Friday, January 30, 2015

গান্ধীর শিক্ষা

গান্ধী আপনার পছন্দ হৌক বা না হৌক, রাজনীতির উপলদ্ধির জগতে তিনিই সুপ্রীম।

 আপনি গান্ধীর অনেক কথার সাথে একমত হতে নাই পারেন। কিন্ত রাজনীতির ক্ষেত্রে তার মহৌষধি " Be the change you are seeking for "- অস্বীকার করার উপায় নেই ।  উনি বলেছেন, নিজের জীবন হচ্ছে অন্যকে সেখানোর একমাত্র পথ।

এবার গান্ধীর ফ্রেমে বাম, হিন্দুত্ববাদি বা কংগ্রেসের লোকগুলোকে ধরুন। জল দুধ আলাদা হয়ে যাবে।

 ফেসবুকে বামেদের দিকে তাকান। ফেবুকার বামেরা আমেরিকাকে গালি দিচ্ছে। আবার আমেরিকান বহুজাতিকের ডলার চাটছে!  পাশাপাশি এটাও মনে রাখুন, স্টালিন মস্কোর আরামের মেটিওরোলজি ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে বাকুতে তৈল খনি শ্রমিকের কাজ নিয়েছিলেন, শ্রমিকদের সাথে একাত্ম হওয়ার জন্য। শ্রদ্ধেয় কমরেড অজয় মুখার্জি ইংরেজিতে এম এ ছিলেন। নিজের কোয়ালিফিকেশন অনুয়ায়ী তার গেজেটেড অফিসার হিসাবে কাজ করার কথা। কিন্ত চিরকাল উচ্চমাধ্যমিক পাশ করনিক হিসাবে কাজ করেছেন যেহেতু উনি সরকারি কর্মচারীদের নেতা ছিলেন। উনাদের আদর্শের বিপরীতে হলেও, এই ধরনের লোকেদের শ্রদ্ধা করতে অসুবিধা নেই । কিন্ত আমেরিকার ডলার খেয়ে, আমেরিকা বিরোধি বিপ্লবীদের জাস্ট খোরাক ছারা কিই বা ভাবতে পারি ?

ফেবুকার হিন্দুত্ববাদিদের ধরুন। এদের রাজনৈতিক আদর্শ কি? প্রাচীন ভারত। এরা একটা মিথিক্যাল ভারতবর্ষের কথা বলে যেখানে হিন্দু আদর্শ পূর্নতা পেয়েছে বর্ণাশ্রমে ( বর্নভেদ না )। অর্থাৎ সেই সমাজ যেখানে বাল্যে ব্রহ্মচর্য্য, যৌবনে গার্হস্থ্য, পৌঢ়ত্বে বানপ্রস্থের কথা বলা হয়। তা কজন বিজেপি নেতা বাণপ্রস্থে গেলেন ? আদবানীকে ত ঘার ধাক্কা দিয়েও বাণপ্রস্থে পাঠাতে পারলো না মোদিজি! সন্ন্যাস ত অনেক দূরের কথা। তাছাড়া ভারতীয় দর্শনের মূলভাব এবং ভিত্তি "ত্যাগ"। দশলাখ টাকার স্যুট চাপিয়ে মোদিজি কি ভারতীয়ত্বের পরিচয় দিচ্ছেন?  উনি নিজেই ভারতীয় হতে পারলেন না, ভারতীয় দর্শন নিজের জীবনে ধারন করতে পারলেন না -আর অন্যদের হিন্দু, ভারতীয় হতে বলছেন !! আগে উনি একজন আদর্শ হিন্দু হয়ে দেখান তবে ত বুঝবো যে উনার হিন্দুত্বে দম আছে।  মহাভারতে বিদুর যুধিষ্ঠিরকে রাজ্যাভিশেকের সময় বলেছিলেন, ধনের অসাম্য হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিরতার মূলকারন। রাজাকে দেখতে হবে যাতে ধনী এবং গরীবদের অসাম্য না বাড়ে-তার জন্য প্রয়োজনে ধনীদের ওপরে কর বসিয়ে গরীবদের জন্য জনকল্যানের আয়োজন করা (যাকে আমরা স্যোশালিস্ট সিস্টেম বলি ) । মোদির দল ভারতীয় দর্শনের যে রাজনৈতিক আদর্শ-যার উৎকৃষ্ট উদাহরন মহাভারত-তাতে বিশ্বাস করে না ।

কংগ্রেসের কথা ছেড়ে দিলাম। এরা নিজেদের গান্ধীর উত্তরাসূরী ভাবে। কারন রাহুল গান্ধী একজন গান্ধী। সত্যি?  গান্ধী অপকর্মের জন্য নিজের ছেলেকে তাজ্যপূত্র করেছিলেন। আর এই গান্ধীবাবা তারা চোর ভগ্নীপতি রবার্ট ভদ্রাকে পার্টি থেকে পর্যন্ত তাড়াতে পারেন নি-বরং যে আই এ এস অফিসার খেমকা তার চুরি ধরেছিল-তাকে হেনস্থা করা হয়েছে। তাহলে কেন লোকে রাহুলবাবাকে গান্ধীর উত্তরাসূরী হিসাবে গ্রহন করবে? সেই ক্রিডেনশিয়াল কোথায়?

আর দিদির কথা ছেড়েই দিলাম। উনি ক্ষমতায় এসেছিলেন সিপিএমের অগণতান্ত্রিক স্বৈরচারী পার্টি শাসনের বিরুদ্ধে মূর্ত প্রতিবাদ হিসাবে। এখন উনিই সব থেকে বড় সিপিএম। কোথায় চেঞ্জ? বরং ক্ষমতা তাকে আরো উগ্র সিপিএম বানিয়েছে!

 আর বাকী ফেবুকার বিপ্লবী বৃন্ধ। এরা মমতা মোদি বুদ্ধ সবাইকে ফ্যাসিস্ট বলে গালাগাল দেবে। এদের কোন গ্রুপের এডমিন করে দিন। সামান্য ক্ষমতার স্বাদ পেতেই এই সব ইঁদুরের দল বিড়ালের মতন আচরন করে। আবার এরাই ফ্যাসিজমের ধুয়ো তোলে।

 গান্ধী মাইক্রোস্কোপে রাজনীতিকে দেখলে-দুধ আর জল-আলাদা করা সহজ!

Wednesday, January 28, 2015

আমার ধর্ম বিশ্বাস

অনেকের ধারনা ধর্ম বাজে। কারন তা মানুষে মানুষে বিভেদ বাধায়। দাঙ্গা লাগায়।

  সেটা যেমন ঠিক-তেমনই এটাও মনে রাখতে হবে-বাজে দিকটার কারন ধর্মকে যখন ব্যক্তিগত উপলদ্ধি বা আধ্যাত্মিক উন্নতির যায়গায়, একটা ক্লাব বা অর্গানাইজড পার্টিতে পরিণত করা হয় তখন রাজনীতির কারনে এই সমস্যাগুলি আসে ।

 নাস্তিক, আস্তিক, ভাল , বদমাইশ, গুন্ডা, বুদ্ধিমান-সবার ধর্ম আছে। বাঁচতে গেলে প্রত্যেককেই কিছু কিছু বিশ্বাস সম্বল করে বাঁচতে হয়। এর মধ্যে সব থেকে সহজ পথ হচ্ছে তার আশেপাশের সমাজ, পরিবার যে বিশ্বাসে বাঁচছে, লোকে সেই ভাবে বাঁচে। কারন সেই ভাবে বাঁচলে, সমাজবদ্ধ থাকতে তার সুবিধা হয়। যেমন আমাদের সমাজে লোকেদের বিশ্বাস -বিয়ে করে একসাথে থাকতে হবে-লিভ  টুগেদার বাজে। এখন যদি কেও পশ্চিম বঙ্গের গ্রামে লিভ টুগেদার করতে যায়-তাকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেবে। ফলে যেপথে চাপ কম-লোকে সেই পথ-মানে বাপের, সমাজের ধর্মটাকেই নিজের ধর্ম বলে মেনে নেয়। এই ভাবে লোকে হিন্দু মুসলমান হয়।

আমার দশ বছরের ছেলে কালকে আমাকে জিজ্ঞেস করলো-আমাদের ধর্ম কি? বোধ হয় স্কুলে কেও জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বল্লাম কেন? ও বললো আমিত ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা। ওটা মেক বিলিফ রূপকথা। তাহলে কি আমার ধর্ম নেই ?

আমি বল্লাম তা ঠিক না । ঈশ্বরে বিশ্বাস না করলেও কিছু কিছু জিনিসে বিশ্বাস করতে হয় বাঁচার জন্য। আমি ইশ্বরে বিশ্বাসী না -কিন্ত আমার নিজস্ব কিছু বিশ্বাস আছে।  শ্রেফ বাঁচার জন্য। ও জিজ্ঞেস করলো আমি কিসে কিসে বিশ্বাস করি। আমি বল্লাম, আমার তিনটে জিনিসে গভীর বিশ্বাস।

 প্রথমটা হচ্ছে সৎ পথে থাকা-কথায় এবং কাজে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ন নিজের কাছে সৎ থাকা। অন্যের কাছে যাও বা অসৎ হওয়া যায়, নিজের কাছে সৎ না থাকলে নিজের ভুল গুলো ধরতে পারবে না । তাই উন্নতিও করতে পারবে না । সৎ থাকাটা ধর্মীয় গুন না -শ্রেফ বেঁচে থাকতে গেলে, শিখতে গেলে, উন্নতি করতে হলে, সততা ছাড়া উপায় নেই । আমি এটাকে সারভাইভাল স্কিল হিসাবে দেখি। নৈতিকতা বা ধর্মীয় উপদেশ হিসাবে না ।

 আমার দ্বিতীয় বিশ্বাস-সর্বত্র বুদ্ধির ওপর ভরসা করা-আবেগকে প্রশয় না দিয়ে। ব্রেইন ওভার হার্ট। আমাদের বেশীর ভাগ ভুল হয় আবেগকে প্রশয় দিয়ে। কিন্ত যদি যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে আমরা সেটা দেখতাম, জীবনে ভুল অনেক কম হত। তাছাড়া পৃথিবী বদলাচ্ছে খুব দ্রুত। এখানে অভিযোজন দরকার টিকে থাকতে গেলে। সব সময় নতুন জিনিস শিখতে হবে। সুতরাং সর্বত্র মাথা খাটাতে হবে। এটাও আমার কাছে সারভাইভাল স্কিল!

 তৃতীয়টা  কঠিন পরিশ্রম করার ক্ষমতা । সময় না দিলে, কোথাও সস্তায় বাজিমাত হয় না । ট্যালেন্ট, বুদ্ধি-আমাকে সঠিক রাস্তা দেখাবে। কিন্ত রাস্তাটা হেঁটেই পার হতে হয়। বুদ্ধি খাটিয়ে তুমি তোমার সঠিক জীবন  সঙ্গীকে নির্বাচন করতে পার-কিন্ত তাকে জিততে পরিশ্রম করতেই হবে। আবার জীবিকার জন্যও এটা সত্য। সঠিক জীবিকা নির্বাচন করলেই হবে না -সেখানে সফল হতে গেলে পরিশ্রম করতেই হবে।

 এগুলো আমার বিশ্বাস। তাই এগুলোই আমার ধর্ম। এগুলো ঠিক হতে হবে মানে নেই । কিন্ত এগুলো মেনে জীবনে ভালোই আছি। 

Monday, January 26, 2015

বাঙালীর কোন রাজনৈতিক দর্শন নেই

মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাসে একটাই ধ্রুব সত্য। সেটা হচ্ছে যেসব জাতি প্রযুক্তি এবং জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি করতে পেরেছে, তারাই এগিয়েছে। তারা মাস্টার রেস হিসাবে প্রযুক্তিতে অনুন্নত জাতিগুলিকে ধ্বংস করে, তাদের সংস্কার, তাদের সভ্যতাকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। সভ্যতার আদিতে মাস্টার রেস হিসাবে যারা পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে-পারস্য, গ্রীস, রোমান, আরব, মঙ্গোলিয়ান, অটোমান, বৃটিশ-বর্তমানে আমেরিকা। আমরা যদি আমাদের দৈনন্দিন জীবন, আইন, রাষ্ট্র নগর সভ্যতার দিকে তাকাই তাহলে দেখবো, এই সব মাস্টার রেসের থেকে উদ্ভুত জ্ঞান, বিজ্ঞান আইনেই চলে আমাদের জীবন।

  একবিংশ শতাব্দিতে জাতি হিসাবে বাঙালীর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ার পেছনে সব থেকে বড় কারন, বাঙালী যুদ্ধ করতে জানে না। জলবায়ুর কারনে বাঙালী অলস এবং ভীতু।  অথচ একবিংশ শতাব্দি জ্ঞান বিজ্ঞানের শতাব্দি হওয়াতে এখানে বুদ্ধিমত্তা খাটিয়ে বাঙালীর এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল।

  আমরা দুএক পিস রবীন্দ্রনাথ, অমর্ত্য সেন নামিয়ে, দুপাতা লেনিন পড়ে নিজেদের বুদ্ধিমান জাতি ভাবি ( যেটাও যদি ঠিক ভাবে পারত! কারন লেনিন যে ইন্টেলেকচুয়াল ফ্রড সেটাও বোঝার ক্ষমতা বাঙালী বুদ্ধিমত্তায় নেই ) । অথচ বাঙালী যাদের বুদ্ধিজীবি ভাবে-তাদের জ্ঞান এবং বুদ্ধির দৌড় পাতে দেওয়ার যোগ্য বলে আমি মনে করি না। রবীন্দ্রনাথ লেখক হিসাবে সেরা হতে পারেন, বিবেকানন্দ ধর্মগুরু হিসাবে কালজয়ী হতে পারেন, নেতাজির দেশপ্রেম অতুলনীয় হতে পারে, কিন্ত এদের কেও বাঙালীকে কোন রাজনৈতিক দিশা দেখাতে পারেন নি। এদের কেওই সেই ভাবে রাজনৈতিক দর্শনের গভীরে যান নি।  সেই ভাবে বাঙালীর রাজনৈতিক দর্শন তৈরী হয় নি। ফলে দেশভাগের দুঃখ যন্ত্রনাকে সম্বল করে যখন কমিউনিস্টরা উঠেছে-বাংলায় হাঁসজারু বামপন্থী তৈরী হয়েছে। যারা পকেটে, প্রেমে, মাকালী, মহম্মদ, মার্ক্সে-সবর্ত্র আছেন। গভীরতাহীন, ককটেল বাঙালী তৈরী হয়েছে। যার ফল আজকে বাঙালীর জীবনে রাজনৈতিক শুন্যতা। না আছে নেতা, না আছে রাজনীতি, না শিল্প-আছে শুধু সারদা!

অথচ একবিংশ শতাব্দি বাঙালীর হতে পারত। কারন এই শতাব্দিতে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে, জাতি এবং ব্যক্তির জীবনে উন্নতি সম্ভব। সেটা নাকরে বাঙালীর বুদ্ধি খাটে চিট ফান্ডে, পরনিন্দায়, গুজবে, মৌলবাদ প্রশয় দিয়ে ভোট টানা, লোক ঠকানোর ব্যবসায়। আমি বাংলায় কোন রাজনৈতিক নেতা দেখতে পাচ্ছি না যারা রাজ্যটাকে ভবিষ্যতের পথ দেখাবে। জাতিটাকে এই অন্ধকার থেকে তুলে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। কোন রোডম্যাপ নেই ।

কিন্ত এই শুন্যতার একটা বড় কারন বাঙালীর কোন রাজনৈতিক দর্শন নেই অথচ এরাই রাজনীতি নিয়ে সময় নষ্ট করে বেশী।

Sunday, January 25, 2015

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!!!

যারা ইউরোপ ইউরোপ করেন আর আমেরিকাকে গালি দেন, তারা এই ডেটা দেখতে পারেন। ইউরোপের বস জার্মানি এবং বৃটেনের লোকেদের অর্থনৈতিক অবস্থা আমেরিকার দরিদ্রতম রাজ্যগুলির সমান। বৃটেনের স্থান, আমেরিকার দরিদ্রতম রাজ্যগুলির সাথে। আর ইউরোপের সব থেকে ধনীদেশ নরোওয়ে বা সুইজারল্যান্ডের অবস্থান, আমেরিকার মাঝারি মানের রাজ্যগুলির সাথে। ইটালী, ফ্রান্স, স্পেইন-এরাত আমেরিকার দরিদ্রতম রাজ্যের থেকেও খারাপ আছে। 

 আমেরিকার প্রতিদ্বন্দি শুধু আমেরিকাই। কারন এই দেশ জানে, কি করে উদ্ভাবন করতে হয়, কি করে মার্কেটং করতে হয়, কি করে ব্যবসা করতে হয়।  তাই যারা আমেরিকাকে গালাগাল দেয়, তারা আমেরিকান বা বহুজাতিক কোম্পানীতেই চাকরি নেয়। যে থালায় খায় সেই থালায় হাগে।

 আমেরিকার সমালোচনা, আমেরিকাতেই সব থেকে বেশী হয়। শুধু আদর্শবাদের পথে এখানে সমালোচনা হয় না -সমালোচনা হয় বস্তুনিষ্ঠ পথে। আইডিওলজি না মানুষের সুঃখ দুঃখই যেখানে  চরম লক্ষ্য।

আপনারা আমেরিকার সমালোচনা করুন। আমরা সেই সমালোচনা থেকেই সমৃদ্ধি আনবো। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি!!!

Friday, January 23, 2015

সৌদিরাজ আবদুল্লা

সৌদিরাজ আবদুল্লার মৃত্যুতে দিল্লী এবং ওয়াশিংটনের আদিখ্যেতা দেখে আমিও আহ্লাদিত। আমোদিত। এই সেই রাজা যিনি তার চার মেয়েকে গৃহবন্দী করে রেখেছেন, তারা সৌদি আরবে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল বলে।  এই সেই রাজা, যার রাজত্বে নাস্তিক এবং ইসলামিস্ট-সবাই সন্ত্রাসবাদি- রাজতন্ত্রের সমালোচনা করলেই গারদে! সাথে ৮০ বেতের ঘা। অথবা রাজপথে সবার সামনে শিরোচ্ছেদ। এই সেই রাজত্ব, যেখানে আই সিসের সন্ত্রাসবাদী ইসলামিক রাজ্যের সব আইন বহুদিন থেকেই বলবৎ তবুও তিনি আমেরিকা এবং ভারতের বন্ধু-কিন্ত আই সি সিসের মোল্লারা সন্ত্রাসবাদি!! তিনি আমেরিকার পরম বন্ধু। রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ডলারকে টেকাতে তিনিই পরম ত্রাতা! সুতরাং গণতন্ত্রের হত্তাকত্তা এবং রপ্তানীবিধাতা আমেরিকার ভরসাস্থল কিং আবদুল্লার মধ্যযুগী রাজতন্ত্র। গণতন্ত্রকামী সৌদি আরব নেমকহারাম । যতবার ওপেকে ডলারের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে, রাজা আমেরিকার প্রতি তার আনুগত্য দেখাতে ভেটো দিয়েছেন। প্রতিটি আমেরিকানের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত কিং আবদুল্লার প্রতি। ডলার রিজার্ভ কারেন্সি না হলে আমাদের এই সুপার ডুপার লাইফস্টাইলের কি হত কে জানে! আর আমেরিকা না থাকলে পরের দিন ব্যাঙ্গালোরটাও নিশ্চিন্দিপুর হয়ে যেত!!

  সো লং লিভ কিং আবদুল্লা!!

 রিয়াধে আরবদের সাথে ব্যবসা সূত্রে অনেক কথায় হয়। লোকগুলো ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। পুলিশ স্টেট।  সব ব্যবসা রাজপরিবাদের তিন হাজার সদস্যের হাতে । তাদের ভাগ না দিয়ে কোন বড় ব্যবসা চলে না সৌদিতে। তবে রাষ্ট্র থেকে অনেক সুবিধা তারা পায় । একই সাথে রাজতন্ত্র এবং তেলেরা টাকায় ওয়েলফেয়ার স্টেট।  তেলের দাম যেদিন থাকবে না -তাদের ঘরের মতন ভাংবে সৌদি আরব। আরব বসন্তের গণতন্ত্রের ফুল সেদিন ফুটবে। 

Saturday, January 17, 2015

কমিউনিটি স্কুল

প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে কিছু পড়াশোনা হচ্ছে আজকাল ? যে প্রোডাক্টগুলো বেড়োয় তাতে মনে হয় না কিছু হয় বলে। নেহাত ভারতের আই টি সেক্টরে ডুকতে, পড়াশোনা লাগে না, ইংরেজি জানলেই চলে। যদি এটা হয়, ভারতে আই টি কর্মীর চাহিদা আছে, তাহলে পশ্চিম বঙ্গের  সরকারি কলেজ গুলোতেই  আই টিতে বি টেক ডিগ্রি চালু করা হচ্ছে না কেন?  কেন সেখানে ইতিহাস দর্শন পড়ানো  হচ্ছে? বেসিক্যালি আই টিতে ঢুকতে তিনটে জিনিস শেখালেই হয়-একটু ভাল জাভা প্রোগ্রামিং, ওপারেটিং সিস্টেম,  ইংরেজি কম্যুনিকেশন আর কি করে গুগল করে ফোরাম থেকে কোড টুকে ঝাড়তে হয়।  এই টুকু ঠিকঠাক করে সরকারি কলেজে পড়ানো যেতেই পারে। টিচারে ত এখন ঘাটতি নেই । বাজেটে ঘাটতি থাকলে ইতিহাস বাংলার শিক্ষক কমিয়ে সেখানে আই টির শিক্ষক আনুক সরকার। আমেরিকাতে আমি এক কেস দেখেছি। বুশের আমলে কমিউনিটি কলেজ গুলোতে অনুদান কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল-এতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো রমরমা করে  আই টি শিক্ষা, নার্সিং এর ব্যবসা করছিল। সেখান থেকে পাশ করে কেও চাকরি পাচ্ছিল না । ওবামা এসেই সরকারি কলেজ গুলোতেই আই টি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেন। বেসরকারি কলেজের ১০% টাকায় এখন সরকারি কলেজে আই টির ডিগ্রি দিচ্ছে কমিউনিটি কলেজ গুলোতে। ফলে আমেরিকাতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলি যারা এই আইটির ডিগ্রির ব্যবসা করত তাদের ব্যবসা কমেছে ৮০%। ভারতে হচ্ছে ঠিক উলটো।

শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যে বেসরকারিকরন চলে না । আবার ফুল সরকারি মডেল ও ঠিক না । আমেরিকাতে আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সরকার বা প্রাইভেট কারুর হাতেই থাকা উচিত না । থাকা উচিত কমিউনিটির হাতে। কারন, তারাই এর ক্রেতা।  যেমন আমাদের এখানে স্কুল, কলেজ বা হাসপাতাল কাউন্টি বা জেলার হাতে।  এতে এই সব সংস্থায় আমরা যারা এর ক্রেতা-মানে ধরুন আমার ছেলে এই স্কুলে পড়ছে, তাদের সরাসরি অংশগ্রহনের স্কোপ থাকে।

 ভারতে সরকারি না চললে বেসরকারি শিক্ষা-এই ভুল ধারনার বৃত্ত থেকে বেড়োতে হবে। বেসরকারিকরন সব সমস্যার সমাধান না -শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ত নয় ই । আমার আমেরিকান বা ভারতীয় অভিজ্ঞতা দুটোই দেখাচ্ছে শিক্ষার বেসরকারিকরন না -কমিউনিটিকরন হৌক।

Monday, January 12, 2015

গান্ধী জিতলেন

আলটিমেটলি নীট ফল ? গান্ধী জিতলেন। জয় হল নাগরিক আন্দোলনের ও।  ক্ষতি সিপিএমের। সিপিএম নাগরিক আন্দোলনকে মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে গঠিত সব আন্দোলনকেই প্রতিক্রিয়াশীল, আমেরিকার দালাল ইত্যাদি আখ্যায়িত করে আজ তারা রাজনৈতিক ভাবে দেওলিয়া। কারন সিপিএমে এত গণ সংগঠন, কোন দলদাসকে মুখমন্ত্রী তাড়াতে গেলে, আগে দলদাসদের সংগঠনের অনুমতি নিতে হত।

  জয় হল আন্দোলনের মাধ্যম হিসাবে বামপন্থী জঙ্গীপনার বিরুদ্ধে গান্ধীর। গান্ধীই দেখিয়েছিলেন - আন্দোলনের উদ্দেশ্য শত্রু বা বিরোধি পক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণা না । আধ্যাত্মিক, নৈতিক উন্নত অবস্থানে, বিরোধি পক্ষের হৃদয় জয় করা। অনশনের মাধ্যমে গান্ধীর পথে হেঁটে ছাত্রছাত্রীরা মমতা, অভিষেক ব্যানার্জি, সংবাদ প্রতিদিন সবার শ্রদ্ধা আদায় করে নিলেন। ঠিক যেমন গান্ধী পেরেছিলেন বৃটিশ আমজনতার হৃদয় জয় করতে।  বামপন্থীদের জঙ্গী আন্দোলনের বিপরীতে যদি গান্ধীবাদি অনশন আন্দোলন রাজ্যের নিয়তি এবং ভবিষ্যত হয়, বাংলার গণতন্ত্রের জন্য তা শুভ সংবাদ।  আমি চাই লক আউটে চাকরী হারানো শ্রমিকরা কারখানা ভাংচুর না করে অনশনের মাধ্যমে বাংলার বিবেককে জাগ্রত করুক।

 আজ বহুদিন বাদে পশ্চিম বঙ্গের দখিন দুয়ার খোলা। গ্রীষ্ণের অসহ্য দাবাদহে হৃদয় এবং মন যখন তিক্ততার শেষ সীমায়,  কালবৈশাখীর এক ঝোড়ো দামাল ঝটকায় এল হিমেল পরশ ।

 অভিনন্দন যাদবপুরের ছাত্র সমাজকে। গান্ধীর আদর্শে,  পশ্চিম বঙ্গকে তারাই গণতন্ত্রের পথ দেখাল। 

Sunday, January 11, 2015

বিবেকানন্দের জন্মদিন

আজ বিবেকানন্দের জন্মদিন। বিবেকানন্দ রচনাসমগ্র যখন আমার হাতে আসে, তখন চোদ্দ বছর বয়স। ক্লাস এইটে পড়ি। জন্মদিনে কোন বন্ধু উপহার দিয়েছিল।

বিবেকানন্দের রচনাসমগ্র আমার জীবনের একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট।  যদিও পরবর্তীকালে বিবেকানন্দের  স্ববিরোধিতার, রাজনৈতিক চিন্তার সমালোচনা করে অনেক লেখা লিখেছি -বিবেকানন্দই আমার জীবনে প্রথম শিক্ষক যার লেখা থেকে শিখি জীবনে প্রকৃত আনন্দের উৎস অন্যর জন্য স্বার্থশুন্য কাজ করা। অথবা পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে চেয়ে দেখলে দেখা যাবে অনেক ক্ষমতাশীল রাজা মহারাজা এসেছেন, এসেছেন ধনীব্যবসায়ীর দল-কিন্ত হাজার হাজার বছর বাদে পৃথিবী নিয়েছে তাদের যারা চিন্তার দুনিয়াতে পৃথিবীকে কিছু দিয়ে গেছেন। অথবা শিক্ষার মূল হচ্ছে এসিমিলেশনে-শেখা তখনই হয় যখন শিক্ষার নির্যাস রক্তের সাথে মেশে।  বা কেও কাউকে শেখাতে পারে না -নিজের উপলদ্ধি বা রিয়ালাইজেশনের মাধ্যমেই আমরা শিখি।

 প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে অনন্ত সম্ভাবনা আছে তার বিকাশ সাধনার রহস্যসূত্র তার রচনায়।

  ক্লাস ইলেভেনে যখন নরেন্দ্রপুরে ভর্তি হই, মহারাজসঙ্গে তার রচনাবলী এবং দর্শন জানার সুযোগ হয়েছিল। রাত দশটার পরে, আমাদের প্রিন্সিপাল মহারাজ স্বামী সূপর্নানন্দ ( যিনি এখন গোলপার্কে ইন্সটিউট অব কালচারের অধিকর্তা) নিজের ঘরে উৎসাহী ছাত্রদের নিয়ে বিবেকানন্দ দর্শন বোঝাতেন।  ভারতীয় দর্শনে তখন গভীর আগ্রহ জন্মায়।  ওই দুই বছর ভারতীয় দর্শনে একটা গদ গদ ভক্তিভাবে ছিলাম আচ্ছন্ন। বেশ কিছু শিখি, যা আজও সংসার এবং পেশাদার জীবনে কাজে আসে।

 আই আই টিতে ঢোকার পরে, বিবেকানন্দের স্ববিরোধিতা এবং ভারতীয় দর্শনের দুর্বলদিক গুলি আস্তে আস্তে মাথায় ঢোকে। দর্শন শাস্ত্রে অতি উৎসাহী আমাদের একটা গ্রুপ ছিল-ভেজিস বলে একটা রেস্টুরেন্টে, স্টেডিযামের ধারে খোলা আকাশের নিচে তর্ক বিতর্ক চলত। আমার বন্ধুরা ছিল ন্যাচারালিস্ট- অর্থাৎ বিজ্ঞানের বাইরে দর্শনের প্রয়োজন নেই - বিজ্ঞান দিয়ে সব ব্যখ্যা সম্ভব এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বাসী। পরবর্তীকালে ভারতীয় দর্শনের মোহ কাটিয়ে আমি নিজেও ন্যাচারালিস্ট হয়ে উঠি।

শুধু তাই না -পরিনত বয়সে বিবেকানন্দ পড়ে অনেক স্ববিরোধিতা চোখে পড়েছে। উনার রাজনৈতিক মতাদর্শও ছিল অপরিণত। ব্যক্তি জীবনে বিবেকানন্দের শিক্ষা উপকারী হলেও সমাজ বা রাষ্ট্রজীবন নিয়ে উনার চিন্তা দক্ষিনপন্থী, ফ্যাসিস্ট এবং অপরিনত। এছারা তিনি যেভাবে ধর্মীয় পরিচিতিতে গর্বিত হতে বলেছেন সেটা সভ্যতার অগ্রগতির জন্য ক্ষতিকর ।

তবে উনার কাছে আমার ব্যক্তিগত ঋণ শেষ হবার না । আমাদের এডুকেশন সিস্টেমে হায়ার সেকেন্ডারি সব থেকে গুরুত্বপূর্ন।  গ্রাম থেকে উঠে এসে উচ্চমাধ্যমিকে নরেন্দ্রপুরে ওই ঠাঁইটুকু না হলে, আজ কোথায় থাকতাম জানি না । তাই রামকৃষ্ণ মিশনের সেবাকার্যের পাশে আছি-কিন্ত তাদের ধর্মকর্মে আমার মতি নেই ।

ভামপন্থী

ইশ্বরে  বা আধ্যাত্মিক জীবনে বিশ্বাস করলেই মানুষ দক্ষিনপন্থী হয় না । কিন্ত যারা একটা প্রতিষ্ঠিত ধর্মে বিশ্বাসী বা সেই ধর্মীয় পরিচিতি তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, তারা অবশ্যই দক্ষিন পন্থী। আমি হিন্দু-কিন্ত প্রগতিশীল, আমি মুসলমান কিন্ত প্রগতিশীল-এগুলো সম্পূর্ন বাজে ভাট। রামকৃষ্ণ মিশনের "প্রগতিশীল" হিন্দু অনেক দেখেছি। কোট প্যান্ট পড়া আইটিতে কাজ করা  অনেক "আধুনিক" মুসলমান দেখলাম। এদের বাইরের খোলস আধুনিক। ভেতরে সেই মধ্যযুগীয় পচা ধর্মীয় দক্ষিনপন্থী চিন্তাধারা। আজ নাহলে কাল এরা দক্ষিনপন্থী পার্টিগুলির সাথে থাকবেই। সিপিএম কিছুটা রাজনৈতিক চাপ আর কদলী ঝুলিয়ে এই ধরনের দক্ষিনপন্থীগুলি দিয়ে বামপার্টিটা ভরিয়েছিল। কদলীবালা মৃত হইতেই তাহারা বিজেপি এবং তৃনমূলে তাদের স্বাভাবিক বাসভূমি ফিরে পেয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ধর্মকে না ত্যাগ করে কেও যখন বামপন্থী, বুঝতে হবে সে আসলেই ভামপন্থী। ক্ষীরের গন্ধে লাইন দেওয়া পিপীলিকার দল।

Saturday, January 10, 2015

যাদবপুরে অনশণরত ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান

যাদবপুরের অনশণরত ছেলেমেয়ে গুলোর জন্য দুঃখ হচ্ছে। ক্ষমতার বিন্যাস এবং স্থিতঅবস্থার ক্ষীরভোগী মাছির দল যখন চারদিকে ভনভন করছে, সেই অসহনীয় অবক্ষয়ের মাটিয়ে জন্মেও,  ছাত্রদের মধ্যে কিছু বিশুদ্ধ আত্মার অস্তিত্বটাই অন্ধকার টানেলের শেষে আশার আলো।  বাংলা সহ ভারতের রাজনীতি বেসিক্যলি রাজনীতিবিদ, পুলিশ, উকিল, ব্যবসায়ী এদের লুঠেপুটে খাওয়ার ডেমোক্রাটিক সিস্টেম। ভারতে মিডিয়ার ভূমিকা উচ্ছিষ্টভোগীর। ওই লুঠপাট আড়াল করতে সাংবাদিকদের কাজ কখনো সততার প্রতীক মমতা , কখনো আচ্ছে দিনের মিথ তৈরী করা। একাডেমিক্সে যেহেতু টাকা নেই -তাই দীর্ঘদিন শিক্ষার জগতটা অন্তত এই নেক্সাসের বাইরে ছিল। অনিল বিশ্বাস সেটাও ধ্বংস করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেও এই কদর্য্য রাজনীতির রিঙে সামিল করেন । দিদির সুযোগ্য ভাই অভিজিত চক্কোত্তি  অনিলায়নের শ্রেষ্ট গন্ডার অবতার।  শাসকদের ধাক্কা দিতে অভিজিত চক্কোত্তির মতন গন্ডার প্রতিভাকে যদি অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তাড়ানো যেত, সেটা নিঃসন্দেহে একটা বড় নাগরিক অর্জন হত। কিন্ত দুর্ভাগ্য ছাত্রদের ।  মেইন স্ট্রিম মিডিয়া এদের খবর গুরুত্ব দিয়ে ছাপাবে না -সেটাতে আশ্চর্য্য হওয়ার কিছু নেই -কারন মিডিয়ার একমাত্র কাজ এই লুঠপাটকে ঢাকতে,  কখনো আচ্ছেদিনের মিথ, কখনো শশী থারুরের গ্ল্যামারাস আত্মঘাতি বৌ এর প্রেতাত্মার পোষ্টমর্টেমের গপ্পো, কখনো রাহুল গান্ধীর খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির এনালাইসিস। কিন্ত আমাকে সত্যি যেটা দুঃখ দিয়েছে, সেটা হচ্ছে সায়ন্তনী, ইপ্সিতা এরা গত চারদিন ধরে অনশনের সংবাদ স্যোশাল মিডিয়ায় চারিদিকে ছড়িয়েছে। কিন্ত রেসপন্স লিউকওয়ার্ম। গুরুচন্ডালীর মতন একটা রাজনীতি সচেতন ফোরামেও মেম্বারদের ভ্রুক্ষেপ নেই -বরং তাচ্ছিল্য আছে, উপেক্ষা আছে। ইনারা সবাই ভুলে যাচ্ছেন গণতন্ত্র বা শাসক শ্রেনী নিজের ইচ্ছায় ভাল হয় না । শাসক শ্রেনীর বিরুদ্ধে আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই একমাত্র উন্নত শাসক শ্রেনী আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে যাদবপুরের ছাত্ররা আপনাদের একটা সুন্দর এবং শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম দিচ্ছে শাসক শ্রেনীর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। আপনারা যাদবপুরের ছাত্রদের পেছনে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে , পশ্চিম বঙ্গে ব্যর্থ রাজনীতির দায়, মমতার থেকে আপনার ওপর বর্তাবে বেশী।

Friday, January 9, 2015

ধর্মীয় পরিচিতির সমস্যা

পেশোয়ার থেকে প্যারিস। ইসলামিক সন্ত্রাসবাদিদের দৌঁড়াত্বে বিরক্ত অমুসলিমদের মনে একটাই প্রশ্ন। চারিদিকে ইসলামের এত কদর্য্য রূপ দেখার পরেও কি করে কোন সুস্থ মস্তিস্কের মুসলমান ইসলামকে আঁকড়ে ধরে থাকে? তাহলে কি মডারেট মুসলমান বলে কেও নেই ? ধার্মিক মুসলমান মাত্রই মৌলবাদি?  নইলে কেন সহি ইসলামের প্রহেলিকায় এখনো নিজেদের ধর্মীয় পরিচিতিটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছে ইসলামি বিশ্ব ?  মার্ক জুকারবার্গ যেখানে বাক স্বাধীনতার পক্ষে নিজের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন, সেই পেজে ১০০% মুসলিমদের কমেন্ট এটাই তারা বাক স্বাধীনতার চেয়ে ইসলামে থাকতে পছন্দ করবেন বেশী। কেন এই ধর্মীয় পরিচয়কে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা ?

না সমস্যা অন্যত্র? যে ধর্মীয় পরিচয় বা রিলিজিয়াস আইডেন্টিটা আমাদের সবার জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ন সেটা ছাড়া যায় না ? না ধর্মীয় পরিচয়ের সমস্যাটা বস্তবাদি-মোটেও ভাববাদি না ? এর পেছনেও আছে ধান্দা-মানুষ আসলেই যুক্তিবাদি এবং সেই যুক্তিটা টিকে থাকার?

 প্রথমে পরিচিতির প্রশ্নে আসি। কেন লোকে মুসলমান, ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাঙালী , হিন্দু ইত্যাদি নিয়ে গর্ব অনুভব করে? এটা কি ভাববাদি না বস্তুবাদি সমস্যা? না ছোটবেলা থেকে ব্রেইন ওয়াশিং এর ফল ? যে হিন্দুরা শ্রেষ্ঠ-মুসলমানরা শ্রেষ্ঠ ইত্যাদি? বাংলাদেশে যেমন নৃশংস লুঠেরা  বখতিয়ার খিলজিকে হিরো হিসাবে দেখানো হয় ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য।  পাকিস্তান বাংলাদেশে টেক্সট বুকে মহম্মদ ঘোরি, বখতিয়ার খিলজির মতন সন্ত্রাসবাদি লুঠেরা হচ্ছে হিরো। তাহলে মুসলিমরা কেন প্যারিসের সন্ত্রাসবাদিদের সমর্থক হবে না যদি ছোটবেলা থেকে ব্রেইনটা ওইভাবে ড্যামেজ হয়ে থাকে ? আবার রবীন্দ্রনাথ  যশোররাজ প্রতাপাদিত্যকে মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়া বিখ্যাত হিন্দু বীর হিসাবে পূজো করার জন্য বিশেষ হিন্দু অনুষ্ঠান চালু করেছিলেন। বাস্তব এটাই প্রতাপাদিত্য আরেক লুঠেরা জমিদার ছিলেন-মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শ্রেফ কয়েক ঘন্টায় তার নৌসেনাবাহিনী সম্পূর্ন ধ্বংস হয়।  বিবেকানন্দ বারংবার গর্বিত হিন্দু হওয়ার জন্য ডাক দিয়েছেন। বিজেপি, আর এস এস, বজরং দল-চারিদিকে এখন "গর্বিত হিন্দু", গর্বিত ভারতীয় হওয়া ডাক। এজ ইফ গরুকে পূজো করে গর্বিত না হলে আপনি অপরাধী!

 এই সমস্যাটা শুধু ভারত, পাকিস্তান, হিন্দু মুসলমানের না । আমেরিকাতেও চারিদিকে গর্বিত আমেরিকান হওয়ার ডাক। আমেরিকা পৃথিবীর অর্থনীতির চালক, আবিস্কারের পূন্যভূমি, গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা-তাই সারাদিন আমেরিকান টিভিগুলো জনগণকে গর্বিত হওয়ার জন্য ডাকছে।  এম এন বিসিএর মতন লিব্যারাল টিভিতেও কোনদিন দেখলাম না আমেরিকার বিদেশনীতিতে কিভাবে অন্যদেশের মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাই নিয়ে সমালোচনা। আমেরিকায় থাকলে মনে হয় পৃথিবীতে তিনতে জাত আছে-আমেরিকান  যারা শ্রেষ্ঠ, সব কিছু যাদের হাতে, ইউরোপিয়ান যারা আমাদের পূর্বপুরুষ কিন্ত সোশালিস্ট কেয়ারে আছে বলে গরীব আর অলস-এর বাইরে সবাই বর্বর অসভ্য!!

সুতরাং পরিচয় নিয়ে গর্ব করার সমস্যাটা শুধু মুসলমানদের না -এটা সার্বজনীন। কেন এমন সেটাই ভাবতে হবে।

ধরুন বাঙালীদের নিয়েই শুরু করি। বাঙালী হিসাবে আপনি গর্বিত?  না লজ্জিত?  সৎ উত্তর হচ্ছে নিশ্চয় আমরা আমাদের গান, সাহিত্য, সহজিয়া সাধনা, বাউলদের নিয়ে গর্বিত। আবার রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে আমাদের সার্বিক ব্যর্থতা নিয়ে লজ্জিতও বটে।

 হিন্দু হিসাবে আপনি গর্বিত ?  যে ধর্মে বর্নপ্রথা চালু সে ধর্ম নিয়ে কিভাবে গর্বিত হওয়া সম্ভব ? আবার উপনিষদের দর্শনে যেসব জীবন প্রশ্নের সম্মুখীন আমরা হই -সেগুলি আমার ত মনে হয়েছে জীবনটাকে আরো গভীরে বোঝার জন্য বিশেষভাবে দরকার । সুতরাং হিন্দু ধর্মে জন্ম গ্রহণ করে আমি একই সাথে গর্বিত এবং লজ্জিত।

 মুসলমান হিসাবে আপনি গর্বিত? ইসলামের ইতিহাসে এত রক্ত, এত খুন, এত নৃশংসতা -এমন ধর্ম যার নবী নিজেই নিষ্ঠুরতা, লুঠ এবং নারীলোলুপতার জন্য বিখ্যাত-সেই ধর্ম নিয়ে কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষ কিভাবে  গর্ব বোধ করতে পারে ?  প্যারিসের বা পেশোয়ারের সন্ত্রাসবাদিদের কথা ছেড়ে দিলাম-নবীজির নিজের জীবনের ইতিহাসই ত গোলমেলে।  কিন্ত এর বাইরেও ইসলামের একটা গর্বিত দিক আছে। সেটা সুফী ইসলামে। ইসলাম, খ্রীষ্ঠান ইত্যাদির বাইরে বেড়িয়ে, আমাদের প্রথম পরিচয় যে মানুষ-সেই সহজিয়া ভাবের প্রথম পাঠ কিন্ত বিশ্ব পেয়েছে জালালুদ্দিন রুমির কাছ থেকে।  যদিও জালালুদ্দিন রুমি তথা সুফীদের মানবিকতাবাদ সমস্ত ইসলামিক বিশ্বেই ব্রাত্য।

ভারতীয় হিসাবে আপনি গর্বিত?  যেদেশের সব থেকে উচু থেকে নীচুতে এত দুর্নীতি, ঘুস ছাড়া কিছু হয় না - মেয়েদের কোন নিরাপত্তা নেই-সমগ্র বিশ্বের চল্লিশ শতাংশ নিরক্ষর লোকেরা বাস করে-ত্রিশ শতাংশ লোক একবেলা খেয়ে থাকে-সেই দেশ নিয়ে লজ্জিত না হলে কোন দেশ নিয়ে লজ্জা পাবেন? আবার এটাও ঠিক, ভারত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে এত ধর্ম, এত বর্ণ, এত ভাষার লোক পাশাপাশি আছে -যেটা আর কোন দেশ পারে নি। বিবিধের মাঝে এই মহান মিলন পৃথিবীর আর কোথাও নেই । এটা অবশ্যই ভারতের বিরাট সাফল্য এবং গর্বের উপাদান ও বটে।

নাস্তিক হিসাবে আমি গর্বিত? স্টালিন, গত শতাব্দির অন্যতম সেরা খুনী এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদি নাস্তিক ই ছিলেন। সঙ্গে পলপট বা অন্যান্য নাস্তিক কমিনিউস্টদের খুনের ইতিহাস নাই বা আনলাম। চলুন যদি বলি কমিনিউস্ট নাস্তিকরা খারাপ-ক্যাপিটালিস্ট নাস্তিকরা না -তাহলে এনরনের সি ই ও জেফ্রি স্কিলিং বা আচার্য্য রজনীশের দিকে তাকাই। যারা বস্তবাদি ভোগকেই মানুষের পরম উদ্দেশ্য বলে গণ্য করতেন।  প্রথমজন গত শতাব্দির সব থেকে বড় অপরাধিদের একজন-আর আচার্য্য রজনীশ ভোগবাদি জীবন নিয়ন্ত্রনে রাখতে না পেরে খুন থেকে একাধিক অপরাধ করেছেন।  আবার এটাও সত্য যে পাশ্চাত্যে বিজ্ঞানীদের ৯০%  নাস্তিক।  পাশ্চাত্যে বুদ্ধিজীবি বা ব্যবসার শীর্ষস্থানীয় লোকেদের সিংহ ভাগ নাস্তিক।  আমেরিকাতে মূলত গরীব প্রান্তিক লোকেরাই ধার্মিক হয়।

আমেরিকান হিসাবে আমি গর্বিত ? পৃথিবীর যাবতীয় আবিস্কার, ব্যবসার ভরকেন্দ্র আমেরিকা । এখানকার লোকেদের কর্ম এবং উদ্ভাবন শক্তিতে আমি অবশ্যই গর্বিত। আবার আমেরিকার বিদেশনীতি -যেখানে স্বার্থ আছে,  দিয়ে আসি দুই ঘা- পাড়ার এই দাদাগিরি এবং মস্তানির জন্য লজ্জিত ও বটে।

  খুব সামান্য ক্রিটিক্যাল দৃষ্টি ভংগী নিয়ে দেখলেও এটা পরিস্কার কোন পরিচিতি নিয়েই ওই ভাবে গর্বিত বা লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই । সেটা যারা করে তারা শ্রেফ অশিক্ষিত, অজ্ঞানের অন্ধকারে আছে ডুবে।

তাহলে কেন লোকে তার ধর্মীয় পরিচিতি থেকে বেড়োতে চায় না?

 এর কারন স্যোশাল ইউটিলিটি ভ্যালু [২]। অর্থাৎ আপনার আমার সামাজিক মূল্য অন্যের চোখে। খুব বাস্তব কারনেই আমরা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে চাই না ।  কারন নানান কারনে এই সমাজকে আমাদের দরকার হয়। ধরুন আমেরিকাত বিজনেস মিটিং  এ আমি কি আরো পাঁচ জন আমেরিকানের সামনে দেখাতে চাইব আমি আমেরিকা বিরোধি? না প্রমান করার চেষ্টা করব আমেরিকা ভুল?

 এটা মুসলিমরাও ফেস করে।  মুসলমান ফ্যামিলিতে জন্ম নেওয়ার জন্য তাদের মুসলিমদের মধ্যেই মেলামেশা করতে হয়। সুতরাং একজন মুসলমান যখন আরো পাঁচজন মুসলিমদের সাথে ওঠা বসা করছে-করতে হচ্ছে -সে কি করে বলবে বা দেখাবে আমি মুসলমান হিসাবে গর্বিত না ? একটা সামাজিক চাপ থাকেই বিচ্ছিন্ন না হওয়ার। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সকলেই যতটা পারা যায় কর্মক্ষেত্রে আমেরিকান, স্যোশাল গ্যাদারিং এ বাঙালী বা হিন্দু বা মুসলমান-এই  পজিশনিং রেখে চলতে হয়। এটা যুক্তিবাদি অবস্থান। সমাজ এবং চাকরি থেকে বেনিফিট পেতে।

এটা আস্তে আস্তে কমে আসবে যখন সমাজের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমবে।

[১] স্যোশাল ইউটিলিটি এবং ধর্মীয় পরিচিতি --[  https://sites.google.com/site/biplabpal2000/ReligiousIdentity.pdf                            ]


মডারেট, মহম্মদ এবং মার্ক জুকারবার্গ

আমাদের পশ্চিম বঙ্গের দিকে হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে আদানপ্রদান মেলামেশা একদম নেই । যদিও হিন্দুদের নিয়ে মুসলিমদের অভিজ্ঞতা বেশ তিক্ত-কারন অধিকাংশ হিন্দুই কোন না কোন সময় মুসলিমদের বাড়ি ভাড়া দিতে বা গাড়ি ভাড়া দিতে অস্বীকার করেন। অনেকে ঘৃণার কারনে মেলামেশা করতে চান না ।  মোদ্দা কথা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি হিন্দুদের ঘৃণা অতিরিক্ত রকমের বেশী এবং তা মানুষত্বের, সভ্যতার অপমান।

 পাশাপাশি এই না মেলামেশার ফলে, সব থেকে বড়ক্ষতি মুসলমান মানসের সাথে হিন্দুএর একদম কোন পরিচয় নেই । মুসলমান মানসের সব থেকে দুর্বল দিক, নিজেদের ধর্মের ব্যপারে তাদের অযৌত্বিক অবস্থান।  ইসলাম কেন- ধর্ম নিয়েই চর্চা করলে, যেকোন সুস্থ যুক্তিবাদি লোক অসুস্থ বোধ করবে। সুতরাং ধর্ম এবং নবীদের কঠোর সমালোচনা ছাড়া সুস্থ সমাজ বা রাষ্ট্র কোন কিছুই সম্ভব না ।  ইসলাম সহ সব ধর্মের ধর্মানুভূতির ওপর হাগামোতা নাকরতে পারলে সামনে আরো অনেক কালো সন্ত্রাসবাদি দিনের অপেক্ষা। কালোদিন এই জন্যেই আসবে যে মুসলমানদের ধর্মানুভূতির সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদি রাজনীতিবিদ দাঙ্গা লাগাবে-যাতে দাঙ্গার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে তাদের কোষাগার লুন্ঠন করা  সহজ হয়। যাতে আরো সহজে আদিবাসিদের অধিকার লঙ্ঘন করে দেশের সম্পদ লুঠ তরাজ করা যায়। উন্নয়নের রাজনীতি যারা করতেন, তারা ক্রমশ ব্যাকসিটে চলে যাচ্ছেন।

 মুসলিম মানসিকতা বুঝতে, মার্ক জুকারবাগের সাম্প্রতিক স্টাটাসে মুসলিমদের কমেন্ট দেখুন। এরা নাকি "মডারেট" মুসলিম!!  মার্ক খুব পরিস্কারভাবে বলেছেন ফেসবুক বাক স্বাধীনতার পক্ষে ছিল। থাকবে।  এক্সিট্রিমিস্টদের কোন দাবীর কাছে ফেসবুক মাথা নোয়াবে না । ইসলাম নিয়ে কোন কটূ কথা বলেনি মার্ক। কিন্ত দেখুন ১০০% মুসলিম-যারা শিক্ষিত মডারেট, তারা মার্ককে খিস্তি মারছেন। তারা পরিস্কার জানিয়েছেন, তারা ইসলামের পক্ষে- বাক স্বাধীনতার পক্ষে না ।

হিন্দুদের মধ্যেও অনেকেই আছেন যারা বাক স্বাধীনতার পক্ষে না । হিন্দুত্বের পক্ষে। কিন্ত মুসলিমদের ক্ষেত্রে যেখানে সংখ্যাটা ৯৫% এর কাছাকাছি, হিন্দুদের ক্ষেত্রে সেটা ৫০-৬০% হবে। সুতরাং হিন্দু সমাজের মধ্যে থেকে লিব্যারাল লড়াইটা যাও বা করা চলে, ইসলামের বিরুদ্ধে করাটা  অসম্ভব। কারন খুব মুস্টিমেয় কিছু মুসলিম আছেন, যারা তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছেন। বা চান। ফলে সন্ত্রাসবাদি আর মৌলবাদিরাই আজ ইসলামের মুখ। আগা খানের  দানশীলতা বা জালালুদ্দিন রুমির মানবিকতা ইসলামের মুখ  না ।

 মোদি ক্ষমতায় আসার পর এটা আর কোন তাত্ত্বিক লড়াই নেই । আচ্ছাদিন আসা ত দূরে কথা, লুঠেরাদের আচ্ছেদিন করার জন্য সব বিল অর্ডিন্যান্স আসছে। সব জায়গায় জিতছে বিজেপি। কারন ইসলামের ভয়টা বাস্তব। এই জন্যেই বাস্তব যে সোকলড এই মডারেট মুসলিমদের সাথে জঙ্গী বা মৌলবাদি মুসলিমদের মানসিকতায় কোন পার্থক্য নেই । সুতরাং স্বধর্মে নিধন শ্রেয় সেই মানসিকতায় ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, লোকে বিজেপিকেই ভোট দিচ্ছে। বামেদের কেও পাত্তা দিচ্ছে না ।

 সুতরাং বাম লিব্যারাল শক্তি যদি বাঁচতে চায়, ইসলামের কঠোর এবং সামনাসামনি সমালোচনা করা ছাড়া কোন উপায় নেই । ইসলামিক মৌলবাদ না ঠেকাতে পারলে, কারুর সাধ্যি নেই মোদিকে ঠেকানোর। এটা বুঝতে হবে।

 আর ইসলামের বিরুদ্ধে এই লড়াইএর অনুপ্রেরনা যদি কেও হতে পারেন-তিনি হজরত মহম্মদ নিজে ( যদিও তার জীবনীর প্রায় সবটাই কাল্পনিক) । ওই সময় মক্কাতে যারা শাসক দল ছিল, তারা ধর্মকে কাজে লাগিয়ে মক্কা-সিরিয়া ব্যবসার ওপর সম্পূর্ন কব্জা রেখেছিল। ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের ওপর কর এবং সুদের হার বাড়িয়ে যাচ্ছিল। যার প্রতিবাদে এক আর্থসামাজিক আন্দোলন হিসাবে ইসলামের জন্ম হয়।  হজরত মহম্মদ নিজে প্রানের ভয়কে উপেক্ষা করে মক্কার স্বার্থান্বেশী গোষ্ঠি এবং তাদের ধর্মের ভ্রান্তির বিরুদ্ধে বলেছিলেন। শেষে লড়েছিলেন। সমসায়মিক ধর্ম যে মিথ্যা, তা যে শাসক গোষ্টির লুন্ঠন এবং লাম্পট্যের সহায় যেটা বলতে কি তিনি ভয় পেয়েছিলেন?  তাহলে ইসলাম সহ সব ধর্মই যে আজ শাসক শ্রেনীর লুন্ঠনের হাতিয়ার এবং সম্পূর্ন কাল্পনিক গল্প-এটা বলতে আমরাই বা ভয় পাব কেন?

আজ ইসলামের মধ্যে দ্বিতীয় এক হজরত মহম্মদ দরকার যিনি দেখতে পাবেন ইসলাম এবং মুসলিমদের ধর্মানুভূতি কাজে লাগিয়ে সবাই রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে লুঠতরাজ করছে । সুতরাং ইসলামের অচলায়তনে আঘাত না করলে, মহম্মদের জীবনের এসেন্সটাই নষ্ট হবে।

Sunday, January 4, 2015

মিথ ও রাজনীতি

                                                                          (১)
সেটা ২০০৪। বাজপেয়ি সরকারের "আচ্ছে দিন" জনগণ খেলো না ।  বিজেপির গণেশ উল্টিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায়।

 ভারতের ইনস্টিউটগুলোতে তখনো হিন্দুত্বের রেশ কাটেনি। বৈদিক গণিত, বৈদিক সমাজতন্ত্র, বৈদিক বিজ্ঞান থেকে বৈদিক রমণ এবং রমণীতে ভা্রতকে ভেজাবার তালটা সবে কাটছে। 
  সেই প্রথম আমি সিরিয়াস হয়ে ভাবলাম দেখি ঋকবেদে কি আছে। কেমন ছিল বৈদিক সমাজ। পাশেই ছিল দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়াতে ট্রাবুকো ক্যানিয়নে বেদান্ত সমাজের লাইব্রেরী।

  ঋকবেদের ভাষা সংস্কৃত না -প্রোটো ইন্দোইউরোপিয়ান। অধিকাংশই মাথামুন্ডু বোঝা যায় না বলে অনেক স্তোত্রের একাধিক মানে সম্ভব। যা বুঝলাম পড়াশুনো করে তার মধ্যে বিজ্ঞান ভূগোল কিছুই নেই । আদিবাসীদের পূজো করার মন্ত্র-তাতে সাহিত্যের মতন রূপকের ব্যবহার আছে । বেসিক্যালি গোটা বইটা থেকে একটা আদিবাসী সমাজের চিত্র বেড়িয়ে আসে। যুদ্ধ, পুত্র, বৌ, সম্পতি ইত্যাদির জন্য যাগযজ্ঞ।   শুধু প্রগ্রেসিভ দিক যেটা চোখে পড়েছিল-ঋকবেদে কিছু স্তোত্র মেয়েদের লেখা। সেখানে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও প্রতিবাদি ভাষা চোখে পড়ে। মুক্তমনা সাইটে সেটাই ছিল আমার প্রথম প্রবন্ধ  (   MYTH OF VEDIC SOCIETY: BETWEEN REALITY, RELIGION AND POLITICS   )


 যাইহোক বৈদিক সমাজে প্লাস্টিক সার্জারি, টেস্ট টিউব বেবী, বিমানের অস্তিত্ব থাকাত দূরের কথা ঋকবেদ পড়লে এটাই পরিস্কার হয় সেই সমাজটা ছিল নমাডিক আদিবাসিদের। যারা ঘুরে ঘুরে নানান জায়গায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় কালো দাশদের হারিয়ে। তাদের সোনা এবং স্ত্রীর হরন করা যে পবিত্রকাজ এটাও ঋকবেদে পাওয়া যাবে -তবে যেহেতু ভাষাটা প্রটো ইউরোপিয়ান, আসল মানে বোঝা কঠিন। আমি যেটুকু বুঝেছিলাম, সেটা বুঝে একটা গল্প লিখি-"পৌলমী" ( তবে এটা প্রথম লেখা ছিল-অনেক বানান ভুল আছে )  । 

                                                                        (২)

রাজনৈতিক সিদ্ধির জন্য মিথকে কাজে লাগানো নতুন কিছু না । 

 কমিনিউস্টরা বহুদিন সোভিয়েত ইউনিয়ানকে শ্রমিক শ্রেনী তথা সাম্যের স্বর্গরাজ্যে বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। যদিও বাস্তবে আজ এটাই সত্য হিসাবে প্রমানিত লেনিন এবং স্টালিনের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ান ছিল কৃষক এবং শ্রমিকদের বধ্যভূমি [১]।  সোভিয়েত ইউনিয়ানের মিথ ফাটার পর কমিনিউজমের পালে আর হাওয়া নেই । 

 ইসলাম এবং খৃষ্টান ধর্মের রাজনীতিও সম্পূর্ন মিথের ওপর দাঁড়িয়ে। 

ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে হজরত মহম্মদের স্থাপিত স্বর্গরাজ্য।  যেখানে নাকি ক্ষমা, ন্যায়, বিচার, সাম্য এমন "পারফেক্ট" ছিল, তেমনটা পৃথিবীর আর দেখেনি কোনদিন। কিন্ত সেখানেও একটু ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম হজরত মহম্মদ চরিত্রটাই কাল্পনিক [২] । আর যদি ধরেও নিই ওই চরিত্র ছিল, তাহলেও দেখা যাচ্ছে তিনি তার সাগরেদদের গণিমতের মাল দাসী হিসাবে ভোগ করার অনুমতি দিয়েছেন।  আর সে এমন স্বর্গরাজ্য যে তিনি মারা যেতেই তার বৌ, শিষ্যদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়!  এসব জানার পর , পড়ার পরেও অধিকাংশ মুসলমান মহম্মদ এবং তার স্বর্গরাজ্যে বিশ্বাস করে! অবশ্য হিন্দুরা যদি যদি বৈদিক বিমান,  বৈদিক টেস্ট টিউব বেবী এবং প্লাস্টিক সার্জারীতে আস্থা রাখে, মুসলমানরাই বা কেন মহম্মদে আস্থাশীল হবে না ?

 কারা বেশী মাথামোটা, সেটা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে।  তবে সমস্যা হচ্ছে এই সব মিথ এতই শক্তিশালী তা ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান সহ সব মুসলিম দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রনের আসনে। এই সব মিথের জন্য এই সব দেশে উন্নয়নের রাজনীতি করা বেশ মুশকিল হচ্ছে আস্তে আস্তে।

 খ্রীষ্টান ধর্মের মিথটা অদ্ভুত শক্তিশালী। সেটা হচ্ছে ভিক্টিমাইজেশনের । মানে আমাদের সবাই ধরে মারছে। আমরা নির্যাতিত। এ হচ্ছে পৃথিবীর সব নির্যাতিতদের একত্র করার মিথ। 

                                                                               (৩)

এমন ভাবার কারন নেই শুধু ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলিই মিথের পূজারী।

 গণতন্ত্রে সব শক্তিকেই কমবেশী মিথ তৈরী করতে হয়।

  যেমন মমতা ব্যানার্জি নামে যে চরিত্রটাকে লোকে বিশ্বাস করে ভোট দেয়-সেটা মিথিক্যাল চরিত্র। আজ তাকে আনন্দবাজার সারদার প্রতীক চোরের রাণী বানাচ্ছে-কিন্ত সিপিএমকে তাড়াতে এই মহিলাকেই " সততার প্রতীক" বানিয়েছিল বাংলার মিডিয়া। তার আগের চরিত্র জ্যোতিবসু সম্মন্ধেও  মহান ত্যাগী কমিনিউস্ট নেতার  একটা মিথ তৈরীর চেষ্টা পার্টির মধ্যে আছে। যদিও পার্টি কখনোই এ উত্তর দিতে পারে নি একজন "মহান" ত্যাগীর কমিনিউস্ট নেতার পুত্র কি করে এত সম্পতি করেন !! অথচ যে লোকটা সত্যই সাধারন সৎ জীবন কাটিয়েছেন-তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য।  তিনি এখন বাংলার রাজনীতিতে ব্রাত্য। কারন বুদ্ধদেবকে নিয়ে কোন মিথ তৈরী করার চেষ্টা হয় নি। বা তিনি করেন নি।  ফলে তিনি ফেইল্ড!

আমেরিকাতে মিডিয়াগুলো এ ব্যপারে পেশাদার। এখানে ব্যক্তি কেন্দ্রিক মিথ তৈরীর ব্যপারে জোর দেওয়া হয়। তার জন্যে পেশাদার মার্কেটিং, ব্রান্ডিং এজেন্সি হায়ার করা হয়। 

 রাজনীতি মিথ বিহীন হবে এমন ভাবা অন্যায়। কিন্ত মিথের পরিমান যদি এমন হয় যে গল্পের গরু গাছে ওঠে, তাহলে উলটো ফলের সম্ভাবনা । যে গাধাগুলো বৈদিক প্লাস্টিক সার্জারিতে বিশ্বাস করে, তারা এমনিতেই বিজেপিকে ভোট দেবে। কিন্ত সায়েন্স কংগ্রেসে যেভাবে বৈদিক অপবিজ্ঞান চালানোর চেষ্টা হল, এতে বিজেপির ক্ষতি- লাভ নেই । এই স্যোশাল মিডিয়ার যুগে গরুকে আর গাছে তোলা যাবে না এটা তারা যত দ্রুত বোঝেন ভাল -না হলে এই যাত্রায় উলটো ফল হতে বাধ্য।