Sunday, July 3, 2016

বালিতে মুখ গুঁজে থাকলে সন্ত্রাস বাড়বে -কমবে না

এখনো প্রচুর মুসলিম নিরুত্তাপ। তাদের ধারনা এই সন্ত্রাসবাদের সাথে তাদের প্রিয় ধর্মের কোন যোগ নেই। সব ইসলামিক জঙ্গীই আমেরিকা, ইস্রায়েল আর ভারতের তৈরী। না হলে সব চরিত্র কাল্পনিক। আরেকটু বুদ্ধি যাদের মাথায়, তারা আরেক দর। বাজে মুসলিমরা ইসলামের নামে কি করল তার দায় আমরা নেব কেন? রেসিজমের সব দায় কি সব সাদারা নিয়ে থাকে? কমিনিউস্টরাও ত মানুষ খুন করেছে অনেক বেশী? হিন্দু জঙ্গীও অনেক আছে? তাহলে হিন্দু ধর্মের দোষ ধরা হয় না কেন?
আমেরিকা ২০০ বছর আগে কত রেড ইন্ডিয়ান হত্যা করেছে। ইরাকে ভ্রান্ত নীতি নিয়েছে। আমেরিকা ড্রোন দিয়ে এত নিরাপরাধ লোক মেরেছে। ভিয়েতনামে ন্যাপ ফেলেছে। ইত্যাদি। ইত্যাদি।

এই যুক্তিগুলো হয় ছাগু মুসলিম না হলে বামাতিদের। উত্তর গুলো খুব পরিস্কার ভাবে দেওয়া দরকার নইলে হ্যাজ চলতেই থাকবে

(১) কেওই সাধু নয়। সবাই আধিপত্যবাদি। ওটা আমাদের জিনে। যেসব সংস্কার বা মেম টিকে গেছে-আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সবাই করবে। সুতরাং তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি চোর বটে টাইপের যুক্তি দিয়ে লাভ নেই। ইসলাম, হিন্দুত্ব, আমেরিকা, কমিনিউজম-সবাই নিজেদের সংস্কার এবং প্রিন্সিপলগুলো প্রসারের চেষ্টা চালাচ্ছে। কারন সেটাই সামাজিক বিবর্তনের ভবিতব্য।

প্রশ্নটা হচ্ছে এই প্রসারনের পন্থাটি কি শান্তিপূর্ন বা অহিংস?

প্রাক্টিক্যালি স্পিকিং কেওই অহিংস না। কিন্ত তাতে কিছু যায় আসে না। প্রশ্নটা হচ্ছে আপনি আমি কোন কালচারে থাকতে ভালোবাসব? অভিয়াসলি যেখানে জীবনের নিরাপত্তা বেশী, খাদ্য, সেক্স, বাসস্থান, চিকিৎসা সুল্ভ।

সুতরাং ইসলাম যখন আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে সহিংস উপায়ে, আমরা ভীত। কারন তা আরব মরুভূমির সংস্কৃতি-যেখানে কারুর কোন নিরাপত্তা থাকতে পারে না। কারন ইসলামের সংস্কৃতিতেই আছে রক্ত আর যুদ্ধ। মেয়েদের দাসী বানানো। এটি একটি মধ্যযুগীয় আরব সংস্কৃতি-যা একবিংশ শতাব্দিতে চলে না।

একই কারনে হিন্দুরা আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলেও আমি ভীত হই। কারন হিন্দুদের মধ্যে কুসংস্কার অসম্ভব বেশী-সামন্ততান্ত্রিক কালচার-সেখানে বিজ্ঞান এবং মুক্ত চিন্তার উন্মেষ ঘটানো মুশকিল।

কমিনিউস্টরা খাদ্য বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসার নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্ত দিতে পারে এমন প্রমান নেই। উলটে তারা মানুষের মৌলিক অধিকার হরন করে। আপাতত সব কমিনিউস্ট রাষ্ট্র মানুষকে যন্ত্রনা এবং দাসত্ব ছাড়া কিছু দেয় নি। তবে কমিনিউজম ভবিষ্যতে যদি উন্নত ফর্মে আসে, যেখানে মানুষের অধিকার সুরক্ষিত, উৎপাদন ও ভাল হয়, তাহলে অন্য কথা হবে।

এবার বাকী থাকল আমেরিকান কালচার-যার উদ্ভব আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং গৃহযুদ্ধ থেকে। এর বীজ ছোট সরকার , কম ট্যাক্স, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ব্যাক্তিউদ্যোগ, মার্কেট এবং আল ইনক্লুসিভনেস। আমেরিকা কোন ইউটোপিয়া না। এখানেও অনেক গরীব, অনেকেই চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে না। কিন্ত লোকে খেতে পায়। ৯৯% লোকের মাথার ওপরে ছাদ আছে। সব থেকে বড় কথা এই সংস্কৃতিই আমাদের যাবতীয় সব কিছু আবিস্কার দিয়েছে-সে ইলেক্ট্রিসিটি, ল্যাম্প, তেল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, স্মার্টফোন-যাই বলুন না কেন।

সভ্যতার আসল অগ্রগতি প্রযুক্তিতে। আর তা আমেরিকারই দান মূলত ৮০%।

সুতরাং আমি যদি বাকি তিনটে সংস্কৃতি দেখি, খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার সংস্কৃতির সাথেই থাকব। তা যতই ভিয়েতনাম আর পাকিস্তানে বোমা ফেলুক। সেই জন্য কমি, মোল্লা, চাড্ডি যতই নিজেদের কালচার নিয়ে বড় বড় ভাষন দিক, আমেরিকার ভিসার জন্য প্রথমে লাইন দেবে। এই মোল্লাগুলো কিন্ত আরবের থেকে আমেরিকায় থাকতে পছন্দ করে বেশী-কিন্ত আমেরিকাতে কানাডায় বসে আরবের শরিয়ার জয়গান গাইবে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তারা ভ্রান্ত, দ্বিচারী এবং ডিজইলিউশনাল। এদের মাথা ঠিক নেই বা পিউর বদমাইশ টাইপের পাবলিক।

সুতরাং ইসলামের খুন করা আর আমেরিকার সরকারী নীতির জন্য হত্যালীলাতে পার্থক্য আছে। একটি প্রগতিশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, অন্যটি আমদেরকে মধ্যযুগে পাঠানোর জন্য।

সব হত্যালীলাই নিন্দার। কিন্ত আমেরিকার ড্রোন হামলার সাথে গুলশান হামলার তুলনা হাস্যকর। একটি প্রগতিশীলতার আধিপত্যবিস্তার-অন্যটি আমদের মধ্যযুগে ঠেলার পাঁইয়তারা-যেখানে খাদ্য, বস্ত্র চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক অধিকারগুলো নেই। সুতরাং আমেরিকার হত্যালীলার বিরুদ্ধে আমরা অতটা সোচ্চার নই, কিন্ত ইসলামি জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার। কারন পেছনের দিকে আমরা যেতে চাইছি না।

স্পেডকে স্পেড বলাই ভাল।

(২) আরেকটা ব্যপার গুরুত্বপূর্ন। কোন সংস্কৃতি গণতন্ত্রকে রক্ষা করে। অনেক মুসলমান যুক্তি দেয় রেসিস্টদের জন্য সাদারা কি দুঃখ প্রকাশ করে? কিন্ত তারা ভুলে যাচ্ছে বর্নভেদ, ক্রীতদাস প্রথা তোলার জন্য আমেরিকাতে গৃহযুদ্ধ হয়। যেখানে নিগ্রোদের মুক্ত করতে ৭০০,০০০ সাদা সৈনিক প্রান দিয়েছে। কজন মুসলমান কোরানে "এপ্রুভড" ক্রীতদাস প্রথা, যা আরবে বহুদিন চলেছে ( বৃটিশ এসে আইন করে বন্ধ করে), তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে প্রান দিয়েছে? কজন মুসলমান তালাক, হুডুড আইন সব নারী বিরোধি আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে? প্রান দেওয়া দূরের কথা। ভারতে, বাংলাদেশে মুসলমানরা আল কায়দার বিরুদ্ধে একটা ছোট মিছিল পর্যন্ত নামাতে সাহস পায় না।

(৩) আরো আরেকটা ব্যপার প্রাক্টিক্যাল কনসার্ন। পশ্চিম বাংলা বা বাংলাদেশের গ্রামে যেসব হিন্দুরা আছেন মুসলমান অধ্যুসিত হয়ে-তারা কেমন আছেন? বাংলাদেশের খবর কি কিছুই পান না? আমার এসব নিজের চোখে দেখা যে কিভাবে হিন্দুদের বিরুদ্ধে যখন তখন ভয় দেখিয়ে জমি জায়গা ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কজন মুসলিমকে ভারত বা বাংলাদেশে জমি ছাড়তে বাধ্য করেছে হিন্দুরা? গুজরাতের যে দাঙ্গা হয়, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল আমেদাবাদের কিছু এলাকা থেকে মুসলিমদের তাড়ানো যাতে সেখানে রিয়েল এস্টেট মাথা তোলে। কিন্ত সেগুলো সফল হয় নি।

আবার রাজারহাট করার সময় মুসলমান চাষীদেরই তাড়িয়েছে মুসলমান মাফিয়ারা। সবটাই জমি জায়গার খেলা।

ফলে এখন সেসবের সুযোগ নিচ্ছে হিন্দুত্ববাদিরা। গ্রামে হিন্দুদের যখন জমি ছাড়তে বাধ্য করে মুসলমানরা সেখানে বামেরা কি কোন প্রোটেকশন দিতে যায় না পারে? পারে না। ফলে পশ্চিম বঙ্গের মুসলিম প্রধানগ্রামগুলিতে বিজেপি এখন বাড়ন্ত। নেহাত নেতা নেই। উলটো দিকে মমতার মতন শক্তিশালী নেতা। ফলে পশ্চিম বঙ্গে মমতার জন্য এখনো বিজেপি আটকে। কিন্ত কদিন। পশ্চিম বঙ্গ বামশুন্য হওয়ার দিকে এগোচ্ছে-এটা ভুলবেন না আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম একটাও সিট পাবে না।

সুতরাং গ্রামে হিন্দুদের প্রোটেকশন না দিতে পারলে পশ্চিম বঙ্গে বিজেপির উত্থান এবং ক্ষমতা দখল স্টালিনের বাপ আসলেও আটকাতে পারবে না। মমতা ব্যানার্জি এটা বুঝেছেন বলে, এইবার প্রথম গ্রামে গ্রামে মুসলিম জঙ্গীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে এক্টিভ থাকতে বলেছেন।

(৪) কিন্ত অন্যদিকটা ভাবতে হবে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেগেও লাভ নেই। মুসলমানদের বোঝাতে হবে তারা ইসলামের ভিক্টিম। ইসলামের মতন আরব মরূভূমির বর্বর আইন কানুনের সাথে বাংলার যোগ থাকাটাই দুর্ভাগ্যজনক। এই বাংলা নাচে গানে কবিতায় সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। বাংলার নিজস্ব আধ্যাত্মিক ট্রাডিশন আছে। ফালতু কেন তারা মরূভূমির আরবদের মতন ক্লাউন হওয়ার চেষ্টা করছে? তারা বাঙালী, বাঙালী সত্ত্বার মধ্যেই তাদের মোক্ষ। বোরখা, হিজাব বাঙালীর সংস্কার হতে পারে না।

ইসলামে কি আদর্শ আছে, কি লেখা আছে যা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বা লালন আমাদের যা দিয়ে গেছেন তার থেকে উন্নত? কোন মুসলমান আমাকে বলবে তারা ইসলামে কি আধ্যাত্মিক ভ্যালু পাচ্ছে যা রবীন্দ্র নজরুল লালনে নেই?

ইসলামের বিরুদ্ধে লড়ে যান-কিন্ত মুসলমানদের বোঝান যে তারা একটি মধ্যযুগীয় সংস্কৃতির ভিক্টিম। তাদের গালাগাল দিয়ে দূরে সরানোটা ভুল স্ট্রাটেজি।

হিন্দু রীতিনীতি কুসংস্কার আমার পছন্দ হয় না বলে আমি নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিই না। কিন্ত উপনিষদ আমার ভালো লাগে। সুফী ইসলামের মানবিকতাও আমার প্রিয়। আমি প্রতিটা হিন্দু বা মুসলমানকে অনুরোধ করব-নিজেকে আগে হিন্দু এবং মুসলমান পরিচিতির বাইরে রাখুন। ইসলামের অনেক কিছু আপনার ভাল লাগতেই পারে। সেগুলো পালন করুন । কিন্ত নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেবেন না প্লিজ। ওটি এখন ঘৃণিত একটা পরিচয় যার গায়ে ১৪০০ বছরের রক্ত। আর সেই রক্তের দাগ আরো মোটা হচ্ছে। উপনিষদ ভাল লাগে। কিন্ত নিজেকে হিন্দু বলে পরিচয় দিই না। কারন হিন্দুত্বের গায়ে ৩০০০ বছরের বর্নভেদের কলঙ্ক। আর অসম্ভব কুসংস্কার।




Friday, July 1, 2016

গুলশানে আইসিস হামলা- অত:পর টেরর যখন অন্তঃপুরে

২০০৪-৫ এ যখন মুক্তমনাতে লেখা শুরু করি, তখন মাঝে সাঝে একটা কি দুটো বড় সন্ত্রাসবাদি হামলা ঘটত। এই জুন মাস লক্ষ্য করুন। ফ্লোরিডা, তুরস্ক এবং বাংলাদেশ। পৃথিবীর সব প্রান্তেই  মেগা আইসিস হামলা। এরা আবার স্বঘোষিত আইসিসি জঙ্গী। খুব সম্ভবত নেটওয়ার্ক নেই।  হিরোইন মরফিনে আচ্ছন্ন হয়ে যেমন ড্রাগএডিক্টরা মানুষ খুন করতে পারে, এরা ধর্ম এডিক্ট। ধর্মের আফিঙে আচ্ছন্ন হয়ে,  বেহস্তের অনন্ত বেশ্যাসুখ উপভোগ করতে, এরা আজ ফিদাইন জঙ্গী।  নশ্বর জীবনের মায়ার বাধনের উর্ধে। এরাই আজ আধুনিক বিশ্বের জীবন্ত মানব বোমা। রেস্টুরেন্ট, মল, স্কুল কলেজ, সিনেমা হল সর্বত্র ফাটতে পারে।

   তবে এর জন্য শুধু ইসলাম ধর্মকে দোষ দেওয়াটাও বালখিল্যতা, আবার ইসলামের দোষ না দেখাটাও মূর্খামো। মূল ব্যপার হচ্ছে শুধু অতিধার্মিকে সন্ত্রাসী তৈরী হয় না। তার জন্য টাকা, অস্ত্র,  রাজনৈতিক সাপোর্ট লাগে। বাংলাদেশে গুলশানের রেস্টুরেন্টে আইসিস হামলাতে কোত্থেকে এল টাকা আর অস্ত্র? বেয়াইনি অস্ত্র না হয় বাংলাদেশে প্রচুর-কিন্ত এই হামলাকারিদের ট্রেনিং ইত্যাদি দিতে যা টাকা লাগবে, তার সাপ্লাই দিল কে?

    অভিজিত হত্যাকান্ড বাংলাদেশে অধুনা জঙ্গী উত্থানের টার্নিং পয়েন্ট। দুটো ব্যপার লক্ষ্য করুন। প্রথমত, অভিজিত যেহেতু আমেরিকান সিটিজেন, ওর হত্যাকান্ড বাংলাদেশের জঙ্গীরা একটু আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করে। দ্বিতীয় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এই হত্যাকান্ডের কোন নিন্দা করে নি। অধিকাংশ বাংলাদেশীরাও করে নি। ভাবটা ছিল ইসলামের শত্রু মরেছে বেশ হয়েছে। অভিজিতের মৃত্যু সংক্রান্ত নিউজগুলোতে ফেসবুকে বাংলাদেশীরা কি লেখালেখি করেছে, দেখলেই সেটা টের পাবেন।

              উলটে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ব্লগারদের ইসলাম বিরোধিতা বন্ধ করতে হবে। এই বাংলাদেশ সরকার সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্মানুভুতিকে এত ভয় পায়, একবার ও পরিস্কার করে বলতে পারে নি ব্লগারদের বিরুদ্ধে যারা নিরন্তর হুমকি দিচ্ছে ফেসবুকে, তাদের আইনের আওতাই আনতে হবে। অভিজিত, অনন্ত, বাবু, নিলাদ্রী-আস্তে আস্তে সব দেউটিই নিভেছে। তাদেরকে বলে বলে হুমকি দিয়ে প্রকাশ্যে খুন করা হয়েছে।  ইসলামের শত্রু নিধন হচ্ছে, এতেব এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিলে, জনপ্রিয়তা হাস পাবে-সুতরাং প্রতিটা ব্লগার হত্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বুলি ছিল-ব্লগাররা ইসলামের বিরুদ্ধে লেখে কেন? শেখ হাসিনা ত পরিস্কার করেই বলেই দিয়েছিলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে লেখালেখি চালু রাখলে তাদের প্রানের দায় বাংলাদেশ সরকার নিতে পারবে না।

 অর্থাৎ খুব পরিস্কার ভাবেই বহুদিন ধরেই জঙ্গীদের উস্কানি দিয়ে চলেছে বাংলাদেশ সরকার। হালে পুলিশের ফ্যামিলির গায়ে হাত দেওয়াতে, জঙ্গী দমনের নামে বিরোধি গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে।

কিন্ত ঘুরে ফিরে যে প্রশ্ন ফিরে আসে এই ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মের ভূমিকা কি? যেহেতু এই জঙ্গীদের একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক, ধর্মীয় অবস্থান আছে এবং সেটা ওয়াহাবি ইসলাম-ইসলাম ধর্মের ভূমিকা আসবেই। এবং বাংলাদেশ সরকার যে এই জঙ্গিদের বিটিম-যথা জামাতি, ওলামা লীগ এবং হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ, তার মূলেও ইসলামের ভাতৃত্ববোধের রাজনীতি।

কিন্ত এখানেই একটু গভীর ভাবে ভাবা দরকার। আর্থ সামাজিক বিশ্লেষন ফালতুই হবে। কারন আমেরিকাতে যেসব ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ ঘটেছে, তার পেছনে শ্রেনী তত্ত্ব, বঞ্চনা এসব চলে না। খুব পরিস্কার ভাবে যেটা ঘটছে-এইসব জঙ্গীদের বাবা-মা ধর্মভীরু মুসলিম। সুতরাং ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাগুলোর মধ্যে ভয় ঢোকানো হচ্ছে-আল্লার গজবের ভয়। বাচ্চাদের বা মানুষের সে সুস্থ স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, বুদ্ধিবৃত্তি আছে-সেগুলোর ওপরে চাপানো হচ্ছে ধর্মকে। পরিস্কার কথায় সব জঙ্গীদের মধ্যে একটাই কমন  থ্রেড। ধর্মভীরু মুসলমান পরিবারে জন্মে, ছোটবেলা থেকেই এদের ব্রেইন অসুস্থ-ড্যামেজড।  বোস্টন ম্যারাথন বম্বিং এর জারনাভ ভাইরা বা অর্লান্ডোর ওমর মতীন-অথবা অভিজিত অনন্তের খুনীরা-এদের সাধারন বৈশিষ্ট পরিস্কার। জিহাদি ভাইদের পরিবার উগ্রমুসলমান। এবং খুব ছোটবেলা থেকেই ধর্মশিক্ষার নামে এদের ব্রেইন ড্যামেজ করা হয়েছে।


 ব্যাপারটা সিম্পল। আপনাকে প্রথমে আফিঙের নেশা ধরানো হল ছোটবেলা থেকে। এবার সেই নেশা কেটে সুস্থ জীবনে ফেরা মুশকিল। বরং অনেক উগ্র সংগঠন আরো কড়াপাকের আফিং খাইয়ে তাদের ইন্তেকালের, এই মর্ত্যভূমের অস্তিত্বই বিলোপ করাচ্ছে। আমি আপনি-এদের কাছে ইহকালের লোক। সুতরাং কেউনা। আফিঙের নেশাতে ওরা আলরেডি পরকালের বাসিন্দা। ফলে আমাদের মানবিক, মর্ত্যধামের লজিকে ওদের কিছু যায় আসে না। যেমন নেশাগ্রস্থ মানুষ যখন নেশার জন্য চুরি ডাকাতি করে, তারা বোঝেও না এটা চুরি। এই বোধ টাই লোপ পায় তাদের। ইসলামিক জঙ্গীদেরও একই অবস্থা।


   মুশকিলটা কিন্ত ইসলামি জঙ্গীদের নিয়ে না। আসল নাটের গুরু এদের যারা ব্যবহার করছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আমেরিকাতে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যারা চুরি চামারি করে, তাদের ৮০% ই করে নেশার ঘোরে নেশার টাকা জোগার করতে। জঙ্গীদের ব্যপারটা আলাদা কিছু না-এরাও ইসলাম আফিঙের নেশার ঘোরে ইসলামের হেফাজত করছে বলে নিজেরা মনে করে।

   কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে ড্রাগপেডলারদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিতে পারে অথচ যেসব উগ্র ইমাম এইসব জঙ্গীবাদ ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কেন, ভারত , আমেরিকাও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বেগতিক অবস্থা বুঝে ফ্রান্স, বেলজিয়াম আর হল্যান্ড নতুন আইন আনছে ইমামদের বিরুদ্ধে।  কিন্ত শুধু ইমামদেরই বা দোষ দেব কেন? ধর্মভীরু বাড়ীতেই ত ছেলেটির মাথা বিগড়ে দেওয়া হচ্ছে। এর পরে ইমাম বাবাজি যা করছেন, তা হচ্ছে আগুনে ঘৃতদান।

  ধর্মের সাথে বিশেষত ইসলামকে ড্রাগের সাথে তুলনা করা কি যুক্তিসঙ্গত?  আমি অবশ্য কমিউনিজমকেও ড্রাগ বলেই মনে করি। সব ধর্মই এক ধরনের ড্রাগের নেশা। তবে কেউ হেরোইন, কেউ মরফিন, কেউবা আফিঙ।  কেখন কোন মুসলমান বলতেই পারেন ইসলাম দ্বীনের ধর্ম-এই ধর্মে জাকাত, রমজান সহ অনেক ধারনাই গরীব মানুষের প্রতি মমতাময়ী সহানুভূতি নিতে তৈরী। তাতে কেউ মজলে ক্ষতি কি? কমিনিউস্টরাও তাই। তাদের ড্রাইভিং ফোর্সত সেই গরীব অত্যাচারিত শ্রেনীর প্রতি সহানুভুতি। তাহলের গরীবের প্রতি ভালোবাসা কি আফিং এর নেশা?

  এখানেই একটা ক্লিয়ারকাট ডিসটিংশন টানা দরকার। গরীবের প্রতি ভালোবাসা নিশ্চয় নেশা নয়। নেশাটা হচ্ছে এই পৃথিবীর বাস্তবতা বহুধ। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য যেমন এর একটা দিক-অন্যদিকটা হচ্ছে পৃথিবীর এই যে জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি-তার ভিত্তি মার্কেট ।  যার অনেক কিছুই ধর্মীর উচ্চ আদর্শের বিরোধি। সুতরাং কেউ যদি শুধু ধর্মের আদর্শবাদে মজে থাকে, কিন্ত তাকে বাস করতে হয় একবিংশ শতাব্দির পৃথিবীতে-যা চালাচ্ছে বাজার-সেই ছেলেটি বিরাট দ্বিধার এবং ভ্রান্তি নিয়ে বড় হবে। যা হয়েহে জারনাভ ভাতৃদ্বয় এবং ওমর মতীনের ক্ষেত্রে। এসব ক্ষেত্রে ছেলেটি সন্ত্রাসবাদি হওয়াটাই স্বাভাবিক-এবং তার কাছে আইসিসের বানী লাগবে অমৃতবানী যা অধার্মিক পৃথিবীকে ছেঁটে ফেলার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই জন্য ওমর মতীন নিজেই ছিল সমকামী-সমকামী ক্লাবেই যেত-আবার সেই কারনে নিজেকে ঘৃণাও করত। ফলে নশ্বর জীবনের মায়া ত্যাগ করতে তার সময় লাগে নি। কারন সে নিজেকেই ভালবাসতে শেখে নি-ঘৃণা করতে শিখেছে। ফলে এমন ছেলেদের জঙ্গী না হওয়াটাই অস্বাভাবিক।

    এ এক আজব পৃথিবী। যেখানে পরম সত্য বলে কিছু নেই। নিজেকে বেশী ভালবাসলে তৈরি হয় স্বার্থপর দানব। আর নিজেকে ঘৃণা করতে শিখলে আমরা পাব ইসলামিক সন্ত্রাসী।  দরকার মানবিক এবং ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভংগী।  ধর্ম মানবিকতা শেখায় কিন্ত ক্রিটিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গী ধ্বংস করে।

   ক্রিটিক্যাল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়া মানবিকতায় মজে থাকাটাই ড্রাগ এডিকশন-যেখানে যীশুর প্রেম শেখাতে কোটি কোটি লোক হত্যা করতে হয়। দ্বীনের ধর্মের, শান্তির ধর্মের মহান শিক্ষা দিতে, জিহাদিরা খুন করাটাকেই পন্থা বলে মনে করে!