Sunday, August 30, 2015

খুন এবং কান্টিয়ান দর্শন

এথিক্স দুই প্রকৃতির।  কান্টিয়ান এবং ইউলেটারিয়ান। কান্টিয়ান ন্যায় এবসল্যুউট। খুন করা বাজে মানে সব ক্ষেত্রেই খুন করা বাজে কাজ। রাষ্ট্র কতৃক মেননের খুন, অভিজিত রায়ের খুন, ধাবালকরের খুন, কুলবার্গির খুন-সব খুনেই খুনের কারন এবং খুনীরা ঘৃণার যোগ্য। ইউলেটেরিয়ান এথিক্সে উচ্চতর ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য খুন করা সঠিক বা এথিক্যাল হতে পারে ক্ষেত্র বিশেষে। 

 ভিন্নমতের লোকেরা খুন হলেই আপোলজিস্টরা মাঠে নেমে পড়েন। খুনের পক্ষে তাদের লজিক ইউলেটারিয়ান। হিন্দুত্ববাদিরা কুলবার্গির খুনের সমর্থনে আদতেই যেটা বলছেন, ভদ্রলোক শুধু হিন্দুধর্মের সমালোচনা করতেন!! আসলে উনারা যেটা বলতে চাইছেন, সেটা ইউলেটারিয়ান লজিক। হিন্দুত্ববাদিদের ক্ষেত্রে বৃহত্তর ন্যায় হচ্ছে হিন্দুরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা। সেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, উনারা খুন করাটা অনৈতিক বলে মনে করেন না। কমিনিউস্ট বা ইসলামিষ্টরাও ওদের স্বপ্নরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য খুন করাকে অনৈতিক বলে মনে করে না। নিজের স্বপ্নরাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য কমিনিউস্ট এবং ইসলামের প্রফেটরা অসংখ্য খুন করেছেন। ফলে খুন করা এইসব আদর্শবাদে বিশ্বাসী লোকেদের জন্য মোটেও ঘৃন্য নয়। উনারা সম্পূর্ন ভাবে ইউলেটারিয়ান লজিকে চালিত।

 আরো হাস্যকর হচ্ছে এই ইস্যুতে মাকুরা আপোলোজিস্ট হিন্দুত্ববাদিদের চেপে ধরার চেষ্টা করছে!!  তৃনমূল সমর্থক ষষ্টি দলুই এর চোখ উপড়ে ওর ছেলের সামনে যেদিন ছজন হার্মাদ ওকে খুন করেছিল-সেদিন অর্কুটে (২০০৯) সিপিএমের পোষাকুত্তাগুলোর প্রতিক্রিয়াও একছিল। ষষ্টীদলুই শ্রেনীশত্রু-খুন বাজে কিন্ত ওই তুমি জানো ও জোতদারদের পক্ষে ছিল ? আজ হিন্দুবাদিরাও সেই প্রশ্ন তুলছে-তুমি কি জান কুলবার্গি বেছে বেশে হিন্দু ধর্মেরই সমালোচনা করত?

 এই জন্যে আমি কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি, ইসলামিস্ট -সব এক্সট্রিম আদর্শবাদের লোকদেরই এক গোয়ালের গরু বলে মনে করি। কাউকে অন্যদের থেকে বেশী সেফ মনে করার কারন নেই।

Friday, August 28, 2015

ন্যাশানাল পুলিশ কমিশন এবং সিপিএমের ডিগবাজি

মমতার পুলিশ কেন দলদাস-তাই নিয়ে সিপিএম যতই মিটিং মিছিল করুক না কেন, থুতু নিজের মুখেই পড়বে। আমি কাল এটা লিখেছিলাম, ভারতের পুলিশ দলদাস কারন সংবিধানে পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে রাখা হয়েছে। ভ্যামপ্যান্টি এবং ফেসবুকের পেছনপাকা বৃন্ধরা যৌথ ভাবে, আমেরিকার পুলিশের দিকে আঙুল তুললেন, যেখানে সবাই জানে আমেরিকান পুলিশের রেশিয়াল বায়াস থাকতে পারে কিন্ত পলিটিক্যাল পার্টির দলদাস হওয়ার কোন ইতিহাস নেই। যাইহোক লাভ হল এই যে ওখানে আলোচনসূত্রে জানতে পারলাম পুলিশের দলদাসত্ব ঘোচাতে ন্যাশানাল পুলিশ কমিশন গঠন করা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে-এবং সেই কমিশনের দ্বিতীয় রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছিল পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সরাতে না পারলে, এই ধরনের দল দাসত্ব চলতেই থাকবে।  ১৯৭৮ সালে এই পুলিশ কমিশন গঠন করা হয়েছিল, জনতা সরকারের আমলে। মূল লক্ষ্য ছিল, কংগ্রেস সরকার যেভাবে বিরোধি পেটাতে  এমার্জেন্সির সময় পুলিশের অপব্যবহার করে, তা যেন বন্ধ হয় [১]।  ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে এই কমিশন ৮ টি রিপোর্ট তৈরী করে। কিন্ত ১৯৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসার পরে, অবধারিত ভাবেই এই কমিশন ভেঙে দেওয়া হয় যাতে কংগ্রেস পুলিশের সাহায্য নিয়ে স্বৈরতন্ত্র চালিয়ে যেতে পারে।

     এই কমিশনের দ্বিতীয় রিপোর্টে যা লিখেছিল, কালকে আমি ঠিক সেটাই লিখেছিলাম [১]
 "Political Interference in Police Work:
In the existing set-up, the police function under the executive control of the state government. According to the Commission, the manner in which political control has been exercised over the police in this country has led to gross abuses, resulting in erosion of the rule of law and loss of police credibility as a professional organisation. The threat of transfer / suspension is the most potent weapon in the hands of the politician to bend the police down to his will. The Commission recommended that the superintendence of the state government over the police should be limited to ensure that police performance is in strict accordance with law. In the performance of its tasks, the police should be subject to overall guidance from the government which should lay down broad policies for adoption in different situations. There should however be no instructions in regard to actual operations in the field. In regard to investigation work, in any case, the police are beyond any intervention by the executive or politicians.
To help the state government discharge their superintending responsibility in an open manner under the framework of law, a State Secretary Commission should be setup through law in each state. The State Security Commission should:
  • lay down broad policy guidelines and directions for the performance of preventive tasks and service-oriented functions by the police;
  • evaluate the performance of the State Police every year and present a report to the State Legislature;
  • function as a forum of appeal to dispose of representations from officers regarding their being subjected to illegal orders and regarding their promotions; and
  • generally keeping the functioning of the police in the state under review.

মজার ব্যপারাটা হচ্ছে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন হোম মিনিস্টার ইন্দ্রজিত গুপ্ত, পুলিশের অপব্যবহার ঠেকাতে ন্যাশানাল পুলিশ কমিশনের রিপোর্ট সব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠান। কোন মুখ্যমন্ত্রী পাত্তাই দেন নি। [২] তাদের মধ্যে জ্যোতিবোস ও ছিলেন। ইন্দ্রজিত গুপ্ত নাকি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন জ্যোতিবাবু পুরো ব্যপারটাকে ইগনোর করায়। কেনই বা দেবেন ? লেঠেল বাহিনীর সাহায্য নিয়ে আরো দুদিন ক্ষমতাই থাকতে কে আর না চাইবে? আফটার অল পুলিশ সাথে থাকলে পাড়ার সব মস্তান আর বাহুবলীরা সাথে থাকে-যারা "ভোট ম্যানেজ" করে। কাল সিপিএম করত, আজকে তিনোরা করছে। পার্থক্যটা কি? বরং তিনোদের ক্ষেত্রে মমতা কিছু কিছু নিজের পার্টির লোককে গ্রেফতার করেছেন। সিপিএম পার্টি গণতান্ত্রিকতার কারনে সেটুকুও করতে পারত না। তপন শকুরকে মালা পড়িয়ে থানা থেকে নিয়ে আসা হত।

শুধু হেরে গেলে বিরোধি পার্টি থাকার সময় পুলিশ কেন দলদাস বলে নবান্ন অভিযান করবে!!! আর নিজেদের বলবে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবী দল। আবার পুলিশ যাতে রাষ্ট্রের ঠ্যাঙারে বাহিনী থাকে, এই চক্রান্তেও সামিল হবে!!

 তবে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সেই দিন জ্যোতিবাবুর সিপিএম ইন্দ্রজিত গুপ্তের সাথে দাঁড়ালে ভারতের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিল, পুলিশ রিফর্মের যাতে পুলিশকে দলদাস না হতে হয়। জ্যোতি বসু জনগণকে ঠকাতে ওস্তাদ ছিলেন-এক্ষেত্রে আজ ভুগছে তার নিজের পার্টি। এখন সিপিম পুলিশের হাতে মার খেলেও এদের কিস্যুই করার নেই। যতবার স্বৈরতন্ত্র, পুলিশের দলদাসত্বের কথা মুখে আনবে, থুতু নিজেদের মুখেই পড়বে।
[১]http://www.humanrightsinitiative.org/index.php?option=com_content&view=article&catid=91%3Ashiva&id=746%3Apolice-reforms-indiathe-national-police-commission-npc&Itemid=98
[২]http://www.milligazette.com/Archives/15042002/1504200253.htm

Thursday, August 27, 2015

পথনাটিকা বনাম দুর্বল সংবিধান

সিপিএম শীতঘুম ছেড়ে পথে নেমে, পাটকেল ছুঁড়ে, পুলিশের লাঠিপেটা খেয়েছে। তাতে দেখলাম ফেবুকের সিপিএমেরা উত্তেজিত-মানে বেঁচে আছে তাদের সাধের পার্টিটা এটা জেনেই তারা খুশী।

  কিন্ত মৌলিক প্রশ্নটা থেকে গেল। কিসের জন্য এই মিছিল? মমতা-পুলিশ-তিনো স্বৈরতান্ত্রিক নেক্সাস?  তা সিপিএমের দাবীটা কি? তিনোদের সরিয়ে তাদের ভোট দিলে পুলিশ নিরেপেক্ষ ভাবে কাজ করবে?  যারা সিপিএম জমানার ৩৪ বছর দেখেছে, তারা সিপিএমের এই দাবীর সাথে সহমত হবে?  হ্যা, ২০১২ সালের পর যেসব বাচ্চারা জন্মেছে তারা সিপিএমের এই দাবীর সাথে একমত হবে!

 আমি বহুদিন থেকেই লিখছি পুলিশকে রুলিং পার্টির গুন্ডা বাহিনী হিসাবে ব্যবহার করার মূল কারন ভারতে সাংবিধানিক দুর্বলতা। পুলিশ মন্ত্রী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী, যিনি আবার একটা পার্টির শীর্ষ নেতাও বটে।  আমেরিকাতে থেকে বুঝেছি, ভারতের পুলিশের সমস্যা দুটো। প্রথম হচ্ছে তাদের মাথার ওপরে আছেন মুখ্যমন্ত্রী-যিনি পার্টির ও শীর্ষ নেতা। আমেরিকাতে গভর্নর বা প্রেসিডেন্ট পার্টীর শীর্ষ নেতা হন না । এখানে প্রাইমারীর কারনে প্রত্যেককেই নিজেকে লড়তে হয় পার্টির নমিনেশন পেতে। পার্টির মধ্যে গণতন্ত্র থাকার কারনে কোন নেতাই স্বৈরাচারী হতে পারেন না। আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফাদাররা যখন সংবিধান তৈরী করেছিলেন, তার প্রতিপদে তাদের চিন্তা ছিল-কোন এক ব্যক্তির হাতে যেন সব ক্ষমতা না যায়। ভারতের সংবিধানে এই চেক এন্ড ব্যালান্সটা খুব কম। ফলে ভারতে ক্ষুদ্র ইতিহাসে অনেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী ।

দ্বিতীয়ত, আমেরিকাতে পুলিশ জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের হাতে। জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে কংগ্রেস বা সেনেট যেকোন সময় ইম্পিচ করতে পারে। ভারতে ওই স্ট্রাকচারটাই নেই যে লোয়ার বা আপার হাউস সরাসরি জাস্টিসদের ইম্পিচ করতে পারে।

 মোদ্দা কথা ভারতের ইতিহাসে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অনেক মিটিং মিছিল হয়েছে-কিন্ত কেওই এই ক্ষেত্রে সাংবিধানিক দুর্বলতার ইস্যুটা সামনে আনে নি।  বরং বিরোধি পার্টি থেকে যখন তারা রুলিং পার্টিতে গেছে, তারা নিজেরাই স্বৈরাচারী শাসক বনে গেছে।  এই মমতাই না সিপিএম-পুলিশ দলদাসদের বিরুদ্ধে এককালে লড়ে গেছেন? সেটাই তার ঐতিহাসিক লেগাসি।

 সুতরাং মমতার বিরুদ্ধে এই ঘেরাও মিছিল-জাস্ট রিয়াল টাইম ড্রামাবাজি। লোকে খাবে না। লোকে ভালোই জানে সিপিএমের হাতে ক্ষমতা দিলেও পুলিশের দলদাস হওয়ার ট্রাডিশন চলতেই থাকবে। কারন গলদ সংবিধানের বিসমিল্লায়।  লোকে আর কদ্দিন এই সব নাটক সহ্য করবে?

Tuesday, August 25, 2015

চাড্ডি, তিনো-সবার ক্ল্যাসিফিকেশন

চাড্ডি কথাটাই লোকের আপত্তি থাকলে কিছু করার নেই। চাড্ডি, ভামপ্যান্টি, তিনো, হার্মাদ, কঙু , ছাগু-সবকিছুর অস্তিত্ব আছে।  যারা গণেশের হেড সার্জারীতে বিশ্বাস করে উন্নত প্রাচীন ভারতের স্বপ্নদেখে তারাই চাড্ডি। মহাভারতের যুগে এটম বোমা , মিসাইল এসব ছিল-এগুলো যারা বিশ্বাস করে, তাদের শিক্ষার মান মাইনাস ক্লাস টেন। মাইনাস মাধ্যমিক। এই বিশেষ নেগেটিভ এডুকেটেড লোকেদের জন্য একটা নামকরন অবশ্যই দরকার। সেটাই চাড্ডি।

         অনুরূপ ভাবে যারা একাধারে লেনিন এবং লিব্যারালিজমে বিশ্বাস করে, তারা ভামপ্যান্টি। কারন দুটো  সম্পূর্ন বিপরীত ধর্মী আইডিয়াকে যুগপৎ যারা সাপোর্ট করে তারা কমিনিউজম বা লিব্যারালিজমের কোনটাই বোঝে নি। বুঝলে দুটো সম্পূর্ন বিপরীত আদর্শের একই সাথে সাপোর্টার হওয়া যায় না। অর্থাৎ দর্শনশাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু না থাকা সত্ত্বেও যারা  একই সাথে কমিনিউস্ট হিউমানিস্ট লিব্যারাল সবকিছু  একসাথে হওয়ার চেষ্টা করে অজ্ঞানতা বশত-সেই কার্টুন ক্যারেকটরগুলো হচ্ছে ভামপ্যান্টি।

    হার্মাদ ক্লাসটা বরং সোজাসাপ্টা।  এদের কাছে কাস্তে মানে মানুষ কাটো, হাতুড়ি মানে বাস ভাঙো। ভাবে গালাগাল দিলে খুন করলেই কমিউনিজম আসবে!

   তিনো খুব স্পেশাল ডেলিকেট ক্লাস। পুরো হাইব্রিড বন্ডিং-এরা গেরুয়া, লাল এবং সবুজের ক্যামেলিয়ান। এদের আসল রঙটা কি কেও জানে না।  আলটিমেটলি ক্ষীরটা খেতে পেলেই খুশী। দিদির ইমেজ ভাঙিয়ে যদ্দুর গোছানো যায়।

  কঙুরা গণতান্ত্রিক রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রজা। এদের বক্তব্য গণতন্ত্র আইলো ত কি হল? গণতন্ত্র দিয়াই রাজতন্ত্র টিকাই রাখমু!

 আর ছাগুদের কথা নাই বা বল্লাম। বেসিক্যালি এরা চাড্ডিদের মুসলিম সংস্করন। যারা একবিংশ শতাব্দিতে এসে যার সপ্তম শতকের আরবের স্বপ্নে বিভোর-কারন এই আরবে মহম্মদ নামে এক প্রফেট নাকি স্বর্গরাজ্য স্থাপন করেছিল -তাদের বৌদ্ধিক উন্নতি ক্লাস টুওএর বেশী না। না হলে এই ধরনের ঠাকুরমার ঝুলির স্বর্গরাজ্যের গল্প যদি কেও বড় হয়েও বিশ্বাস করে-পরিস্কার ভাবেই বলতে হয় বয়সের সাথে সাথে এদের মনের বয়স কিন্ত বাড়ে নি। নাহলে কেও পরিণত বয়সে লালকমল নীলকমলের গল্পে বিশ্বাস করে বোমা ফাটায়?

কোন একটা আদর্শে বিশ্বাস করাটা সিগারেট বা আফিঙের নেশা। অবশ্য বেঁচে থাকাটাও একধরনের নেশাই। সেই নেশার জগতে আরো দু চারটে নেশা ভাঙ করলে ক্ষতি কি?

Sunday, August 23, 2015

তমশীলতা

তমোঘ্নকে নিয়ে ফেসবুকে শীৎকার বেশ বিরক্তিকর লাগছে এখন। ছেলেটার এলেম আছে। আই এস আই এর একাডেমিক চাপ তুচ্ছ করে এক্টিভিজিম চালিয়ে যাওয়া মুখের কথা না।  আই এস আই এর ছাত্রছাত্রীরা কোর্সওয়ার্কের চাপে ঠিক করে ইন্টার্নশিপও করে উঠতে পারে না।  সেরকম একটা পরিবেশ থেকে এসে সে এখনো প্রতিবাদমুখর, বৃহত্তর সমাজের কথা ভাবছে-এর জন্য সমস্ত ধন্যবাদ তার প্রাপ্য।   প্যান্টি-ব্রা পরে বিক্ষোভ দেখানোকে আমি কখনোই অশ্লীল বলে মনে করি না- কারন তার এই ড্রেসটা ছিল মূলত  গজেন্দ্র চৌহান বিরোধি পথনাটিকার জন্য। সব থেকে বড় কথা মানব দেহ কখনোই অশ্লীল না- দেহ প্রদর্শন ও না। দেহই দেব এবং দৈত্যের আধার।  নগ্নতাকে অশ্লীল ভাবাটাই সবথেকে বড় অশ্লীলতা।

  তবে পুরো ঘটনায়-আমার দুটো পয়েন্ট আছে বলার

 প্রথম চাড্ডি, ভাম থেকে বাঙালী মাত্রই পরম অসহিষ্ণু বিরোধি মতাদর্শের লোকেদের প্রতি। আমি বহুদিন থেকে লিখছি মতাদর্শের অনেক ওপরে উঠে মানুষকে বিচার করতে হয়। তমোঘ্নকে যদি বিচারের কাঠগড়ায় নামাতেই হয়-প্রথমেই এই প্রশ্নটা সবার করা উচিত এই প্রবল ভোগবাদি আত্মসুখী অন্তর্মুখী সমাজে কজনের এলেম আছে একটা এলিট ইন্সটিউটের ছাত্র হওয়া সত্বেও কেরিয়ার সন্মানের কথা না ভেবে পথে নামার ? অন্যের সমালোচনা করার আগে, নিজেরটাও দেখা উচিত।  আমি অবশই আদর্শবাদি গ্রাউন্ডে তমোঘ্নর বিরুদ্ধেই আছি। কিন্ত তার জন্য, মানুষ তমোঘ্নকে চিনতে ভুল করবো কেন?

 দ্বিতীয়টা অবশ্য তমোঘ্নের মত বাম এক্টিভিস্টদের প্রতি।  যদি আমেরিকাতেই আসার ছিল, ত এত পথ নাটিকা, এক্টিভিজমের কি দরকার ছিল লাইফে?  আমেরিকান সমাজ ক্যাপিটালিস্ট ব্ল্যাকহোল।  কত শত ভাম এখানে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতি হয়েছে চোখের সামনে। এখন আমেরিকাতে ক্যাপিটালিস্ট, মানে কোম্পানীর মালিক-এককালের দুর্দান্তপ্রতাপ নক্সাল ছাত্র নেতা -এই প্রফাইলের চারজন আমার ফেসবুকেই আছে। এরা আমার ভাল পারিবারিক বন্ধুও বটে এই মেরীল্যান্ড এলাকায় ।  মতাদর্শে ইনারা এখনো বাম।  হুইস্কি পেটে গেলে মোদির সাতপুরুষ উদ্ধার করেন।  কিন্ত ওই কাঁঠালের আমসত্ত্ব আর কি। কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানোর জন্য মালদাহের আম না খুঁজলেও চলে।

Friday, August 21, 2015

প্রেসির কলরব

আন্দোলনের রাজধানী কোলকাতার ছাত্রদের আন্দোলন বিমূখ হতে বলাটা বোধ হয় মূর্খামো। যদি ধরেই নিই তিনো ভাইরা এসে দুই ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করেছে-এটা ক্রিমিন্যাল কেস এবং ছাত্রীদের পরিবার থেকে থানায় গিয়ে এফ আই আর করা উচিত। কিন্ত এর জন্যে ভিসি ঘেরাও, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা নষ্ট করার কি দরকার আমার মাথায় ঢুকলো না।

   আই আই টিতে প্রফেসার তিওয়ারী আমাদের ম্যানেজমেন্টের একটা বেসিক কোর্স নিতেন। উনার একটা বক্তব্যে হোঁচট খেয়েছিলাম-কিন্ত বয়সকালে বুঝেছি-সেটাই নিদারুন বাস্তব। উনি বলেছিলেন "ম্যানেজারের" এর রোলটা অনেকক্ষেত্রেই অস্তিত্বের সংকটে থাকতে পারে-সেক্ষেত্রে বাঁচার তাগিদে একজন ম্যানেজারকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ইস্যু তৈরী করতে হয়। তাতে কোম্পানীর ক্ষতি হলেও নিজের অস্তিত্বের তাগিদে একজন ম্যানেজারকে ওইটুকু পলিটিক্স করতেই হয়। কোলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এক্টিভিস্টদের এই খুঁচিয়ে ইস্যু করা দেখে তিওয়ারীজির ক্লাস খুব মনে আসে। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের সংকট থেকে খোঁচানো শুরু করে।

    আমার প্রথম বস ছিল এক চাইনিজ মহিলা-সু জং। সে ছিল সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী-যা চীনের সেরা টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় । সিনহুয়া থেকেই চীনের কমিনিউস্ট পার্টির শীর্ষ নেতারা উঠে আসে।  অন্যদিকে চীনে হিউম্যানিটি, বিজ্ঞানে সেরা হচ্ছে পেইকিং বিশ্ববিদ্যালয়। ধরুন পেইকিং বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে চীনের প্রেসিডেন্সি কলেজ। পেইকিং বিশ্ববিদ্যালয় চীরকালের এন্টি এস্টাব্লিশমেন্ট। সু আমাকে বলেছিল-পেইকিং  থেকে ক্যাডার তুলতে ভরসা পায় না চীনের কমিনিউস্ট পার্টি। সিনহুয়ার ইঞ্জিনিয়ার থেকেই পার্টির  সাপ্লাইলাইন তৈরী করত যাতে প্রোএস্টাব্লিশমেন্ট কমরেড তৈরী হয়।

 কোলকাতায় যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ-দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ই এন্টিএস্টাব্লিশমেন্ট মটোতে চলে। অনেকটা পেইকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন। এর মূলকারন এখানকার আর্টস ফ্যাকাল্টি। আসলে পেশাদারী সাবজেক্ট নিয়ে যারা পড়াশোনা করে-তারা থাকে জীবিকার ধান্দায়। মূলত কেরিয়ারিস্ট। অন্যদিকে আর্টস নিয়ে যারা পড়ছে-তাদের সামনে নিশ্চিত কোন ভবিষ্যত নেই-উল্টে একটা বোহেমিয়ান ভাব ও যৌবনে আসে। আমি একটা সময় রাশিয়ান সাহিত্য নিয়ে এত ডুবে ছিলাম-ডিগ্রী, কেরিয়ার এসব বেকার মনে হত বহুদিন। ওগুলো একটা ঘোর। স্বপ্নাচ্ছন্ন ছাত্রজগৎ। সেই মোহচ্ছন্নতা থেকেই সম্ভবত আর্টস ফ্যাকাল্টির ছেলে মেয়েরা "কলরবী" হয়ে ওঠে।

 অন্যায় হলে অবশ্যই প্রতিবাদ দরকার। কিন্ত কিছু এক্টিভিস্টদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। 

Monday, August 17, 2015

আমেরিকাতে তিন বিখ্যাত বাঙালী

 আমেরিকানরা বোতলে জল ভরে কোল্ড ড্রিংস বানিয়েছে শুধু মার্কেটিং এর জোরে। এর প্রতিশোধ একমাত্র বাঙালীই নিতে পেরেছে আধ্যাত্মিকতার ধোঁয়া আমেরিকানদের খাইয়ে।

   আমেরিকাতে তিন বাঙালীই বিখ্যাত হতে পেরেছেন। তিনজনই আধ্যাত্মিকতার সফল মার্কেটিং গুরু। স্বামী প্রভুপাদ  (অভয়চারন দে) এর মধ্যে সর্বাধিক  বিখ্যাত-ইস্কনের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে। আমেরিকার সব শহরেই ইস্কনের শাখা আছে। জনবহুল রাস্তায় ইস্কনের লোকজন প্রভুপাদের গীতার ইংরেজি অনুবাদ বিক্রী করছেন-এই দৃশ্য অনেকবার দেখেছি।

       দ্বিতীয়জন পরমহংস যোগানন্দ ( মুকুন্দলাল ঘোষ)-যিনি বিখ্যাত অটোবায়োগ্রাফি অফ এ যোগী লিখে। এই বইটি আমেরিকার সব লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়।  উনার প্রতিষ্ঠানের অনেক ফ্রাঞ্চাইজি আছে।

    তৃতীয় জন বিক্রম যোগার বিক্রম চৌধুরী।  ওর তেরোশোর বেশী যোগা স্টুডিও ফ্রাঞ্চাইজি আছে।  তবে ইদানিং শিষ্যাদের টেপাটেপি করতে গিয়ে বিখ্যাতর থেকে কুখ্যাত হয়েছেন বেশী। বেশ কয়েকটা সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট রেপ কেসে ফেঁসে আছেন-হারলে জেল নিশ্চিত।

   এছারা আছেন চিন্ময়ানন্দ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা কে সি ঘোষ। যিনি শ্রী চিন্ময় নামেই পরিচিত বেশী এখানে। ওর প্রতিষ্ঠিত আশ্রমগুলি ভারতীয় দর্শনের শিক্ষা দেয় মূলত বাচ্চাদের মধ্যে।

 এর মধ্যে বিক্রম চৌধুরী বিতর্কিত ব্যবসায়ী। বাকীদের নিয়ে খুব একটা বেশী অভিযোগ নেই।  যোগানন্দ এবং চিন্ময়ানন্দ বিতর্কের উর্ধেই ছিলেন।

   নাহ। আমাদের বঙ্গপ্রান বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথকে এখানে গুটিকয় একাডেমিক সার্কলের বাইরে কেও চেনে না। রামকৃষ্ণ মিশন এখানে ভেদান্ত সোসাইটি অব আমেরিকা। ওদের আশ্রম অনেকগুলি আছে। কিন্ত সেই ভাবে আমেরিকান জনসাধারনের জন্য উনারা কোন কাজ করেন নি। ফলে এটি জন বিচ্ছিন্ন একটি সংগঠন- আমেরিকানরা কেউ এদের নাম শোনে নি।

  তবে অভয়চারন দে, মুকুন্দলাল ঘোষ, কেসি ঘোষ এবং বিক্রম চৌধুরীর নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধার যোগ্য শুধু একটাই কারনে। আমেরিকানরা মার্কেটিং এর জাত-জল মার্কেটিং করে মাল্টিন্যাশানাল বানিয়েছে। এই সকল বাঙালী সন্তান দেখিয়েছেন, আমরা বাঙালীরা মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আমেরিকানদের ও বাপ। উনারা "পরমাত্মা" প্যাকেজিং করে আমেরিকানদের খাইয়েছেন!

Saturday, August 15, 2015

আটলান্টিক সনদ এবং ভারতের স্বাধীনতা

ইতিহাস কি?
বেসিক্যালি কিছুটা সত্য নির্ভর উপন্যাস-যা শাসক শ্রেনী নিজেদের মতন করে লেখে। এই ব্যপারে কেউ ব্যতিক্রম না। যেমন কংগ্রেস ভারতের শাসক শ্রেণী ছিল বলে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস কংগ্রেসের চোখে লেখা।

  আমি ভারতে থেকেছি-জীবনের প্রথম আঠাশটি বছর। ইতিহাসে যথেষ্ঠ উৎসাহ ছিল। কিন্ত কখনো শুনি নি ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে রুজভেল্ট এবং আটলান্টিক চার্টারের ভূমিকা।  আমেরিকাতে এসে যখন আমেরিকান লেখকদের লেখা ইতিহাস পড়তে শুরু করলাম-তখন অন্তত এটা জলের মতন পরিস্কার হয় ভারতের স্বাধীনতার জন্য সহিংস বিপ্লবী বা গান্ধীর থেকেও সব থেকে বড় ভূমিকা ছিল আটলান্টিক চার্টারের।

  কি এই আটলান্টিক চার্টার ?

  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতেই হিটলারের হাতে একের পর এক যুদ্ধে হেরে চার্চিল তখন কোনঠাসা। হিটলার লন্ডনে বোমা বর্ষন করেই যাচ্ছেন।  না আছে অর্থ-না অস্ত্র। জার্মান ইউবোট আটলান্টিকে আমেরিকান জাহাজ ডোবাচ্ছে। বৃটেনে কিছু আনাই দায়। আমেরিকার সাহায্য না পেলে বৃটেনের ভরাডুবি সময়ের অপেক্ষা।

  উইনস্টন চার্চিল , আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে বারবার তাগদা দিচ্ছিলেন যুদ্ধে নামার জন্য। রুজভেল্ট শুধু কিছু প্লেইন আর ট্যাঙ্ক পাঠিয়ে খান্ত ছিলেন। আমেরিকান পাবলিক যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল।  পাশাপাশি রুজভেল্ট এটাও জানতেন যুদ্ধে নামতেই হবে। যাইহোক যুদ্ধের জন্য বৃটেনকে যে সাহায্য দিচ্ছিলেন তা ত এমনি দিতে পারেন না। রুজভেল্ট দেখলেন এই হচ্ছে মওকা। তখন বৃটেনের সমস্ত কলোনীতে ৭৫ কোটি লোকের বাস ( পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ )।

 রুজভেল্ট বল্লেন দেখ বাপু চার্চিল-আমরা আমেরিকানরা গণতন্ত্র আর স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তোমার ওই বাপের জমিদারি টেকানোর জন্যত আমার ট্যাক্স পেয়ারের টাকা খরচ করতে পারি না।  পার্ল হারবার তখনো হয় নি। আমেরিকা যুদ্ধে নামেনি। ফলে রুজভেল্ট বল্লেন যুদ্ধে সাহায্য করতে পারি-কিন্ত সেক্ষেত্রে আমাদের শর্ত মানতে হবে।
সেটা হচ্ছে তোমাদের ওই কলোনী গুলো ছাড়তে হবে। কারন তোমার ওই কলোনী টেকাতে গাঁটের টাকা আর অস্ত্র আমরা খরচ করবো না। এই বলে রুজভেল্ট সাতটি পয়েন্ট দিলেনঃ


  • No  territorial gains were to be sought by the United States or the United Kingdom;

  • territorial adjustments must be in accord with the wishes of the peoples concerned;

  • all people had a right to self-determination;

  • trade barriers were to be lowered;

  • there was to be global economic cooperation and advancement of social welfare;

  • the participants would work for a world free of want and fear;

  • the participants would work for freedom of the seas;

  • there was to be disarmament of aggressor nations, and a post-war common disarmament.


অর্থাৎ চার্চিলকে বল্লেন মশাই -ভারতে বৃটিশ রাজের অবসান ঘটাতেই হবে। চার্চিল কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। এদিকে গান্ধী দুটি পত্র লিখলেন চার্চিল এবং রুজভেল্টকে । রুজভেল্ট চার্চিলকে বোঝালেন যে ভারতের সাহায্য দরকার। চার্চিল কিছুতেই রাজী
হচ্ছিলেন না।  গান্ধী রাজনীতি বুঝতেন কম। যখন দেখলেন তিন নাম্বার পয়েন্ট নিয়ে কারুর আগ্রহ নেই-

উনি বল্লেন ধুস-

তোরা ভারত থেকে বের হ।


 চার্চিল টেলিগ্রাম করলেন রুজভেল্টকে-বলেছিলাম না, বুড়োটাকে বিশ্বাস করো না।


 এদিকে রুজভেল্ট ত হাঁ।  উনি চার্চিলের সাথে যতবার দেখা হয়েছে, ভারতের স্বাধীনতার জন্যে চাপ দিয়েছেন। লজিক, ভারত  বিশ্বযুদ্ধে সাহায্য করবে। গান্ধী বেঁকে বসায়, উনি পড়লেন বিপাকে। যাইহোক, রুজভেল্ট বল্লেন আগে সাইন ত করো-পরে দেখা যাবে।


এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ান তখন গোটা পূর্ব ইউরোপের দিকে চোখ রেখেছে। এটা ইউ এন রিজোল্যুউশন হলে মুশকিল হয়ে যাবে।

নিজের স্বার্থে সোভিয়েত ইউনিয়ান তিন নাম্বার পয়েন্টের বিরোধিতা করেছিল।


অর্থাৎ ইতিহাস সাক্ষী, সোভিয়েত ইউনিয়ান ছিল ভারতের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, আর আমেরিকা ছিল ভারতের স্বাধীনতার জন্য সব থেকে বেশী ভোকাল এবং চার্চিলকে চাপ দিচ্ছিল।



  • অবশ্য নেহেরুর কমিউনিস্ট প্রীতির জন্য স্বাধীনতার পরে ভারত রাশিয়ার বন্ধু এবং আমেরিকার শত্রু হিসাবেই উদয় হবে। এবং সেটার কারন আমেরিকা ও ভারতের ভুল বিদেশ নীতি।

হনু হার্মাদদের পনেরোই আগষ্ট

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে হার্মাদ হনুদের হট্টোগল নিছক হাস্যরস।

 মাকুদের দেখুন। তারা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদিদের স্বাধীনতা চাইছে। কাষ্মীর, উত্তর পূর্ব ভারত থেকে বেড়োলেই তারা খুশী!  যদি ধরেন নিই তারা প্রতিটি নৃতাত্ত্বিক জাতির স্বশাসনের অধিকারে বিশ্বাস করেন -তাহলে প্রশ্ন উঠবে তারা লেনিনের জর্জিয়া আগ্রাসন, স্টালিনের ফিনল্যান্ড, চেচেন সহ কুড়িটি রাশিয়ান উপজাতির ওপর আগ্রাসান, সোভিয়েতের আফগানিস্তান দখল -এসবের ক্ষেত্রে একশো আশিডিগ্রি ঘুরে লেনিন বা স্টালিনের সাম্রাজ্যবাদি অবস্থান কে সমর্থন করেন কেন?

এসব প্রশ্ন উঠলেই উত্তর আসবে, কেন সোভিয়েতের সামরিক নিরাপত্তার জন্য এসব আগ্রাসন দরকার ছিল!! তা কাষ্মীর, উত্তর-পূর্ব ভারত, ভারতের মিলিটারী নিরাপত্তার জন্য দরকার নেই?

 কি সব আজব পাবলিক এই বামেরা।  সোভিয়েত ইউনিয়ান নামে এক ঐতিহাসিক ভূখন্ডের নিরাপত্তার দরকার-অথচ যেদেশে তারা থাকে, তার সামরিক নিরাপত্তার দরকার নেই!! এদের কি বলবেন ? উন্মাদ না কনফিউজড ?

  এবার হনু, চাড্ডিদের দেখুন। ভারত ভারত বলে লাফাচ্ছে। অথছ এদের পূর্বপুরুষ হিন্দু মহাসভা স্বাধীনতাপূর্ব ভারতে মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়েছে-কিছু কিছু জায়গায় ক্ষমতায় ও ছিল।  বৃটিশের বিরুদ্ধে এরা কোনদিন লড়ে নি। আজকে ভারত ভাগের জন্য দোষ দিচ্ছে জিন্নাকে। অথচ-জিন্নার ইতিহাস পড়লে পরিস্কার ভারত ভাগের জন্য দায়ী কংগ্রেসের হিন্দু নেতারা।  সেটা নিয়ে একটা প্রবন্ধ আগেই লিখেছিলাম। পোষ্ট করলাম।

  বাস্তবটা কি? সেটা বলার মতন একজন লোক ও আজ ভারতে নেই । আসল সত্য বৃটিশরা ভারতের জন্ম দিয়েছিল। বৃটিশরা না থাকলে, ভারত হত ইউরোপের মতন মহাদেশ। স্প্যানিশ বা ইটালিয়ানদের মধ্যে যেটুকু মিল বা গড়মিল, একজন বাঙালী ও অসমীয়ার মধ্যেও সেটুকু ঐক্য বা বৈচিত্য আছে। গোটা ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ জুরে হয়ত গোটা পঞ্চাশেক দেশ থাকত। ইউরোপের মতন। তাতে ইউরোপের মতন প্রচুর গৃহযুদ্ধ, বিশ্বযুদ্ধ হতে পারত দেশে দেশে। নেহাৎ বৃটিশরা এক বিশাল রাষ্ট্রের এবং বিশাল রাষ্ট্রের জন্য দরকারী এক বিশাল মিলিটারীর জন্ম দিয়েছে বলে ভারত ভূখন্ডে রাজনৈতিক স্ট্যাবিলিটি আছে। 

Thursday, August 13, 2015

স্বাধীনতা -অস্তিত্বহীন এবস্ট্রাকশন

সমস্যার শুরু বেশ কয়েক বছর আগে, স্বাধীনতা বনাম অধীনতা (1) নামে পনেরো আগষ্টের এক ফরমাইশি লেখা লিখতে গিয়ে। লেখাটা শুরু করেছিলাম পাশ্চাত্য দর্শনে স্বাধীনতার সাধারন ধারনা থেকে। শেষে প্রাচ্য দর্শনের একটা ফিনিশিং টাচ দিতে গিয়ে নিজেই ঘেঁট ঘ হই।  সেই যাত্রায় স্বাধীনতাকে প্রাচ্য দর্শন থেকে মুক্ত করে, প্রবন্ধটা শেষ করে দিই।

  মুশকিল হচ্ছে আমাদের ভারতীয় দর্শনের ভিত্তিই হচ্ছে সালভেশন -মুক্তি। স্বাধীনতা। কিসের থেকে? মায়া থেকে। এই দৃশ্যমান বাস্তবতার পুরোটাই মায়া। "আমি" কয়েদি- আমার অস্তিত্ব নানান বন্ধনে বাঁধা।  চারিদিকে মোহজালের তিহার জেল।

           ঘুম থেকে উঠলাম-গরম চা না হলে ইমেলে চোখ রাখা দায়।  চা পান থেকে স্বাধীনতা নেই মনের।

  ধরুন সেই চাপানের মোহ বা মায়ার বন্ধনে ধরা দিয়ে সবে ইমেলে বা লেটেস্ট ফেসবুক পেজে চোখ রাখছি।  এখানেও জীবিকা, পেটের দায়- বড় দায়।  পেশা সংক্রান্ত ইমেল গুলো পড়ে রিপ্লাই করতেই হবে আগে। এদিকে আগের রাতে ফেসবুকে যে লেখা ছেড়ে দিয়ে এসেছিলাম -সেটা নিয়ে বাওয়াল হচ্ছে-অসংখ্য নোটি পাচ্ছি। হাত নিশপিশ। কিন্ত নাহ। পেশা আগে। সব ইমেলের রিপ্লাই না দেওয়া পর্যন্ত সেই পেশার বন্ধনে বাঁধা!

 যদিও বা কোন ক্রমে ইমেল শেষ করে ভাবছি, ফেসবুকে উত্তরগুলো দেওয়া শুরু করি- ইন্ডিয়া থেকে স্কাইপে ফোন আসতে থাকে। না হলে বৌ মেয়েকে ধরিয়ে দিয়ে চলে যাবে। এগুলো সব কর্তব্য। পেশার । না হলে সংসারের। মুক্তি কোথায়? কোথাও নেই!!

 তারপরে নাকেমুখে গুঁজে ক্লায়েন্ট লোকেশনে গিয়ে ফায়ার ফাইটিং। এটা কাজ করছে না-ওটা কাজ করছে না।  এটা করতে হবে। ওটা করতে হবে। কাস্টমার হচ্ছে ভগবান।  আমরা সেই মার্কেট ঈশ্বরের দাশানুদাস।  সব ক্লায়েন্টের ইচ্ছার অধীন! আর সেই ইচ্ছাটাও স্বাধীন কিছু না-বৃহত্তর মার্কেটের দুফুট ব্যাসের পাইপ।  ওর মধ্যে নিজেকে ঢোকাতে পারলে ভাল - There is light at the end of the tunnel. না হলে ডারুইন সাহেবের অভিশাপে কম্পিটিশন থেকে ছিটকে ছ!

 বাড়ি ফিরে হয় ছেলে সকারে টানবে-নইলে বৌ লিস্ট ধরিয়ে দেবে। পেন্ডিং কাজের ফর্দ। বাজার, বাগান, বাথরুম!  সবই কর্তব্য- কখনো বাবা , স্বামী বা কর্মী।

 সব শেষ করে এই রাত এগারোটার সময় একটু মুক্তি পাই লেখালেখি করার জন্য! তাও কি কোন স্বাধীনতা আছে?  এমনিতেই ঘুম জড়ানো চোখে ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু ভজনা করতে করতে জীবনের ৯০% লেখা নামিয়েছি-তাতে বানান, বক্তব্য, বর্ণ ঠিক রাখাই মুশকিল। নেহাৎ প্রাক্টিসের হাত, তাই দুকলম নেমেই যায়। কিন্ত কোথায় মুক্তি? কিছু লিখলেই গ্রামার নাজি বর্নহিন্দুরা বাংলা বানান নিয়ে ইঁটপাটকেল ছুড়বে! ফেমিনিস্টরা দল বেঁধে মেয়েলিপনা শুরু করে দেবে!  সাথে হনুমান আর হার্মাদদের হারমোনিক সিম্ফনি হচ্ছে উপরি পাওনা!!

ফ্রাঙ্কলি স্বাধীনতাটা ঠিক কোথায়? না আছে জীবনে, না খাদ্যে, না ডাক্তারে, না উকিলে, না সংসারে, না পেশাতে। এমন কি ফেসবুকেও নেই! সবই ত মায়া আর মায়ার বন্ধন! কখনো বৌএর অধীন, কখনো মার্কেটের, কখনো ক্ষুদার, কখনো নেশার।

 আমার দাঁতের ডাক্তারটার ওপর এত রাগ, কাল ভোররাতে স্বপ্ন দেখছিলাম মদন মিত্র সাঁড়াসি হাতে আমার দাঁত তুলতে আসছে! এমনিতে আমার সাদা দাঁতের ডাক্তারটার ওপরে খুব রাগ-কিন্ত মদন মিত্রত মাইরি-যেই সাঁড়াসি হা্তে এগিয়েছে, আতঙ্কে ঘাম ছুটে ঘুম ভেঙেছে আজকে! খেয়াল ছিল না দিনটা পনেরোই আগষ্টের প্রাক্কাল-রাজনৈতিক স্বাধীনতার উৎসব!





Wednesday, August 12, 2015

নারী পুরাণ

আজ আজকালে বেশ ভাল নারীবাদি একটা লেখা দেখলাম। লেখিকাকে চিনি না। তবে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত । পুরুষের চোখ যেখানে সর্বদাই নারীকে মেপে চলেছে-অথবা পুরুষের কামলোলুপ দৃষ্টিতে নারীর নির্মান যেখানে  ঘুন পোকা-সেখানে আল হোপ লস্ট। নো লাইট এট এন্ড অব দ্যা ট্যানেল।

 নারী হয়ে যেহেতু জন্মায় নি-সেখানে একজন মেয়ে ট্রামে বাসে রাস্তায় উত্তক্ত হলে বা পুরুষের হাতে মনে মলেস্ট হলে, অনুভূতি কেমন হতে পারে-কতটা ট্রমাটিক হতে পারে সেই অভিজ্ঞতা-তা নিয়ে আমার লেখার চেষ্টা হবে ধৃষ্টতা।

 কিন্ত সামহাও আমার উলটো অভিজ্ঞতাও কিছু হয়েছে-এবং সেগুলো লেখা সমাচীন বোধ করছি। এগুলো ল না এক্সেপশন টু ল্য- জানা নেই।  কোন জেনারালাইজেশনে যাব না। আবার লিখি ইহা একান্তই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

   প্রথম অভিজ্ঞতা কৈশরকালে । করিমপুরের খরে নদীতে বিজয়া দশমীতে বিরাট নৌ বাইচ হত। এখন সেই নদীকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্ত এককালে শারদকেলির জন্য সে নদী ছিল দুইকুল ছাপানো। নৌবাইচে অংশ নিত কয়েকশো নৌকা। মফঃশহরের সব উঠতি ছেলে মেয়েই সেদিন নৌকায় উঠত। ওই রক্ষণশীল সমাজে বিজয় দশমীর দিনটা ছিল ব্যতিক্রম। ছেলেরা নৌকায় বসত প্রচুর লজেন্স এবং ফুল নিয়ে। ছেলেরা মানে সব উঠতি কিশোর -কিছু সদ্য গোঁফাওয়ালা যুবক। নৌকায় নৌকায় ইচ্ছা করে ধাক্কা মারা ছিল খেলা। আর ধাক্কা মারার সময় এক নৌকার ছেলেরা অন্যনৌকার মেয়েদের দিকে ছুঁড়ে দিত লজেন্স, ফুল। যে মেয়ের দিকে যত বেশী লজেন্স আর ফুল ছোঁড়া হত, গর্বে বুক ফুলে উঠত তারই।

  এমনিতে বেশ নির্দোশ ব্রজকূলধামের হোলিটাইপের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। রক্ষণশীল সমাজে তিনশো চৌশট্টিদিন ব্যথা চেপে, ওইদিনটিতেই যা চপ আলুভাজা খেয়ে নেওয়া যায় আর কি। তখন বয়স সবে চোদ্দ থেকে পনেরো। বয়ঃসন্ধির কাল। সেবারই প্রথম লক্ষ্য করলাম কিছু বখাটে ছেলেরা মেয়েদের স্তন লক্ষ্য করে লজেন্স ছুঁড়ছে। সালোয়ার কামিজে ঢাকা  কিশোরীদের সদ্য ওঠা স্তনবৃন্তের রেখা যেন বুলস আই। সেখানে ছুড়তে পারলে স্কোর দশে দশ! আগের বছরগুলোতে আসলে খেয়াল করি নি। হয়ত তখনো মেয়েদের উপত্যকা আর পার্বত্য অঞ্চলের পার্থক্য করার মতন হর্মোন দেহে আসা শুরু হয় নি।

  যাইহোক, আমি বেশ রক্ষণশীল সুবোধ বালক হিসাবেই পরিচিত ছিলাম। এই নয় যে ব্যপারটা আমি উপভোগ করি নি । কিন্ত পরের দিন বিজয়ার প্রনাম সারতে গিয়ে এক দিদিকে বলেই ফেল্লাম-আচ্ছা কালকে কিন্ত ছেলেগুলো বেশ বাড়াবাড়ি করছিল! নিজেকে সুবোধ প্রমান করা আমার উদ্দেশ্য ছিল কি না জানি না-পুরুষকূলের পক্ষ থেকে বেশ অপরাধবোধের কারনে বলেই ফেললাম। সেই দিদিত হেঁসেই অজ্ঞান!! আরে বলিস কি!! ছেলেরা ওইটুকু "ছেলেমি" না করলে নাকি মেয়েরা তাদের ছেলে বলে মনেই করে না!! মানে আমার মতন সুবোধ বালক "সেজে" থাকা ছেলেরা আসলেই  ঢ্যাঁড়স !!

  সেই বছরই বোধ হয় আবুল বাশারের একটা অদ্ভুত গল্প পড়ি দেশে। গল্পটা এক কালো কুৎসিত মেয়েকে নিয়ে। যাকে কোন পুরুষ চাইছে না। মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে না। বাড়িতে সারাদিন গঞ্জনা।   গল্পে সেই মেয়েটি  রেল লাইনের ধারে জঙ্গলে ধর্ষিত হবে । পাড়ার বখাটে ছেলেটা ধরা পড়বে। ছেলেটিকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে মেয়েটা আসলে হতবাক। ছেলেটাকে সেই চিনিয়ে দিয়েছে । কিন্ত মনের গভীরে কোথাও ছোট্ট একটা ব্যথা। ওই ছেলেটি ছাড়া আর কেও ত তার দেহটা চায় নি-ও আর কোনদিন সেভাবে উপলদ্ধি করে নি নারীত্ব!

গল্পটা পড়ে আমি হাঁ হয়েছিলাম বহুদিন। যাইহোক, যত বড় হয়েছি বুঝেছি নারী জাতি বেজায় জটিল।  কি যে এদের মনে, মুখে আর হৃদয়ে, তা সর্বশক্তিমান আল্লাহওর অসাধ্য জানা।

আমার লেখার উদ্দেশ্য এই না যে আমি দাবী করছি মেয়েরা ধর্ষন উপভোগ করে। একদম এই ধরনের কোন কিছু দাবী আমি করছি না।  তবে মেয়েদের মন, মুখ এবং হৃদয় একশো কুড়ি ডিগ্রী বিপরীতেই থাকে।




Saturday, August 8, 2015

মুক্তমনার মৃত্যু মিছিল এবং বাংলায় প্রগতিশীলতার ভবিষ্যত

                                                                    (১)
কেন লিখি , অন্য কেওই বা কেন লেখে-এর সহজ উত্তর একটাই। নিজের মনকে বলতে থাকা মনোলগ-নিজের সাথে যুদ্ধ করতে থাকা নিজের অব্যক্ত কথামালাকে পাঠকের সামনে আনা। মনকে হাল্কা করার  একটা পদ্ধতি।

 এক এক করে অভিজিত, অনন্ত, বাবু, নিলাদ্রি-এদের সবাই এখন শহিদ।  মুক্তমনার অবিচ্ছেদ্য প্রানেরা এখন হেমন্তের রাতে উল্কাপাত। ২০০৩ সালে যখন মুক্তমনায় অভিজিতের অনুরোধে লেখা শুরু করি-কখনো ভাবিনি, এই পরিণতির মধ্যে দিয়েও যেতে হবে। হয়ত ভাবা উচিৎ ছিল।

পরিস্কার করেই বলি, অভিজিতের মৃত্যু সংবাদে প্রথম ঘন্টায় খুব ভয় পেয়েছিলাম। যেকোন জৈবিক জীবের একটা ইন্সটিঙ্কিভ ভয় থাকে-এটা ছিল সেই ভয়।  কিন্ত আস্তে আস্তে বিশ্লেষন করে, প্রথম ঘন্টার মধ্যেই নিজেকে ফিরে পেতে সক্ষম হই। কিসের ভয়? আমরা ভয় পাই-সেটাই ত ওরা চাইছে। আমি ফেক আই ডি থেকে কোনদিন কিছু লিখি না। কারন ফেক আইডি থেকে লেখা মানে দুটো বার্তা পরিস্কার করা হয় -(১) লেখক ভীতপ্রাণ কীট  (২) আমার নিজের আদর্শের ওপর নিজের আত্মবিশ্বাস কম-তাই নিজের জীবন বাজি ধরে লিখতে রাজী নই।

সব থেকে বড় কথা যদি ভয়ই পাব ত এতদিন এত দর্শনশাস্ত্র ঘেঁটে কি ললিপপ লিখছিলাম?  মৃত্যু ভয়? মরতে ত একদিন হবেই। সেটাই জীবনের পরম বাস্তব। সেই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে বেশীদিন বাঁচার চেষ্টা সবাই করে-সবাই চাইবে নাতি নাতনীর মুখটা দেখে যেতে। কিন্ত সেইভাবে বেঁচে থাকা আর একটা ইঁদুরের বেঁচে থাকার মধ্যে পার্থক্যটাই বা কি?

 দুর্যোধন কেন পান্ডবদের সাথে যুদ্ধে গেলেন? তা কি রাজত্বের, ভোগের লোভে?

মহাভারত তা বলে না। দুর্যোধন কর্নের সাথে প্রাণ খুলে নিজের মনের কথা বলতেন যা রাজসভায় বকা খাওয়ার ভয়ে বলতে পারতেন না। দুর্যোধন কর্ণকে বল্লেন-হ্যা পান্ডবদের পাঁচটা গ্রাম কেন, গোটা রাজ্য দিতেও আমার আপত্তি ছিল না। রাজ্যভাগ করে শাসন করলে কি হত? জীবনের বাকীদিনগুলো আমি আর পাঁচটা রাজার মতন ভোগবিলাসে কাটাতাম। আমার মৃত্যুর পরে সবাই আমাকে ভুলে যেত। ওমন রাজা কত আসে যায়। কিন্ত আমি যুদ্ধ চাই। ভীমের সাথে দ্বৈরথ।  আমি দেখাতে চাই গোটা পৃথিবীকে, আগত ইতিহাসকে ভীমসেন না- আমিই ইতিহাসের সেরা গদাযোদ্ধা। সেটাই আমার লেগাসি। সেই গৌরবের মৃত্যুই আমার কাম্য। ঐ হাজার হাজার রাজাদের জন্মমৃত্যুর ভীরে আমি নেই!

না, মৌলবাদের বিরুদ্ধে যে যাত্রা আমরা মুক্তমনারা শুরু করেছিলাম একবিংশ শতাব্দির জন্মলগ্নে, তার থেকে পালাচ্ছি না। হাজার লাশ পড়লেও এই কলমযুদ্ধ জারি থাকবে। একজন যোদ্ধার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু পরম সৌভাগ্যের।

 যারা ভাবছেন গোটা পৃথিতে আমরা সবাই পাশাপাশি শান্তিতে থাকব। হিন্দু মুসলমান-আমরা সবাই ভাই ভাই। দাঙ্গা হবে না। লাশ পড়বে না আদর্শবাদের বিভেদের জন্য।  বোকার মতন ভাবছেন। হিন্দু মুসলমান কেন-দুজন হিন্দুও একে  অন্যের ভাই না। দুজন মুসলমান ও না। মধ্য প্রাচ্যে শিয়ারা সুন্নীদের, সুন্নীরা শিয়াদের কোপাচ্ছে। তা আরো ভয়াবহ।

এই পৃথিবীতে পরিবেশের ক্ষতি না করে, বর্তমান প্রযুক্তিতে ৩০০ কোটি লোক বাঁচতে পারে। সেখানে বর্তমান লোক সংখ্যা তার দ্বিগুন। এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলিতে সর্বত্র জনসংখ্যা বাড়ন্ত । জনঘণত্বের আধিক্যে বেঁচে থাকার রসদের অপ্রতুলতা। ফলত চারিদিকে দূষন আর দুর্নীতি। এবং সম্পদের ভাগ নিয়ে দাঙ্গা। তা কখনো রাজনৈতিক। কখনো ধর্মীয়।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সভ্যতা মানবতা রূপান্তরিত হয় সারভাইভালিজমে । ডি এন এতে গ্রথিত কোড বলে দিচ্ছে তুমি একটা প্রাণী। চারিদিকে কই এর ঝাঁক। খাবার নেই। জমি নেই। কিন্ত তোমাকে বাঁচতে হবে। ছলে বলে খুন করে। ওটাই মানুষের "সভ্যতার" ধারাবাহিক ইতিহাস। এখন সেটাই ফিরে আসছে মৌলবাদি আর সন্ত্রাসবাদ রূপে। নতুন বোতলে পুরোনো ওয়াইন।

                                                                                   (২)

  ধণতন্ত্র এবং মার্কেট মুনাফা অপ্টিমাইজ করে। কিন্ত মানুষের সমাজের রাষ্ট্রের সমস্যাগুলির সমাধান করে না। সমস্যার সূত্রপাত এই "ডিসকানেক্ট" থেকে।  এই ব্যপারটা গভীরে না বুঝলে, ধর্ম এবং মৌলবাদের বর্তমান সমস্যাগুলো আমরা বুঝবো না।

                                                                   
শিল্প বিপ্লবের ফলে ধণতন্ত্রের চাহিদা মেটাতে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তৈরী হল। যৌথ পরিবারগুলি ভেঙে গেল। এই প্রক্রিয়াটা ইউরোপে সম্পূর্ন হয়েছে ১৯০০-৩০ সাল নাগাদ। ভারত বাংলাদেশে এটা শেষের ধাপে।

 ধণতন্ত্রের প্রয়োজনেই ব্যক্তিস্বাধীনতা আস্তে আস্তে রাজনীতির সেণ্টার থিম । ইউরোপে এই প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৮৫০ সাল থেকে। এই চলমান ভাঙনক্রিয়া যেখানে ফ্যামিলির গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে, চার্চের ধর্মের দড়ি শিথিল হচ্ছে -এসব থেকে নিৎসে লিখলেন দুটি গুরুত্বপূর্ন থিসিস।  প্রথমটা হচ্ছে ওই ধর্মীয় বাঁধনে, সামন্ততন্ত্রে, নৈতিকতার কড়া শাসনে-যা যতই ব্যক্তিস্বাধীনতা নারীস্বাধীনতা হরণকারী হৌক না কেন-ওটা ছিল "সার্টনিটির সময়"। ধর্মী নৈতিকতায় বিশ্বাস করে  মানুষ নিশ্চিত ছিল-কি তার জন্যে ঠিক। কি বেঠিক।

       ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই ।  মানুষ, প্রতিটা নরনারী জানত তাকে এটাই করতে হবে। অন্য কিছু ভাবার উপায় ছিল না। কেও চাইলেই সিঙ্গল মাদার হতে পারত না। কেও চাইলেই বিকিনি পড়ে বিচে ঘুরতে পারত না।  মানুষ জানত তাকে কতগুলো ধরাবাঁধা গদেই জীবন কাটাতে হবে।

  নিৎসে লিখলেন ঈশ্বরের বা ধর্মের মৃত্যুর পরে মানুষ ব্যক্তিস্বাধীনতা যেমন পেল-অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেল নিত্যনতুন আবিস্কারে-কিন্ত একই সাথে শুরু হল "আনসার্টেনিটি"।  আগে ধর্মের চাপে মানুষ জানত তাকে বাবা মাকে দেখতেই হবে, নিজের স্বার্থের আগে ফ্যামিলির স্বার্থে ধর্মের স্বার্থে কমিউনিটির স্বার্থে এই এই কাজ করতেই হবে। মেয়েরাও জানত তাদের পুরুষতান্ত্রিক বৈষম্যবাদি নীতিগুলো মানতেই হবে। এগুলো ছিল সার্টেনিটি।  ব্যাক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃত হতেই সেই সার্টেনিটি থাকল না। আমি কি করে নিজেকে চালাব, নিজের বৃদ্ধি ঘটাবো তা একান্তই আমার স্বাধীনতা। নিৎসের কোডে "উইল টু পাওয়ার"।  নিজেকে সমৃদ্ধশালী করার স্বাধীন চিন্তা। কিন্ত আমরা ঢুকে গেলাম আনসার্টেন টাইমে।  নারী স্বাধীনতা ভালো না খারাপ,  ঈশ্বরকে অস্বীকার করা, ধর্মকে অস্বীকার করা ভাল না খারাপ-এগুলো নিয়ে আগে বিতর্ক ছিল না। সবাইকেই মানতে হত সেই সার্টেন টার্মস । কিন্ত শিল্প বিপ্লব এবং তার থেকে উদ্ভুত ব্যক্তি স্বাধীনতার ধারনা যা বিংশ শতাব্দিতে ইউরোপে এল, তা ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মিডল ইস্টে আসতেই গন্ডোগল। ভারতীয় উপমহাদেশে যারা ওই সার্টেন টার্মে বিশ্বাসী-যাদের আমরা ধর্মীয় রক্ষণশীল বলছি-তাদের সাথে লিব্যারাল ডেমোক্রাসিতে বিশ্বাসী লোকজনের সংঘাত ছিল টাইমবোমের মতন। একদিন না একদিন লাশের আকারে সামনে আসত। রক্ষণশীল বনাম লিব্যারাল দ্বন্দ আমেরিকাতেও আছে। এখনো আছে। কিন্ত এই সার্টেন বনাম আনসার্টেন টাইমে বিশ্বাসীদের বিরোধ সেখানে গণতান্ত্রিক পক্রিয়ার মধ্যে আবদ্ধ। বাংলাদেশে এই বিরোধিতার ক্ষেত্রটাই নেই। ইসলামের বিরোধিতা করলে ইসলামিস্ট জঙ্গীরা কল্লা কাটবে। নাস্তিকদের সেই রক্ত দেখে মুসলমানরা আনন্দে নাচবে।  আর সেটা যদি না হয়,  রাষ্ট্র  ব্লেস্ফেমি আইনে জেলে ঢোকাবে। ভারতে হিন্দুত্ববাদিরা ক্ষমতায় আসার পরে এই বিরোধিতার ক্ষেত্রটা সংকুচিত হয়ে ক্রমশ ধর্মীয় কালেক্টিভিজমে বিশ্বাসী শক্তির হাতে হেলে আছে।

                                                              (৩)
 ধর্মের অভিকর্ষ থেকে মুক্তি পেয়ে,  স্বতন্ত্রতা বা ইন্ডিভিজুয়ালজমের যে ক্ষেত্রটা ইউরোপে তৈরী হল-তা ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তানে ব্যর্থ কেন?

 এর মূল কারন শিল্পায়নের প্রক্রিয়াটা ইউরোপ আমেরিকাতে যেভাবে হয়ছে বা এখনো হয়, ভারত এবং মিডল ইস্টে সেই পথে হয় নি।  ইউরোপের শিল্প বিপ্লবের মূলে আছে উদ্ভাবকরা। যাদের  অর্থের জোগান দিত ধনী লোকেরা। নতুন প্রযুক্তির জন্য নতুন জ্ঞান, বিজ্ঞান প্রযুক্তির প্রয়োজনে ইউরোপের রুলিং ক্লাস লিব্যারালিজম বা ব্যক্তিস্বাধীনতা সমর্থনে বাধ্য ছিলেন।

একটা উদারহন দিই। স্টীল ইন্ডাস্ট্রির জনক স্যার হেনরী বেসেমার। ইংল্যান্ডে উনার বাবার ছোট্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম ছিল। সেখানেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর হাতে খড়ি।  ছোট বেলা থেকেই নতুন নতুন যন্ত্র বানাতেন । ১৮৫৬ সালে ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় রয়াল নেভীর একটা বড় বরাত পেলেন।  ক্রমিয়াতে রাশিয়ান ডিফেন্স ভাংতে, রয়াল নেভীর দরকার ছিল দূরপাল্লার কামান । যার লক্ষ্য হবে নিখুঁত। সেযুগে সিলিন্ড্রিক্যাল শেলের ধারনা ছিল না-স্যার হেনরী আবিস্কার করলেন একটা স্পিনিং শেল কেবল মাত্র দূরপাল্লায় নিখুঁত ভাবে আঘাত হানতে পারে। কিন্ত মুশকিল হল কামানের নল দিয়ে ওই ধরনের ঘুড়ন্ত শেল ছাড়তে গিয়ে কামানগুলো ফেটে যেত। স্যার হেনরী বুঝলেন উন্নত ধরনের লোহা দরকার কামানের নলের জন্য। তার থেকে মাত্র এক বছরের মধ্যে জন্ম হল স্টিল তৈরীর বেসেমার পদ্ধতি। যা আধুনিক স্টিল শিল্পের জননী বলে পরিচিত। স্যার হেনরী ইংল্যান্ডের রাজা বা ধনী ফ্যামিলির লোক ছিলেন না। কিন্ত ওই এক আবিস্কারে ইংল্যান্ডের অন্যতম ধনী শিল্পপতি হলেন। তার আবিস্কার লাইসেন্স করে আমেরিকাতে আরো বিরাট ধনী হলেন এন্ড্রু কার্নেগী-যিনি নিজেও ছিলেন এক দরিদ্র স্কটিশ ইমিগ্রান্ট।

 ভারতে স্টীল শিল্পের জনক স্যার জামসেদজী টাটা। উনার বাবাও বরোদার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। স্যার হেনরীর মতন উনিও ছোট থেকে বিশাল মহীরূহ হলেন ভারতে স্টীল শিল্প স্থাপন করে। কিন্ত উনি নিজে ইঞ্জিনিয়ার ও না-উদ্ভাবক ও না। বেসেমার স্টীল প্রযুক্তি ইংল্যান্ড থেকে এনে উনি ভারতে চালালেন। সেই ট্রাডিশন এখনো চলছে। ভারতে সব প্রযুক্তিই আমদানি করা হয়। হালে ইসরোর মত কিছু সংস্থা একটু ব্যতিক্রম। এই নয় টাটা বিজ্ঞান প্রযুক্তির গুরুত্ব বুঝতেন না। বুঝতেন বলেই তার অর্থানুকুল্যে টাটা ইন্সটিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ, ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব সায়েন্স শুরু হল। কিন্ত তারা কোন প্রযুক্তি ভারতে দিতে সক্ষ্মম হল? ভারতে এখনো সমান ভাবেই বিদেশ থেকে প্রযুক্তি ধার করা চলছে।  ফলে বিজ্ঞান ভারতের হেঁসেলে কোনদিন ঢুকলো না। তা সীমাবদ্ধ বইতে, পেপারে আর ডিগ্রীতে। ফলে ভারতের বিজ্ঞানীরা নারকেল ফাটিয়ে মিসাইল লঞ্চ করেন!

স্যার হেনরী বনাম স্যার জামসেদজির গল্প তুলনা করলে তিনটে সত্য প্রবাহমান।
 
  প্রথমত ভারতে কোনদিন কোন আবিস্কার করার প্রবণতা ছিল না। কারন ভারতের শিল্পের মালিকানা চিরকাল বিজনেস ক্লাসের হাতে। যারা প্রযুক্তিবিদ না। উদ্ভাবক না। ফলে ভারতের রুলিং ক্লাস যা কিনা পুরোটাই এই বিজনেস ক্লাস দ্বারা পরিচালিত কোনদিন ব্যাক্তিস্বাধীনতার গুরুত্ব সেইভাবে উপলদ্ধি করে নি। উদ্ভাবন নির্ভর শিল্পের  জন্য ব্যক্তিস্বাধীনতা সব থেকে বেশী আবশ্যক । ফলে ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়টা ভারত বা বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনদিন গুরুত্বপূর্ন না। কারন ভারত বা বাংলাদেশের উৎপাদন শক্তি ব্যক্তিউৎকর্ষের ওপর নির্ভরশীল না।

অর্থাৎ একজন মার্ক্সিস্টের মতন ভাবলে- ধণতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থায় ব্যক্তি উৎকর্ষতাটা হচ্ছে বেস। আর সেই বেসের ওপর তৈরী সুপারস্ট্রাকচার ব্যক্তিস্বতন্ত্রতা। যে পলিটিক্যাল সিস্টেমে বেসটাই তৈরী হয় নি, সেখানে ব্যক্তিস্বতন্ত্রতার সুপারস্ট্রাকচার আসবে কোথা থেকে ?

  দ্বিতীয়টা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ আসলেই বৃটিশ কলোনী। উদ্ভাবনের দরকার সব থেকে বেশী মিলিটারী প্রযুক্তিতে । কলোনীর কোন মিলিটারী  ছিল না। ফলে সমাজে উদ্ভাবক বা বিজ্ঞানীদের আসলেই কোন দরকার ছিল না। এইজন্য ভারতে বিজ্ঞান চর্চা সম্পূর্ন ভাবে বহুদিন যাবত পেপার পাবলিকেশনের চর্বিত চর্বন। সমাজ বা রাষ্ট্রের আসলেই কোন ইন্টারেস্ট নেই তাতে। ফলে বিজ্ঞান চেতনা এই সমাজে আসবে কি করে?

 তৃতীয় হচ্ছে এই যে ভারত বা বাংলাদেশের রুলিং ক্লাস বা শাসক শ্রেণী তৈরী হল-তাদের চরিত্রটা কি? রুলিং ক্লাস প্রতিটা দেশেই আসলে সেই দেশের টপ বিজনেস ক্লাসের পেইড প্রতিনিধি। পুতুল নাচের দড়ি তাদের কাছেই।  বিজনেস ক্লাস উন্নত মানের হলে সেই দেশের শাসক শ্রেনী ও উন্নত হবে। কারন রাজনীতিবিদরা শুধুই নাচের পুতুল। সুতো আছে ওই বিজনেস ক্লাসে হাতে। মোদি মমতা হাসিনা-এরা রঙ্গমঞ্চের মহান অভিনেতা-স্ক্রিপ্টটা কিন্ত ঐ ব্যবসায়ী শ্রেণীর হাতে।

 ভারতের বিজনেস ক্লাস এখন কারা?  টাটা বিড়লা, আদবানী, আম্বানী। সবাই গুজরাটি। কিছু দক্ষিন ভারতীয় আছে আই টি শিল্পে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, এরা শুধুই ট্রেডিং ক্লাস। দুপয়সায় কিনে দশ পয়সায় বেচতে জানে। উদ্ভাবন করে উন্নত প্রযুক্তি আনা, তার জন্য মানব সম্পদের উৎকর্ষতা-এসব এদের মাথা ঢোকে না। প্রযুক্তি এরা শুধু কিনতে জানে।  ভারতের এই বিজনেস ক্লাস চায় তাদের পরিবারের সম্পদ বাড়ুক। তারাই রাজত্ব করবে। বাকীদের তারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে "কন্ত্রোল" করবে। এর জন্য হিন্দুত্ববাদি, ইসলামবাদি, জাতিবাদি, লুম্পেনবাদি, বামপন্থী-সবাইকেই তারা টাকা দিয়ে কিনে রেখেছে।  বাংলাদেশে শিল্পপতি গোষ্টিটা পুরোটাই লুম্পেন এবং বাটপার।

       ভারতে এই বিজনেস ক্লাসটাই  রাজনীতিবিদ,  হিন্দুত্ববাদি, জামাতি, কাস্টিস্ট,  বামপন্থী সবাইকেই টাকা দিচ্ছে যাতে রাষ্ট্রে এদের ক্ষমতা অব্যাহত থাকে। একে ঘণবসতির জন্য গোটা দেশটাই বারুদের ওপর বসে- তার মধ্যে এই বিজনেস ক্লাস টাকা ঢালে সাম্প্রদায়িকতা সহ সব আদর্শকে উস্কে দিতে । উদ্দেশ্য জনগণ যদ্দিন বিভক্ত থাকে, তদ্দিন স্টাটাস ক্যু বজায় রাখা সহজ। নির্বোধ জনগণ নিজেদের মধ্যে জামাত, বিজেপি, তিনোমূল, সিপিএম করে মরবে।  ফয়দা লুঠবে পুতুলনাচের সূতো আর স্ক্রিপ্ট যাদের হাতে, তারা।

 উদাহরন চান? হাসিনার আসল শক্তি কোথায়? জনসমর্থন ত উনার পেছনে নেই। উনার আসল শক্তি, উনি বুঝেছেন সঠিক ভাবে। ভারতের রুলিং ক্লাসকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে বাংলাদেশে উনার একনায়কতন্ত্র কেও রুখতে পারবে না। কারন বাংলাদেশ ভারত দ্বারা সুরক্ষিত। আর ভারতের রুলিং ক্লাস কি চাইছে?  ভারতের রুলিং ক্লাসটাই বা কারা ? তারা আসলেই আদানি আম্বানিদের সরকারি প্রতিনিধি। ফলে মোদির বাংলাদেশ সফরে,  হাসিনা এনার্জি সেক্টর খুলে দিলেন আদানি আর আম্বানীদের জন্য। আদানি আম্বানিদের সুখে রাখতে পারলে হাসিনার ক্ষমতা হারাবার কোন ভয় নেই। কেও তাকে টাচ করতে পারবে না। লাখে লাখে বাংলাদেশী হিন্দুরা ভিটেমাটি ছাড়া হলেও মোদি হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখবেন। কদিন? যদ্দিন আদানি আম্বানীরা বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা বাড়া্তে পারবে হাসিনার সহায়তায়।  আর এদিকে কিছু মুর্খ বাঙালী হিন্দু বিজেপি বিজেপি করে চেঁচাবে । ভাববে মোদি তাদের বাঁচাবে।  তারা মূর্খ। খেলাটা ধরতে পারেন নি। হাসিনা বুদ্ধিমান। টিকে থাকার খেলাটা উনি বুঝছেন। ভারতের বিজনেস ক্লাসের কাছে বাংলাদেশ খুলে দিয়েছেন। আবার বাংলাদেশে মৌলবাদিদের ও তেল দিচ্ছেন। কে আটকায় তার আরো দশ বছর?

বাঙালী হিন্দু ফ্যামিলি থেকে আসার কারনে আমি এটা বুঝি-এদের বুদ্ধিসুদ্ধি খুব কম। এরা স্বার্থপর এবং ভীতুর ডিম। ভীতু লোকেরা কখনো বুদ্ধিমান হতে পারে না। নিজেরা মুসলমানদের তুলনায় একটু বেশী পড়াশোনা করেছে বলে, নিজেদের বুদ্ধিমান ভাবে। শামুকের মধ্যে ভয়ে ঢুকে থেকে বুদ্ধিমান হওয়া যায় না। মুসলমানরা বাংলাদেশে এদের ভিটে বাড়ি কেরে নিয়েছে। সেই প্রক্রিয়া পশ্চিম বঙ্গেও শুরু হয়েছে। এরা মুসলমানদের হাতে মার খাবে। আর গুজরাতি ব্যবসায়ীদের কথায় নাচবে।

                                                                        (৪)

তাহলে এই মৌলবাদের পেছেন ধর্মের ভূমিকা নেই? নিশ্চয় আছে। কিন্ত ধর্মটা হচ্ছে তেল। আগুন না। আগুনে তেল দিলে মৌলবাদের লেহিহান শিখাটা বাড়ে। অভিজিত রায় নিলাদ্রিরা সেই আগুন থামাতে গিয়ে, নিজেরাই জতুর্গৃহে জীবন্ত দগ্ধ হোন।

নিৎসে দেখিয়েছিলেন খ্রিষ্ঠানিটির সব থেকে আলোকিত দিকটাই , সব থেকে অন্ধকারপূর্ন। কেন?

কারা খৃষ্ঠান ছিল রোমে প্রথম শতকে? দরিদ্র-- হতদরিদ্র দাস আর ভুমিহীনরা। তাদের ওপর শোষন অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি আন্দোলন থেকেই জন্ম খ্রীষ্ঠ ধর্মের। নিৎসে দেখালেন আবার সেই কারনেই খ্রীষ্ঠান ধর্মে নেগেটীভিটি খুব বেশী। সব কিছুতেই সিন। চারিদিকে পাপ আর পাপ।  মানুষের আনন্দাত্মাকেই তারা চেপে দিল।

  ইসলাম কাদের হাতে শুরু? এরা ছিল দরিদ্র। আল ইসলামের প্রথম দিকের সৈনিকরা ছিল হত দরিদ্র। ধনী মক্কাবাসীর অত্যাচারে যখন দেখল কোন ভবিষ্যত নেই, এরা  মদিনাতে আল ইসলামের ক্যারাভান লুটপাট টিমে যোগ দিল। এই জন্য ইসলাম এবং খ্রীষ্টান ধর্ম-দুদিকেই ধনীদের এবং তার শোষনকে সর্বত ভাবে ঘৃণা করা হয়েছে। ঘৃণা করা হয়েছে ধনীদের জীবন যাত্রাকে।   ঠিক এই কারনেই ইসলাম সাংঘাতিক ভাবে ক্যাননিক্যাল-অর্থাৎ এর বেস হচ্ছে "এটা করবে" "এটা করবে না"- হালাল বনাম হারামের একগুচ্ছ বিধিনিশেধ। আরবদের সুশৃঙ্খলায়িতে করা ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্ত এটাই ইসলামের সব থেকে অন্ধকার দিক। হালাল বনাম হারামের ক্যানোনিক্যাল ফর্মের জন্যই বিশ্বাসী মুসলমানরা  নিৎসের ওই সার্টেনিটি টাইম জোনে বাস করে বা করতে চায়। তারা নিশ্চিত যে নারীর জন্য পর্দানসীন প্রথা ভাল।   একজন পুত্র সন্তানের প্রাপ্য কন্যাসন্তানের দ্বিগুন। সুদ হারাম।  পুরুষের চারটে বিবাহ বৈধ। তাদের মনে দ্বন্দ নেই। তারা জানে এগুলোই ঠিক। কারন তারা নিৎসে বর্ণিত ওই "সার্টেনিটির জগতের" বাসিন্দা।  যেখানে তারা ইসলামের বিধান যে ভাল, সেই ব্যপারে নিশ্চিত।  ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে "উইল টু পাওয়ার" বা নিজের চিন্তার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতায়নের, নিজের উত্তোরনে তারা বিশ্বাসী না।

 এই দুই ধর্মের আরো দুটো গুরুত্বপূর্ন দিক আছে-যার মাধ্যমে ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠ ধর্ম,  আপামর শোষিত নিপীড়িত জনগণকে নিজের কোলে টেনেছে।

প্রথমটা হচ্ছে- "আমরা ভিক্টিমাইজড। আমাদের ওপরে অত্যাচার অনাচার চলছে। তাই রুখে দাঁড়ানো আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য"

 দ্বিতীয়টা --" শাসক শ্রেনী অত্যাচারী এবং ধর্ম বিচ্যুত। তারা বিধর্মী দ্বারা পরিচালিত। তাই ধর্ম যুদ্ধ বা জিহাদে নামতে হবে "

 ইসলামের ইতিহাসে ধারাবাহিকতা বলে যদি কিছু থাকে, তার সবটাই এই দুটি শ্রেনীদ্বন্দ থেকে উদ্ভুত চক্রান্ত তত্ত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত।

এবার বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক। ওই ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলে অত লোক। ৬০% লোক দুবেলা পেট ভরে খেতেই পায় না। তারা ইসলামের ভিক্টিমাইজশন তত্ত্বে আকৃষ্ট হবে না? যেখানে তাদের শাসক শ্রেনী লুঠপাট চালাচ্ছে ?
তারা ত বিশ্বাস করে হিন্দুদের সাথে যোগসাজগে হাসিনা এমন একটা শাসক শ্রেনী তৈরী করেছেন, যারা তাদের ন্যায্য ইসলামিক জাস্টিস থেকে বঞ্চিত করেছে।  এরা ত মৌলবাদি হবেই। এবং হিন্দুদের জমি ব্যবসাও লুঠপাট করবে। নাস্তিকদের খুন করবে।  আর তাতে হাসিনা মদত ও দেবে । কারন তাতেই বেশী রাজনৈতিক ফায়দা।  বাংলাদেশে যারা অমুসলমান -- তাদের কাছে রাজনৈতিক চয়েসটা এখন ডাঙায় বাঘ, জলে কুমীর। বাংলাদেশের মডারেট মুসলমানরা এসব দেখেও চুপ করে আছেন। কিন্ত ঘুঁটে পোড়ে । গোবর হাঁসে। যেদিন আর একটাও অমুসলমান থাকবে না বাংলাদেশে , সেদিন চাপাতির প্রথম কোপ মডারেটদের ওপরেই আসবে।

                                                 (৫)
 তাহলে বাঙালী হিন্দু বা প্রগ্রেসিভ সেকশনের ভবিষ্যত কি? বাংলাদেশী হিন্দুদের মতন দেশত্যাগ ?

 এই মুহুর্তে সব থেকে ভাল হত যদি বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে শক্তিশালী ধর্ম বিরোধি প্রগ্রেসিভ কোয়ালিশন তৈরী করা সম্ভব হত। কিন্ত বামপন্থীদের জন্য সেটা সম্ভব না ।  বঙ্গে কোন বাম নেই। সব বামাতি। লেনিন যত বারই বলুন না কেন  মার্ক্সবাদ বস্তুবাদ-আর যেকোন বস্তুবাদি দর্শনের ন্যায়, একজন মার্কিস্টকে সর্বদা ধর্মের ভাববাদের বিরোধিতা করতে হবে-এই বাক্যে বিশ্বাস করে এমন একজন বাঙালী বামপন্থীর দেখা আজও পাই নাই। তারা ধর্মানুভূতিতে আঘাত করতে ভয় পান। পাছে একজন কমরেড হারান। কিন্ত ইতিহাস ত নির্দয় । তাই বাংলাদেশে আজ বামেরা হারাধনের একটি ছেলে। পশ্চিম বঙ্গে তারা ক্ষয়ীষ্ণু শক্তি।

  যেসব মার খাওয়া হিন্দুরা ভাবছে বিজেপি উদ্ধার করবে, তারা যে মহামূর্খ আগেই লিখেছি।  মোদির দরকার মমতাকে। কারন আটকে থাকা কর্পরেট বিল পাশ করাতে রাজ্যসভাতে তৃনমূলের সাহায্য দরকার। ফলে বিজেপির যেকজন নেতা সিরিয়াসলি তৃনমুলের বিরুদ্ধে গেছে, সবাইকে বসানো হচ্ছে। একমাত্র রাহুল সিনহার মতন অকর্মন্য  ধামাধরা নেতারাই রাজ্য বিজেপিতে পাত্তা পান। ফলে পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুত্ববাদি আন্দোলন ও মৃতপ্রায়। একমাত্র যদি মমতার মতন ক্যারিশমা নিয়ে কেও বঙ্গ হিন্দু পার্টি তৈরী করতে পারে। তবে তেমন কোন নেতা বাঙালী হিন্দুদের মধ্যে নেই।

   বাঙালী প্রগতিশীলদের কোন ভবিষ্যত আমি দেখছি না। যাদের চিন্তাধারার স্বচ্ছতা নেই-তাদের ভবিষ্যত না থাকাই নিয়তি।  পশ্চিম বঙ্গে দাঙ্গা এখন প্রায় প্রতি মাসেই হচ্ছে। আস্তে আস্তে প্রতি হপ্তায় হবে।এটা আটাকানোর একটা উপায় ছিল। চীনের মতন ধর্মাচারনের ওপর বিধি আরোপ করা। মাদ্রাসার বিলোপ। ধর্মীয় সংস্থাগুলির ওপর কড়া নজরদারি।  মন্দির মসজিদের ওপর কড়া নজরদারি যা চীন করে। কিন্ত গণতন্ত্রে এসব করবে কে?  তারাত জিততে পারবে না। বাঙালী হিন্দুরা তাও মেরে কেটে পার্টি তৈরী করে নিজেদের বাঁচাবার চেষ্টা করবে। কিন্ত প্রগতিশীলদের ভবিষ্যত দুই বাংলাতেই শুন্য। কারন বেসই নেই। তা সুপারস্টাকচার আসবে কোত্থেকে ?

আরো দাঙ্গা হবে। আরো লাশ পড়বে। এগুলো ঠেকানোর একটাই উপায় ছিল- বিজ্ঞান চেতনাকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ছড়ানো-ধর্মের ওপর কঠোর বাধা নিশেধ।  গণতান্ত্রিক দুর্বলতা সে পথ রুদ্ধ করেছে। ফলে দাঙ্গা আর লাশই এখন দুই বাংলার ভবিষ্যত। যদ্দিন বাঙালী ধর্মের বিরুদ্ধ শক্তির একটা ভোটিং ব্লক না তৈরী করতে পারবে, এই আসন্ন দাঙ্গা রোখার ক্ষমতা কারুর নেই।

মুক্তমনাতে যে আন্দোলন আমরা শুরু করেছিলাম-চিন্তা মুক্তির আন্দোলন-নিৎসের সার্টেনিটি থেকে আনসার্টেনিটির দিকে যাত্রা-যাতে প্রচলিত ধ্যান ধারনাকে নস্যাত করতে পারি- আর সেই মুক্তির স্বাদ থেকে উইল টু পাওয়ার- নিজেদের স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটিয়ে নিজেরা সমৃদ্ধ হতে পারি-সেই যাত্রাই মানুষের ভবিষ্যত যাত্রা। হাজার মুক্তমনা শহীদ হওয়ার পরেও --কালের যাত্রার ধ্বনি সবার আগে আমাদের কানেই ধরা দেবে।

হ্যা, এতে অনেক সহযোদ্ধা শহীদ হল । কেও একবার না। বারবার। নিলাদ্রির বোন, মাসী এবং কাকিমা দেখলাম দাবী করেছে তার স্ত্রী আশারানীই নাকি চক্রান্তের মূলে! আশারানীর অপরাধ, সে মুসলিম !! হ্যা, ঠিকই ধরেছেন। মুক্তমনারা দুবার মরে । একবার ইসলামিক জঙ্গীদের হাতে । আরেকবার নিজের পরিবারের হাতে। কিন্ত তাও আমরা মুক্তমনা হতে চাই । কারন উইল টু পাওয়ার। নিজেকে সমস্ত প্রচলি্ত কুসংস্কার, চিন্তাধারা, বদ্ধ বিশ্বাস  থেকে মুক্ত করার যে স্বাধীন স্বাদ আমরা পেয়েছি-শত মৃত্যুর পরে, সেই স্বাধীন স্বত্তাই কাম্য। পরাধীন আত্মার জন্ম মৃত্যুর চক্রে সমাজ নামক জেলখানার কয়েদি হয়ে বেঁচে থেকেই বা কি লাভ ?










 






Friday, August 7, 2015

নিলয়কে আমরা বাঁচাতে পারলাম না

নিলয়কেও ওরা মেরে দিল । অভিজিত, ওয়াশিকর, অনন্তর পরে নিলয় চ্যাটার্জি।

 অনন্ত বিজয়ের হত্যার সময়ে ওর মোবাইল ফোন নিয়ে নেয় আততায়ীরা। সেখানে ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে সমস্ত ছদ্মনামী ব্লগারদের আইডেন্টি বেড়িয়ে আসে। নিলয় ছিল অনন্তর ঘনিষ্ট বন্ধুলিস্টে। ও এবং আরো দুজন এটা জানতে পেরে কিছুদিনের জন্য গ্রামে পালিয়েছিল। কারন ওদের অনুসরন করা শুরু হয়। সেই নিয়ে ফেসবুকে স্টাটাস ও দেয় নিলয়।

 বাংলাদেশে ব্লগারদের বাঁচানোর জন্য কিছু বিদেশী সংস্থা এগিয়ে আসে। অনেকেই বেঁচে গেছে। নিলয়ের  নাম ও ওই লিস্টে ছিল। অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। ও কেন যেতে পারল না , সেটা আমার কাছে পরিস্কার না। আমার সাথে ওর যোগাযোগ ছিল। গ্রামে যখন আত্মগোপন করেছিল মাঝে মাঝে মেসেজ পাঠাতো।

 নিলয়ের সাথে অনেক বার অনেক প্রবন্ধ নিয়ে ফেসবুকে চ্যাট হয়েছে। কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পরে হয়ত ওর মনে হয়েছিল সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। তাই ফিরে গিয়েছিল নিজের আস্তানায়।

না-কিছুই ঠিক হয় নি।

 যারা এটা বাংলাদেশের ঘটনা বলে দিবানিদ্রা দেবেন-শুধু ফেসবুকে একটু রাগ দেখাবেন-সেই সব বুদ্ধিজীবিদের বলি-আপনি কোলকাতায় থাকুন বা নিউ উইয়ার্কেই থাকুন-আপনিও আজ নিরাপদ নন। আজ ঢাকাতে হচ্ছে, কাল কোলকাতায় ব্লগার হত্যা শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইন্টালিজেন্স অনুযায়ী আনসারুল বাংলার সেফ হাউস হচ্ছে পশ্চিম বঙ্গ। বাংলাদেশের থেকে পশ্চিম বঙ্গে এই সব জঙ্গীদের প্যাট্রনের সংখ্যা আরো বেশী।

মুসলিম ফ্যামিলিগুলিতে ছেলে মেয়ে মানুষ করার ব্যপারে গন্ডোগল আছে। জোর করে তাদের ধর্মপ্রান কমিউনিটিপ্রান বানানো হয়। এমন প্রোডাক্টের জঙ্গি হতে কদিন সময় লাগবে?

এই মুহুর্তে ধর্মগ্রন্থ, ধর্মকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।  মূল সমস্যা রাজনীতির। রাষ্ট্রর সদিচ্ছা নেই ধর্মকে কোনঠাসা করার। কারন নিধার্মিকদের কোন ভোটিং ব্লক নেই। এ এক কঠিন যুদ্ধ। কিছু মধ্যযুগের ভাইরাসে আক্রান্ত উন্মাদ চাপাতি হাতে নৃত্ত্য করে যাবে , আর গণতন্ত্র ভোটের লোভে তাদের পায়ে শুয়ে যাবে।  সুস্থ প্রগতিশীল মতাদর্শের লোকেরা ইসলামের বিরুদ্ধে এক হতে পারল কই? সবাই ত যেযার মতন ইন্টেলেকচুয়াল ভার্চুয়াল মাস্টারবেশনে ব্যস্ত। আগাছা পরিস্কার না করলে যে বাড়ি টেকে না-এই সহজ সত্য সবাই ভুলে গেছে। ধর্ম হচ্ছে আগাছা। ইসলাম হচ্ছে আগাছার মধ্যে বিচুটি পাতা। এদের ইগনোর করতেই পারেন। কিন্ত আগাছা না কাটলে একদিন আসবে নিলয়ের মতন আপনাকেও বাড়িতে এসে ওরা খুন করে দিয়ে যাবে।