মত প্রকাশের অধিকার যখন বিড়ম্বনা-
৬ই জুলাই, ২০২২ / বিপ্লব পাল
গত দশদিন লিখব লিখব করেও কিছু লিখিনি। কিছুটা ভয়ে। আসলে নুপুর শর্মা এবং মহুয়া মৈত্রের অবস্থা দেখে পরিস্কার বুঝতে পারছি, আজকাল ধার্মিকদের থেকে ধর্মের ষাঁড়ের দল অনেক বেশী ভারী। শুধু নুপুর শর্মাকে সমর্থন করার জন্য রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রে নৃশংস ভাবে খুন করা হল! এই সব খুনীরা ধার্মিক ? রিয়ালি? প্লিজ বলবেন না এর সাথে মুসলমানদের নাম জড়ানো উচিত না। যারা খুনী, তারা খুনী! মুসলমান সমাজের খুব ক্ষুদ্রাংশ! কিন্ত বাস্তব হল, ওইসব ধর্মান্ধ কল্লাকাটাদের বিরুদ্ধে মুসলমান সমাজের কোন বিক্ষোভ নেই। ভারতের তথাকথিত সেকুলার পার্টিদের ও বিক্ষোভ নেই! মুসলমান সমাজের মৌনতা ওইসব খুনীদের হিরো করে দিচ্ছে। রাজস্থানের ওই ধর্মান্ধ খুনীরা দাওয়াত ই ইসলামি গোষ্ঠিভুক্ত। যারা না কি অহিংস ভাবে ইসলামে আসার জন্য দাওয়াত দেয়! এই গোষ্ঠি পারভেজ মুশারেফের সৃষ্ট। তালিবান কট্টর পন্থীদের বিরুদ্ধে "মডারেট" মুকাবিলা! এরাই পাঞ্জাবের গর্ভনর সালমন তাসিরের খুনীর সমর্থনে বিশাল মিছিল বার করে ছিল! এরা কোন বিচ্ছিন্ন ধর্মান্ধ নন। রাজনৈতিক মদতপুষ্ট খুনখারপি করা গুন্ডা। যাদের পেছনে বৃহত্তর মুসলমান সমাজের নির্বাক মদত আছে।
মহুয়া মৈত্র মাকালী নিয়ে তার মত প্রকাশ করেছেন। হিন্দু ধর্মে যে কেউ দ্বিমত করতেই পারেন। কারন হিন্দু ধর্মে প্রত্যেকের ঈশ্বর তার একান্ত নিজের কল্পনা। শ্যামা সঙ্গীতের ব্যঞ্জনা এই জন্যেই সার্বজনীন। মা কালী, আমাদের নিজেদের মা হয়ে যায়! যার কাছে এই ব্যর্থ জীবনের সব অভিযোগ, অনুযোগ, হতাশা উজার করে সন্তান স্নেহ দাবী করা যায় ---কমলাকান্ত , অতুলপ্রসাদের মা-কালী সেই সার্বজনীন মা। তারা তাদের স্নেহময়ী মাকেই কালী রূপে কল্পনা করেছেন। তাতে হিন্দু ধর্মে কোন জোর চলে না। মহুয়া মৈত্র আধুনিকা। তিনি যদি তার মাকে সিগারেট ধুম্রপানরত হিসাবে দেখতে চান- হিন্দু ধর্মে সেই কল্পনার স্বাধীনতা সব ভক্তর আছে। মায়ের সাথে সন্তানের ভালোবাসাতে কোন জোর চলে না! এই ধর্মে কৃষ্ণ কারুর সখা, কারুর প্রেমিক, কারুর শিশু সন্তান, কারুর পিতা। এবং সবাই ঠিক। বড়ু চন্ডীদাসের কামুক কৃষ্ণ থেকে বিদ্যাপতির প্রেমিক কৃষ্ণ- যা মানব কল্পনায় প্রেমের এক বিরাট বিস্তার-
সবই এ ধর্মে গ্রহনযোগ্য।
তাহলে হিন্দু ধর্মের নামে মহুয়া মিত্রর বিরুদ্ধে দল পাকিয়ে চোখ রাঙানো হচ্ছে কেন? হিন্দু ধর্ম নিয়ে ভক্তদের অজ্ঞতা? নাকি রাজনৈতিক কারনে হিন্দু ধর্মকে ইসলাম -২ বানানো হচ্ছে?
তবে আমেরিকাও নিরাপদ না। সুপ্রীম কোর্ট প্রগতিশীলতার ক্ষেত্রে নিরেপেক্ষ থাকবে জানানোর পর এখন এদেশে খৃষ্ঠান ধর্মান্ধদের লাফালাফি! তারা নাকি গর্ভনিরোধক ও বন্ধ করে দেবে! আমেরিকা উইথদাউট কন্ডোম! এরা ইদানিং ভারতের ধর্মান্ধদের ও ছাড়িয়ে গেছে!
আসলে এরা কেই ধার্মিক না। ধর্মকে আশ্রয় করে দল পাকিয়ে এই গুন্ডামো করার বিশেষ কারন আছে। আপনাদের নিশ্চয় সিপিএম জমানা মনে আছে। পার্টির বিরুদ্ধে গেলে দল পাকিয়ে আপনাকে গুঁতাতে আসত। এসবই সাধারন বঞ্চিত মানুষের মনস্তত্বের একটা প্যাটার্ন। আসলে সাধারন মানুষ ব্যক্তিগত , সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনে এত অসহায়, এত ক্ষমতাহীন- তারা ভাবে কোন একটা দলে ভিড়লে যদি তাদের কিছুমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্তি হয়। ঐক্যবদ্ধ গুন্ডামো সাধারন মানুষের ক্ষমতায়নের একটা পথ। বাই দ্য ওয়ে-এটা আমার তত্ত্ব না। এটা বিশ্ববরেন্য মনোবিদ এডলারের তত্ত্ব- যিনি নাৎসি জার্মানির উত্থানের পেছনে, হিটলারে্র উত্থানের পেছনে সাধারন মানুষের জনসমর্থন নিয়ে গবেষনা করেই এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন।
আমি দূরের কথাও ভাবছি। চীন এসব থেকে দূরে-বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর, তাদের সাধারন মানুষের কর্ম সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭৮ সালে ভারতের জনপ্রতি ইনকাম চীনের থেকে বেশী ছিল। ১৯৬৪ সালে ভারতের জনপ্রতি ইনকাম সাউথ কোরিয়ার থেকে বেশী ছিল।
আর আজ ? চীনের জনপ্রতি আয় ভারতের ৫ গুন । দক্ষিন কোরিয়ার জনপ্রতি আয় ভারতের ১২গুন। চীন সব কিছুতেই আমেরিকাকে টেক্কা মারছে।
গণতন্ত্র ( ভারত, আমেরিকা দুই দেশই) যদি এই ঢালাও ভাবে ধর্মান্ধতার পারমিশন দেয়, গণতন্ত্র টিকবে না। কারন বিজ্ঞান প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে, অনেক উন্নত এক সমাজ এবং রাষ্ট্র চীন গড়ছে। যার ফলে মাত্র ৩০ বছরের মধ্যে আজকে যা কিছু ইলেক্ট্রনিক্স, যন্ত্রাংশ-যা কিছু কিনতে যান, চীন ছাড়া গতি নেই।
মাত্র ৩০ বছরে! ১০০ বছর এইভাবে চললে পার্থক্য কোথায় যাবে? বোধ হয় আর ১০০ বছর ওইভাবে চলবে না। চীনকে কাউন্টার করতে আমার ধারনা ভারত এবং আমেরিকাতে চীনের মডেলেই স্বৈরতান্ত্রিক সরকার এসে যাবে। না হলে, চীনই ছলে বলে ব্যাঙ্কিং এর মাধ্যমে এই দুটো দেশ অধিকার করে , চৈনিক মডেল চালাবে।
এত ধর্মান্ধদের মাঝে , তার সাথে দুই দেশের বিজ্ঞান যুক্তিবাদি মানুষদের সুবিধাবাদি নীরবতার মধ্যে, আর কোন ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি না।