবসায়ীদের লবির বিরুদ্ধে? যদিও সেই প্রতিশ্রুতি ছিল ষোলআনা। তার থেকে দু একটা দাড়িওয়ালা মারলেই মিলে যাবে দ্বিতীয়বারের চাবি।

২০০৯ এর বিশে জানুয়ারী ছিল ওবামার অভিষেক। এমন ভীর ছিল-শপথ গ্রহনের তিন ঘন্টা আগে পৌঁছেও ঢুকতে পারলাম না ক্যাপিটল হিলে। ক্যালিফোর্নিয়ার এক চেনা কংগ্রেসম্যানের কাছ থেকে অনেক কাঠখর পুরিয়ে এই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চেয়েছিলাম। ওবামাকে একপলক দেখার জন্যে কত আকুতি চারিদিকে।

যাইহোক মেট্রোতে ঢোকার জন্যে সেদিন লম্বা লাইন। আমার পাশে ছিল আলাবামার এক শিক্ষক। ওবামা না জিতলে নাকি সে আমেরিকা ছেরে চলেই যেত! এতই তার বিশ্বাস ওবামা এবং "চেঞ্জের" ওপরে। সবাই দারুন খুশী।

আসল সত্য এই বুশের জমানাতে আমেরিকার তখন এত বেহাল অবস্থা-চারিদিকে চাকরী নেই-অর্থনীতি কোমাতে-আমেরিকা ওবামাকে বিশ্বাস করতে চেয়েছিল। বিশ্বাস না করে কোন উপায় ছিল না। ডুবন্ত মানুষের কাছে ভেসে থাকা কাঠই পরিবর্তন। সেই খরকুটো জরিয়ে ধরেই সে ভেসে থাকতে চায়। সেটাকেই সে নৌকা বলে বিশ্বাস করতে চাইবে।

(২)
বিশে জানুয়ারী ২০০৯ থেকে বিশে মে ২০১১-ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হল এবার কোলকাতায়। সেদিন কোলকাতায় ছিলাম না-কিন্ত সমস্ত টিভি চ্যানেলে খুশী খুশী যেসব মুখ ভেসে উঠল-মনে করিয়ে দিচ্ছিল ২০ শে জানুয়ারীর সেই শিক্ষকের কথা। সেই জনপ্লাবন, জনউচ্ছ্বাস-মুক্তির স্বাদ, নতুন ভোরের স্বপ্ন চারিদিকে। আমি অবশ্য ঘর পোড়া গরু-তাই তাদের উচ্ছ্বাসে গা ভাসাতে গেলেই, অজান্তেই চেপে বসেছিল পা হরকানোর ভীতি। বুশের অপশাসন থেকে সেদিন যেমন লোকে মুক্তি চেয়েছে-এদিন মুক্তি চেয়েছে সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসন থেকে। তাই উচ্ছ্বাসের মাত্রা ছিল বাঁধন ছাড়া। ওবামাও যেমন একটিও ঘন্টা নষ্ট না করে প্রথম দিন থেকেই কাজে নেমে গিয়েছিলেন-মমতাও শপথ গ্রহনের পর সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেছেন। মিডিয়া সেদিন ওবামাকে সুপ্যারম্যান সাজিয়েছিল-এখানেও মমতাকে সুপারউম্যান প্রমানের জন্যে প্রতিযোগিতাতে নেমেছে সব মিডিয়া। ওই যে বললাম ডুবন্ত মানুষ। সে বিশ্বাস করতে চাইছে ভেসে থাকা কাঠই নৌকা-মিডিয়াও সেটাই খাওয়াচ্ছে। এখানে তাও রিপাবলিকান মিডিয়া বিরোধিতা করেছে-বঙ্গে এখন সেটাও দুর্লভ। মমতা বিরোধি কেবল চ্যানেল গুলো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে! তারাও নেমেছে মমতা বন্দনাতে! নইলে বিজ্ঞাপন আসবে কোথা থেকে? যতই দেখছি-ততই অবাক। একই আবেগ, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। এখানেও সবাইকে বিশ্বাস করানো হচ্ছে মমতা তোমাদের লোক! ঠিক ওবামা ক্যাম্পেনের মতন! একই ভাবে সবাই বিশ্বাস করছে একটা শব্দে "চেঞ্জ"।

(৩)
চেঞ্জ?

তৃণমূল আসলেই একটা গণপ্রতিরোধের নাম। সিপিএমের লাল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ। ২০০৭ সালের পর থেকে এটাই তৃণমুমের মুখ। তার আগে তারা ছিল কংগ্রেসের একটা পতিত অংশ। যা কখনো বিজেপি, কখনো কংগ্রেসের লেজুর হয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করত। কিন্ত সিঙ্গুরে সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা অগ্রণী হতেই-সাধারন মানুষ সিপিএমের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে শুরু করে। যেটা আগে দেখা যায় নি কখনো। সিপিএমের গুন্ডারাই নিয়ন্ত্রন করেছে রাজনীতি। কিন্ত বোষ্টনের বিদ্রোহ যেমন আমেরিকার কলোনীগুলোতে দ্রুত সাহস জুগিয়েছিল শতগুন শক্তিশালী বৃটিশ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে-এখানেও নন্দীগ্রামের প্রতিরোধ মানুষকে শিখিয়েছে-সিপিএমের গুন্ডা মেশিনের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।

সেই অর্থে ওবামাও ছিল কর্পরেট আমেরিকার বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা। ওয়াল স্ট্রীটের চালে ঘর হারিয়েছে কোটি কোটি আমেরিকান। কর্পরেট আমেরিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভকে পুঁজি করেছেন ওবামা। অনেক রিপাবলিকানরাও তাকেই ভোট দিয়েছে। এখানেও অনেক অনেক বামপন্থীরাও আছেন মমতার পাশে। কারন "চেঞ্জ"। "চেঞ্জ" এ বিশ্বাস করলে অনেক কিছুই সম্ভব।

এই পরিবর্তন ছারা গণতন্ত্র অসম্ভব। এই পরিবর্তন ছারা যেকোন সিস্টেমই ফ্যাসিস্ট সিস্টেমেরর দিকে এগোবে। এই পরিবর্তন ছারা সামাজিক বিবর্তন আটকে যাবে। যা হয়েছে পশ্চিম বঙ্গে। ১৯৭৭ সালে ভারতের প্রথম সারির একটি রাজ্য, বর্তমানে শিক্ষা থেকে শিল্প-সব কিছুতেই পেছনের বেঞ্চে। অর্জন বলতে সাধারন জনতার হাতে ক্ষমতার স্বাদ-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সিপিএমের শাসনে হয়েছে। কিন্ত কোন রাজনৈতিক সিস্টেম উন্নততর উৎপাদন শক্তি না দিতে পারলে, তার মৃত্যু অবধারিত। তাই ভারতের বামশক্তিও মৃত্যু শয্যায়। উন্নততর বাম চিন্তা না এলে, ভারতের বামশক্তি কংগ্রেসের মাধ্যমেই টিকে থাকবে-বামনামধারি পার্টিগুলি সাইনবোর্ড হয়ে যাবে।

কিন্ত আসলেই চেঞ্জ আসবে কি? ৬ ই মে তপন দত্ত নামে তৃনমুলের এক যুবকর্মী খুন হয় হুগলীর বালিতে। সেই ছেলেটি জলাভূমি বাঁচাতে স্থানীয় লোকেদের নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল। তার খুনের পেছনে হাত প্রোমোটারদের-এবং দেখা যাচ্ছে ছেলেটি সিপিএম তৃণমুল সব নেতৃত্বের চক্ষুশুল হয়ে উঠেছিল। শশাঙ্কের মৃত্যু সিম্বলিক-নিতান্তই সাধারন ব্যাপার যে সে নেতাদের টাকাপয়সা কামানোর অন্তরায় হয়ে উঠেছিল। গত দুবছরে দলে দলে সিপিএমের গুন্ডারা তৃনমুলে যোগ দিয়েছে। আরো দেবে। এটাই বাস্তব। মমতা বা বুদ্ধ মুখোশের নাম-আসল মুখ, নেপথ্যের কুশীলবরা বদলান নি কিন্ত।

উৎপাদক এবং উৎপাদনের ব্যাবস্থার মালিকানার মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন না এলে কোন পরিবর্তন বা চেঞ্জ আসা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতেই অসম্ভব। তবুও মমতা যেটা পারবেন-সেটা হচ্ছে ভারতের উন্নত রাজ্যগুলি যেমন গুজরাট বা মহারাষ্ট্রের মতন রাজ্যের অর্থনীতিকে কিছুটা শক্তিশালী করতে পারেন। এর মধ্যে গুজরাত থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ওখানে কোয়াপরেটিভ আন্দোলন সফল। একমাত্র গুজরাতেই আমি দেখেছি সাধারন লোকজন দলে দলে উদ্যোগী হয়ে কিছু না কিছু ব্যাবসা করার চেষ্টা করে। ফলে গুজরাতের মাথাপিছু আয় পশ্চিম বঙ্গের প্রায় চারগুণ। এবং এর জন্যে টাটা আম্বানীদের লাগে নি। সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাবসা করার চেষ্টা এবং রাজ্য স্তরে তার জন্যে সব ধরনের সাহায্যই, তাদেরকে আজ ভারতের সেরা অর্থনৈতিক রাজ্যে পরিণত করেছে। মমতা একা খেটে সব চেঞ্চ করে দেবেন এমন ভাবনাটাই ভুল।

বাঙালীর জীবনে পরিবর্তন আনতে গেলে, প্রতিটা বাঙালীকে ব্যাবসামুখী হতে হবে। মমতা ব্যবসার বাতাবরন তৈরী করতে পারেন মাত্র। নইলে বাংলা যে তিমিরে আছে সেখানেই থাকবে। পশ্চিম বঙ্গের অর্থনীতি প্রায় ৬০% মারোয়ারীদের কন্ত্রোলে। আমাকে একজন বিখ্যাত বাঙালী ডিরেক্টর বলছিলেন, কি করে ভালো বাংলা সিনেম হবে? সব টাকাত মারোয়ারীদের হাতে-আমি তাদের কিভাবে বোঝাবো বিভূতিভূষন? বাংলায় আপনি সিনেমাই করুন, বা নিউজ পেপারই খুলুন বা নিউজ চ্যানেলই খুলুন। সব কিছুতেই হাত পাততে হয় মারোয়ারীদের কাছে। সংস্কৃতিতে উন্নত নাসিকা বাঙালীর এটাই আসল পরিচয়। এর থেকে পরিবর্তন? শোষনের হাত থেকে পরিবর্তন?

আসবে না। অত চেঞ্জ কেও চাইছে বলেও মনে হচ্ছে না। মাছ ভাত খেয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারলেই বাঙালী খুশী। চেঞ্জটাও খুশী হওয়ার জন্যেই। আসল চেঞ্জ নাই বা এল-চেঞ্জ নিয়ে দু একটি গান গাইতে পারলেই বাঙালী খুশী।

Thursday, May 19, 2011

Minimum wage for the housemaids, a long awaited Bill

Despite all said and done, in India-middle class household will be completely paralyzed without helping hands from the housemaids. Such is the acute pain of dependence once my sister told me, she is not worried for her poor health but if her kajer masi ( housemaid) could not report due to illness, all hell will break lose!! It is difficult to think of a middle class Indian doing all the domestic chores
by himself which is otherwise the most common scenario for any citizen in the advanced countries.

Over the time, following the rules of free market, their wages have soared in the metros. In the affluent cities like Delhi or Bangalore, housemaids charge between 4000/ to 6000/ a month.In less advanced areas like Kolkata or Bhubeneshwar, wages can be close to a thousand. In the village towns, it can be even as less as 300/ to 500/ per month. While I have seen this whole spectrum, one crude reality remains the most notorious apprehension against the maids everywhere. Most of their masters think that they are irresponsible, unpunctual and lesser of a human being just because they could not make to the work occasionally. I am not sure, whether their masters ever asked them whether she has been forced to put sleeping pills to her son's breakfast so that she can come to work!

But that is another side of being Indians! Even if class consciousness exists in all the societies of the world, in India, it is exploded out of proportion. In Bengal, where the leftist ideals of equality and emancipation of the poor is held in high esteem among the intellectual mass, I have seen this division between the maids and the masters prevail exactly with the same propensity like any other state. While leftist Babu may preach for a classless society, he also can not think of a living without a housemaid cooking for him or cleaning his dishes. Leftist ideals in Bengal are more for romanticism, politics and poetry. It is not for a self evolution to act in a classless consciousness where he or she would be able to do all of his domestic works starting from cooking to cleaning. In that respect, I found monks in R K Mission are more leftist as they do all of their works without housemaids irrespective of their ranks.

However, this housemaid industry, if I am allowed to say so-is perhaps the largest industry in India. Where workers have no right, no vacation and no minimum wage.

Thankfully for the first time in Indian history, Sonia Gandhi is trying to bring a bill to enforce a minimum wage and vacation rule for these unorganized workers. I don't know how far it is possible to implement such labor law in India where even the organized labors do not get their PF and gratuity but the move and the gesture is welcome. Ironically, a strict imposition of the law can kill the housemaid market as minimum supporting wage may act as deterrent to the growth of this market. But question is-do we want the growth of this market when this kind of feudalism is a trait of less advanced country. Therefore even it is more likely that such a bill will lead to a symbolic protection of the poorest of the poor Indians, it would be a reminder to transit to a new social structure without maids. The reason here in USA, we respect all the professions has to do with the fact that every
American is learned to do all kinds of domestic work from cleaning to fixing of the roof from the very childhood.

A productive classless society in India will be born with that consciousness of respecting and learning all the manual works and not with the slogans of Leninism or Marxism. People of West Bengal already routed them out in favor of a very pragmatic political alliance. If the lefts in India can not have a better and pragmatic idea of how to organize the poorest of the poor labors, they may do better by joining the bandwagon of Sonia Gandhi to implement such labor reform which is long due in India!

Wednesday, May 11, 2011

এক ঐতিহাসিক মুহুর্তের প্রাক্কালে

৩৫ বছর একটা রাজ্যে কমিনিউস্ট বা লেনিনবাদিরা থাকলে কি হাল হতে পারে, সেটা ইতিহাসের অন্যান্য
লেনিনবাদি পরীক্ষা থেকেই বোঝা যায়।

রাজ্যের জন্যে সিপিএম কিছু করে নি এমন না। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের থেকে এ রাজ্য শিল্পে পিছিয়ে থাকলেও
ভূমি বন্টনের জন্যে এ রাজ্যের চাষীদের অবস্থা কিছুটা ভাল। তবে ভূমিহীন চাষী এবং শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ।
গুজরাতে বা মহারাষ্ট্রে যেখানে বছরে ১৮০ দিন কাজ পায় তারা, এরাজ্যে ৪০ দিন ও কাজ পায় না ভূমিহীন লেবারের
দল। এদের অধিকাংশই কাজ করতে চলে যাচ্ছে কেরালা বা গুজরাতে।

মূলত ভুল শিল্পনীতির জন্যেই বিদায় নিচ্ছে আজ সিপিএম সরকার। তারা জানত যুবকদের চাকরী দিতে হবে। কিন্ত
কিভাবে হবে, সেটা কিছু মাস্টারমশাইদের জানা সম্ভব ছিল না-যারা জীবনে কোনদিন কোন উৎপাদন পদ্ধতির
সাথে যুক্ত ছিলেন না। শেষে শিল্প স্থাপনের জন্যে টাটা সেলিমদের গোলাম হতে গিয়ে এক দালাল চক্রের হাতে
আসে সিপিএম। জনগনের পার্টি দালালদের পার্টিতে পরিণত হয়।

এর পরেও টিকে যেত সিপিএম। যদি না মাথার ওপরে প্রকাশ কারাতের মতন এক নিরেট নেতার বোঝা টানতে হত।
মমতাকে ঠেকানোর সব থেকে সহজ উপায় ছিল কংগ্রেসের সাথে কেন্দ্রে একসাথে দেশ শাসন করা। সেক্ষেত্রে বিজেপি
ছারা মমতার গতি ছিল না-এবং সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোটও হারাতে হত না। এই সামান্য পাটিগণিত বোঝার ক্ষমতাও
যার নেই-তিনি সিপিএমের বড়কর্ত্তা। ফলে যা হবার , তাই হচ্ছে।

যাইহোক ১৩ ই মে সব অর্থেই এক ঐতিহাসিক বিজয় হবে। এ বিজয় হবে গণতন্ত্রের। আশা করা যায়
তৃণমূল দ্বায়িত্ববান অর্থবহ শাসকের ভূমিকা নেবে। যা নিতে বুদ্ধ সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছেন। লেনিনবাদ মেনে
রাষ্ট্রর চেয়ে পার্টি বড় বানাতে গিয়ে পার্টি এবং রাজ্য -দুটোকেই ডুবিয়েছেন। যেখানে রাজ্য দেনায় ডুবে
যাচ্ছে-চাষীভুষো বেকারের দল নিজেদের মেয়েকে মুম্বাই এ বেচতে বাধ্য হচ্ছে সেখানে
আমেরিকা কোথায় হাগছে তাই নিয়ে মিছিল করা এক অবাস্তব ভাঁড়ামো এবং ছাগলামোতে পরিণত হয়েছিল
পশ্চিম বঙ্গে। তার সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক বনধ সংস্কৃতি জুরে আজকে ফল এই যে দেশের সব থেকে বেশী বেকার
এবং বেশ্যার সাপ্লাই লাইন আজ পশ্চিম বঙ্গ। ২০,০০০ শিক্ষক এখনো পেনসন পান নি।

উৎপাদন ব্যবস্থাকে ধ্বংশ করে কোন আন্দোলন আজ পর্যন্ত ইতিহাসে জেতে নি। তাই অবাস্তব বাম আন্দোলন ত্যাগ
করে বাস্তবমুখী বাম আন্দোলনের সময় এটা। নইলে জনগনের আন্দোলন চলে যাবে দক্ষিন পন্থীদের হাতে-যেটা
মহারাষ্ট্রে হয়েছে-সেখানে জটাই পুরে জমি আন্দোলনের নেতৃত্বে আছে শিব সেনা। কারন মহারাষ্ট্রে বাম আন্দোলন
আজ মৃত। গোটা দেশেই বাম আন্দোলন মৃত হওয়াটা সময়ের অপেক্ষা যদি না এই হার থেকে সিপিএম শিক্ষা নিয়ে
নতুন ধরনের বাস্তববাদি বাম আন্দোলনে মানুষকে সামিল করে যা উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থার শর্তগুলি লঙ্ঘন করবে না।

Tuesday, May 3, 2011

ওসামার মৃত্যু এবং পাকিস্তান -অসমাপ্ত প্রশ্ন

ওসামা মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক রাজনীতি এত গরম-ভাবলাম এই মহামৃত্যুতে নিশ্চিত ভাবেই বিরাট কিছু একটা পরিবর্তন হবে। কিন্ত যতই যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি, ততই দেখছি, যুক্তিতে আবেগের রেশ টানা যাচ্ছে না। সত্যিই কি ওসামার মৃত্যুতে বিরাট কিছু বদলাবার সম্ভবনা আছে? না ওসামা রাবণের অনেক মুখের একটি-যতই কাট ততই গজাবে?

২০০১ এর ১১ ই সেপেটম্বর আমি নিউয়ার্কের পথেই ছিলাম। টুইন টাওয়ার ধ্বসের ছাই এবং ধোঁয়া এখনো আমার স্মৃতিতে অম্লান। সেই আতঙ্কের দিনের ভয়াবহ স্মৃতিতে খুশী হওয়ারই কথা- পয়লা মে যখন হোয়াইট হাউসের সামনে জনোৎসব শুরু হয়েছে-তখন একবার ভাবলাম, ওদের ভীরে সামিল হই। কিন্ত কোথাও সুরটা কেটে গেল। অনেক প্রশ্নের জবাব নেই!

(১) ৯/১১ এর পরেও অনেক অনেক ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ পৃথিবী দেখেছে। বালি মুম্বাই মাদ্রিদ লন্ডন-অক্টোপাসের সকল শুঁড় পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। এর মধ্যে একটি বাদ দিলে, বাকীগুলিতে ওসামার কোন ভূমিকা নেই। তাহলে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুতে কি যায় আসে? বরং হামিদ মীরের ভাস্য অনুযায়ী ওসামা তার অনুগামীদের কাছে কথা রেখেছেন। জ্যান্ত ধরা দেন নি। শহীদ হওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন।

(২) বলা হচ্ছে তিনি ইসলামিক সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের আইকন! তার মৃত্যুতে তার সাঙ্গপাঙ্গরা মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়বে!
ব্যাপারটা তাই কি? সবাই জানত আজ না হলে, কাল, ওসামা শহীদ হবে। বরং তার মৃত্যু বা আত্মত্যাগ অনুপ্রেরণার জন্ম দেবে আরো বেশী। আত্মত্যাগী শহিদরা জনমানসে হিরো-এটা আমাদের বিবর্তন সঞ্জাত মননের গভীরে প্রেথিত। একটা দলের জন্যে যে প্রাণ দেয়, তাদের প্রতি বাকীদের শ্রদ্ধা একটা সমাজের সারভাইভ্যাল স্ট্রাটেজির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আর যদি আইকন মেরেই সব কিছু করা যেত, মক্কা মদিনাতে একটা হাইড্রোজেন বোম ফেললেই ইসলামি ফ্যানাটিসিজম খতম হওয়ার কথা। ব্যাপার স্যাপার কি অতই সহজ না কি?

(৩) সন্ত্রাসবাদি আন্দোলনের তিনটি পিলার-আদর্শবাদ,টাকা এবং অস্ত্র। ওসামার মৃত্যুতে কোনটা কমল? পাকিস্তানের মাদ্রাসাতে এই সন্ত্রাসী আদর্শের চাষাবাদ হয়-টাকা আসে আরবের দেশগুলোর ইসলামিক সহমর্মীদের কাছ থেকে-আর অস্ত্র এবং প্রশিক্ষনের জন্যে আই এস আই ত আছেই। নইলে মিলিটারীর নাকের ডগায় ওসামা পাঁচ বছর নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিল?

ঘুরে ফিরে দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদের পেছনে আসল নাটের গুরু পাকিস্তান নামে একটি ব্যার্থ রাষ্ট্র। তাদের কব্জা না করতে পারলে-এই সন্ত্রাসবাদ শেষ করা অসম্ভব। আরো অসংখ্য ওসামার জন্ম দিতে পারে তারা। আমেরিকা তাদের সন্ত্রাস দমনে যে টাকা দিচ্ছে, হয়ত সেটাই সন্ত্রাসবাদিদের কাছে যাচ্ছে! হতেই পারে। আমেরিকান সেনেটররাই আজ এই প্রশ্ন তুলছেন। পাকিস্তানের অবস্থা এতই বাজে সন্ত্রাসবাদিরা যেকোন দিন যেকোন মন্ত্রীকে মারার ক্ষমতা রাখে কারন রাষ্ট্রর যন্ত্রের মধ্যেই হাজার হাজার সন্ত্রাসবাদি ঢুকে বসে আছে।

যারা ইসলামি শাসন ব্যাবস্থা বা শরিয়া রাষ্ট্রের স্বপ্নে বিভোর-তাদের তাকানো উচিত পাকিস্তানের দিকে। মধ্যযুগীয় কোন চিন্তাধারার ( শরিয়া) ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র চালাতে গেলে, কি হাল হবে, তার উজ্জ্বল উদাহরন পাকিস্তান। ভারতেও জাতিদাঙ্গা এবং ধর্মীয় টেনশনের পেছনে বড় কারন, মুসলিমদের অতীতকে ( শরিয়া) আঁকরে থাকার প্রবণতা। এরা বিজ্ঞান বলতে কোরানে অপবিজ্ঞানের সন্ধান করে। ফলে সমগ্র ইসলামিক বিশ্বে শুধু সন্তানেরই উৎপাদন হয়-কোন উন্নত প্রযুক্তি-বা উন্নত উৎপাদন কাঠামোর জন্ম সেখানে হয় না। তরুন সমাজ বেকার। তীব্র খাদ্য সংকট। ফলে আজ গণতন্ত্রের জন্যে উত্তাল মধ্যপ্রাচ্য। ইসলামিক বিশ্বে জনসংখ্যার বিস্ফোরন এবং সেই আগত নবীন সমাজকে খেতে না দিতে পারা-গোটা বিশ্বের সংকট হয়ে দাঁড়াবে।

সেটাই সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর। উৎপাদন কাঠামোর আধুনিকরন নেই-উৎপাদন বৃদ্ধি নেই-অথচ জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিল চক্রাকারে। বিন লাদেনের বাবা মহম্মদ লাদেনের ২২ স্ত্রী, ৫৪ সন্তান। একজন স্ত্রীর একটু বয়স হলেই, তিনি তাকে ডীভোর্স করে নতুন স্ত্রী নিতেন। ইনি নাকি আবার খুব ধর্মপ্রান মুসলিম বলে সমগ্র আরব বিশ্বে সমাদৃত। এই যখন একটা ধর্মের লোকেদের অবস্থা যারা আধুনিক চিন্তাধারাকে সম্পূর্ন বর্জন করে ঘরির কাঁটা উলটো দিকে ঘোরাতে চাইছে-তখন সন্ত্রাসবাদ কমার লক্ষ্ণন দেখছি না।

আর আমেরিকাতেও যুদ্ধ ব্যাবসায়ীর অভাব নেই। জাপান, জার্মানীর সাথে এখন যুদ্ধ সম্ভব না। এখন যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সম্ভব কারন সেখানে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামো এখনো আছে। সেখানে লোকে জাতি, ধর্মে বিশ্বাস রাখে বেশী। আধুনিকতায় বিশ্বাস নেই ইসলামিক সমাজে। যুদ্ধ ব্যাবসার জন্যে সেটা আদর্শ। সেই জন্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প গর্বের সাথে বলতে পারেন-এত রাখঢাক করে কি হবে? ওখানে যুদ্ধ ব্যাবসা করেই লাভ করা উচিত! মুসলিমদের এই মধ্যযুগীয় মানসিকতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসা করার জন্যে আমেরিকা, ইংল্যান্ডে অনেক লোক আছে।

ওসামা একটা ক্যান্সারের সামান্য লক্ষণ। পচন অনেক গভীরে-পাকিস্তানে। সেই রাষ্ট্রটা ঠিক না হলে-এই ক্যান্সার শুধুই ছড়াবে।

Saturday, April 16, 2011

বিকল্প মার্ক্সবাদের সন্ধানে-কাউন্সিল কমিনিউজম


[1]
মার্ক্সবাদের প্রয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ক গত ১৫০ বছর ধরে ছিল-এবং সেই বিতর্ক এখনো চলছে। মার্ক্সবাদ চর্চার সব থেকে দুর্বলতম দিক হচ্ছে, অধিকাংশ মার্ক্সবাদি চর্চাই হয়েছে কমিনিউস্ট জমানাতে-এবং তার বৃত্ত শাসকদলের রক্ষচক্ষুর মধ্যেই পালটি খেয়েছে। এই রেজিমেন্টেড মার্ক্সবাদের বাইরেও স্বাধীন ভাবে যারা মার্ক্সবাদ নিয়ে অন্যরকম চিন্তাভাবনা করেছেন-অন্য ধরনের প্রয়োগ চেয়েছেন-তাদের চিন্তাধারাই আজকে আমার কাছে অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। তাদের চিন্তাসূত্র ধরেই এই প্রবন্ধ লেখা।

[২]
মার্ক্স যে ব্যাক্তিগত জীবনে বিপ্লব চাইতেন, বিপ্লব করতে গিয়েছিলেন-সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। সেটা সত্য হওয়া সত্ত্বেও, গত ১৫০ বছরে কমিনিউস্ট বলে একদল ফ্যাসিস্ট মতবাদিদের হাতে মার্ক্সবাদে ছিনতাই হয়েছে। সুতরাং যে ব্যাপারগুলি অধিকাংশ মানুষের অলক্ষ্যে থেকে গেছে-

[১] মার্ক্স কি রক্তাত্ব বিপ্লবে আস্থা রাখতেন?
[২] যে কোন ধরনের জন বিপ্লব কি মার্ক্সবাদের বিবর্তন তত্ত্ব থেকে আসে?
[৩] গনতান্ত্রিক না সশস্ত্র বিপ্লব- মার্ক্সবাদের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন?
[৪] মার্ক্সবাদ কি মার্ক্সের ব্যাক্তিগত মতবাদ?

গুগল করলে এই চারটি প্রশ্নের জন্যে হাজার হাজার প্রবন্ধ উঠে আসবে। একটু গভীরে গেলেই দেখবেন গোলমাল আছে।প্রথম গোলমাল এটাই একটি সামাজিক বিবর্তনের তত্ত্বে -বিপ্লব বা রাতারাতি সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন কোথা হইতে আসে??? এই বৈপ্লবিক পরিবর্তনের তত্ত্বকি আদৌ বৈজ্ঞানিক? কার্ল মার্ক্সের অজস্ত্র লেখা আছে যেখানে বিপ্লবী এবং জনবিপ্লবের কথা লিখেছেন। জনবিপ্লবের প্রতি তার ভালোবাসা এই প্রবন্ধে আরো ভাল করে পাবেন-- http://www.runmuki.com/paul/writing/marx.html

এটি পড়লে দেখবেন মার্ক্স সারা জীবন বিপ্লবের সাথে যুক্ত ছিলেন-বিপ্লবীদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল- প্যারী কমিউনের সমালোচনাতে দেখা যাচ্ছে উনি কমিনিউস্টদের তীরস্কার করেছেন বুর্জোয়া সেনাবাহিনী এবং শ্রেনী শত্রু খতম না করার জন্যে। উনার সিভিল ওয়ার ইন ফ্রান্স পড়ার পর কারুর কোন দ্বিধা থাকারই কথা না-উনি সরাসরি শ্রেনীশত্রু নিকাশের (খতমের) পক্ষেই ছিলেন এবং যা পরবর্তীকালে লেনিন করে দেখাবেন।

কিন্ত তার মানেই কি মার্ক্সবাদ রক্তাত্ব বিপ্লবের সমার্থক হয়? উনি প্যারি কমিউন নিয়ে যা লিখেছিলেন-সেটাকি আদৌ মার্ক্সবাদ থেকে আসে? লক্ষ্যনীয় তার প্যারি কমিউনের ওপর লেখাটি কোন বিশ্লেষনাত্বক লেখা না-সেখানে উনি কমিনিউন বিপ্লবীদের প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যত বিপ্লবের জন্যে আরো রক্তপাতের সুপারিশ করেছেন। এসব ঠিক আছে-কিন্ত সেগুলো কি তার মার্ক্সবাদি বিশ্লেষন থেকে আসে না আবেগ থেকে এসেছিল?

সাথে সাথে মার্ক্স, তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের মাধ্যমে এটাও বুঝেছিলেন ঐধরনের রক্তপাত বিপ্লব দিয়ে সমাজপরিবর্তন তাত্ত্বিক মার্ক্সবাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন না। বস্তুত হেগেলিয়ান ডায়ালেক্টিক আদৌ কোন বৈপ্লবিক দর্শনে টানা যায় কি না, সেই নিয়ে দার্শনিক মহলেই বিতর্ক রয়েছে-এবং প্যারী কমিউন বিপ্লবের ব্যার্থতাতে মার্ক্স নিজেই এই ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
*****************************
http://evolutionrevolutionatrhodes.blogspot.com/2010/02/dialect-according-to-marx.html

Like Hegel, Marx also argued for the master-slave dialect to be understood through an historical perspective. This became the foundation for approaching Marx’s own dialect which emphasized the dialects historical importance as a continuous process which would develop throughout history. However, unlike Hegel, Marx saw a particular end to the dialect. For Marx, the end was a class revolution. Within the tenets of Marxism, the struggle between both the proletariat (working class) and the bourgeois class could only come to an end upon the social awakening of the entire proletariat class. This social or “class awakening” would only complete itself upon a revolutionary movement by the proletariat class. Marx argued that because of the long and tumultuous struggle between the proletariat and bourgeois classes, that one day the proletariat (working class) would eventually rise up and overthrow their “masters”(bourgeois class) thus liberating themselves the from enslavement. Personally, I find Marx’s spin on Hegel’s dialect a little far-fetched. Although I do see the relevance in Marx’s application of the dialect, I do not, on the other hand, see if Hegel ever intended his dialect to be understood through certain political agenda (in this case Marx’s agenda). Having said this, I question whether or not Marx used Hegel’s dialect devoid of any ill-conceived reasons. Meaning, was Marx forcing his own application of the dialect to illicit political response, or was Marx correct in applying Hegel’s dialect to the politics of class struggle. Lastly, I want to suggest that Marx’s use of the dialect fails to encompass consciousness’ struggle for recognition until the death, to which Hegel argued।
**********************************************************

এর মূল কারন অনুধাবন করা আমার প্রবন্ধের লক্ষ্য। মনে রাখতে হবে-এই বিতর্কের ভিত্তিতেই মার্ক্সবাদিরা গনতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী ( যেমন বার্নস্টাইন) এবং কমিনিউস্ট বিপ্লবী এই দুই ভাগে ভেঙে গেছে। এই ইতিহাস ত বহু চর্চিত। এই প্রশ্নগুলি সবার প্রথমে তোলেন এডোয়ার্ড বার্নস্টাইন যিনি স্যোশাল ডেমোক্রাসীর জনক হিসাবেই বিখ্যাত। উনার লেখাগুলি ধরেই আমরা প্রথমে এগোব-কেনা না তিনিই মার্ক্সবাদের গণতান্ত্রিক ব্যাখ্যার দিকে এবং বিপ্লব নস্যাত করে, বিবর্তনের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বার্নস্টাইনের বক্তব্য ছিল, ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনের মাধ্যেমে আস্তে আস্তে শ্রমিকদের হাতে উৎপাদনের রাশ আসবে এবং মালিক পক্ষর মালিকানা হাল্কা হবে।


রোজা লুক্সেমবার্গ যদিও বার্নস্টাইনের সমর্থক ছিলেন না, তবুও উনি বার্নস্টাইনের একটি সুন্দর সংক্ষিপ্তকরন দিয়েছিলেনঃ the trade union struggle for hours and wages and the political struggle for reforms will lead to a progressively more extensive control over the conditions of production,” and “as the rights of the capitalist proprietor will be diminished through legislation, he will be reduced in time to the role of a simple administrator.” “The capitalist will see his property lose more and more value to himself” till finally “the direction and administration of exploitation will be taken from him entirely” and “collective exploitation” instituted.

বার্নস্টাইন বলেছেন আসল মার্ক্সবাদি হতে গেলে মার্ক্সবাদের সমালোচক হতে হবে। সেই প্রকৃত মার্ক্সবাদি যে মার্ক্সবাদের দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করতে পারবে এবং তোতাপাখির মতন মার্ক্সবাদ সর্বসত্য বলে চিল্লাবে না।

http://www.marxists.org/reference/archive/bernstein/works/1899/evsoc/ch01.htm

But this duty can only be accomplished if one gives an account unreservedly of the gaps and contradictions in the theory. In other words, the further development and elaboration of the Marxist doctrine must begin with criticism of it. To-day, the position is that one can prove everything out of Marx and Engels. This is very comfortable for the apologists and the literary pettifogger. But he who has kept only a moderate sense for theory, for whom the scientific character of socialism is not “only a show-piece which on festive occasions is taken out of a plate cupboard but otherwise is not taken into consideration,” he, as soon as he is conscious of these contradictions, feels also the need of removing them. The duty of the disciples consists in doing this and not in everlastingly repeating the words of their masters।

রোজা সহ বাকি কমিনিউস্টদের যুক্তি ছিল ট্রেড ইউনিয়ান ধনতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থায় শোষনের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হতে পারে কিন্ত কখনোই সেই আন্দোলন উৎপাদন ব্যাবস্থার মালিকানা শ্রমিকদের হাতে দেবে না। এখানে খেয়াল রাখতে হবে, বলশেভিক বিপ্লবেও কিন্ত শ্রমিকদের হাতে মালিকানা আসে নি। সে মালিকানা গেছিল রাষ্ট্রের হাতে। ফলে মস্কোতে বুরোক্রাটরা স্ফূর্তি করেছে-আর গ্রামে দুর্ভিক্ষে কৃষক শ্রমিকরা অনাহারে মরেছে। আর ১৯১৯-১৯২০ সালে অসংখ্য শ্রমিক এবং কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে রাশিয়াতে। সোভিয়েত ইউনিয়ানে লালসেনারা যত না শ্রেনীশত্রু মেরেছেন-তার থেকে বেশী হত্যা করেছেন কৃষক এবং শ্রমিক। সমস্ত কমিনিউস্ট বিপ্লবে শ্রমিক বা কৃষকদের হাতে যে ক্ষমতা আসে নি -তার মূল কারন ক্ষমতা গেছে রাষ্ট্রের হাতে-আর তা বকলমে ভোগ করেছে কিছু কমিনিউস্ট পরিবার। যা রুমানিয়া বা উত্তর কোরিয়া বা কিউবাতে প্রায় রাজতন্ত্রের রূপ নেয়। সুতরাং কমিনিউস্ট বিপ্লব আসলেই অনেক দেশে রাজতন্ত্রকেই ফিরিয়ে আনে। শুধু তাই না-ক্ষমতার কেন্দ্রীকরনে স্টালিন বা পলপটের মতন কুখ্যাত খুনে দেশনেতা বিংশশতককে লেনিনবাদের উপহার। এগুলো লেনিনবাদিরা স্বীকার করেন না-উনারা এটাকে বুর্জোয়া মিডিয়ার চক্রান্ত -আমেরিকার চক্রান্ত বলে চালাতে চান। এই সব ত্রুটিকে অস্বীকার করে লাভ কি কিছু হয়? তারা জনসমকক্ষে আরো মূর্খ বা পাগল বা অশিক্ষিত বলে প্রতিপন্ন হন। যা জনসাধারনকে মার্ক্সবাদ এবং সমাজতন্ত্র থেকে আরো দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।


ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলন নিজেরাই টিকতে অক্ষম-এবং ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক। লেনিনবাদ পৃথিবীকে দুর্ভিক্ষ এবং নরহত্যা ছাড়া কিছু দেয় নি। তাহলে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ভবিষ্যত কি?

সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে কি উপায়ে শ্রমিক বা কৃষক শ্রেনীর হাতে উৎপাদন ব্যাবস্থার মালিকানা আসবে?


সাম্য বা সমাজতন্ত্রের চেয়েও এই যৌথ শ্রমিক মালিকানার প্রশ্নটিই আসল। এর জন্যে কি বিপ্লব দরকার না তা সমাজ বিবর্তনের পথেই আসতে পারে?

(3)

মার্ক্সবাদের যে ইতিহাস আমরা জানি, বা বাংলা ভাষাতে পাওয়া যায়-তার বাইরেও যে একটা বিরাট ইতিহাস আছে, তা মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্টরা চেপে যায় বা অজ্ঞতার কারনে জানেই না। একথা অধিকাংশ লোকেই জানে না- ইউরোপে লেনিনবাদি রক্তাত্ব বিপ্লবের বিপক্ষে বা লেনিনবাদের বিরুদ্ধে দুটি শাখার জন্ম হয়। একদল দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশানাল থেকেই স্যোশাল ডেমোক্রাসি বা ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনে বেশী আস্থা রাখে। এই দলটির কথা আমরা জানি-কারন এদের শোধনবাদি হিসাবে গালাগাল দেওয়াটা লেনিনিস্টদের ব্রেকফাস্ট ছিল। কিন্ত যে দলটির কথা বাংলাভাষা বা মার্ক্সবাদি চর্চায় আসে না-অথচ যাদের চর্চায় আদি মার্ক্সবাদের তত্ত্ব সব থেকে বেশী প্রাসঙ্গিক- তারা হচ্ছে কাউন্সিল কমিনিউজমে বিশ্বাসি ইউরোপের অটো রুলে, হার্মান গর্টার, এনটন প্যানেকক। আমি মূলত তাদের চিন্তাভাবনা এবং তাদের সূত্র ধরে পরবর্ত্তিকালে শিল্প প্রযুক্তি বিপ্লবের প্রসঙ্গে আসব।

আমি কেন কাউন্সিল কম্যুনিজম নিয়ে লিখছি তার একটা গৌড়চন্দ্রিকা দরকার। কাউন্সিল কমিনিউজমের ধারনা কমিনিউজমের ব্যার্থতার যুগে কেন প্রাসঙ্গিক সেটাও জানা দরকার। প্রথম কথা হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেনীর কতটা স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বা সমাজতন্ত্রের দিকে সিস্টেম কতটা অগ্রসর হয়েছে ? ভারত, আমেরিকা বাংলাদেশ যেদিকেই দেখি-সেদিকেই ব্যার্থতা। আমেরিকাতে এই দুই দিন আগে উইনস্কনসিন থেকে আইন করে সরকারি কর্মচারিদের ট্রেড ইউনিয়ান করা বন্ধ করা হয়েছে। রিপাবলকানরা হুমকি দিচ্ছে ক্ষমতায় আসলে গোটা আমেরিকাতেই তারা ট্রেড ইউনিয়ান বন্ধ করে দেবে। ইউরোপের ওয়েলফেয়ার দেশগুলির অবস্থাও ভাল না। ওয়েলফেয়ার চালাতে গিয়ে দেউলিয়া হওয়ার পর, সর্বত্র ছাঁটাইকে তাদের ও মেনে নিতে হচ্ছে নইলে ঘরে চুল্লী জ্বলবে না। ভারতে শ্রমিক বিরোধি বিল ঠেকানোর মতন বামশক্তি নেই-তারা ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। আগামী দিনে তাদের মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। নতুন প্রজন্ম বিশ্বাস করা শিখছে বাম ধারনাগুলি ঐতিহাসিক ভুল-কারন তা সমাধান আনতে সর্বত্র ব্যার্থ। অথচ গোটা বিশ্বে ধনবৈষম্য বেড়েই চলেছে এবং শোষন ও বাড়ছে সীমাহীন ভাবে। গতবছর আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চলেছে হরিয়ানা এবং বাংলাদেশে। এসব দেশে গরীবরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ-অথচ বামশক্তি দুর্বলতর হচ্ছে। অদ্ভুত না? বামেদের জিজ্জেস করুন তারা নিও লিবারিলজম, মিডিয়া ইত্যাদির সাতকাহিনী শুনিয়ে দেবে। অথচ বাম শাসিত রাজ্যেই বামেরা জমি হারাচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত। গোটা পৃথিবীজুরেই এটা ঘটছে এবং বামেদের পিছু হটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।

এর উত্তর কোন লেনিনবাদিকে জিজ্ঞসে করলে দেখবেন-সে আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে দেবে-এমন ত জানা কথা। গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র যে সোনার পাথরপাটি এবং আসলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব দরকার-এসব নাকি, লেনিনের শোধনবাদের বিরুদ্ধের অবস্থানকেই দৃঢ় করে! অথচ এরা একবারেও স্বীকার করতে চাইছে না-লেনিনবাদ আসলেই স্টেট ক্যাপিটালিজম বা সরকারি ধনতন্ত্র ছাড়া কিছু না। এবং তা নির্মম আদিম মিশরের দাস প্রথার বেশী এই বিশ্বকে বেশীকিছু দিতে পারে নি। গত শতাব্দির সব গণহত্যা এবং দুর্ভিক্ষগুলি পৃথিবীকে লেনিনবাদের উপহার । পশ্চিম বঙ্গেও পাটিতন্ত্র মানুষের জীবনে অভিশাপ হিসাবেই এসেছে-তা আশীর্বাদ হয় নি।

অর্থাৎ মার্ক্সবাদের লেনিনবাদি ধারা বা গনতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক ধারা-দুটিই সম্পূর্ন ভাবে ব্যার্থ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। সুতরাং প্রশ্ন উঠবেই কেন বামপন্থা ব্যার্থ? তার মানে কি মার্ক্সবাদও ব্যার্থ? বলশেভিক বিপ্লবে লেনিনের নৃসংশতা এবং কৃষক শ্রমিকদের বিদ্রোহের ওপর লাল বাহিনীর কুত্তাকাটা আক্রমনে ১৯২০ সাল থেকেই ইউরোপের "বিপ্লবী" মার্ক্সিস্ট গোষ্টির অধিকাংশই বলশেভিক বিপ্লবের ভুয়ো তত্বে বিশ্বাস হারায়। আবার তারা এটাও দেখছিলেন, ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলন আসলেই শোষনের হাতকে শক্ত করছে। এর পর স্টালিন স্যোশালিজম ইন ওয়ান কান্ট্রি ইত্যাদি ভুয়ো তত্ত্বের প্রচলন করতে আরো পরিস্কার হয় লেনিনবাদ আসলেই লাল-ফ্যাসিজম।

সুতরাং এন্টন পেনকক , অটো রুলে এসব দেখে নতুন ধরনের বামপন্থী আন্দোলনের চিন্তা করতে থাকেন। তারা মূলত লেনিনবাদ, এনার্কিজম এবং স্যোশাল ডেমোক্রাসির ব্যার্থতা পর্যালোচনা করে-এই সিদ্ধান্তে আসেন যে ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বা শ্রমিকদের হাতে উৎপাদনের সরাসরি মালিকানা ছাড়া বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের হাতে মালিকানা মানে সেখানে পুঁজিপতিদের স্থানে যম হয়ে আসে পার্টি মেম্বার আর বুরোক্রাটরা। তাছারা পৃথিবীর সর্বত্র রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কারখানাগুলির উৎপাদিকা শক্তি দুর্বল। আর এনার্কিস্টরা উৎপাদন নিয়ে চিন্তাই করেন না। উৎপাদন কিন্ত একটা কাঠামো ছাড়া সম্ভব না। ট্রেড ইউনিয়ানের কথা ছেড়ে দিলাম। বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের যুগে তারা তালপাতার সেপাই ছাড়া কিছুই না।

লেনিনবাদ কেন সব জায়গায় ব্যার্থ এটা বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে- রাষ্ট্রীয় দমননীতির চেয়েও ব্যার্থতার মূল কারন উৎপাদন ব্যাবস্থার উন্নতিতে ব্যার্থতা। চীনে গত ৪-৫ বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বিশেষ-সিঙ্গাপুরেও প্রায় ডিক্টেটরশিপ-কিন্ত বিপ্লবের আশঙ্কা নেই। এসবের মুল কারন, এই ফ্যাসিস্ট সিস্টেমগুলি উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থা নিয়ে আনতে সক্ষম যার কারনে জনগন বস্তুবাদি লাভেই তুষ্ট- রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। পশ্চিম বঙ্গেও লেনিনবাদিদের শত অত্যচার সত্ত্বেও, সিপিএম টিকে যেতে পারত-যদি তারা এটা বুঝত উৎপাদনে অগ্রগতি না হলে, তাদের সিস্টেমের মৃত্যু অবধারিত। মোদির ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গুজরাট নীরব-কারন উৎপাদনে গুজরাট শীর্ষে। ধনতন্ত্রও টিকে আছে সেই উৎপাদন শক্তির জোরে। আমেরিকাতে আগে কখনো ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে এত সোচ্চার হতে লোকে দেখে নি। এখন দেখছে-কারন এখানে ধনতান্ত্রিক উৎপাদনে ভাঁটা পড়েছে বিশ্বায়নের কোপে। উৎপাদন শক্তিতে সংকট না এলে রাজনৈতিক সিস্টেমে সংকট আসে না। এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। সোভিয়েত ইউনিয়ান থেকে সব কমিনিউস্ট দেশগুলি-এমনকি আমাদের ৩৫ বছর ক্ষমতায় থাকা সিপিএম ধ্বংশ হতে চলেছে শুধু একটাই কারনে-সেটি হচ্ছে এই রাজনৈতিক সিস্টেম অত্যন্ত দুর্বল উৎপাদন শক্তির জন্ম দেয়। আর এই দুর্বল উৎপাদন শক্তি থেকে জন্ম নেয় দারিদ্র, দুর্ভিক্ষ এবং বেকারত্ব-যা ক্রমশ বিদ্রোহের রূপ নেয়। আর তা থামাতে যখন পার্টির গুন্ডাবাহিনী মাঠে নামে-তখন কমিনিউজমের পতন হয় আরো দ্রুত।

সুতরাং দুটি জিনিস সমাজতান্ত্রিক শাসনে দরকার-ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন বা উৎপাদন ব্যাবস্থার ওপর উৎপাদকের মালিকানা এবং উন্নততর উৎপাদন। প্রথমটি গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত। দ্বিতীয়টি সাম্যবাদের শর্ত।

যৌথ মালিকানা উন্নততর উৎপাদন দিতে পারে কি না- সেটি বিতর্কিত। কিন্ত আমেরিকান স্টার্টআপ কোম্পানীগুলি উদ্ভাবনী শ্রমিকদের দ্বারাই শুরু হয়। চীনের বৃহত্তম কোম্পানী হুয়াইও ১০০% শ্রমিক মালিকানাধীন। এবং তা মাত্র ২০ বছরের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানীতে রূপান্তরিত। আমেরিকার বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানী সিসকোকেও তারা ছাড়িয়ে গেছে। আমেরিকান স্টার্টাআপ এবং হুয়ায় বা জিটিই এর সাফল্য থেকে পরিস্কার শ্রমিক মালিকানাধীন কোম্পানী বা যৌথ শ্রমিক উৎপাদন ব্যাবস্থা বর্তমান ধনতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যাবস্থার থেকে উন্নত উৎপাদন ব্যাবস্থা দিতে সক্ষম। আমি হুয়াই নিয়ে যতটা জানি-সেটাতে দেখেছি-সেখানে কোম্পানী পরিচালনের সর্বস্তরে শ্রমিকদের বক্তব্য থাকে। এটা আমেরিকান ধনতন্ত্রের উন্নত প্রযুক্তির কোম্পানীগুলিতেও হয়। কিন্ত সেখানে ছাঁটাই এর ভয়ে কেওই কোম্পানীর সাথে নিজেকে মানসিক ভাবে জড়ায় না। দায়সারা ভাবে পেশাগত কাজ সারে। শ্রমিক মালিকানাধীন কোম্পানীগুলিতে স্বাভাবিক ভাবেই শ্রমিকদের আবেগ এবং মন অনেক বেশী জড়িয়ে থাকে। ভারতের মারোয়ারী কোম্পানীগুলি কোনদিন কোন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির শিল্প গড়তে পারবে না। কারন তাদের কোম্পানীগুলি সম্পূর্ন শ্রমিক শোষনের ওপর তৈরী এবং সেখানে ম্যানেজমেন্ট সম্পূর্ন পরিবারের হাতে। মিত্তল থেকে আম্বানীর বিপুল সম্পত্তির উৎস সরকারকে ঘুঁশ খাওয়ানো -তারা মোটেও বিলগেটস বা জুকারবাগে মতন নতুন প্রযুক্তি তৈরী করে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম না। মনে রাখতে হবে বিল গেটস বা জুকারবাগও এক অর্থে শ্রমিক-মাইক্রোসফটে বা ফেসবুকে এরা নিজেরা কোড লিখেছেন।

সুতরাং নানান উদাহরন থেকে পরিস্কার শ্রমিকের হাতে কোম্পাণীর সরাসরি মালিকানা থাকা উৎপাদনের জন্যে শ্রেষ্ঠতর। ভারতের আই আই টির ব্যাবস্থার সাফল্যও এখানে নিহিত। আই আই টি গুলি কিন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রনে সরাসরি নেই-তা চলে সেনেটের দ্বারা যা অধ্যাপক নিয়ন্ত্রিত-স্বয়ত্বশাসিত। সুতরাং এই স্বয়ত্বশাসিত শ্রমিক মালিকানা-যাকে ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বলে অবিহিত করা হয়-সেটাই মার্ক্সবাদি সমাজের বা শোষনমুক্ত সমাজের জন্য সর্বোত্তম পদ্ধতি।

ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বনাম ট্রেড ইউনিয়ানের পার্থক্য বোঝা দরকার। ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলন সফল হলে-তা কিন্ত উৎপাদন শক্তির বিরুদ্ধেই কাজ করে-এবং তা আজ গ্লবালাইজেশনের যুগে সংকটের মুখে। ই এস জেড বা স্পেশাল ইকনমিক জোন করে, ট্রেড ইউনিয়ানই তুলে দেওয়া হচ্ছে-কারন তা প্রতিযোগিতার বাজারে কোম্পানীকে তোলার বদলে ডোবাতে সক্ষম। স্পেশাল ইকনমিক জোনের সংখ্যা সব দেশেই বাড়ছে-এবং ট্রেড ইউনিয়ান ততটাই অপ্রাসঙ্গিক হচ্ছে। আই টি এবং বিপিও শিল্পেও ট্রেড ইউনিয়ান অপ্রসাঙ্গিক- অথচ এমন না এদের ওপর শোষন নেই। কালকেই পড়লাম ভারতের বিপিও গুলি আদিম দাস ব্যাবস্থা চালাচ্ছে। কলসেন্টারের একটি মেয়ে কোন কোন দিন আট ঘন্টার মধ্যে একবার বাথরুমেও যেতে পারে না ভয়ে- কল মিস হয়ে গেলে, চাকরী থেকে ছাঁটাই হবে। কারন এমন হয়েছে। অথচ, এদের ট্রেড ইউনিয়ান নেই-এরা ট্রেড ইউনিয়ানকে ঘৃণা করে। কারন এদের ধারনা এসব শিল্পে ট্রেড ইউনিয়ান চললে, বিপিওটা ফিলিপিন্সে বা আর্জেন্টিনাতে চলে যাবে। খুব অমূলক কিছু না। ট্রেড ইউনিয়ান আন্দোলনের চোটে পশ্চিম বঙ্গকে শিল্প শ্বশান বানিয়েছিল সিপিএম।

এখানেই ফ্যাক্টরি কাউন্সিল ট্রেডইউনিয়ান থেকে এগিয়ে থাকবে। ফ্যাক্টরি কাউন্সিলের ধারনায় কারখানার মালিকানা এবং ম্যানেজমেন্ট শ্রমিকদের হাতে। সেখানে ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন না হলে-কোম্পানী লসে চললে-তাদের বেতন হবে না। আবার লাভ করলে, লাভের ভাগ সবাই পাবে। সুতরাং ফ্যাক্টরি কাউন্সিলে উৎপাদন আরো বাড়ে-শ্রমিকরা আরো দ্বায়িত্ব নিয়ে কাজ করে-এবং তার লাভটাও তারা ভোগ করে। সম্প্রতি চীন এর একটা ভাল উদাহরন রেখেছে। সেখানে অনেক গ্রামে "উৎপাদন কমিনিউটি" তৈরী হয়েছে যেখানে গ্রামটাকেই একটা কোম্পানী করে দেওয়া হয়েছে। এমন একটা গ্রাম উজিয়াজুই। ১৯৯৫ সালের আগে এটি ছিল গরীব জেলেদের গ্রাম। এখন সেখানে অনেক আধুনিক উৎপাদন কারখানা। গ্রামের সবাই তার মালিক। গ্রামবাসীদের বার্ষিক উপায় ৯০০০ ডলারের ওপরে। এবং তারা সপ্তাহে সাতদিনই খাটে। করবেই বা না কেন? লাভের গুড়ত মালিকের পকেটে যাচ্ছে না-পাচ্ছে তারাই।

(৪)
উৎপাদন ব্যাবস্থাতে শ্রমিক মালিকানা এলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের কি পরিবর্তন হবে? একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানের গণতন্ত্র সম্পূর্নভাবেই মালিক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সেখানে সাধারন মানুষের প্রত্যাশাপূরন অনেকটা বাচ্চাকে ললিপপ খাওয়ানোর মতন। যেটুকু দিলে স্থিতিশীল অবস্থা জারী থাকে এবং একটি স্বার্থপর মধ্যবিত্ত শ্রেনী [ বুর্জোয়া কথাটা ব্যাবহার করলাম না] সেই ব্যাবস্থার সেবাদাস হিসাবে নিজেদের নিয়োজিত করে-ঠিক সেই ভাবে চলছে বর্তমানের পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র বা প্রক্সি গণতন্ত্র। তবুও তার মধ্যেও কিছু ভাল আছে-যেমন ক্ষমতার কেন্দ্রীকরন অন্তত এখানে হয় না-যা সবার আগে দরকার। আবার জনগনের হাতে ক্ষমতাও যায় না।

বর্তমান গণতন্ত্রের সংকট সব থেকে ভাল বোঝা যাচ্ছে এখন আমেরিকাতে। ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফিল্ম। রিপাবলিকানরা চাইছে বড়লোকদের ট্যাক্স কমাতে এবং সব ধরনের স্যোশাল ওয়েলফেয়ার তুলে দিতে। ডেমোক্রাটরা চাইছে ওয়েলফেয়ার রাখতে আর বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স বসাতে। এখানে শ্রেনীদ্বন্দ গণতন্ত্রের মাধ্যমে খুব সামনে এসে গেছে। কিন্ত জিতছে কে? রিপাবলিকান রা। কেন? আমেরিকাতে সবাই ধনী হয়ে গেল না কি? না সেরকম কিছুই না। বেসিক্যালি ব্যাবসায়ীরা ডেমোক্রাট এবং রিপাবলিকান সবাইকেই কিনে নিয়েছে। যার জন্যে ডেমোক্রাটরা যখন নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী ছিল সাধারন মানুষের ভোটে জিতে- তখন না কমালো ডিফেন্স বাজেট-না বাড়ালো বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স। আবার ভোট পাওয়ার জন্যে ওয়েল ফেয়ার ও রেখে দিল। বড়লোকদের ওপর ট্যাক্স বাড়ালো না -কারন তাদের টাকাতেই নির্বাচনী তহবিল ফুলে ওঠে। ফলে আমেরিকা দেউলিয়া হওয়ার দিকে এগোচ্ছিল- সঙ্গত কারনে আমেরিকান কংগ্রেসে রিপাবলিকানরা জিতল এবং তারা ওয়েলফেয়ার উঠিয়ে দিতে চাইছে এখন। কিন্ত বড়লোকদের পকেটে হাত দেওয়া যাবে না! গরীবদের শিক্ষা আর চিকিৎসার টাকা কাট! অর্থাৎ এই শ্রেণীদ্বন্দে স্যোশাল ডেমোক্রাটরা হেরে যাচ্ছে কারন তারাও ব্যাবসায়ীদের হাতে বিকিয়ে আছে। আমাদের সিপিএম থেকে আমেরিকার ডেমোক্রাট-কেওই এর ব্যাতিক্রম না।

বটমলাইন হচ্ছে উৎপাদন ব্যাবস্থা যার হাতে- গনতন্ত্র তথা রাজনীতির রাশ তার হাতেই থাকবে। এটাই হওয়া উচিত-এবং গনিতিক নিয়মেই তাই হয়। লেনিনবাদিরাও এটাই জানেন। কিন্ত সরকার যদি সেই উৎপাদন ব্যাবস্থার ওপর অধিকার নিতে যায়-তখন ক্ষমতা যায় বুরোক্রাটদের হাতে। সোভিয়েত ইউনিয়ান বা নেহেরুর ভারতে সেটাই হয়েছিল। সেটা আরো খারাপ। ব্যাবসায়িদের যাও বা দায়বদ্ধতা আছে বুরোক্রাটদের তাও নেই। সুতরাং ফ্যাক্টরি কাউন্সিল বা কোপরেটিভ গুলি শক্তিশালী হলে রাজনীতিতে বড় কোম্পানীর স্থলে, ক্ষমতার কেন্দ্র এদের হাতেই আসবে। এবং সেটা হবে নীরব মার্ক্সীয় বিপ্লব-যা গণতন্ত্রের ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমেই সম্ভব। শুধু দিশাটা ঠিক থাকলেই হল। আর চীনের মডেলে শ্রমিক পরিচালিত কোম্পানীগুলির পেছনে সরকারি ব্যাঙ্ক এবং সরকারের ব্যাপক সাহায্য দরকার। শেষের কাজটা গনতান্ত্রিক উপায়েই সম্ভব। তার জন্যে ছত্রিশগড়ের জঙ্গলে গিয়ে পুলিশ মারতে হয় না।