Tuesday, May 26, 2020

বাঙালীর ন্যারেটিভ কন্ট্রোল করে কলকাতার অলস বামবুদ্ধিজীবিরা

বাঙালী সব কিছুতেই অলস। আমরা বলি বটে বাঙালী তার অতীত, রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিতে এতটাই আত্মমগ্ন, যে সেই ঐতিহাসিক অন্ধকূপ থেকে এই জাতিকে টেনে তোলা বেশ কষ্টের। আমরা বলি যে বাঙালী ব্যবসা বিমুখ, কারন সে অতীতের গৌরবে মগ্ন।
কিন্ত সত্যিই কি তাই? বাঙালীকি তার অতীতের চর্চাটাই ঠিক ভাবে করে? নাকি সেখানেও পাহাড় প্রমান আলস্য? কারন অতীতের চর্চা ঠিক ভাবে করতে গেলে দেখা যেত, যাদেরকে দিয়ে বাঙালী শ্রদ্ধাবাসর সাজাচ্ছে, তারা ব্যবসা এবং উদ্যোগেও সফল ছিলেন। সেটা নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না।
বাঙালীর অতীতচর্চার ক্ষেত্রেও আলস্যটাই চোখে আসে।
তারানাথ তর্ক বাচস্পতির কথা কজন জানেন? কালনার তারানাথ পন্ডিত ছিলেন উনবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত। তার লেখা সংস্কৃত ব্যকরন এবং অভিধান, পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো প্রামান্য। কিন্ত সেটাই সবাই জানে। কেউ জানে না, তারানাথ একজন বিশাল সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁত, ঘি, কাঠের ব্যবসা করতেন গোটা ভারত জুরে। এবং সেই সময়ে তার ব্যবসায় হাজার হাজার লোক নিযুক্ত ছিল। যারা ভাবেন লক্ষী সবং সরস্বতীর সাধনা একসাথে হয় না, তারা বিরাট ভুল জানেন।
বিদ্যাসাগরের ব্যবসায়িক প্রতিভা নিয়ে কজন আলোচনা করেন? সংস্কৃত কলেজের চাকরি ছেড়ে ছাপাখানার ব্যবসায় নামেন বিদ্যাসাগর। স্কুল কলেজের পাঠ্যবই লিখবেন এবং ছাপাবেন। বস্তুত বাংলার বই এর ব্যবসা তার হাতেই তৈরী। দুবছরের মধ্যেই তার ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে।
জমিদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের ওপর ভরসা করতেন বেশী। তবে রবীন্দ্রনাথ বা জ্যোরিরিন্দ্রনাথ কেউই তাদের ঠাকুর্দা দ্বারকানাথের ব্যবসায়িক প্রতিভা পান নি। সামান্য পাটের ব্যবসা করতে গিয়েও লোকসান খেয়েছেন। কিন্ত জমিদারিটা ভালো চালাতেন।
প্রিন্স দ্বারকানাথ বহুভাষায় পন্ডিত ছিলেন। তিনি আরবী ফার্সি ইংরেজি বাংলা সংস্কৃত-তখনকার দিনের সব ভাষাতেই কাজ চালাতে পারতেন। অনেকেই জানেন না দ্বারকানাথের উত্থানের পেছনে সব থেকে বেশী বড় ভূমিকা ছিল তার ভাষা এবং আইনের জ্ঞানের। নবাবদের আরবী ফার্সিভাষার দলিল, ইংরেজিতে তিনিই অনুবাদ করে ছিলেন। এই কারনে তিনি ইংরেজ এবং দেশী রাজন্যবর্গ-দুই দলের কাছেই এক্সেস পান, যা তার ব্যবসা প্রসারনে কাজে আসে।
সুতরাং যেসব বাঙালী, বাঙালীর গৌরবজ্জ্বল অতীতের কথা বলেন, তাদের এটাও জানা দরকার রেনেসাসের বাঙালী পুরুষরা লক্ষী এবং সরস্বতীর সাধনা একই সাথে করেছেন। কারন দেশ লক্ষীছাড়া হলে, সরস্বতী সেখানে থাকে না। আর আধুনিক ব্যবসার জন্য- জ্ঞান বিজ্ঞানের দক্ষতা বিশেষ ভাল ভাবেই দরকার। জাকারবার্গ, বিলগেটস, ইলন মাস্ক-এরা সর্বোচ্চ মানের ইঞ্জিনিয়ার ও ।
স্বাধীনতার পর, বাঙালীর ইন্টেলেকচুয়াল সার্কল কতগুলো অলস পরজীবি ( পড়ুন বামপন্থী) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। স্বাধীনতার পরে, ভারতে বিরাট বিরাট ব্যবসায়ী ফ্যামিলি এবং কোম্পানীর জন্ম হয়ছে। এর একটাও বাংলার না। বাঙালীর না। মনমোহনের উদারনীতির পর, অন্তত ১৫০ টি আই টি এবং অন্যান্য ব্যবসা তৈরী হয়েছে, যার প্রতিটির মূল্য বিলিয়ান ডলারের বেশী (যাদের আমরা ইউনিকর্ন বলি)। এর মধ্যে টিসিএস, ইনফোসিস এর মতন আইটি কোম্পানী বা অরবিন্দ ফার্মা বাঁ সান ফার্মাও আছে। এর একটিও কোলকাতা বা বাঙালীর না।
স্বাধীনতাউত্তর কালে ভারতবাসীকে বাঙালীর শ্রেষ্ঠদান, "নক্সাল" শব্দটি। যা উপদ্রবের আরেকটি নাম। বাট, অধিকাংশ বাম বাঙালীর কাছে চারু মজুমদার এবং তাদের ভ্রান্ত সঙ্গীরা রোম্যান্টিক হিরো।
বাঙালী অর্থনীতিতে দুটো নোবেল দিয়েছে, সেটা গৌরবের ব্যাপার বুঝলাম। কিন্ত সেই গৌরব বেচে কি, বাঙালার বেকার ছেলেরা চাকরি পাবে? নোবেল বেচে কি বাংলার গ্রাম গঞ্জ থেকে যে লাখে লাখে বেকার শ্রমিকরা কেরালা, মহারাষ্ট্র গুজরাটে কাজের সন্ধানে যায়, তারা ঘরে ফিরতে পারবে?
বাঙালীর ন্যারেটিভ কন্ট্রোল করে কলকাতার অলস বামবুদ্ধিজীবিরা। যাদের আমি আল্টিমেট লেভেলের ইডিয়ট বলে মনে করি। কিন্ত সমস্যা হচ্ছে, তাদের এই বামমুর্খামো একটা জাতির মধ্যে বদ্ধমূল ধারনা হিসাবে ঢুকে গেছে। এই ক্ষতি হাজারটা আমপানের ও বেশী।

Monday, May 11, 2020

করোনাতে পাশ ফেইল!

ছোটবেলায় অঙ্ক বা গ্রামার ভুল করলে, ভারতের সব ছেলেমেয়েরাই কানমলা, ডান্ডা, চোখ রাঙানি,শেমিং, গালাগাল-সব কিছুর সাথেই পরিচিত। এর ফলে, ভারতীয় মনোবৃত্তিতে একটা ধারনা -ভুল করা মানেই লজ্জার। ডাঁহা ফেইল ইত্যাদি। অধিকাংশ ভারতীয়দের এটা পার্মানেট ব্রেইন ড্যামেজ যে জীবনের সব কিছুই পাশ-ফেলের খেলা! সে ডিগ্রি, বিয়ে চাকরি যাইহোক না কেন!
এখন জীবনটা যদি বই এবং অঙ্কের ফর্মুলার মতন কপিবুক হত, ভারতীয়দের কোন অসুবিধা হত না। ফর্মুলা লাগিয়ে ডিগ্রি, এরেঞ্জড ম্যারেজ পর্যন্ত চলে। তারপর সাংসারিক বা পেশাদার জীবনে কিন্ত ফর্মুলা খুব বেশী চলে না।
এই কারনে ভারতের সফটীয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের দুর্নাম যে তারা ভুল স্বীকার করে না। ভাবে ভুল স্বীকার করা ডিসক্রেডিট। ফলে ক্ষতি হয় প্রোজেক্টের।
কারন রিসার্চ ডেভেলেপমেন্ট ওভাবে কপিবুক হয় না। ভুলের বিশ্লেষন থেকেই ঠিক পথের সন্ধান পায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি। ভুল থেকে শেখাটাই প্রগতির একটা অংশ। যে ভুল করে নি, সে কিছুই শেখে নি।
আমি এদ্দিন শুধু ভারতের সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ারদেরই গালি দিতাম। যে ছোটবেলার ভীতির কারনে, এরা ভুল স্বীকার করতে চায় না। এখন দেখছি এই ভীতি রাজনীতিবিদদের মধ্যেও! এই পাশফেল মানসিকতার পার্মানেন্ট ব্রেইন ড্যামেজ তাদের ও!
যেন পশ্চিম বঙ্গে বেশী কোভিড-১৯ পেশেন্ট হলে, সেটা মমতা ব্যানার্জির ডিসক্রেডিট। কেরলে কোভিড নির্মূল বলে চেঁচাচ্ছে। মোদি সরকার শুধু নাম্বার নিয়ে ব্যস্ত। এদিকে ভারতে টেস্টিং এর হার সব থেকে কম। পশ্চিম বঙ্গে আরো কম। যত বেশী পেশেন্ট ধরা পড়বে, তত যে দেশের আর দশের লাভ-কে বোঝাবে? এত সেই সফটীয়ার বাগের মতন হল। যত বেশী বাগ ধরা যাবে আগে, প্রডাক্ট তত মজবুত হয়।
আমেরিকাতে কিন্ত রিপোর্টিং এ জল নেই। এপ্রিলে প্রতিদিন ৪০,০০০ নতুন রুগী, আর ৩০০০+ প্রতিদিন মারা যাচ্ছিল। এখন ২০,০০০ ইনফেকশন ৫০০-৬০০ ডেইলি ডেথ। আস্তে আস্তে ঠিকই নিয়ন্ত্রনে আসছে।
ভারতের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে এখন ৫০০০ ইনফেকশন রিপোর্টেড। মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর মধ্যে। বাস্তবে সংখ্যাটা কি ঠিক? আমার ত মনে হয় সর্বাত্নক টেস্টিং করলে এখন ডেইলি ৫০,০০০ সংক্রমন আর ৫০০+ মৃত্যু রিপোর্টেড হবে। অনেকেই অজানা জ্বরে বাড়িতে মরছে। আত্মীয় স্বজনেরা রিপোর্ট করছে না ভয়ে। কারন তাহলে টেস্টিং করবে, আর টেস্টিং পজিটিভ হলে, কোভিড হাসপাতালে পাঠাবে। যেখানে সত্যিকারের কোভিডে মৃত শবদেহের সাথে একসাথে থাকতে হবে। সব থেকে মজার ব্যাপার হল , কোভিড টেস্টিং এর ভুলের সংখ্যা ২০-৩০%। অর্থাৎ কোভিডে না ধরলেও আপনাকে জোর করে কোভিড রুগীদের সাথে পাঠাবে। এবং এমনিতে কোভিডে আপনার মৃত্যু হত না-কিন্ত একবার টেস্টিং করে পজিটিভ এলে ( যেখানে ভুলের সম্ভাবনা ২০-৩০%- এর বেশী একুরেসি সোয়াব টেস্টে সম্ভব না), কেলেঙ্কারি ব্যপার। কারন এমনিতে হয়ত আপনার কোভিড হয় নি। টেস্টে ভুল করেছে। যার সম্ভাবনা ১০ এ দুই বা তিন। কিন্ত কোভিড পেশেন্টদের সাথে একসাথে থাকলে সেটা হবেই!!
বুঝুন অবস্থা। তাহলে দাঁড়াচ্ছে জনগন, রাজনীতিবিদ সবাই কেস চাপতে চাইছে!
এর ফল হবে মারাত্মক। এমনিতে ভারতে লোকেদের বিসিজি টিকা নেওয়া আছে। গরম আদ্র ওয়েদার। ভারতে কোভিড স্ট্রেইন দুর্বল। এসব কারনে ভারতে কিন্ত কোভিডের আক্রমন তীব্র হওয়া উচিত না।
ফলে প্রচুর টেস্টিং করে, যদি সব আসল কোভিড পেশেন্টদের চিহ্নিত করা যেত, তাতে প্রথমে দুদিন নাম্বার বেশী আসত। কিন্ত আস্তে আস্তে কমত। যেমন আমেরিকাতে এখন অর্ধেকে নেমেছে। আরো নামবে। ভারতে কিন্ত বেড়েই চলেছে।