অনলাইন ব্যবসা - বাঙালী যুবকদের সামনে আলোর রেখা না মরীচিকা ?
http://biplabbangla.blogspot.com/2015/10/blog-post_17.html
**********************************
(১)
যেখানেই সমস্যা, সেখানেই আশার আলো-চাইনিজ প্রবাদ
চম্পক দে নগরচন্ডালীতে একটা গুরুত্বপূর্ন পোষ্ট দিয়েছে। ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের চাপে এবার নাকি কোলকাতার পূজোর বাজারে কেনাকাটা অনেক কম। গোপা সরকার, তার পারিবারিক বুটিক ব্যবসার সূত্রে জানিয়েছে, এবার সেল প্রায় ৩০% কমেছে। পরেরবার আরো কমবে -কারন অনলাইন সেল আরো বেশী জনপ্রিয় হচ্ছে। চম্পক আরো জানিয়েছে, আগে তাও বেকার যুবকেরা মোবাইল আর প্রিপেইড চার্জ করিয়ে বাঁচছিল। অনলাইন সেখানেও থাবা বসিয়েছে। তাহলে বাঙালী বেকারেরা যাবে কোথায়? বাংলায় ত কোন ব্যবসা নেই! চম্পকের সুচিন্তক পোষ্টটার অংশ দিয়েই শুরু করি
পূজোর কটা দিনের জন্য ছোটো বড় মাঝাড়ি ব্যাবসায়ীরা চাতক পাখির মত চেয়ে থাকে বছর ভর। এই সময় তাদের ব্যাবসা তুঙ্গে পৌছায়। বিশেষ করে পোষাকের বিপনন প্রতিষ্ঠান গুলো। বছরের মধ্যে তাদের এই সময় ব্যাবসা এবং ইনকাম কয়েক গুন বেশি হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাবসা ধিরে ধিরে তলানিতে এসে নেমেছে। বিশেষ করে এই বছর সেটা মারাত্বক আকার ধারন করেছে। যেসব দোকানে আগে কাস্টমারের লাইন লাগতো সেইসব দোকান এখন এই ভরা সিজনে প্রায় মাছি মারছে। অপর দিকে দেখা যাচ্ছে ক্যুরিয়ার সার্ভিসের কাউন্টারে বিভিন্ন আকারের প্যাকেট এবং মানুষের ঢল। ঘুরপথে এফ ডি আই এর ফল এই সব অনলাইন ব্যাবসা এবং এর রমরমা। তাদের প্রোডাক্টের রকমারি এবং অস্বাভাবিক কম দামের সাথে পেরে উঠছেনা এই সব ছোটো ব্যাবসায়িরা। মার খাছে ছোটো বাজার তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা লাখো ব্যাবসায়ি, কর্মচারি এবং তাদের পরিবার। এবছর প্রায় ৩০% ব্যাবসা কমেছে যেটা আগামি বছর গুলোতে বহুগুন বাড়বে। একটা ভয়ানক পরিস্তিতির সামনে আমরা দাড়িয়ে আছি। বহু দোকান উঠে যাবে আগামি কয়েক বছরে এবং বেকার হয়ে পরবে বহু মানুষ। তারা কি করবে?
আমার এই লেখা মূলত সেই সব তরুন বাঙালীর জন্য, যারা অনলাইন ব্যবসা খুলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। এটা ড্রাই আন্ড কাট ব্যবসা সংক্রান্ত লেখা। আঁতেল বাঙালীর জন্য, ইন্টেলেকচুয়াল মাস্টারবেশন না।
প্রথমেই চম্পককে ধন্যবাদ জানাই। ফেসবুকে কোলকাতার সুখী উচ্চশিক্ষিত বাঙালীর বাইরে যে বৃহত্তর বঙ্গ-সেটাই রিয়ালিটি। সেখানে মাসে দশ হাজার টাকা ইনকাম করতেও অধিকাংশ বাঙালী যুবক অক্ষম। চারদশকের স্বমেহনের বাম রাজনীতিতে এই শ্বশান বঙ্গে অধিকাংশ শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের ভিখারীর দশা। যেটুকু বেঁচে ছিল-তা হচ্ছে ট্রেডিং। অনলাইন রিটেলের ঠেলায়-তাও চেলা কাঠে।
তাহলে উপায় কি ? অনলাইন রিটেল আশীর্বাদ না অভিশাপ?
আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, আমি আমেরিকাকেও এই ফেজের থ্রু দিয়ে যেতে দেখেছি। যদি বাঙালী যুবকরা তাদের মেধা এবং পরিশ্রম কাজে লাগাতে পারে-তাহলে অনলাইন আসলেই আশীর্বাদ। আমি এই লেখাতে কি কি অনলাইন ব্যবসা অল্প পুঁজিতে, শুধু মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে করা সম্ভব-সেটা নিয়েই লিখব।
(২)
আমি লেখাটাকে তিন ভাগে ভাগ করেছি। এই ভাগে মূলত আইডিয়া গুলো ডিসকাস করব। পরের ভাগে ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু মৌলিক জ্ঞান এবং স্ট্রাটেজি নিয়ে আলোচনা করব। একদম শেষে নিজের ব্যবসা সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
অনলাইনে জামাজুতো বই বেচা ?
খুব বাজে আইডিয়া। কারন এইগুলিতে বড় বড় প্লেয়ারা অনেক টাকা নিয়ে বসে আছে। সাপ্লাই লাইনে অভিনবত্ব না থাকলে, এখানে ঢোকা উচিত না। যেমন কেউ যদি শান্তিপুরে তাঁত অনলাইনে বেচতে চায়, তাকে নিশ্চিত করতে হবে, সে তাঁতীদের কাছ থেকে ডিরেক্ট কিনতে সক্ষম এবং তাই প্রাইস ওয়ারে পেরে উঠবে। দোকান থেকে কিনে, দালালের কাছ থেকে কিনে অনলাইনে বেচে দিলাম-সেসব সম্ভব না। অনলাইনে দাম ভীষন কম রাখতে হয়। লোক্যাল প্রোডিউসারের সাথে ডিরেক্ট যোগাযোগ না থাকলে, এই ব্যপারে নামা উচিত না। তাহলে কি কি জিনিস অনলাইনে বেচা যায়? যা ইনোভেটিভ? আমি পরে আসছি সেই প্রশ্নে। তার আগে জানা যাক -কিভাবে সেট করতে হয় অনলাইন ব্যবসা
কি করে সেট আপ করবেন নিজের অনলাইন ব্যবসা ?
এটা খুব সোজা। ফ্লিপকার্ট, আমাজন, ইবে সর্বত্র সেলার আকাউন্ট খুলে আপনার ভার্চুলাল স্টোর খুলে বসুন। কেউ কেউ মাসে চার্চ কর, কেউ ফ্রিতে দেয়। একাউন্ট খোলার পরে, নিজেই নিজের প্রোডাক্টের ফটো, বিনপন, গুনমান তুলে দেওয়া যায়। ঠিক ফেসবুকে প্রোফাইল সাজানোর মতন। আরো বড় স্টোর খুলতে হলে কনসাল্টটান্টের সাহায্য নিতে পারেন। ফেসবুক, লিঙ্কডিনে ফ্লিপকার্ট আমাজন স্টোর যারা সাজায়, তাদের বিরাট গ্রুপ আছে। সেখানে একটা পোষ্ট করলেই অনেকে এগিয়ে আসবে। খরচ পড়বে ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকার মতন। আপওয়ার্কে (www.upwork.com) এড দিয়েও দেখেশুনে লোক নিতে পারেন।
নিজের সাইটেও ইকর্মাস খুলতে পারেন। ইকর্মাসের সব থেকে জনপ্রিয় সফটোয়ার হচ্ছে ম্যাজেন্টো (http://magento.com/)। ম্যাজেন্টো ফ্রি । কিন্ত চালাতে সার্ভারে বসাতে হয়। এছাড়া ম্যাজেন্টোর সাস মডেল ও আছে। আরেকটা জনপ্রিয় সফটোয়ার http://www.ucommerce.net/. যারা ওয়ার্ডপ্রেসে সাইট করেছেন, সেখানে এটা প্লাগইন হিসাবে বসানো যায়। আমি অবশ্য ম্যাজেন্টোই সাজেস্ট করব। ওদের লজিস্টিক ইন্টিগ্রেশন অনেক ভাল।
সার্ভারের খরচ মাসে ২৫০/ থেকে ২০,০০০/ টাকা পড়বে মোটামুটি ১০ টা থেকে ১০০০ টা আইটেমের মধ্যে থাকলে-আর যদি সাইট ভিজিটর দিনে ১০০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে থাকে। ভারতে আজকাল অনেকেই অনেক সস্তায় সার্ভার দিচ্ছে।
আর কি করে আমাজনে বা ফ্লিপকার্টে সেলার হতে হয়, তার অনেক ইউটিউব ভিডিও আছে। এগুলো দেখে নিন।
(1) https://www.youtube.com/watch?v=qeYeiXeuNMk
(2) https://www.youtube.com/watch?v=6aac8vPr3CQ
নিজের সাইট বনাম ফ্লিপকার্ট বা আমাজন ?
দুটোর ই দরকার আছে। সাইট খুললেই ত হলো না। সাইটে লোক টানতে হবে। তার থেকেও বড় কথা বাজে মাল গছালে রিটার্নের গ্যারান্টি কোথায়? রিটার্ন গ্যারান্টির জন্য লোকে আপনার সাইট থেকে কিনবে না। সস্তায় দিলেও না। সেই আমাজন বা ফ্লিপ কার্ট থেকেই কিনবে।
তাহলে নিজের সাইট কেন? কারন আমাজন বা ফ্লিপকার্ট ১০-১৮% কাট নেয়। ওটা দেওয়ার পরে অধিকাংশ ব্যবসাতে ১০% লাভ ও থাকে না। সেই জন্য অনেকেই যেটা করে, আমাজন বা ফ্লিপকার্টে বেচে প্রথমে ক্লায়েন্টদের নাম এড্রেস ইমেল জেনে নেয়। ফ্লিপকার্ট দিয়ে, একবার ডেলিভারি দিয়ে সেই ক্লায়েন্টের কাছে ব্রান্ডটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, আপনি নিজে তাকে ইমেল করুন আপনার ওয়েব সাইট থেকে কিনতে-তাহলে সে ১০% কমে পাবে। সেই ক্ষেত্রে আপনার চান্স আছে। কারন সেক্ষেত্রে রিটার্ন হ্যান্ডলিং এর কথা ক্লায়েন্ট নাও ভাবতে পারে।
আরেকটা কারনে নিজের সাইট দরকার। পেরিশেবল গুডস বা সার্ভিস ব্যবসা অনলাইনে আনতে গেলে, নিজের সাইট ছাড়া গতি নেই। কারন এগুলো ভীষন ভাবে নিজের লজিস্টিক ইন্ট্রিগ্রেশনের ওপর নির্ভরশীল। অনলাইনে এই সার্ভিস বা পেরিশেবল গুডসের ব্যবসায় ধান্দা এখন বেশী। কারন এগুলো খুব বড় অনলাইন রিটেলারদের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই করা অসম্ভব।
কি বিক্রি করবেন অনলাইনে ?
জামা, প্যান্ট বই, গহনা বিক্রির ধান্দা ছাড়ুন। ওগুলো করতে গেলে ডুববেন। আরো অনেক চিন্তা ভাবনা করতে হবে যে কোথায় ফ্লিপকার্ট বা স্ন্যাপডিলের পক্ষে ঢোকা সম্ভব না। তবে কিছু কিছু কটেজ মালপত্র -যেমন নানান ধরনের লোক্যাল প্রোডাক্ট -যথা পোড়া মাটি বা কাঠ বা শাঁখের গয়না-বাঁশের কাজপত্র-যা গ্রামে তৈরী হয়-তা যদি সরাসরি কিনে সেখান থেকেই পাঠানোর লজিস্টিক ইন্ট্রিগ্রেশন করতে পারেন-তাহলে ভবিষ্যত আছে। তবে এসব ক্ষেত্রেও টার্গেট ক্লায়েন্ট পশ্চিম বঙ্গের বাইরে হলেই ভাল। কারন পশ্চিম বঙ্গের লোকেদের পকেটে টাকা নেই।
আমি দু একটা উদাহরন দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছি। ব্যাঙ্গালোর দিল্লীতে এখন অনেক ছোট ছোট কোম্পানী নিজেদের ওয়েব সাইটের থ্রু দিয়ে এগুলো করছে। এগুলো সব ক্যাশ অন ডেলিভারি।
পেরিশেবল গুডস একটা সুইট স্পট। যেমন ধরুন মাছ, মিস্টি এবং সব্জি। ফ্রেশ মাছ এবং সব্জি কোথায় পাবেন ? উত্তর হচ্ছে পুকুরে আর জমিতে! এগুলোর সমস্যা হচ্ছে স্টোরেজ এবং ডেলিভারি। উভয় ক্ষেত্রেই রেফ্রিজারেশন মাস্ট। কোল্ড স্টোরেজ সমস্যা না-তবে ভারতে রেফিজারেটেড ট্রাক প্রায় নেই। সুতরাং খুব লোকাল ভাবে ছাড়া এটা হবে না। এবং বাজারের থেকে দাম ৪০% কম রাখতে হবে। সেটা অবশ্য সম্ভব যদি একদম চাষীদের কাছ থেকে ডাইরেক্ট কিনে স্টোর করতে পারেন। মিস্টি আজকাল অনেকেই অনলাইনে বেচে। কোলকাতা থেকে মিস্টি আজকাল সকালের ফ্লাইটে ব্যাঙ্গালোর বা দিল্লী যাচ্ছে।
সার্ভিস বেচা আরো সহজ-তবে এখানে কেউ কিনবে কি না তা নির্ভর করছে অনলাইন মার্কেটিং এর ওপরে। কি কি বেচতে পারেন? একটা সহজ উদাহরন দিই আমেরিকান মার্কেট থেকে। এখানে বৃদ্ধদের পক্ষে কম্পিউটার ঠিক ঠাক করা অনেক অসুবিধা । তাই অনেক অনলাইন কোম্পানী আছে-যেখানে বৃদ্ধদের কম্পিউটার , স্মার্টফোন খারাপ হলেই লোক পাঠিয়ে দেয়। যারা ভাল কম্পিউটার বা স্মার্টফোন সারাতে পারেন, তারা নিজেদের লোকালিটিতেই নিজেদের ব্যবসাটা অনলাইন করে দিতে পারেন। ওয়ান ক্লিক বা ওয়ান ফোন কলে লোক পাঠিয়ে দিন। অনেকে আবার এটা ওভার সিজ করছে। ভাল কমিউনিকেশন স্কিল থাকলে কোলকাতায় বসে অস্ট্রেলিয়ান বৃদ্ধের কম্পিউটার সারাচ্ছে।
অনলাইন শিক্ষা-একটা বড় মার্কেট। অনেক ভারতীয় গায়ক এখন আমেরিকানদের গান শেখাচ্ছে স্কাইপ বা গুগল হ্যাঙ্গ আউটের মাধ্যমে। ভারত থেকে আমেরিকান বাচ্চাদের অঙ্ক শেখাচ্ছে অনেকেই। অনেকগুলো সাইট আছে এর জন্য। ক্লায়েন্ট ধরাটাই আসল এসব ক্ষেত্রে। কোলকাতা থেকে বসে ব্যাঙ্গালোরের বাচ্চাদেরই শেখান। ইনফ্যাক্ট অনেক প্রবাসী বাঙালী চায়, তাদের ছেলে মেয়েদের জন্য বাঙলা বেসিক টিউটর । বাঙালী এতই ব্যবসা বিমুখ-সেটুকুও কেও এখনো করে উঠতে পারে নি!!
আরেকটা বিশাল অপারচুনিটি ট্রাভেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে। হ্যা, ভ্রুমন। একটা নতুন ধান্দার কথা বলি যা ইউরোপে দেখেছি। আমেরিকাতে অতটা নেই। সেটা হচ্ছে গ্রামীন টুরিজম। যেমন ধরুন কোলকাতা থেকে বেড়োনোর জায়গা খুব লিমিটেড-সেই মন্দারমনি, নইলে সুন্দরবন। গ্রামে যাদের বড় বাড়ি আছে-ক্ষেত পুকুর জমি জমা আছে-তাদের সাথে কথা বলে তাদের বাড়িতেই উইকেন্ড গেস্ট হাউস বানান। যেখানে উইকেন্ডে কোলকাতা থেকে বাবুরা ফ্যামিলি সহ এসে গ্রামের জীবন কাটাতে পারবে দুদিন। এগুলো করা খুব সহজ। উত্তর বঙ্গে সিনিক স্পটে অনেকে শুরুও করে দিয়েছে। জাস্ট একটা ফেসবুক পেজ বা গুগল পেজ খুলে ফোন নাম্বার দিন-আলব্যামে ছবি দিন গেস্ট হাউসের। ওয়েব সাইট রাখার ও খরচ নেই।
কি ভাবে করবেন মার্কেটিং ?
গুগল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এস ই ও সব থেকে ভাল অপশন। কিন্ত খরচ খুব বেশী। গ্যারান্টি কম। এইজন্যে
ছোট থেকে শুরু করুন। ফেসবুক গ্রুপ খুলুন-যা ইন্টারেস্ট গ্রুপ। নিজের প্রোডাক্ট নিয়ে ভাল ব্লগ খুলুন। ভিডিও বানান। স্প্যাম করবেন না। লিখতে শিখুন। ব্লগ খুব এফেক্টিভ। ভালো সার্ভিস দিলে, কাস্টমারই আপনাকে আরো অনেক কাস্টমার এনে দেবে।
ইনফ্যাক্ট এখন শহর ভিত্তিক নিউজ পেপারগুলো মারা গেছে। যদি কেও কেও শহর ভিত্তিক ভালো ফেসবুক গ্রুপ চালু করে এবং সেই শহরের খবরগুলো ছবি সহ দেয়-সেটাও ভাল ব্যবসা হতে পারে। কারন এখন একটা জেলা শহরে নিউজ পেপার যেকজনের কাছে পৌছায়, তার থেকে অনেক বেশী লোক ব্যবহার করে ফেসবুক। কেউ যদি পেশাদারি ভাবে, নিজের শহরের একটা ফেসবুক গ্রুপ চালায়-যেখানে সেই শহরের দুই তিন হাজার লোক-রোজ খবর দেখতে বা আড্ডা মারতে আসে-সে লোক্যাল বিজনেসের কাছ থেকে প্রচুর বিজ্ঞাপন পাবেই।
কাদের কাছে বেচবেন ?
ক্লায়েন্ট চেনা হচ্ছে ব্যবসার সাফল্যের পেছনে #১ কারন। যেমন ধরুন-যদি বর্ধমানের মিহিদানা বা কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া শুধু পশ্চিম বঙ্গ বাসী বা কোলকাতাবাসির জন্য অনলাইন করে দেন-সেই ব্যবসা না চলার সম্ভাবনাই বেশী। কারন পশ্চিম বঙ্গে বা কোলকাতায় লোকের টাকা নেই। কিন্ত সেই মাল যদি ব্যাঙ্গালোর, পুনে, হায়দ্রাবাদের বাঙালীদের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা করেন-ব্যবসা রমরমিয়ে চলবে। ইনফ্যাক্ট পশ্চিম বঙ্গ বাসী কিনবে-এটা যদি ব্যবসার মডেল হয়-আমি প্রথমেই না করে দেব। কিভাবে বৃহত্তর ভারতে বা প্রবাসী বাঙালী বা পশ্চিম বঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের কাছে বেচা যায়-সেই মডেল দেখুন।
আরো অনেক অনলাইন ব্যাবসা আছে-যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং বা আই টি ডেভলেপমেন্ট বা অনলাইন মার্কেটিং। সেটা অন্য কোন প্রবন্ধে হবে।
(৩)
এবার ব্যবসা করার ব্যপারে কিছু স্ট্রাটেজিক দিক নিয়ে বলে রাখি।
কাকে পার্টনার করবেন ?
ব্যাবসার শুরুতে কাউকে পার্টনার না করায় ভাল। বাঙালী পার্টনার হলে একদম না। ব্যবসা জমে যাওয়ার পরে, আপনি কাউকে মাইনে দিয়ে রাখুন। পার্টনার করতে হলে ভাই বোন বা ফ্যামিলির মধ্যে রাখুন। ব্যবসা বড় হলে বা হওয়ার চান্স হলে, তাকেই পার্টনার করে আনবেন যে টাকা ঢালতে পারে বা বড় ডিল এনে দিতে পারে। সোয়েট ইক্যুইটি বা দুজনে খেটে ব্যবসা দাঁড়াবে এই মডেলে যাবেন না। আর বন্ধু বান্ধব হলে ত একদমই না। পেশাদারিত্ব থাকবে না।
কি করে ফাইনান্স করবেন ?
সব থেকে ভাল মডেল হচ্ছে নিজে চাকরি করতে করতে, আস্তে আস্তে ফাইন্যান্স করা। আমি সেই ভাবেই শুরু করেছিলাম। এতে বিজনেস মডেল ভ্যালিডেশনটাও হবে-আর একটা ব্যবসা জমতে টাইম ও লাগে। বুঝতেও সময় লাগে।
সবকিছু ছেড়ে হঠাৎ করে নতুন করে কোন ব্যবসায় ঝাঁপালে তা আত্মহত্যার নামান্তর । একটা ব্যবসায় তখনই ফুলটাইম হওয়া যায় যখন সেই ব্যবসা লাভ করছে, ফ্যামিলি চালানোর মতন টাকা আসছে।
ব্যবসা ফেইলড করলে ?
ফেইল করবে, ধাক্কা খাবেন, দেনা হবে-এসব হবেই। সেটা জেনেই এগোতে হবে। ইনফ্যাক্ট আমি ২০০৯ সাল থেকে ব্যবসার চেষ্টা করছি। ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে এসে প্রথম চাকরি ছাড়ার রিস্কটা নিতে পেরেছিলাম কারন তদ্দিনে তিন বছরে ব্যবসা থেকে সংসার চালানোর মতন টাকা আসছিল। এর মধ্যে কত উদ্যোগ যে ফেইলড করেছে তার ইয়াত্তা নেই। ১০ টার মধ্যে ৯ টাই ফেল করেছে আমার ক্ষেত্রে। কিন্ত যেটা সফল হয়েছে-সেটা ৯ টার লোকসান পুষিয়েও অনেক কিছু দিয়েছে, বড়ও হচ্ছে। ব্যবসাতে অনেক কিছুই ট্রাই করতে হয়। অধিকাংশ চেষ্টা ব্যর্থ হবে। তাতে টাকাও লোকসান হবে। কিন্ত একটা সফল হওয়াই যথেষ্ট। ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে হবে।
পজিশন এবং ব্রান্ডিং ঃ ইউনিক পজিশনিং সবার আগে দরকার। মার্কেটে কিসের চাহিদা আছে যা মেটানো যাচ্ছে না, বা বেশী টাকা দিয়ে লোকে মেটাচ্ছে-এগুলো বুঝতে হবে মার্কেটে ঢুকে। ব্রান্ডের ইউনিক পজিশনিং না হলে মুশকিল আছে। ধারাবাহিক ভাবে মার্কেট থেকে শিখে পজিশনিং বদলাতে হবে-যাতে প্রোডাক্টের চাহিদা আরো বাড়ে-আরো মার্জিন বাড়ে।
ডেলিভারি ঃ ব্যবসা শুরু করলে, ইউনিক প্রপজিশন থাকলে ক্লায়েন্ট এসেই যায়। ক্লায়েন্ট টানাতে খুব সমস্যা হয় না। মূল যেকারনে অধিকাংশ ব্যবসা ফেইল করে-সেটা হচ্ছে পুওর ডেলিভারি। ডেলিভারি ভালো না হওয়া পর্যন্ত ক্লায়েন্ট টানা উচিত না। ডেলিভারিই আসল জিনিস। ভালো ডেলিভারি থাকলে, বেশী দামেও ক্লায়েন্ট কিনবে। খারাপ ডেলিভারিতে সস্তায় দিলেও কেও নেবে না। ব্যবসাও হবে না। ডেলিভারিতে সব থেকে বড় কাজ হল ম্যান পাওয়ার সামলানো। শ্রমিক সামলানোর সফট স্কিল না থাকলে ব্যবসায় নামা উচিত না।
প্রাইসিং ঃ
এটা ট্রায়াল এন্ড এরর মেথডে ঠিক করতে হয়। মার্কেট প্রাইস ডিক্টেট করে। যারা এম বি এ করেছে, তারা অনেক রকম প্রাইসিং এর গল্প জানে। কিন্ত প্রাক্টিক্যালি ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলে, একজন না অনেকের সাথে কথা বলার পরে-প্রাইস বাড়িয়ে কমিয়ে দেখতে হয়।
অবজেক্টিভ বা উদ্দেশ্য ঃ
প্রচুর টাকা রোজগার করব, দামী গাড়ী কিনবো-এইসব আশা নিয়ে ব্যবসা করতে আসলে, নিশ্চিত ভাবেই ডুববে। ব্যবসা ভালো চললে টাকা এমনিতেই আসবে । বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী।
প্রথমেই জিনিসটাকে ভালো লাগা দরকার। কাজ করার মধ্যে যেন আনন্দ থাকে। খুব কষ্ট করে কাজ করছি, টাকার আশায়-এইভাবে চললে কিস্যু হবে না। খুব মনোযোগ দিয়ে দাবা খেলছি-খেলাটা উপভোগ করছি-সেটাই যেন হয় মনোভাব। আর কিছু লোকের চাকরি হচ্ছে-এই বৃহত্তর সামাজিক দ্বায়িত্ববোধটাও গুরুত্বপূর্ন।
না বলার ক্ষমতা ঃ
পরিস্কার ভাবে না বলতে শিখতেই হবে। সে নিজের লোককেই হৌক বা ক্লায়েন্টকেই হৌক। চাকরি জীবন মানুষকে খুব পলিটিক্যালি ইয়েস ম্যান বানিয়ে দেয়। চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় আসলে-ওই এডজাস্টমেন্টা সব থেকে ক্রিটিক্যাল।
ডিটেইলড প্ল্যানিং-প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ঃ
সফল ডেলিভারির প্রথম রুল এ থেকে বি তে যাওয়ার প্রতিটা টার্ন জানা। প্ল্যান করা। প্ল্যানিং এর জন্যে গুগল স্প্রেড শিট আমি বহুদিন থেকে ব্যবহার করি। প্রতিটা স্টেপ নিখুত ভাবে জানা উচিত-লেখা উচিত-রিভিউ করা উচিত।
(৪)
অনেকেই অনেক কারনে ব্যবসায় আসে। কেও আসে পারিবারিক কারনে। কেউ বা ভাল চাকরি না পেয়ে। আমি এসেছিলাম, কারন বসিং আমার সহ্য হয় না। আমি স্বাধীনচেতা লোক। ননসেন্স নেওয়ার অভ্যেস নেই। ব্যবসাতে ক্লায়েন্টরা বস। কিন্ত সেই বসিং অনেক ভাল। সেখানে রাজনীতি নেই। লেনদেনের সম্পর্ক। ইনফ্যাক্ট আমি ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে সব থেকে বেশী শিখেছি। কর্পরেট লাইফ আমার বেকার টাইম পাস বলে মনে হচ্ছিল।
প্রথমেই মনে রাখতে হবে জীবনে চাওয়া পাওয়াটা কাটা কুটি করে শুন্যই থাকবে। কিছু লাভ হলে-কিছু লোকসান হবেই। ব্যবসা যে করতেই হবে-বা আমার মত করে করতে হবে তাও না। তবে যে যাতে আনন্দ পায়, তার সেটাই করা উচিত।
ব্যবসা এতটাই কঠিন পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যের জিনিস-খুব দৃঢ়ভাবে ইচ্ছুক না হলে-অর্ধ ইচ্ছায় আসা উচিত না।
যাইহোক-আমি মোটেও এক্সপার্ট নই । বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ও নই। তবে চার বছর আগে চাকরী জীবনের নিরাপত্তা ছেড়ে-ব্যবসায় টিকে আছি এবং ক্রমাগত বাড়িয়েও চলেছি। ব্যর্থতার মাধ্যমে অনেক কিছু শিখেছি-কারন আমি নেহাত মধ্যবিত্ত শিক্ষক ফ্যামিলির সন্তান। বিজনেস ট্রেনিং এককালে শুন্যই ছিল।
যাইহোক, আমি যেসব অনলাইন টপিক নিয়ে লিখলাম, সেই লাইনে অনেক এক্সপার্টকেই আমি চিনি-যারা আসলে ওইসব লাইন নিয়ে বহুদিন কাজ করেছে। এদের অনেকেই আমার হয়ে কাজ করে। যদি দেখি যে অনেক ছেলে মেয়ে ইন্টারেস্টেড, আমি তাদের নিয়ে গুগল হ্যাঙ্গ আউট করতে পারি-যদি নতুন ছেলে মেয়েরা ইন্টারেস্ট দেখায়। উইকেন্ডে আন্তারপ্রেনারশিপে উৎসুক ছেলে মেয়ে প্লাস এক্সপার্টদের নিয়ে একটা হ্যাঙ্গ আউট করার ইচ্ছা আছে যদি ইচ্ছুক লোকজন পাওয়া যায়।
আরেকটা কথা। এই ব্লগের উত্তর আমি ফেসবুকে দেব না। কারুর আরো কিছু জানার থাকলে এই ব্লগার ডট কমের কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন-আমি সেখানেই উত্তর দেব। কারন সেক্ষেত্রে ব্লগটিকে আরো ইনফর্মেটিভ করা সম্ভব হবে।
আমি যা লিখেছি, তা খুব বেসিক আউট লাইন। হিমশৈল্যের ভাসমান অংশ। আরো অনেক অনেক গভীরে অনেক কিছু জানার আছে, যারা অনলাইন ব্যবসায় ইচ্ছুক।