Tuesday, September 30, 2014

পূজা এবং প্যাগানিজম

পূর্জা অর্চনার ইতিহাস বহু পুরাতন। সেই আদিম সুমেরীয় সভ্যতা থেকেই মন্দির এবং দেবদেবীর অস্তিত্ব। মূর্তি তুলে পুজো করা বেশ নতুন সেই তুলনায়-হুনদের কাছ থেকে শেখে ভারতীয়রা। সেটা খৃষ্টজন্মের বেশ কয়েক শতাব্দি পরে।

 তবে ঐতিহাসিক ভাবে সব পূজো পার্বনেই মূর্তি-দেবতা ছিল উপলক্ষ্য মাত্র। এগুলি ছিল নবীন নবীনাদের মিলনের উৎসব যাতে তারা জীবন সঙ্গী খুঁজে নিতে পারে। তার ব্যতিক্রম আজকেও হয় নি। পূজোগুলি আসলেই সামাজিক মেলামেশার অনুষ্ঠান-আরো প্রিসাইজলি যৌনতার উৎসব। পূজো দেখতে বেড়োনোও আসলেই মৃন্ময়ী দর্শন-চিন্ময়ী উপলক্ষ্য মাত্র। এই নিয়ে বছর দশেক আগে লিখেছিলাম-সেটাই শেয়ার করছিঃhttp://www.scribd.com/doc/22241344/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%B0-%E0%A6%A5%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%BE

Saturday, September 27, 2014

জয়ললিতার জেল -অতপরঃ কি হইবে?

সুব্রমনিয়াম স্বামীর হিন্দুত্ববাদি রাজনীতি, অন্যান্য আইডেন্টি বেসড রাজনীতির মতন আউটডেটেড। কিন্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতি, সংবিধানের প্রতি আস্থা ফেরাতে, এই ভদ্রলোক ভারতের ইতিহাসে যা অবদান রেখে গেলেন তা অনস্বীকার্য্য এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের সর্বাধিক উজ্জ্বলতম অধ্যায়। স্প্রেকটাম কেলেঙ্কারি, কোল কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস থেকে জয়ললিতা-ভারতের ইতিহাসের  সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন কেলেঙ্কারি এবং তার মাথাগুলিকে জেল খাটিয়েছেন স্বামী। দুর্নীতিবিরোধি আন্দোলনের ফ্ল্যাগশিপ যাদের হাতে সেই আন্না এবং অরভিন্দ কেজরিওয়াল, যত গর্জেছেন, বর্ষান নি তার এক শতাংশও। জয়ললিতার জেল হাজতের সাথে সাথে ঘন্টা বেজে গেল মায়াবতী, মুলায়েম, মমতা এবং বিজুর। মমতা হয়ত সরাসরি জেলে যাবেন না, তবে মদন মুকুলের জেল যাওয়া ঠেকানো মুশকিল। মুলায়েম মায়াবতীর মতন আকন্ঠ দুর্নীতিতে ডুবে থাকা নেতারাও পার পাবেন না। সেটাও পরিস্কার হচ্ছে।

 তাহলে ভারতের রাজনীতির ভবিষ্যত কোন দিকে? আঞ্চলিক সত্রপদের মধ্যে একমাত্র নীতিশ ছাড়া, সেই অর্থে সৎ এবং কম্পিটেন্ট কেও নেই।  বিজেপির কোন বাধ্যবাধকতা নেই জয়ললিতা, মমতাকে তেল দেওয়ার বা বাঁচানোর। বরং মায়াবতী, জয়ললিতা, মমতা মুলায়েম এদের জেলে ঢোকাতে পারলে, রাজনৈতিক ফায়দা বিজেপির। অথচ এই মুহুর্তে এই আঞ্চলিক দলগুলিই একমাত্র বিরোধি পক্ষ ভারতের রাজনীতিতে। দুর্বল বিরোধি পক্ষ দেশের রাজনীতিতে কাম্য না। সুতরাং অলটারনেটিভ কি কি (১) আরো ভাল আঞ্চলিক নেতৃত্বের উত্থান-এক্ষেত্রে নীতিশ রোল মডেল হতে পারেন (২) কংগ্রেসের আবার শ্রীবৃদ্ধি-যার আশা খুব কম। কারন রাহুল সত্যিকারের অপদার্থ এক রাজনীতিবিদ। ওর ইচ্ছাগুলো ভাল-কিন্ত স্ট্রাটেজিস্ট না।  (৩) আম আদমী পার্টির উত্থান। এখানেও আশা কম। অরভিন্দ কেজরিওয়ালকে নিয়ে প্রায় সবার আশা ভঙ্গ হয়েছে।

 ফেডারেলিজমের জন্য আঞ্চলিক রাজনীতির টিকে থাকা আবশ্যিক। নইলে দিল্লীর দলনে রাজ্যগুলির আরো খারাপ অবস্থা হবে। কিন্ত আঞ্চলিক সত্রপরা যদি জয়ললিতা মায়াবতি মমতার মতন স্বৈরাচারী এবং দুর্নীতিপরায়ন হৌন-খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের লোকজন আঞ্চলিকতা ছেরে, জাতীয় পার্টিগুলির দিকেই ঢলবে। যেটা বকলমে দিল্লীর অধীনতা মেনে চলা। পরাধীনতা, গোলামি। পশ্চিম বঙ্গের সিপিএম দিল্লীর প্রকাশ কারাতের নির্দেশে চলতে গিয়ে আম এবং ছালা দুই খুইয়েছিল নিউক্লিয়ার ডিল ইস্যুতে। ওই সময় বুদ্ধ এবং মনমোহনের কেমেস্ট্রী ছিল অসাধারন। পশ্চিম বঙ্গের ২০০২-২০০৭ সালের গ্রোথ দেখুন। ২০০৬ সালে আই টি সেক্টরে সব থেকে বেশী গ্রোথ হয়েছিল পশ্চিম বঙ্গে। একটু নথি ঘাঁটলেই পাবেন।  পরিস্কার হয়ে যাবে কেন্দ্রের সাথে সুসম্পর্কের জন্য পশ্চিম বঙ্গ কি পেয়েছে। সেসব না ভেবে দিল্লীতে বসে প্রকাশ কারাত করাত চালালেন এবং একই সাথে পশ্চিম বঙ্গ ও সিপিএম পার্টির সূর্য্য গেল অস্তাচলে। এবং মমতা সুযোগ পেলেন। কারন দিল্লীর নির্দেশে চলা রাজনীতি রাজ্যের ভাল করে না বলেই মমতা জয়ার মতন আঞ্চলিক সত্রপদের দরকার হয়। এরা আবার  সবাই দুর্নীতিকে আমাকে দেখ টাইপের চ্যাম্পিয়ান-কেও হাওয়াই চপ্পল পড়ে, কেও সোনায় মুড়ে। ব্যতিক্রম নীতিশ।

আমি নিশ্চিত নীতিশ স্টাইলের সৎ স্বচ্ছ আঞ্চলিক রাজনীতি ভারতের ভবিষ্যত। কিন্ত বাকী নীতিশরা কোথায়? অধীর কংগ্রেস ভেঙে বাংলা কংগ্রেস বানালে তার ভবিষ্যত আছে। ভদ্রলোক বুদ্ধিমান এবং বাস্তববাদি।  তবে নীতিশের সততা তার মধ্যে থাকবে কি না জানি না। বাংলার বিজেপিতে অলরেডি দিল্লীর সেকুলার লাইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে।  তবে বাংলায় বিজেপির কোন আঞ্চলিক নেতা উঠে আসার সম্ভবনা দেখছি না।  রাহুলের নেতৃত্ব বিজেপির বাংলা ইউনিট কুইনাইন গোলার মতন গিলছে। বাংলার হিন্দুদের জন্য আলাদা দল শুধু সময়ের অপেক্ষা।  নতুন টাইপের বাম পার্টি পশ্চিম বঙ্গে আসবে বলে মনে হয় না। কারন একদম বাস্তব জ্ঞানশুন্যরাই আজকাল  অবাস্তব বাম  রাজনীতির চর্চা করে পশ্চিম বঙ্গে -যাদের সাথে মাটির যোগ ক্ষীন।

Wednesday, September 24, 2014

আবারো ভুল লেফট টার্ন!

বাধ্যতামূলক সিকিউরিটি কার্ডকে কেন্দ্র করে যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলন সম্পূর্ন ভুল দিকে টার্ন নিচ্ছে। একটি আন্দোলন স্টিমগাড়ীর মতন কু ঝিক ঝিক করতে করতে একেটি মাইলস্টোন পার করে। স্টিম ইঞ্জিনটি বাদে ট্রেনটি শুধুই লাইনে শুয়ে থাকা বগি। আন্দোলনের স্টিম ইঞ্জিনটি বুঝতে না পারলে, এর সলিল সমাধি শুধুই সময়ের অপেক্ষা। যাদবপুরের ছাত্রদের পেছনে জনগনের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন ছিল মূলত একটা কারনে। আপামর বাঙালী জনগন সিপিএম থেকে পরিবর্তন চেয়ে আরো ভয়াবহ সিপিএমের কবলে এখন। হ্যা, তৃনমূলের এই ফ্যাসিস্ট নিপীড়নকে সাধারন মানুষ "আরো ভয়ংকর সিপিএম" হিসাবেই দেখছে। যাদবপুরের ছাত্রদের পেছনে মানুষের স্বতস্ফূর্ত সমর্থনের স্টিম ইঞ্জিনটাও সেখানেই। ২০০৫ সালে ছাত্রদের পিটিয়েছে সিপিএম, এখন তৃনমূল। ছাত্ররা যেভাবে সরকারী ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তাদের পেছনে মানুষের পূর্ন সমর্থন এই জন্যেই আছে। কারন মানসিক ভাবে সাধারন মানুষ যাদবপুরের ছাত্রদের সাথে একাত্ম। তারাও প্রথমে সিপিএম, এখন তার থেকেও ভয়ংকর সিপিএম তৃনমূলের কুম্ভীপাকে। এর থেকে নিস্তারের পথ সাধারন মানুষের হয়ত জানা নেই-কিন্ত যাদবপুরের ছাত্ররা কিঞ্চিত হলেও আশার আলোকবর্তিতা দেখাতে কিছুটা সক্ষম।
অর্থাৎ যদ্দিন আন্দোলনের অভিমুখ থাকবে তৃনমূল এবং সিপিএম বিরোধি-এই আন্দোলনে স্টীম এবং কয়লা জোগানের অভাব থাকবে না। এদের নিয়ে সাধারন মানুষের হতাশাই বাস্প যোগাবে।
কিন্ত কিছু এনার্কিস্ট প্ররোচিত হয়ে ছাত্রদের ভুল পথে চালনা করা হচ্ছে। আন্দোলনের অভিমূখ ঘোরানো হচ্ছে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে যেখানে হাইকোর্ট ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তায় আই ডি কার্ড চালু করতে নির্দেশ দিয়েছে ক্যাম্পাসে। এমন কোন ছাত্র অভিভাবক আছেন যারা হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে যাবেন বা মনে করেন এই রায় ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য খারাপ? ওই মেয়েটির বাবা তৃনমূলের মিছিলে যেতেই আন্দোলনের এক টায়ার লিক হয়েছিল। এবার যদি সমস্ত অভিভাবকরাই এই কারনে আন্দোলনের বিরুদ্ধে চলে যায়, গোটা আন্দোলনটাই পথে বসবে। ভুললে চলবে না বাবা-মায়ের কষ্টোপার্জিত অর্থেই পড়াশোনা করছে যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা। তারা এদ্দিন সমর্থন যুগিয়েছেন তাদের সন্তানদের আন্দোলনে-কিন্ত তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেখানে হাইকোর্ট করতে বলেছে-তার বিরুদ্ধে গিয়ে তারা বিপ্লবী বাপ হবেন, এমন আশা করতে নির্বোধদের মধ্যেও নির্বোধতর হতে হয়।
সারদা কান্ডে সুদীপ্তসেন কে পালাতে সাহায্য করার জন্য মুকুল এবং শুভেন্দু অভিযুক্ত। প্রধান বিরোধি নেতার মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন রোশনারা মিশ্র। কামদুনী থেকে পাড়ুই কান্ডে হাইকোর্ট সম্পূর্ন ভাবে অনাস্থা জানিয়েছে রাজ্যপুলিশের ওপর। সাধারন মানুষের নিরাপত্তাহীন। তারা রাগে ফুঁসছে তৃনমূলের বিরুদ্ধে। সেখান থেকে যাদবপুরের আন্দোলনকে বিচ্ছিন্ন করে হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে-কেসটা অরভিন্দ কেজরিওয়ালের মতন হবে। অতি আদর্শবাদের চক্করে বাস্তব ভুলে শেষে এখন প্যান্ট খুঁজে পাচ্ছেন না। মমতার বিরুদ্ধে হাইকোর্টই একমাত্র ভরসা জোগাচ্ছে-আর সেই হাইকোর্টের বিরুদ্ধে পথে নামলে, যেসব জনগণ বর্তমান সরকারের, সিস্টেমের বিরোধিতায় সাহস সমর্থন জোগাচ্ছিলেন, তারা বিভ্রান্ত হবেন। সব থেকে বড় কথা ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা সমর্থন তুলে নিলে, আন্দোলনের সবকটা টায়ার পাংচার হবে। এখনত শুধু একটা গেছে।
পশ্চিম বঙ্গে বামেদের ভোট ৪৮% থেকে ৪২%-সেখান থেকে ৩৮, থেকে ২৭ হয়ে সদ্য উপনির্বাচনে ১৪% এ নেমেছে মাত্র চার বছরে। কারন পশ্চিম বঙ্গে বামেদের রাজনীতি এবং বাস্তব জ্ঞানের তীব্র অভাব। বামেরা যেভাবে বাস্তব জ্ঞানের অভাবে বাঘ থেকে বিড়াল হয়েছেন পশ্চিম বঙ্গে-এবার ইঁদুর হওয়ার দিকে এগোচ্ছেন-তাদের কথা শুনে বাস্তবজ্ঞান তিরোহিত হয়ে আন্দোলন চালা্লে, যাদবপুর আন্দোলনের ও একই হাল হবে।

Tuesday, September 23, 2014

বাম, ডান ও বায়োলজি

লোকে কেন বামপন্থী বা দক্ষিনপন্থী হয়?

আমাদের নিজের অভিজ্ঞতা অতি সরল। ফ্যামিলি ইনফ্লুয়েন্স। কে কতটা ধার্মিক হবে, সেটাও মোটামুটি পারিবারিক ল্যাজ।

 তবে ইদানিং বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করেছেন মস্তিস্কের গঠনের সাথে উনারা বাম বা ডান দিকের টেনডেন্সির সম্পর্ক পাচ্ছেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক রায়টা কানাই  বায়োলজিতে  প্রকাশিক এক গবেষনাপত্রে দাবী [১] করেন, দক্ষিন পন্থীদের এমিগ্যাডেল একটু বড়-অন্যদিকে বামেদের বেশী থাকে এন্টেরিয়ার সার্কুলের কর্টেক্স। খুব জটিল বায়োলজির মধ্যে না ঢুকে-এটুকু জানা যাক যে এমিগ্যাডেল বড় হলে -  ইনফর্মেশন প্রসেসিং শক্তি বাড়ে।  লোকে একটু বেশী সচেতন হয়-দশদিক ভেবে কাজ করে। এন্টেরিয়াল সার্কুরাল কর্টেক্স বড় হলে লোক নতুনত্বকে সহজে গ্রহন করতে সক্ষম হয়। অর্থাৎ প্রগেসিভ হয় লোকে।


 জানিনা এই গবেষনা কতটা বিশ্বাসযোগ্য। কারন নিজের অভিজ্ঞতা হল একজন মানুষ বয়সের সাথে সাথে পালটে যায়। যৌবনে সবাই প্রতিবাদি। সমাজ, পৃথিবীকে পালটানোর স্বপ্ন দেখে। বাপের হোটেলে খেয়ে, মাথার ওপর উপায় করার চাপ না থাকলে, সেটাই স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত । ফেসবুক ফোরামে যেসব বামপন্থী দেখা যায় তাদের মধ্যে একটা প্যাটার্ন হচ্ছে এদের অধিকাংশ ছাত্র, যুবক এবং এখনো হাত পা ছাড়া। বাবা মা হয়ে সংসারের দ্বায়িত্ব নিতে হয় নি। ফলে সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে গীটার এবং কবিতার রোমান্টিজম এখনো মরে নি এদের মধ্যে। অন্যদিকে জীবন এবং সংসারের দ্বায়িত্ব যারা নিয়েছেন-প্রোডাকসন সিস্টেম, সমাজ, মানুষ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতাটা অনেক বেশী। ফাইনান্সিয়াল ট্রান্সাকশন--দ্বায়িত্বর ডিসচার্জ ও বেশী-আকাশকুসুম কল্পনার অবকাশ কম।

 এই জন্যে বয়সের সাথে সাথে বামপন্থীদের বিবর্তন হয় তিনটি গ্রুপে-এক যারা সংসারের দ্বায়িত্ব না নিয়ে চিরকাল ফ্যাতারু থেকে যেতে পারেন-চিরকালের ভবগুরে বামপন্থী। দ্বিতীয়গ্রুপ টি সংসার, সমাজ জীবনে বামপন্থার অসাড়তা বুঝে দক্ষিনপন্থীতে বিবর্তিত হয়। আর তৃতীয় গ্রুপটি হচ্ছে-যারা শুধু ক্ষমতার লোভে বাম রয়ে যান। যেমন সিপিএম। বাম মানে ত প্রতিবাদি রাজনীতি-৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকলে যারা সিপিএম করবে তাদের মধ্যে প্রতিবাদি চরিত্র তৈরী হবেটা কি করে ? ফলে সিপিএমের র‍্যাঙ্ক এন্ড ফাইল -এই তৃতীয় শ্রেণীর । ক্ষমতার গুড় খাওয়ার বামপন্থা।

 একমাত্র যৌবনেই মানুষ সত্যিকারের খাঁটি বামপন্থী থাকে।

 এটাও বোধ হয় একটা কারন, সমাজ বদলানোর ক্ষেত্রে ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা ঐতিহাসিক। ভাষা আন্দোলনই বলুন আর আজকের যাদবপুর-সমাজকে বদলানোর স্বপ্ন একমাত্র ছাত্ররাই দেখাতে পারে। সংসারী মানুষদের পক্ষে এটা সম্ভব না।

  এর বাইরেও আরেকটা তত্ত্ব আছে বামপন্থি হওয়ার-সেটা হচ্ছে গাঁজা, চরস, যৌন  জীবনের স্বাধীনতার। বামপন্থী মেয়েরা সেক্স নিয়ে কম রক্ষনশীল। বামপন্থী মেয়েদের মোহে বাম সার্কলে ঢোকার ইচ্ছা কলেজ জীবনে অনেকেরই থাকে। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন পলিটিক্যাল ওরিয়েন্টেশনের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর। অর্থাৎ "লিব্যারাল" এই ট্যাগটা অর্জন করার চাপ থাকে অনেকের মধ্যে। অজ্ঞানে বা সজ্ঞানে।


রেফারেন্স
[১] http://en.wikipedia.org/wiki/Biology_and_political_orientation

Wednesday, September 3, 2014

জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তি- বানী সংকলন

( জিড্ডু কৃষ্ণমূর্তির লেখা থেকে আমার অনুবাদ)
                                                                      (১)
 নিজেকে হিন্দু মুসলমান খ্রীষ্ঠান ভারতীয়, আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ইত্যাদি হিসাবে দাবী করা মানুষের হিংস্র প্রবৃত্তি। আমি কেন এটা বলছি?

   কারন এটা দাবী করা মাত্র তুমি পৃথিবীর বাকী লোকেদের সাথে নিজেকে আলাদা করার চেষ্টা করছ।  বিশ্বাস, জাতি, দেশ, পরম্পরায় বিশ্বাস করে নিজেকে আলাদা ভাবা এবং দাবী করা,  মানুষের মনে হিংস্র প্রবৃত্তির জন্ম দেয়।

 সুতরাং যে অহিংসার সন্ধানে, হিংসাকে বোঝার চেষ্টা করছে, সে কোন রাজনৈতিক মতবাদ, দেশ, জাতি, ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না। তাকে সমগ্র মানবজাতির কল্যান কামনায় ভাবতে হবে।

 [“When you call yourself an Indian or a Muslim or a Christian or a European, or anything else, you are being violent. Do you see why it is violent? Because you are separating yourself from the rest of mankind. When you separate yourself by belief, by nationality, by tradition, it breeds violence. So a man who is seeking to understand violence does not belong to any country, to any religion, to any political party or partial system; he is concerned with the total understanding of mankind.” ]

                                                                                           (২)
পৃথিবীর যেকোন সরকার কারিগড় টাইপের নাগরিক পছন্দ করে। মানুষ টাইপের নাগরিক তাদের পছন্দ না। কারন সত্যিকারের মানুষ সরকার এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলির জন্য বিপজ্জনক।  এই জন্য সরকার এবং প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলি শিক্ষা ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রন করে, মানুষের বদলে বশ্য কারিগড় তৈরী করে। 

Governments want efficient technicians, not human beings, because human beings become dangerous to governments – and to organized religions as well. That is why governments and religious organizations seek to control education.
                                                                        (3)
প্রেম এবং স্বাধীনতার সর্বত্র সহাবস্থান। প্রেম কখনোই কোন প্রতিক্রিয়া হতে পারে না। তুমি আমায় ভালোবাস তাই তোমাকেও আমি ভালোবাসি-সেটা ব্যবসার সম্পর্ক। যা বাজারে কেনা যায়। তা কখনো প্রেম নয়। প্রকৃত ভালবাসা কখনোই  প্রতিদান প্রত্যাসী নয়-এমন কি সে এটাও অনুভব করে না যে সে এই সম্পর্কে কিছু দিচ্ছে-শুধু মাত্র এই ধরনের বিশুদ্ধ প্রেমেই পাবে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ। 

“Freedom and love go together. Love is not a reaction. If I love you because you love me, that is mere trade, a thing to be bought in the market; it is not love. To love is not to ask anything in return, not even to feel that you are giving something- and it is only such love that can know freedom.” 

                                                            (৪)
 মানুষ যা জানে না, যা তার অজ্ঞাত, তাই নিয়ে সে ভীত না।  সে ভয় পায়, তার জ্ঞাত পৃথিবীকে-তার অন্তিমকে।
(বিপের নোট - জিড্ডুর বক্তব্য এখানে একটু ঘোলাটে। উনি যেটা বলতে চেয়েছেন-সেটা হচ্ছে, আমরা ভয় পায় সেই টুকুর মধ্যে যেটুকুর মধ্যে আমাদের জীবন। আমাদের জীবন চাকরী উপায় সন্তান, পিতা মাতা বাসস্থান সম্পর্ক এই সবের বৃত্তে। আমাদের ভয়টাও তাই এসব কেন্দ্র করে-কখন চাকরী যায়, কখন কোন নিকট সম্পর্ক মারা যায়, ইত্যাদি )
“One is never afraid of the unknown; one is afraid of the known coming to an end.” 

                                                                     (5)
মূল্যায়ন ছাড়া পর্যবেক্ষনই সর্বোত্তম বুদ্ধিমত্তা।

( বিপের নোট-আমি খুব একমত নই এক্ষেত্রে জিড্ডুর সাথে। তবে জিড্ডু যেটা বলতে চেয়েছিলেন সম্ভবত-সেটা হচ্ছে মানুষের প্রকৃতিই হল কোন কিছু একটা দেখে, সেটাকে ছকে ফেলার চেষ্টা। এটা আদর্শবাদিরা বেশী করে । যেমন পশ্চিম বঙ্গে তৃণমূলের সমালোচনা করলেই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তাকে মাওবাদি বানাতেন। সিপিমের সমালোচনা করলে সে হত সাম্রাজ্যবাদি। এই ধরনের ছকে ফেলার চেষ্টা নিম্ন মানের বুদ্ধিমত্তা। তবে জিড্ডুর বক্তব্যে সেটা পরিস্কার না। কারন একজন বিজ্ঞানীকে পর্যবেক্ষন থেকে হাইপোথিসিসে আসতে হবেই )
“The ability to observe without evaluating is the highest form of intelligence.” 
                                                                    (6)
সত্যই মুক্তির একমাত্র পথ-মুক্তির জন্য চেষ্টা করে কেও মুক্ত হয় না। 

(বিপের নোট-এটি আমার প্রিয় কোট।  একজন সাচ্চা হার্ডকোর মুসলমান, হিন্দু, কমিনিউস্টকে দেখুন। এরা এদের আদর্শের জন্য খুন, মিথ্যাচার, সব রকমের নীচুতার, শঠতার আশ্র্য় নিতে পারে। কারন এরা এদের আদর্শটাকেই মুক্তি একমাত্র পথ হিসাবে ভাবে এবং সেইভাবে মুক্তি খুজতে গিয়ে, সততার সাথে আপস করে। যুক্তিবাদিরাও এর ব্যতিক্রম না। এইভাবে কখনোই একজন মানুষ মুক্ত হতে পারে না কোন কিছু থেকে-না দারিদ্র থেকে, না ভয় থেকে, না হতাশা , না অজ্ঞানতা থেকে ! মানুষের লিব্যারেশন বা মুক্তির একমাত্র পথ সততা। )

“It is truth that liberates, not your effort to be free.”

                                                                      (7)
রুগ্ন একটি সমাজের সাথে এডজাস্ট করে চলা মোটেও কোন সুস্বাথ্যের লক্ষন না। 
(বিপের নোট -পশ্চিম বঙ্গের বাঙালীদের কথা ভাবুন- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাজনীতি। কোনদিকে যাবেন? সিপিএম,তৃণমূল, বিজেপি-যেই আসুক-সিন্ডিকেট, গুন্ডামো আটকাবে? সব দিয়েই এক রুগ্ন সমাজ। এই সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করে, তিনু, সিপিএম ইত্যাদির স্বৈরাচারের সাথে এডজাস্ট করে চলাটা মোটেও সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ না )
“It is no measure of health to be well adjusted to a profoundly sick society.”
                                                                           (8)

                 
যারা নিজেদের বিশ্বাসের কথা সবর্ত্র আরোপ করার চেষ্টা করে, তারা আসলেই কোন না কোন ভয় থেকে এই কাজ করে।

( এটা নিয়ে বিশেষ বলার কিছু নেই। স্বঘোষিত কমিনিউস্ট, হিন্দুত্ববাদি এবং ইসলামিস্টদের ফেসবুকে কান্ডকারখানা থেকেই এটা স্পষ্ট।  হিন্দুত্ববাদিরা হিন্দুত্ব আরোপ করার জন্য ইসলাম আসলে কি হাল হবে, তার ভীতি প্রদর্শন করে।  ইসলাম নামক নৃশংস জুজু দেখিয়ে তারা সর্বত্র হিন্দুত্ব আরোপ করার চেষ্টা করে। ইসলামিস্ট ও তাই করে। তারা মুসলমানদের ভয় দেখাচ্ছে হিন্দুরা জিউরা মুসলমানদের সর্বত্র ভাতে মারার প্ল্যান করছে।  কমিনিউস্টরা  আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের ভয় দেখিয়ে নিজেদের বাম বা কমিনিউস্ট বিশ্বাসকে সর্বত্র জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে )
    The constant assertion of belief is an indication of fear.” 

                                                                                (৯)

যখন নিজেকে গভীরে , আরো গহন গভীরে বুঝব, তখন তোমাকেও সঠিক ভাবে বুঝতে পারব। এই সঠিক বোঝাপড়ার পথেই আসে প্রেম।
 একটা  সম্পর্কে যখন উষ্ণতা এবং মর্মিতার অভাব প্রকট হয়,  সেখানে প্রেম হচ্ছে সেই মিসিং ফ্যাক্টর ।  এইসব ব্যর্থ সম্পর্কে  পরস্পরের প্রতি না আছে প্রেম। না উদারতা।  না ক্ষমা।  এর থেকে পালাতে গিয়ে, আমরা জীবনে আরো দুর্ভোগ, সংশয়, বেদনা ডেকে আনি। আমরা পৃথিবীকে সংস্কার করতে চাই-কিন্ত ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের সমাধানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ন মিসিং ফ্যাক্টর "প্রেমের" দিকে ফিরেও তাকায় না। 

(বিপের নোট- জিড্ডুর এই বানী ভেঙে যাওয়া বৈবাহিক সম্পর্ক থেকে দুটী দেশের সম্পর্ক সর্বত্রই প্রযোজ্য।

           আমার স্ত্রীকে, প্রেমিকাকে বোঝার সব থেকে সহজ উপায় কি? 

    নিজেকে আরো ভালভাবে বোঝা। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে সব থেকে বেশী অবনতি ঘটে এই কারনে যে আমি আমার বৌএর চাহিদা, আকাঙ্খাগুলিকে মেনে নিতে পারছি না-কিন্ত নিজের উচ্চাকাঙ্খা, চাহিদাগুলি নিয়ে আমি একদমই ভাবছি না। যেন ওগুলো আমার স্বাভাবিক অধিকার।  ধরা যাক আমি একটা ভাল অফার পেয়ে অন্যশহরে চলে যেতে চাইছি-বা একটা কাজ যা আমার ভাল লাগে, কিন্ত মাইনে কম, আমি নিতে চাইছি। আমার স্ত্রীর এগুলি পছন্দ নাও হতে পারে। কারন তার চাহিদা, আকাঙ্খা আলাদা হতেই পারে। এসব ক্ষেত্রে আমরা আমাদের উচ্চাকাঙ্খা, চাহিদা না বোঝার জন্য, স্ত্রীদের গালাগাল দিই। কিন্ত যদি নিজের চাহিদাটা বুঝতে পারি, তাহলে বৌ এর চাহিদার ক্ষেত্রটাও বোঝা উচিত।  নিজের চাহিদাটা, নিজের আকাঙ্খা, নিজের অবচেতন মন আমরা বুঝিনা বলে, আমরা আমাদের পার্টনার কেও বুঝতে অসমর্থ হই। ফলে খুব সহজেই আস্তে আস্তে বৈবাহিক সম্পর্কটা হয় প্রেমহীন, উদারতাহীন, ক্ষমাহীন আক্ষেপের আগ্নেয়গিরি। আর এই ব্যর্থ সম্পর্ক থেকে বেড়োতে খুব সহজেই আরো বেশী ভুল হয়। ডিভোর্স, কাদা ছোড়াছুরি-আরো বেশী যন্ত্রনা, বেদনার সম্মুখীন হই আমরা। অথচ, যেটা আসলেই মিসিং-সেটা হচ্ছে প্রেম। এবং তা আসে যদি আমরা নিজের চাহিদা, আকাঙ্খা, ক্রটি, চেতন, অবচেতন মনটাকে বুঝতে চেষ্টা করি। নিজেকে ভাল ভাবে জানার চেষ্টা করি। )

“When I understand myself, I understand you, and out of that understanding comes love. Love is the missing factor; there is a lack of affection, of warmth in relationship; and because we lack that love, that tenderness, that generosity, that mercy in relationship, we escape into mass action which produces further confusion, further misery. We fill our hearts with blueprints for world reform and do not look to that one resolving factor which is love.” 
                                                                                                       (10)
নিজের মননের বিক্ষিপ্ততাকে অনুসরন কর -বোঝার চেষ্টা কর -গভীরে ঢোকার চেষ্টা কর কেন বিক্ষিপ্ত হচ্ছে মন।  কেন মন বিক্ষিপ্ত হচ্ছে যখন তার সম্পূর্ন সন্ধান পাবে, তখন দেখবে সেই বিক্ষিপ্ততা কেটে গেছে। মন আবার অশান্ত, বিক্ষিপ্ত হতেই পারে। সেই অশান্তি, সেই বিক্ষিপ্ততাকেও অনুসরন কর শেষ অব্দি। 

“Follow the wandering, the distraction, find out why the mind has wandered; pursue it, go into it fully. When the distraction is completely understood, then that particular distraction is gone. When another comes, pursue it also. ” 


                                                                                                             (11)
দুঃখের শেষ -প্রাজ্ঞতার শুরু। অজ্ঞানতার ছায়া জ্ঞানের ওপর ও প্রসারিত। ধ্যান হচ্ছে চিন্তা থেকে মুক্তি। সত্যের উপলদ্ধি থেকে যে পরমানন্দ, মহাভাব তার অনুভবন।  ধ্যান হচ্ছে বুদ্ধির বিষ্ফোরন।

“The ending of sorrow is the beginning of wisdom. Knowledge is always within the shadow of ignorance. Meditation is freedom from thought and a movement in the ecstasy of truth. Meditation is explosion of intelligence.”