Monday, March 22, 2010

মনু, মহম্মদ কি নারী জাতির প্রতি অবিচার করেছিলেন?


পরিবার-বিবাহ-এগুলো সামাজিক বিবর্তনের ফল। পশু পাখি-সবাই লিভ টুগেদার করে-তাহলে মানব বিবর্তনের কোন ধাপে লিভ টুগেদারটাকে আরো জটিল এবং ঐশ্বরিক করে বিবাহ নামে প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী হল সেটা বুঝতে হবে। বিবর্তন কিন্ত একটি এমরফিক স্বতস্ফূর্ত পদ্ধতি-সুতরাং বিবাহ প্রতিষ্ঠানটি সমাজের রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস বাড়িয়েছে বলেই, এটি লিভটুগেদারের ওপর এক সময় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। কিন্ত বর্তমানে ইউরোপে বিবাহ বিলুপ্তপ্রায়। লিভ টুগেদারই ফিরে এল। কে অত্যাচারিত বা শোষিত তাই দিয়ে বিবর্তন নির্নিত হয় না। বিবর্তনের মূল কথা হচ্ছে কোন সংস্কৃ্তিতে শক্তিশালী নতুন প্রজন্ম উ্ঠে আসে।



এখানেই প্রশ্ন উঠবে, তাহলে বিবাহ, সিঙ্গল মম বা লিভ টুগেদার-কিসের থেকে বেশী “ফিট” সন্তানের জন্ম হবে ( সংখ্যা এবং সারভাইভাল প্রবাবিলিটি)। এটি বিতর্কিত প্রশ্ন। ইউরোপে জন সংখ্যা কমছে-লিভ টুগেদারের ভূ্মিকা এর পেছনে আছে। বিবাহিতদের মধ্যে সন্তান উৎপাদনের হার একটু বেশী হবেই।


আমি এবার ধর্মগ্রন্থ গুলিতে মেয়েদের কেন দাবিয়ে পুরুষ তন্ত্রের দাসী করে রাখা হয়েছে তাই নিয়ে কিছু বলি। আমাদের একটি সাধারন ধারনা মহম্মদ কোরানে নারীদের বাজে ভাবে ট্রাক চাপা দিয়ে, নারী জাতির প্রতি ভয়ংকর অন্যায় করেছেন। সেটা এই যুগে মহম্মদ কোরান লিখলে নিশ্চয় বলা যেত-কিন্ত সেই যুগের জন্যে মহম্মদ বা মনু ঠিক না ভুল কাজ করেছেন সেটা সামাজিক বিবর্তনের দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। বৈজ্ঞানিক চেতনার আলোকে ধর্মকে দেখা মানেই, সামাজিক বিবর্তনের চোখেই ধর্মকে দেখা উচিত।



তাহলে আসল কথাতে আসি। সেই যুগে শিশু মৃত্যুর হার ছিল অত্যাধিক বেশি। ফার্টালিটি 2.1 এর কম হলে সেই সমাজের নেগেটিভ গ্রোথ হয়। আদিম চিকিৎসা ব্যাবস্থা দিয়ে ওই ফার্টিলিটি ধরে রাখতে গেলে একজন নারীকে গড়ে ৬-৭ টি সন্তানের জন্ম দিতে হয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে আজকাল যেসব মেয়েরা লিব্যারাল, তারা দ্বিতীয় সন্তানত দূরের কথা প্রথম সন্তানই অনেকেই নিতে চাইছে না। ইস্যুটা বেলেল্লাপনা করার না-ইস্যুটা হচ্ছে সন্তানের জন্যে মেয়েদের স্বার্থত্যাগ স্বাধীনতা ত্যাগ-কতটা চেপে করানো হয়-আর কতটা স্বাভাবিক? এবার একজন মেয়েকে যদি ৬-৭ সন্তানের জন্যে রাজী করাতে হয়, তার ওপর কি পরিমান সামাজিক চাপ সৃষ্টি করাতে হবে? ঠিক সেটাইমনু বা মহম্মদ করেছেন। এটা না করলে, সেই সমাজ রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসে তখনকার দিনে পিছিয়ে পড়ত। আজকের লিব্যারাল ইউরোপের সমাজ যতই উন্নত হৌক, তারাও রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসে পিছিয়ে যাচ্ছে-কারন ইটালি, গ্রীস, জার্মানী ইত্যাদিদেশে ফার্টালিটি 1.1-1.3 -এর জন্যে তরুন লেবার শর্টেজ হচ্ছে এবং তৃতীয় বিশ্ব থেকে লোক এনে সেই ঘাটতি পূরন করতে হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম বা হিন্দু সংস্কৃতিতে মেয়েদের ওপর সন্তান ধারনের সেই চাপ আছে-ফলে আজকে মুসলিমরা ইউরোপের সব দেশেই সব থেকে বেশী "রিপ্রোডাক্টিভ ফিট" জাতি।



লিব্যারাল সংস্কৃতি সমাজে রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের গুরুত্ব অস্বীকার করে জীবন যাপন করলে, ধর্মের অত্যাচার আরো বাড়বে-কমবে না। কারন সেই ছেলেগুলিই বড় হবে, যাদের ফ্যামিলিতে মেয়েদের ওপর সন্তান ধারনের জন্যে প্রচুর চাপ দেওয়া হয় ( ধর্মের মাধ্যমে) এবং মেমেটিক্সের সূত্র ধরে, সেই চাপ দেওয়া সংস্কৃতিটিই বিবর্তনে জিতবে। কারন সংস্কৃতির অধিকাংশটাই আমরা শিশুকালে পারিবারিক সুত্রে পেয়ে থাকি। সেটাই নানান পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। ফলে ধর্মের ব্যাপারগুলি আমরা যত নৃতাত্বিক এবং সামাজিক বিবর্তন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করব, ততই ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মধ্যে সংঘাত কমবে। লিব্যারাল সংস্কৃতিও একধরনের বিশ্বাস নির্ভর কালচার-সেটাকে বিজ্ঞানসম্মত বলে চালানো ভুল। ক্ষতিকারক ও হতে পারে। সামাজিক বিবর্তনের সূত্র ধরে যত আমরা ধর্মকে বোঝার চেষ্টা করব-ততই ধার্মিকদের সুবিধা হবে বিজ্ঞানের চেতনার পথে জীবনকে পরিচালিত করতে। কারন তবেই তারা বুঝতে পারবেন কেন ধর্ম গ্রন্থে মেয়েদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এবং সেই অবিচারের মূলে যে ঈশ্বর না, রিপ্রোডাক্টিভ সিলেকশন কাজ করেছে-সেটা বুঝলেই, তারা আস্তে আস্তে ঈশ্বরের অবৈধ হাতের থেকে বিবর্তনের খেলাতেই বেশী আস্বস্ত হবেন।


তবে হ্যা। বিবাহের সাথে রোম্যান্টিসিজম এবং ভালোবাসাকে গোলানো উচিত না। সন্তান পালনের জন্যে কর্তব্য হিসাবে দেখলেই বিবাহের বিশেষ ভার লাঘব হয়। ভালোবাসাটা বিবাহ বহির্ভূত প্রেমের জন্যেই তুলে রাখা উচিত! অথবা ভালোবাসা বা রোম্যান্টিসিজমের মতন ধোঁয়াশা শব্দগুলো তুলে দিলেও হয! এই ভালোবাসার পাত্রের খোঁজে কত মেয়েযে শাদি ডট কমে খুঁজে খুঁজে বুড়ি হতে চললো এবং শেষকালে চাপে পড়ে ভুল্ভাল বিয়ে করে ডিভোর্স নিয়ে এখন জীবনটাকেই ভন্ডুল করে দিয়েছে-তার ইয়াত্তা নেই। তাই যৌনতা, বিবাহ এবং ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য ঠিক ঠাক না বুঝলে আরো অনেক ছেলে -বিশেষত অনেক অবুঝ মেয়ের জীবন ভেসে যাবে।

No comments: