কেন জীবন এবং জীবিকা নিয়ে বাংলায় লেখা শুরু করলাম, জীবন এবং জীবিকা -ভূমিকা পর্ব
বিপ্লব পাল, ৩১ শে মে , ২০২৩
সবকিছুরই শুরু থাকে, কারন থাকে। আমার এই জীবন ও জীবিকা সিরিজ শুরু করার পেছনেও দীর্ঘ ইতিহাস। গত দুই সপ্তাহে বিপুল সাড়া পেয়েছি। কোন কোন পর্ব ৫ লাখের ও বেশী লোকে পড়েছেন [ ফেসবুকে যা দেখাচ্ছে]। প্রায় ২ লাখের বেশী লাইক, কমেন্ট এসেছে-শেয়ার হয়েছে ৯০০০ এর বেশী। প্রায় ৫০০০ এর বেশী অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রী, তাদের প্রশ্ন আমার কাছে রেখেছেন। আমি আমার সীমিত সময়ে হয়ত কয়েকশো প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি-তাও হোয়াটসাপ গ্রুপে।
একদিকে আমি খুশী যে এত লোকে পড়েছেন। অন্যদিকে আতঙ্কিত যে এগুলি পড়েও কিস্যু পরিবর্তন হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আমি অধিকাংশ প্রশ্ন পাচ্ছি- মেয়ে কিভাবে বোর্ড এক্সামে ভাল মার্কস পাবে, বড় হয়ে এই হতে চাইছে, নইলে ওই হতে চাইছে!
সমস্যা এই যে এই চাওয়া পাওয়াগুলো অভিভাবকদের থাকাটাই স্বাভাবিক। আপদ এই যে উনারা বুঝতে পাচ্ছেন না এই চাওয়া পাওয়ার চাপে ইনারা অসংখ্য টিউশনি দিচ্ছেন, নাম্বারের পেছনে ছুটছেন- কম্পিটিটিভ পরীক্ষাতে ছেলে মেয়েদের বসাচ্ছেন- কিন্ত একবার ও দেখছেন না ছেলেটি বা মেয়েটির "লার্নিং প্রসেস" এ কি সমস্যা- সেটি শক্ত করার দরকার আছে কি না। অধিকাংশ প্রশ্নই ছেলে বা মেয়ে এই পরীক্ষাতে পায় নি বা ওই পরীক্ষায় পায় নি-এবার তাহলে কি হবে? আগে এটা বুঝুন, এই ক্ষেত্রে সবার আগে এটা বুঝতে হবে আপনার ছেলে বা মেয়ে আগে ভাল লার্নার হয়ে উঠুক- তবে না সে সর্বত্র ভাল করবে। সে যদি দুর্বল লার্নার হয়, যেখানেই দিন, সে খুব ভাল কিছু করে উঠতে পারবে না। যদি আপনার ছেলে বা মেয়ে নিট বা আই আই টি মেইন্সে না পায়, তাহলে তার লার্নিং পদ্ধতি ঠিক করতে হবে আগে। কিন্ত সেটা না করে ইনারা কোথায় কিসব কোর্স পাওয়া যায়, তার পেছনে ছুটছেন। চাকরি সব স্ট্রিমেই আছে। কিন্ত সেলফ লার্নিং এর মাধ্যমে না শিখলে, কেউ নেবে না।
পশ্চিম বঙ্গের ছেলেমেয়েদের স্টান্ডার্ডের কতটা অবনতি আমি দেখছি?
(২)
অবনতি কি না আমি বলতে পারব না-তবে যেভাবে ছেলেপিলেরা আসছে, তাতে এটা বলতে পারি, যে তাদের শিক্ষাদীক্ষা মোটেও আধুনিক চাহিদার সাথে মিলছে না। আগের দিনের মতন মাস্টার ডিগ্রি পাশ করে, সরকারি পরীক্ষার যুগ আর নেই। সব কোম্পানীতেই স্কিলের চাহিদা- ডিগ্রি আর মার্কসের কোন চাহিদা নেই। আর স্কিল দ্রুত নিজেকে শিখতে হয়। কারন সফটোয়ার শিল্পে প্রতি দুই বছর নতুন নতুন জিনিস আসে। সবাই প্রতিদিন শেখে। এই জন্য এখানে মাইনেও বেশী। অনেক অনেক বেশী। [ এসব বিস্তারিত জানতে আমার সিরিজের পর্ব ১ থেকে ৬ পড়ুন]
(৩)
এবার আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখি।
২০১২ সালে প্রথম খুব ছোট একটা ইউনিট আমি কোলকাতায় খুলেছিলাম। জ্রেয়াস টেকনোলজি নাম দিয়ে। তখন ইলেকট্রনিক্সের কাজ করাতাম। ২০১৪ সালে আমি ইনভেস্টমেন্ট পেলাম, ইউনিট বড় করার জন্য। অনেকটাই বড় হয়। ২০১৪ সালে যেখানে মাত্র ৮জন ছিল, ২০১৬ সালের মধ্যে এটি ৭০ জনের কোম্পানীতে পরিনত হয়। ২০১৭ সালে এটির মূল অংশ প্রফেসি বা মেসিনসেন্স নামে পরিচিত হয়ে, আলাদা করা হয়-যা ২০১৮ সালে মেসিনসেন্স মাইক্রোসফটে্র গ্লোবাল স্কেল আপ প্রোগ্রামে প্রথম ১০ টি কোম্পানীর মধ্যে জায়গা করে নেয়। কোলকাতা থেকে, আমরাই প্রথম ওই প্রোগ্রামে সুযোগ পেয়েছিলাম।
কিন্ত আমাদের বিশাল সমস্যা হচ্ছিল কোলকাতায় স্কিল্ড ইঞ্জিনিয়ার পেতে। কোলকাতায় অভিজ্ঞ কাউকে পাওয়া যায় না। এই ধরনের প্রোফাইল সবাই ব্যাঙ্গালোর, পুনেতে। ফলে বলতে গেলে ৯০% খুব ভাল ইন্টার্ন হায়ার করে, তাদের ট্রেইন্ড করে কাজ চালাতে হয়। যেমন ডেটা সায়েন্সের জন্য আমি প্রেসিডেন্সির ২০১৬ সালের ব্যাচের স্টাটের প্রায় সবাইকেই হায়ার করেছিলাম [ একজন বাদে]। ওদের ফাইনাল ইয়ারেই ইন্টার্ন হিসাবে হায়ার করে, কোম্পানীর কাজের সাথে যুক্ত করা হয়। ব্যাঙ্গালোর থেকে মেন্টর ছিল। ফলে ওরা যখন ২০১৬ সালে কাজে যোগ দেয়, খুব ভাল কাজ করছিল।
আমার সফটীওয়ার টিম প্রথমে ছিল জয়পুরে। ২০১৯ সালে আমরা ঠিক করি সব কিছু কোলকাতায় এক ছাতার তলায় না করলে অসুবিধে। কারন আই ওটির কাজে ইলেক্ট্রনক্সি এবং সফটওয়ার টিম একসাথে কাজ না করলে মুশকিল।
আমার দুর্ভাগ্যের শুরুও সেখান থেকে। এই গল্পের শুরু ও এখান থেকে।
আমি ভাবলাম, যেহেতু কোলকাতায় ক্লাউড বা মিডলোয়ারের অভিজ্ঞ লোক নেই, আগের মডেলে ভাল ইন্টার্ন হায়ার করে তাদের ট্রেইন্ড করা যাক। সেই অনুযায়ী প্রায় ৪০ টা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ২০০০ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা নেওয়া হল। মাত্র ৬ জন ৪০% এর বেশী পেল। তাদের মধ্যে তিনজনকে নেওয়া হল ইন্টার্ন হিসাবে। কিন্ত এদের রাখা গেল না। কারন এদের সবাই খুব বড় ব্রান্ডে চাকরি পেল। স্যালারি বেশী অফার করলেও কেউ কোলকাতার ছোট কোম্পানীতে থাকে না। কারন ব্যাঙ্গালোরে ইকোসিস্টেম ভাল-কোম্পানী বড় ব্রান্ড। এরপর জ্রেয়াস, যেটা এখন আরেকটা আলাদা, কোম্পানী আলাদা অফিস-সেখানেও ক্যাম্পাস থেকে ইন্টার্ন নিতে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে ভাল কোডার তৈরী হচ্ছে না। হচ্ছে হাতে গোনা কজন। তাদের সবাই ব্যাঙ্গালোর পুনে তে চলে যাচ্ছে। টিসিএস ইনফোসিসের ক্যাম্পাসে যারা পাচ্ছে-তাদের অধিকাংশ কাজই ডেভেলপারের না- নন কোডিং কাজ। যেখানে একটু ভাল ইংরেজি জানলে আর কোন একটা সফটোয়ারে ট্রেনিং নিলেই হয়। তাছাড়া ওগুলো কম মাইনের চাকরি। সুতরাং সেইসব ক্ষেত্রে কোডিং বা সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কম জেনেও লোকে চাকরি পেতে পারে।
কোলকাতায় যাদের ভাল সিস্টেম-সফটয়ার কোম্পানী আছে-তাদের অনেক সিইওই আমার বন্ধু-আমার এই ফেসবুক প্রোফাইলেই অনেকে আছেন। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, তারা কি করে কোলকাতায় ছোট বা মাঝারি সাইজের কোম্পানী চালাচ্ছেন? কারন ঠিক ঠাক টেলেন্টেড রিসোর্স পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের দিয়ে এডভান্সড প্রোডাক্টে কাজ হয়।
- ছেলে পাওয়া যাচ্ছে না
- আর সেই জন্য, কোলকাতা ছেড়ে অনেক ছোট ভাল কোম্পানীই চলে গেছে পুনে, সুরাট, ইন্দোরে
এই সিইওদের মধ্যে অনেকেই আছেন, বাংলাকে ভালোবেসে কোলকাতায় হাজার রাজনীতি এবং নেগেটিভের মধ্যেও কোম্পানী চালাচ্ছেন বিদেশ থেকে। তারা বাংলার মাটি ছাড়বেন না। তাদেরকে স্যালুট।
আমি তাদেরকে বল্লাম আমরা সবাই মিলে যদি এমন একটা সংস্থা করি-যেখানে একটা কোডিং ক্লাব করব, সেখানে বাংলার ছেলেদের কোডিং এর পরীক্ষা এবং চর্চার মাধ্যমে ওদের উন্নত করব-তাহলে সবার লাভ হবে। সেখানে ছেলেমেয়েদের টাকা লাগবে না। কারন, কোডিং ক্লাবে কেই ভাল করলে, তাদেরকে নিয়ে নেওয়া যাবে এবং সেই প্লেসমেন্ট ফিতে ক্লাব চলবে।
সবাই বলল। উত্তম প্রস্তাব। এগিয়ে যাও।
ইনভেস্ট করলাম। অন্য আরেকটি কোম্পানী [ সুদীপদার ই বি আই ডবলু] ও ইনভেস্ট করল যাতে কোলকাতায় কোডিং ট্যালেন্ট তৈরী করা যায়। ক্রাকিং আই টি জব সংস্থার নাম। এখানে কোডিং পরীক্ষা দেওয়া যায়। কোম্পানীগুলি তাদের ইন্টার্ন পজিশনের জন্য পোষ্টিং ও দেয়। বেসিক্যালি এটা টেস্ট প্ল্যাটফর্ম -ইন্টার্ন নেওয়ার জন্য।
প্রথমে গুগুলের কোডিং জ্যাম স্টান্ডার্ডে টেস্ট সেট করা হল। দেখা গেল কেই কিছু পারছে না। বুঝলাম এটা আই টি কুলির দেশ। এখানে অনেক নীচু থেকে শুরু করতে হবে। অত উঁচু আশা রাখলে চলবে না। পরে পরীক্ষা আরো সহজ করা হল। তাও সেই একি হাল।
তখন ভাবলাম এদের ট্রেনিং দেওয়া যাক। প্রথমে লোক্যাল প্রফেসর দের দিয়ে প্রশ্ন গুলোর সমাধান করাতাম। দেখলাম, স্থানীয় যারা পড়াচ্ছে, তাদের কোডিং স্কিলে সমস্যা আছে। সেটা হতে পারে। কারন ভাল কোডাররা সবাই ইন্ডাস্ট্রিতে। তারা কেউ কম পয়সার শিক্ষকতার কাজে আসে না। স্যালারি রেশিও ১ঃ ১০। সফটোয়ারের ক্ষেত্রে। ফলে মেরীল্যান্ড থেকে যোসেফ পিবাস বলে একজনকে হায়ার করলাম। এই ছেলেটি মেরিল্যান্ড কলেজ পার্কের কম্পিউটার সায়েন্সের গ্রাজুয়েট [ কলেজ পার্কের র্যাঙ্ক প্রথম ২০ এর মধ্যে, আই আই টির ওপরে ]। গুগুল জ্যাম ভাল জানে। এবং একজন পেশাদার কোডার ।
ভাললাম, এ ক্লাস নিক। যোসেফকে দিয়ে প্রায় ১২ টা ক্লাস করানোর পরে [ ইউটিউবে ক্লাস গুলো দিলাম] দেখা গেল, কেউ ওই ক্লাস শুনছে না। আমি নিজেও ছেলেমেয়েদের কেরিয়ার গাইড ওয়েবিনার করেছি ছটা। এসব কিছুই ছিল ফ্রি। কারন কোডার তৈরী হলে, কোডিং ক্লাব লাভ করত। দেখা গেল ছেলেপুলের শেখার ইন্টারেস্টই নেই। ১০০০-২০০০ ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে কোডিং ক্লাবে-কিন্ত ৪ জন ও ২৫% ক্লিয়ার করতে পারছে না। বেসিক্যালি কারুর কোন ইচ্ছাই নেই। সবাই ওই টিসিএস মডেলের ক্যাম্পাসিং চাইছে। আমি হোষ্টেলে শুয়ে বিড়ি গাঁজা টেনে কাটিয়ে দেব। আর ক্যাম্পাসিং এর দিন টাই শুট পরে আসলেই টিসিএস তুলে নিয়ে যাবে! এই হচ্ছে এদের এক্সপেক্টেশন।
কোডিং শিখতে হবে? সেটা কি?
এদিকে তিনমাস চালিয়ে বোঝাগেল -২০০০ ছেলেপুলে এল বটে, কিন্ত ১ টি পাতে দেওয়া যাবে না। ফলে ক্লাব চালিয়ে লাভ নেই। অথচ এই ক্লাব নিয়ে কোলকাতার অনেক আই টি কোম্পানী আশায় ছিল, এখান থেকে ভাল কোডার বেড়বে। ভাল ট্রেনার ছিল, কেউ নিতেই পারল না। প্রায় ১৫ টি কোম্পানী আমাকে ৫০০ এর বেশী ইন্টার্নের জন্য বলেছিল। আমি দেখলাম, একটিই দিতে পারছি না-৫০০ কোত্থেকে দেব। যারা ক্লাবে আসছে কোন বেসই নেই।
এই ব্যর্থতার পর, আমি নানান স্কুল শিক্ষকের সাথে কথা বলি। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রদের সাথে দেখাও করি। অবস্থা বোঝার জন্য,। ব্যাপারটা কি?
১) এই সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যারা পড়ছে-তাদের অভিভাবক বা ছেলেমেয়েদের কেরিয়ার কি বস্তু সেই আইডিয়াটুকুই নেই। সব প্রায় নিম্ন মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির। আই টি আই থেকে বিটেকে এসেছে। কেউ জমি বেচে। কেউ ধার নিয়ে। বাংলার আপার ক্লাস ফ্যামিলির ছেলেপুলেরা সরকারি কলেজে না পেলে, ইকো স্টাট ফিজিক্স ফার্মা নার্সিং এসব লাইনে যাচ্ছে। এদের প্রেফারেন্স স্কুলের চাকরি নইলে মেডিক্যাল লাইন। খুব কম সংখ্যায় প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে আসছে। কারন এদের ও বিশ্বাস উঠে গেছে। এইটুকু ঠিক।
কিন্ত সমস্যা হচ্ছে বাংলায় স্কুলের চাকরি কিলো দরে বিক্রি হয়ে গেছে। এখন যারা এম এস সি পাশ করেছে, তারাও সফটোয়ার ট্রেনিং নিয়ে সেই আইটিতেই ঢুকছে। যেহেতু স্কুলে কি হবে আর কেউ ভরসা রাখতে পারছে না। এখন এটাই যদি হয়, তাহলে বি এস এসি থেকেই সফটোয়ার শিখে সেটাই করতে পারত। জীবনে ৫ বছর এগিয়ে যেত।
২) কিন্ত এই যে বিপুল ৫০-৮০ হাজার ছাত্রছাত্রী প্রাইভেটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে-এদেরই বা কি হবে? ২০২১-২২ সালে ক্যাম্পাসিং ভাল হয়েছিল। টিসিএস ইনফি প্রচুর লোক নিয়েছিল। কিন্ত তাদের অনেকেই এখনো জয়েনিং লেটার পায় নি [ পর্ব ২-৬ দেখুন, প্রচুর লেখা এবং নিউজ রেফারেন্স দিয়েছি]। এবার ক্যাম্পাসিং খুব বাজে হয়েছে। এর পরের বছর আরো বাজে হবে। কারন আমেরিকান মার্কেটে মন্দা। আর চ্যাট জিপিটির জন্য অনেক কম লোক লাগবে। যাদের লাগবে তাদের চোস্ত সিস্টেমে জ্ঞান থাকতে হবে। সেই ট্রেনিং ত কেউ দিচ্ছে না। ক্লাসে পড়ানো হচ্ছে। ছেলেপুলেরা পাশ করছে। কিচ্ছু শিখছে না।
অনেকে বলছেন কোর ইঞ্জিনিয়ারিং। লোকের আইডিয়াই নেই। ভারতের কোন ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার প্রায় নেয় না। যারা ওইমোহে প্ল্যান্টের কাজ নিয়েছেন-দেখেছেন, ৫ বছরে স্যালারি প্রায় বাড়ে নি। অনেকেই অন্য লাইনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
৩) সফটোয়ারে বাইরেও আমাদের বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্সের ল্যাব আছে। সেখানে বায়োসেন্সরে কাজ হয়। সেখানেও দেখছি ফিজিক্স কেমিস্ট্রি বাংলাতে সেই ৫০ বছরের পুরাতন ট্রাডিশনেই পড়ানো হচ্ছে। ফলে একাডেমিক্সে সমস্যা হবে না-কিন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর এনডিতে এদের মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যা হয়। এবং সমস্যার মূল কারন, ফেলিওর কে আনালাইজ করতে ব্যর্থতা। যেটা বর্তমানে সফটয়ার থেকে কেমিস্ট্রি-সর্বত্র দরকার । কিন্ত স্কুল কলেজে ওই ভাবে পড়ানো হয় না। ফলে ছেলেমেয়েরাই বা নতুন পদ্ধতিতে শিখবে কি করে? তারা ত ১০০/১০০ পেতে অভ্যস্ত।
মোদ্দা ব্যপারটা কি? পৃথিবী বদলাচ্ছে দ্রুত। আমরাই তাল মেলাতে পারছি না। অভিভাবকরা মেলাবেন কি করে?
যত দিন যাচ্ছে তত, দেখা যাচ্ছে, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি থেকে সফটয়ার-সর্বত্রই আর এন ডিতে লোক লাগছে বেশী। এসব কাজে যথেষ্ট মেধা লাগে,। আর তার থেকে বেশী লাগে ব্যর্থতা থেকে দ্রুত শেখার শিক্ষা।
আগের দিনের ওই মুখস্থ করে, টিউশনি লাগিয়ে পরীক্ষাতে ১০০/১০০ এখন কেউ পাত্তাই দেবে না। কারন রিসার্চ এন্ড ডেভেলেপমেন্টে ওটার দরকার নেই-দরকার তাদের- যারা ব্যর্থতা থেকে দ্রুত শিক্ষা নিয়ে নতুন দিশা দেখতে পায়। বিজ্ঞানের আবিস্কার ওই পথেই হয়।
ফলে আমি দেখলাম, যে কোটি কোটি অভিভাবক অন্ধকারে। এদেরকে যে যেমন পারছে, লোভনীয় কোর্স দেখিয়ে মুর্গী করছে। আরে সবাই এ আই ডেটা সায়েন্স করছে- কিন্ত কেউ স্টাট ম্যাথ শিখতে চাইছে না। তা এদেরকে কে ইন্টার্নশিপ দেবে? আমাদের ডেটা সায়েন্সের ইন্টার্নের পরীক্ষায় ১০০% স্টাটের বেসিক প্রশ্ন থাকে। বাকীদের ও তাই হওয়া উচিত। কারন মেসিন লার্নিং লাইব্রেরী কোড চালাতে একটা ক্লাস ফাইভের ছেলেও পারে। কিন্ত অভিভাবকরা কি আর সেসব জানবে? তারা লাখ টাকার কোর্স দেখে, ডেটা সায়েন্সে চাকরির চাকচিক্য দেখে, সেইখানেই টাকা দেবে। তাদের কোন আইডিয়াই নেই ডেটা সায়েন্স খায় না মাথায় দেয়!
ফলে এই লেখাটা, এই সিরিজটা আমাকে লিখতেই হত। কাজের দুনিয়া এবং সেখানে শিক্ষার চাহিদাটা যে সম্পূর্ন বদলে গেছে- সেই বার্ত্তাটা অভিভাবকদের কাছে পৌছে দিতেই হবে।
ইউটিউবে অঙ্ক ইংরেজি কোডিং শেখার অসম্ভব ভাল রিসোর্স আছে।
বাংলার কোন শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব না ওর থেকে ভাল শেখানো। বা ওই লেভেলের ১০% শেখানো।
আমি সেগুলো রেগুলার দিচ্ছিও আমার পোষ্টে। আমার প্রোফাইল ফলো করতে থাকুন। আরো রিসোর্স পাবেন।
মনে রাখুন, এই পরিবর্তিত দুনিয়াতে সফল হওয়ার চার মন্ত্র
> ইউ টিউব থেকে সেলফ লার্নিং-যেকোন সাবজেক্টে
> সেই স্কিলের, মেন্টর পাওয়া- যিনি একজন প্রাক্টিসিং পেশাদার লোক [শিক্ষক নন ]
> ইন্টার্নশিপ
> কঠিন প্রবলেম, এলগোরিজম ইত্যাদি করে ব্যার্থতা থেকে শেখা- লার্নিং ফ্রম ফেলিওর।
শনিবারের গুগুল মিটে যোগ দিন। আর ডিটেলস দিন বলে আমাকে লজ্জা দেবেন না। এসব কিছুই আমার রিসেন্ট ফেসবুক পোষ্টেই আছে। খুঁজে নিন। নিজেরা সেলফ লার্নিং প্রাক্টিস করুন আগে। সেলফ লার্নিং এর প্রথম স্টেপ নিজে নিজে রিসোর্স খোঁজা।
আর আমার জীবন এবং জীবিকা সিরিজ পড়ার পর কোন প্রশ্ন থাকলে, হোয়াটসাপে গ্রুপে জয়েন করুন । সেখানে ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে উত্তর পেয়ে যাবেন। হোয়াটসাপ গ্রুপের নাম্বার ও এই ফেসবুকেই পেয়ে যাবেন,। কমেন্টেই পেয়ে যাবেন। অন্যান্য পোষ্টের থ্রেডেই আছে।
পোষ্ট এবং প্রোফাইল ফলো করতে থাকুন। আগামী পর্বে [২০] আলোচনা করব কি করে আপনার সন্তান তুখোড় লার্নার হয়ে উঠতে পারে। কারন সেটা সবার আগে দরকার। তার আগে কোন লাইনে পড়বে ভেবে লাভ নেই। আপনারা তাদের টিউশনিতে পাঠিয়ে অলরেডী তাদের লার্নিং স্কিলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আগে সেটা ঠিক করা যাক।
লেখাটি প্লিজ শেয়ার করুন। কারুন বাকী অভিভাবকরাও জানুক বাস্তব অবস্থা কি। শুধু আপনি আলোকিত হলেই হবে না। বাকীরা পেছনে থাকলে, তারাও আপনাকে পেছনে টানবে।
যোসেফের কোডিং ক্লাবের ক্লাস-কি করে কোডিং ইন্টারভিউ ক্রাক করতে হয় [ প্লে লিস্ট]
আই টি/ কম্পুটার/ ইলেকট্রনিক্সের ছেলেমেয়েদের জন্য আমার কেরিয়ার গাইড
[প্লে লিস্ট]