সুব্রমনিয়াম স্বামীর হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি, অন্যান্য আইডেন্টি বেসড রাজনীতির মতন আউটডেটেড। কিন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতি, সংবিধানের প্রতি আস্থা ফেরাতে, এই ভদ্রলোক ভারতের ইতিহাসে যা অবদান রেখে গেলেন তা অনস্বীকার্য্য এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের সর্বাধিক উজ্জ্বলতম অধ্যায়। স্প্রেকটাম কেলেঙ্কারি, কোল কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস থেকে জয়ললিতা-ভারতের ইতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন কেলেঙ্কারি এবং তার মাথাগুলিকে জেল খাটিয়েছেন স্বামী। দুর্নীতিবিরোধি আন্দোলনের ফ্ল্যাগশিপ যাদের হাতে সেই আন্না এবং অরভিন্দ কেজরিওয়াল, যত গর্জেছেন, বর্ষান নি তার এক শতাংশও। জয়ললিতার জেল হাজতের সাথে সাথে ঘন্টা বেজে গেল মায়াবতী, মুলায়েম, মমতা এবং বিজুর। মমতা হয়ত সরাসরি জেলে যাবেন না, তবে মদন মুকুলের জেল যাওয়া ঠেকানো মুশকিল। মুলায়েম মায়াবতীর মতন আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা নেতারাও পার পাবেন না। সেটাও পরিস্কার হচ্ছে।
তাহলে ভারতের রাজনীতির ভবিষ্যত কোন দিকে? আঞ্চলিক সত্রপদের মধ্যে একমাত্র নীতিশ ছাড়া, সেই অর্থে সৎ এবং কম্পিটেন্ট কেও নেই। বিজেপির কোন বাধ্যবাধকতা নেই জয়ললিতা, মমতাকে তেল দেওয়ার বা বাঁচানোর। বরং মায়াবতী, জয়ললিতা, মমতা মুলায়েম এদের জেলে ঢোকাতে পারলে, রাজনৈতিক ফায়দা বিজেপির। অথচ এই মুহুর্তে এই আঞ্চলিক দলগুলিই একমাত্র বিরোধি পক্ষ ভারতের রাজনীতিতে। দুর্বল বিরোধি পক্ষ দেশের রাজনীতিতে কাম্য না। সুতরাং অলটারনেটিভ কি কি (১) আরো ভাল আঞ্চলিক নেতৃত্বের উত্থান-এক্ষেত্রে নীতিশ রোল মডেল হতে পারেন (২) কংগ্রেসের আবার শ্রীবৃদ্ধি-যার আশা খুব কম। কারন রাহুল সত্যিকারের অপদার্থ এক রাজনীতিবিদ। ওর ইচ্ছাগুলো ভাল-কিন্ত স্ট্রাটেজিস্ট না। (৩) আম আদমী পার্টির উত্থান। এখানেও আশা কম। অরভিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে প্রায় সবার আশা ভঙ্গ হয়েছে।
ফেডারেলিজমের জন্য আঞ্চলিক রাজনীতির টিকে থাকা আবশ্যিক। নইলে দিল্লীর দলনে রাজ্যগুলির আরো খারাপ অবস্থা হবে। কিন্ত আঞ্চলিক সত্রপরা যদি জয়ললিতা মায়াবতি মমতার মতন স্বৈরাচারী এবং দুর্নীতিপরায়ন হৌন-খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের লোকজন আঞ্চলিকতা ছেরে, জাতীয় পার্টিগুলির দিকেই ঢলবে। যেটা বকলমে দিল্লীর অধীনতা মেনে চলা। পরাধীনতা, গোলামি। পশ্চিম বঙ্গের সিপিএম দিল্লীর প্রকাশ কারাতের নির্দেশে চলতে গিয়ে আম এবং ছালা দুই খুইয়েছিল নিউক্লিয়ার ডিল ইস্যুতে। ওই সময় বুদ্ধ এবং মনমোহনের কেমেস্ট্রী ছিল অসাধারন। পশ্চিম বঙ্গের ২০০২-২০০৭ সালের গ্রোথ দেখুন। ২০০৬ সালে আই টি সেক্টরে সব থেকে বেশী গ্রোথ হয়েছিল পশ্চিম বঙ্গে। একটু নথি ঘাঁটলেই পাবেন। পরিস্কার হয়ে যাবে কেন্দ্রের সাথে সুসম্পর্কের জন্য পশ্চিম বঙ্গ কি পেয়েছে। সেসব না ভেবে দিল্লীতে বসে প্রকাশ কারাত করাত চালালেন এবং একই সাথে পশ্চিম বঙ্গ ও সিপিএম পার্টির সূর্য্য গেল অস্তাচলে। এবং মমতা সুযোগ পেলেন। কারন দিল্লীর নির্দেশে চলা রাজনীতি রাজ্যের ভাল করে না বলেই মমতা জয়ার মতন আঞ্চলিক সত্রপদের দরকার হয়। এরা আবার সবাই দুর্নীতিকে আমাকে দেখ টাইপের চ্যাম্পিয়ান-কেও হাওয়াই চপ্পল পড়ে, কেও সোনায় মুড়ে। ব্যতিক্রম নীতিশ।
আমি নিশ্চিত নীতিশ স্টাইলের সৎ স্বচ্ছ আঞ্চলিক রাজনীতি ভারতের ভবিষ্যত। কিন্ত বাকী নীতিশরা কোথায়? অধীর কংগ্রেস ভেঙে বাংলা কংগ্রেস বানালে তার ভবিষ্যত আছে। ভদ্রলোক বুদ্ধিমান এবং বাস্তববাদি। তবে নীতিশের সততা তার মধ্যে থাকবে কি না জানি না। বাংলার বিজেপিতে অলরেডি দিল্লীর সেকুলার লাইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। তবে বাংলায় বিজেপির কোন আঞ্চলিক নেতা উঠে আসার সম্ভবনা দেখছি না। রাহুলের নেতৃত্ব বিজেপির বাংলা ইউনিট কুইনাইন গোলার মতন গিলছে। বাংলার হিন্দুদের জন্য আলাদা দল শুধু সময়ের অপেক্ষা। নতুন টাইপের বাম পার্টি পশ্চিম বঙ্গে আসবে বলে মনে হয় না। কারন একদম বাস্তব জ্ঞানশুন্যরাই আজকাল অবাস্তব বাম রাজনীতির চর্চা করে পশ্চিম বঙ্গে -যাদের সাথে মাটির যোগ ক্ষীন।