অপর্ণা সেন কদিন আগে বলেছিলেন উনি দৈনন্দিন বাস্তবতা থেকে মুক্তি চাইছেন-তখনো জাপানিজ ওয়াইফ দেখা হয় নি আমার। রবিবারে দেখলাম। সত্যিই উনি বাংলা সিনেমাতে প্রথম ম্যাজিক রিয়ালিজম নিয়ে পরীক্ষা করার সাহস দেখালেন। ডেটাবাজার মিডিয়া ভেঞ্চারের (www.databazaarmedia.com) সৌজন্যে এখন সারা আমেরিকা জুরেই বাংলা সিমেমার হল স্ক্রীনিং শুরু হয়েছে-আমি সংস্কৃতি আয়োজিত প্রিমিয়ারেই সিনেমাটি দেখলাম মেরীল্যান্ডে।
দি জাপানিজ ওয়াইফ বুঝতে জাদু বাস্তবতার এলিমেন্ট গুলো বুঝতে হবে, তা মোটেও না। বেশ মিষ্টি প্রেমের ছবি। তবে ম্যাজিক রিয়ালিজমের সাথে পরচিতি থাকলে আরেকটু বেশী ভাল লাগবে।
ম্যাজিক রিয়ালিজম আসলে গল্প বলার বিশেষ স্টাইল-যেখানে একটি অবাস্তব গল্পকে নিঁখুত বা ডিটেইলড বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে পরিবেশন করা হয়। সেই অবাস্তব গল্পকে বিশ্বাস করানোর জন্যে ভীষন সূক্ষতার এবং পারদর্শিতার সাথে ফোটাতে হয় বাস্তব চরিত্র। এখানে গল্পকার হয়ে ওঠেন জাদুকর। পায়রা থেকে ফুল হয় না-কিন্ত গল্পকার এমন নিঁখুত বাস্তবতার সাথে পায়রার ফুল হওয়ার গল্প শোনাবেন যেন সেটাই সত্য বলে প্রতিভাত হবে।
ম্যাজিক রিয়ালিজম কিন্ত সারিয়ালিজম বা অধিবাস্তবতা না। অধিবাস্তবতাতে মনের অবচেতন গহণ অরণ্যে ডুব মারা হয়। আর ম্যাজিক রিয়ালিজমে খন্ড খন্ড বাস্তবতাকে এমন ভাবে জোড়া লাগানো হয়-তা হয়ে ওঠে একাধিক অত্যাশ্চর্য্য কাহিনীর সূতীগৃহ।
জাপানীজ ওয়াইফের গল্পটাও তাই। এখানে জাপানী মেয়ে নিয়াগী এবং বাঙালী অঙ্কের মাস্টারমশাই সুভময়-দুটি চরিত্রই দারুণ ভাবে বাস্তব। তাদের কর্মক্ষেত্রও জাপান এবং দক্ষিন বঙ্গ। মাতলা এবং নদীবঙ্গের জলভরা রূপের বাস্তবতার মধ্যে ততোধিক বাস্তব চরিত্র অঙ্কের মাস্টারমশাই সুভময়। নিয়াগীও রক্ষণশীল জাপানীজ নারী। কিন্ত এই দুই অতিবাস্তব চরিত্রকে মিলিয়ে দেয় এক অবাস্তব প্লট!
এদের প্রেমের গল্পটা যদি বাস্তব বা রিয়ালিজম দিয়ে ডেভেলপ করা হত-তাহলে পাত্র বা পাত্রী কাওকে জাপান বা বাংলাতে এসে প্রেম করতে হত বাস্তবে। ম্যাজিক রিয়ালিজমের প্রেমে মজাটা হচ্ছে-সেখানে দুটো বাস্তব চরিত্রকে বাঁধতে মোটেও বাস্তব কোন প্লট লাগে না। নিয়াগী এবং সুভময় পত্রমিতালী- পত্রে প্রেম বিনিময়েই তাদের বিবাহ! হাজার হাজার মাইল দূরত্বের প্রেম আজকাল ফেসবুকের যুগে আখছার হচ্ছে। কিন্ত আজ থেকে কুড়ি বছর আগে একটি অজ পাড়াগাঁয়ের স্কুলশিক্ষকের সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হচ্ছে একটি জাপানী মেয়ে-শুধু চিঠি পড়ে-এই অবিশ্বাস্য কাহিনীকে বাস্তব করার গল্প জাপানীজ ওয়াইফ। সেখানেই ম্যাজিক রিয়ালিজম।
এর আগে ঐশ্বরিয়া রায়ের মিসট্রেস অব স্পাইস দেখে মনে হয়েছিল সিলভার স্ক্রীনে ম্যাজিক রিয়ালিজম অসম্ভব। অপর্না সেন কিন্ত মুন্সীয়ানার সাথে প্রমাণ করলেন তা সম্ভব। ম্যাজিক রিয়ালিজমের সম্পূর্ন ফায়দা তুলেছেন পরিচালক। অনেক দৃশ্যই আমরা দেখব-যা অবাস্তব গল্প-কিন্ত পরিবেশনের মূর্ছনাতে, দর্শক বাধ্য হবে মেনে নিতে-এমটাত হতেই পারে। দৈনন্দিন বাস্তবতার বাইরে মুক্তির এই স্বাদ জাদুবাস্তবতাতেই সম্ভব। আমার দেখা সেরা জাদুবাস্তব সিনেমা -"লাভ ইন দি টাইম অব কলেরা" -সেখানে মার্কোয়েজ দুই নায়ক নায়িকাকে বাহুডোরে বেঁধেছিলেন তাদের প্রথম প্রেমের পঞ্চাশ বছর বাদে যখন তারা দাদু দিদিমা হয়ে গেছে। সেই বিবাহও যেমন ছিল অবাস্তব-এই গল্পও তাই। কিন্ত গোটা সিনেমাটা দেখলে নিয়াগী এবং সুভময়ের বিবাহের বাস্তবতাকে না মেনে উপায় নেই। সেই ইন্দ্রজাল মোহেই আবিষ্ট করবে "দি জাপানিজ ওয়াইফ"।
Wednesday, May 26, 2010
Thursday, May 20, 2010
আমরা ও তাহারা !
সান দিয়েগোর জ ক্রে ভেন্টার ইন্সটিউটে বিজ্ঞানীরা ঘটালেন নিশ্চুপ বিপ্লব। কৃত্রিম ডি এন এ তৈরী হল কেমিক্যাল সিন্থেসিস থেকে। এবং দেখা যাচ্ছে, তা ব্যাক্টেরিয়া কোষকে চালনা করতে সমর্থ। এদ্দিন ধরে ধর্মবাদিরা বিবর্তনবাদি দের গাল দিয়েছেন-যদি আমরা সত্যই জীবের জন্ম রহস্য জেনে থাকি কেন ল্যাবেরটরিতে কেমিক্যাল থেকে প্রাণ সঞ্চার করতে পারেন না বিজ্ঞানীরা? আমরা জানতাম এ শুধু সময়ের অপেক্ষা-আর ওই সব কথাবার্ত্তা নির্বোধ ধার্মিকদের হাজার অজ্ঞতার আরো একটি। ভেন্টরের বিজ্ঞানীকূল আজকে সেটাই করে দেখালেন-ল্যাবেরটরীতে প্রাণের সৃষ্টির প্রথম ধাপ। একদম কেমিক্যাল থেকে।
এর ফল হবে সুদূরপ্রসারী। বায়োফুয়েল বা কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদনের দিকে একধাপ এগোলো সভ্যতা।
পাশাপাশি আমাদের ভারতে আরো দুটি খন্ডচিত্র।
এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামিক পন্ডিতদের প্রতিষ্ঠান দার উলুম দিওবান্দরা ভারতে মুসলমান মেয়েদের ওপর ফতেয়া জারি করেছে। তারা চাকরি করতে পারবে না যেখানে পুরুষেরা চাকরি করে! এর বিরুদ্ধে অনেক বিশিষ্ট মুসলমান এবং মেয়েরা প্রতিবাদ জানিয়েছে-কিন্ত ভারতের ডান বা বাম বা মধ্যম কোন রাজনীতিবিদ টুঁ শব্দটি করে নি। সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ে বাম, ডান মধ্যম-সবাই ভাই ভাই। প্রশ্ন উঠছে ফতেয়া জারি করার মতন ক্রিমিন্যাল এক্টিভিটি করার সাহস হয় কি করে একটা ধর্ম নিরেপেক্ষ দেশে? অপরাধী খুঁজতে গেলে পন্ডিত নেহেরু থেকে রাজীব গান্ধী-অনেকের নামই বলতে হয়। এবং ভারতীয় বামেরাও ভোটের তাগিদে আদর্শবাদে পেচ্ছাপ করে, এইসব মৌলবাদের সেবাদাস হয়ে থাকবে।এর ফল হবে সুদূরপ্রসারী। বায়োফুয়েল বা কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদনের দিকে একধাপ এগোলো সভ্যতা।
পাশাপাশি আমাদের ভারতে আরো দুটি খন্ডচিত্র।
উল্লেখ্য এই একই দিনে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী এবং সোনিয়া গান্ধী বিবেকানন্দের আদর্শ প্রচার করার জন্যে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি বানাচ্ছেন। আমি অবশ্যই দিওবান্দের অশিক্ষিত মোল্লাদের সাথে বিবেকানন্দের তুলনা করছি না- বিবেকানন্দ ধর্মশিক্ষার থেকে বিজ্ঞান শিক্ষার ওপরই জোর দিতে বলেছিলেন সে কথা মানতেও বাধা নেই। কিন্ত বাস্তব ত এটাই বিবেকানন্দের আদর্শ অনুসরণ করে এই দেশে কিছু জাতিয়তাবাদি হিন্দুত্বের চাষাবাস হয়েছে। বিবেকানন্দ যতই আধুনিক শিক্ষার কথা মুখে বলে থাকুন না কেন-ভারতে আজকে বিজ্ঞান শিক্ষার স্থপতি জেসি বোস, সিভি রামন বা মেঘনাদ সাহা। মেঘনাদ সাহার বিজ্ঞানমুখী জন উন্নয়ন বা বিজ্ঞান চেতনার সার্বিক প্রসারের দায়িত্ব কেন সরকার নেবে না? স্যার সিভি রামন বরাবর চেয়েছেন বিজ্ঞানকে ভারতের সমস্যা গুলির সমাধানের জন্যে ব্যাবহার করতে। আজকে ভারতে যেটুকু বিজ্ঞান শিক্ষা এবং চেতনার প্রচার হয়েছে তার সবটাই তাদের জন্যে-এবং আমাদের মহান বিজ্ঞানীদের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেওয়া বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেকানন্দের চেয়ে অনেক বেশী জরুরী ছিল। বিবেকানন্দের "মানুষ গড়ার" শিক্ষা নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিলে আমি সাধুবাদই জানাবো-কিন্ত এর পাশাপাশি যদি ছাত্রদের মনে বিজ্ঞান চেতনার উন্মেষ না হয়-মানুষ গড়তে গিয়ে বানর তৈরী হবে। মানুষ তৈরী করাটা কোন শিক্ষা দিয়ে হয় না-মানব চেতনার উন্মেষই তার শ্রেষ্ঠ পথ। সাহিত্য, গান, বিজ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা-ইত্যাদি নানান মিশ্রনে মানব মনের সুষ্ঠ বিবর্তন থেকেই তৈরী হয় উন্নততর মানুষ। ধর্ম শিক্ষা দিয়ে বাঁদর তৈরী করার অনেক নমুনা আমি দেখেছি-একটাও মানুষ সেখান থেকে তৈরী হয় বলে আমার জানা নেই। আর তাছারা বিবেকানন্দ নিজের রচনাবলীতেই মানুষ হওয়ার জন্যে মনের এই প্রসারতা এবং চর্চার কথা বলে গেছেন। সুতরাং বিবেকানন্দ চর্চা করে ভারতীয় ছাত্ররা মানুষ হবে-এই ধরনের উন্মাদগামী চিন্তা আশু বর্জনীয়।
Tuesday, May 18, 2010
সোনিয়া গান্ধীকে আরেকবার ধন্যবাদ
প্রথমে মহিলা সংরক্ষণ বিল। তারপরে কর্পরেট দায়বদ্ধতার জন্যে কর্পরেট ম্যানেজমেন্টে শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব। এবং শেষে গতকাল কেন্দ্রীয় সরকার আরেকটি বিল আনতে চলেছেন-খনি এলাকাতে খনির মালিকদের লভ্যাংশের ২৬% স্থানীয় উন্নয়নে খরচ করতে হবে। প্রতিটি বিলের কারিগড়ই শ্রীমতি গান্ধী। এবং কোন সন্দেহ নেই তার সদিচ্ছার জন্যে বর্তমান ইউ পি এ সরকার কর্পরেট এবং ব্যাবসায়ীদের সামাজিক ভাবে আরো দায়বদ্ধ করতে চাইছে।
দুর্ভাগ্য এই যে, এই বিলগুলির পেছনে কর্পরেট সমর্থনের চেয়ে বিরোধিতা বেশী চোখে লাগছে। দুর্ভাগ্যজনক। কারন আমেরিকাতে সি ই ওরা সবাই স্বীকার করেন, কর্পরেট জগত সামাজিক দায়বদ্ধতা কাটিয়ে যেভাবে শেয়ার মার্কেটের নিকট নিজেদের গচ্ছিত রেখেছে-তাতে নাগরিক, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি আসন্ন। ধণতন্ত্রের পীঠস্থানে আমেরিকান কর্পরেট রথী মহারথীরা যখন, এই দায়বদ্ধতা মেনে নিচ্ছেন- তখন ভারতীয় ব্যাবসায়ী সমাজ, এটা মানতে পারছে না। কারন যুগ যুগ ব্যাপী সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব। তারা বোর্ড অব গর্ভনর্সে শ্রমিকদের প্রতিনিধিকে মানতে চাইছে না। কারন সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শঠতা করতে অসুবিধা।
সব থেকে বড় কথা এসব নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক মিডিয়াতেও খুব বেশী খবর চোখে পড়ে না। কারন মিডিয়াও ত সেই কর্পরেটদের অনেক চাকার সব থেকে বড় চাকা। আর যাদের এই ব্যাপারে সব থেকে বেশী কংগ্রেসকে সমর্থন করা দরকার-এবং মিডিয়া ও জনগনকে এই ব্যাপারে সচেতন করা দরকার-সেই সাবেকি বামপন্থীরা ভোটপন্থী রাজনীতির সার্কাসে আজ জয়ললিতা কাল মায়াবতীর খাটে ঘুর ঘুর করছে। আমাদের বৃহত্তম বামপন্থী দল সিপিএমের নেতাদের উৎসাহ শুধু নিজেদের ছেলে মেয়েদের চাকরি এবং সুবিধা নিয়ে। আর মাঝে মধ্যে মমতাকে দুপ্রস্থ গালাগাল দেওয়া। এই হচ্ছে আমাদের বৃহত্তম বামপন্থী দলের বামপন্থা। সেখানে সোনিয়া গান্ধী অত্যন্ত দৃঢ় ভাবেই সমাজ এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রগতিশীল আইনগুলি
প্রণয়ন করছেন। তার চিন্তা এবং নেতৃত্বে আমরা গভীর পরিণতি ছাপ লক্ষ্য করছি। এই ব্যালান্সটা ভারতে অন্যান্য দলগুলির মধ্যে নেই।
দুর্ভাগ্য এই যে, এই বিলগুলির পেছনে কর্পরেট সমর্থনের চেয়ে বিরোধিতা বেশী চোখে লাগছে। দুর্ভাগ্যজনক। কারন আমেরিকাতে সি ই ওরা সবাই স্বীকার করেন, কর্পরেট জগত সামাজিক দায়বদ্ধতা কাটিয়ে যেভাবে শেয়ার মার্কেটের নিকট নিজেদের গচ্ছিত রেখেছে-তাতে নাগরিক, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ক্ষতি আসন্ন। ধণতন্ত্রের পীঠস্থানে আমেরিকান কর্পরেট রথী মহারথীরা যখন, এই দায়বদ্ধতা মেনে নিচ্ছেন- তখন ভারতীয় ব্যাবসায়ী সমাজ, এটা মানতে পারছে না। কারন যুগ যুগ ব্যাপী সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব। তারা বোর্ড অব গর্ভনর্সে শ্রমিকদের প্রতিনিধিকে মানতে চাইছে না। কারন সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শঠতা করতে অসুবিধা।
সব থেকে বড় কথা এসব নিয়ে আলোচনা বা বিতর্ক মিডিয়াতেও খুব বেশী খবর চোখে পড়ে না। কারন মিডিয়াও ত সেই কর্পরেটদের অনেক চাকার সব থেকে বড় চাকা। আর যাদের এই ব্যাপারে সব থেকে বেশী কংগ্রেসকে সমর্থন করা দরকার-এবং মিডিয়া ও জনগনকে এই ব্যাপারে সচেতন করা দরকার-সেই সাবেকি বামপন্থীরা ভোটপন্থী রাজনীতির সার্কাসে আজ জয়ললিতা কাল মায়াবতীর খাটে ঘুর ঘুর করছে। আমাদের বৃহত্তম বামপন্থী দল সিপিএমের নেতাদের উৎসাহ শুধু নিজেদের ছেলে মেয়েদের চাকরি এবং সুবিধা নিয়ে। আর মাঝে মধ্যে মমতাকে দুপ্রস্থ গালাগাল দেওয়া। এই হচ্ছে আমাদের বৃহত্তম বামপন্থী দলের বামপন্থা। সেখানে সোনিয়া গান্ধী অত্যন্ত দৃঢ় ভাবেই সমাজ এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে প্রগতিশীল আইনগুলি
প্রণয়ন করছেন। তার চিন্তা এবং নেতৃত্বে আমরা গভীর পরিণতি ছাপ লক্ষ্য করছি। এই ব্যালান্সটা ভারতে অন্যান্য দলগুলির মধ্যে নেই।
Monday, May 17, 2010
নির্বোধ বনাম সুবোধ
কলকাতা সহ বাকী মিউনিসিপাল নির্বাচনগুলিতে জোট সত্যিই তাহলে হল না। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ভঙ্গুর। বিধানসভায় জোট হইবে বলিলেই জোট হইবে না। জোট রাজনীতিত আর রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প না, যে "কথা দুকান না হইলে প্রজাপতির দুটি পাখা এক হইবে কেন" টাইপের ডায়ালোগ দিয়ে বরকর্ত্তা "প্রণব বাবু" ম্যানেজ করবেন।
রাজনীতি গেম থিওরীর স্ট্রাটেজিক খেলা। যে খেলতে পারে, সেই সফল রাজনীতিবিদ। এইজন্যেই কমিনিউস্ট আদর্শবাদের ১৮০ ডিগ্রি বিপক্ষে থেকেও, আমি স্বীকার করি, লেনিন আমার জানা সর্বাধিক সফল রাজনীতিবিদ। ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে লেনিন যখন রাশিয়াতে ফিরলেন, তখন বলশেভিক পার্টি প্রায় শেষ-অথচ, তার স্ট্রাটেজির গুণে অক্টবর মাসের মধ্যেই বলশেভিকরা প্রবল শক্তিরূপের আবির্ভুত হয়। কেন? ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে লেনিন যখন আসেন নি-স্ট্যালিন কেমেনকভ এরা সবে পার্টির মুখপত্র প্রাভদাকে চালানো চেষ্টা করছেন-তখন বলশেভিকদের মধ্যে অধিকাংশই রাশিয়ার প্রভিন্সিয়িয়াল সরকারের সমর্থক ছিলেন যেহেতু নীতিগত ভাবে সেই সরকারও বামপন্থীই ছিল। স্টালিন কেরেনাস্কির সমর্থনে সম্পাদকীয়ও লিখেছিলেন। লেনিন প্রথমে এসেই সেই সমঝোতার লাইন বাতিল করে দেন। উনি দেখলেন কেরেনাস্কির সাথে থাকলে, আস্তে আস্তে বলশেভিক পার্টিটাই উঠে যাবে-কারন ক্ষমতায় থাকার জন্যে কেরেনাস্কির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক বিদ্রোহ হবেই। এবং শুধু বামপন্থী বলে কেরেনাস্কির পাশে থাকলে, সরকার বিরোধি সেই হাওয়াতে দক্ষিনপন্থীরা নৌকা ভাসাবে। ফলে লেনিন বলশেভিক পার্টিকে সম্পূর্নভাবে বিরোধি পার্টির ভূমিকাতে নিয়ে আসেন দ্রুত জমি দখল করার জন্যে।
প্রশ্ন তুলবেন, আমি ধান ভাংতে কেন শিবের গীত গাইছি? আসলে মিউনিসিপাল নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভূমিকা দেখে অনেকের মতন আমিও হতাশ কারন এদের সবাই ক্ষমতার ক্কীরভোগ খেতে চাইছে। কেওই সুষ্ঠ বিরোধি রাজনীতির মধ্যে দিয়ে জমি দখলের লড়াই এ বিশ্বাস করে না। কথাটা কংগ্রেসের নেতাদের জন্যেই আমি বেশী বলবো। তৃণমূলের বক্তব্য এই তরমুজি কংগ্রেসীগুলোর জন্যে পশ্চিম বঙ্গে সিপিএম এতদিন রাজত্ব করেছে। কথাটা খুব মিথ্যে না। এক কথা যেকোন কংগ্রেসীই স্বীকার করবেন। কিন্ত এটাও ঠিক উত্তরবঙ্গে সিপিএমকে কোনঠাসা করে রেখেছিল কংগ্রেসই। সুতরাং ব্যার্থতা আসলে কংগ্রেসের দক্ষিন বঙ্গের নেতাদের এবং ব্যার্থতার জন্যে দক্ষিন বঙ্গের নেতাদের কি হলো তাই নিয়ে জনগণের মাথা ব্যাথাও নেই। সেই ক্ষেত্রে তৃণমূল যা চেয়েছিল-সেটা দিয়ে দিলে কোন ক্ষতি হত না কংগ্রেসের। কারন তারা মেয়র পরিশদে না বসে তৃণমূলের বিরোধি পক্ষে যেতে পারতেন মিউনিসিপালিটিতে। সেটাই হত জমি দখলের উৎকৃষ্ট লড়াই। কারন তৃণমূলের নেতৃত্বের যা কোয়ালিটি এরা ক্ষমতায় আসলে ছড়াবেই-এবং তৃণমূল বিরোধিতা সম্পূর্ন সিপিএমের হাতে সেই দিন ছেড়ে দিলে কংগ্রেস আরো ডুবে যাবে।
কংগ্রেস জাতীয় পার্টি। যে পার্টির উর্দ্ধে সোনিয়া গান্ধীর মতন বিচক্ষণ নেত্রী - মনমোহন, চিদাম্বরম এবং প্রনব বাবুর মতন দক্ষ নেতারা সরকার চালান, সেই ১২০ বছরের পার্টি, মাত্র কটা আসন ছাড়ার জন্যে মাটি হারাত না। তৃণমূলকে আজকে যারা ভোট দিচ্ছে তাদের ৫% ও তৃনমূলের ডাই-হার্ড সমর্থক না। তারা গোঁড়া সিপিএম বিরোধি। কালকে সরকার চালাতে গিয়ে তৃণমূল যখন অপ্রিয় হত সেই ভোটগুলো কংগ্রেসেই আসত। শুধু ধৈর্য্য ধরে জনগণের পাশে থেকে বুঝতে হত তৃণমূল এবং সিপিএম বিরোধিতার জায়গাটা । মাঝখান থেকে এইভাবে পার্থী দেওয়ার জন্যে কংগ্রেসের সিপিএম বিরোধিতার সদিচ্ছাটাই ধাক্কা খেল।
তৃণমূল বিধানসভা, মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে বেশী আসন চাইলে নিক। কংগ্রেস সেটা মেনে নিক-কেন্দ্রে যাদের হাতে ক্ষমতা তাদের কি সমস্যা আছে একট নির্বাচনে জমি ছেড়ে দিতে? ক্ষমতার আলিন্দ থেকে সিপিএমের দ্বীপ যেদিন র্নিবাপিত হবে, তৃণমূলের বিরোধি দলের ভুমিকাটাই এই রাজ্যের সব থেকে বড় জমি হবে। সেখানে সিপিএমকে চাষাবাদ করতে দিলে, ২০১৬ সালে আবার সেই সিপিএম ফিরবে।লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে বাধ্য -কারন কংগ্রেসের সাথে না থাকলে মুসলিমরা একটি ভোটও তৃণমূলকে দেবে না।
সুতরাং কংগ্রেসের কোন নেতাই স্ট্রাটেজিতে বিশ্বাস না করে, পাড়ার দাদাগিরিতে বেশী আস্থা রাখছেন। এতে কংগ্রেসের সংগঠন এই রাজ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এদের কারুর দূরদৃষ্টি নেই-কেও কেও হয়ত সিপিএম থেকে সুবিধাও খাচ্ছেন। সবই হতে পারে। এদের বোঝা উচিত এই রাজ্যে কংগ্রেসী রাজনীতি বলে কিছু নেই-আছে সিপিএম এবং এন্টিসিপিএম ভোট। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে ২০১১ সালে-তদ্দিন পর্যন্ত তৃণমূলকে না মানলে , খরকুটোর মতন উড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
২০১১ সালের পর কংগ্রেস তৃনমূল বিরোধিতার পথে গেলে, সেটা হবে স্ট্রাটেজি-আর এখন গেলে, তা হবে আত্মহত্যা।
রাজনীতি গেম থিওরীর স্ট্রাটেজিক খেলা। যে খেলতে পারে, সেই সফল রাজনীতিবিদ। এইজন্যেই কমিনিউস্ট আদর্শবাদের ১৮০ ডিগ্রি বিপক্ষে থেকেও, আমি স্বীকার করি, লেনিন আমার জানা সর্বাধিক সফল রাজনীতিবিদ। ১৯১৭ সালের এপ্রিল মাসে লেনিন যখন রাশিয়াতে ফিরলেন, তখন বলশেভিক পার্টি প্রায় শেষ-অথচ, তার স্ট্রাটেজির গুণে অক্টবর মাসের মধ্যেই বলশেভিকরা প্রবল শক্তিরূপের আবির্ভুত হয়। কেন? ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে লেনিন যখন আসেন নি-স্ট্যালিন কেমেনকভ এরা সবে পার্টির মুখপত্র প্রাভদাকে চালানো চেষ্টা করছেন-তখন বলশেভিকদের মধ্যে অধিকাংশই রাশিয়ার প্রভিন্সিয়িয়াল সরকারের সমর্থক ছিলেন যেহেতু নীতিগত ভাবে সেই সরকারও বামপন্থীই ছিল। স্টালিন কেরেনাস্কির সমর্থনে সম্পাদকীয়ও লিখেছিলেন। লেনিন প্রথমে এসেই সেই সমঝোতার লাইন বাতিল করে দেন। উনি দেখলেন কেরেনাস্কির সাথে থাকলে, আস্তে আস্তে বলশেভিক পার্টিটাই উঠে যাবে-কারন ক্ষমতায় থাকার জন্যে কেরেনাস্কির বিরুদ্ধে শ্রমিক-কৃষক বিদ্রোহ হবেই। এবং শুধু বামপন্থী বলে কেরেনাস্কির পাশে থাকলে, সরকার বিরোধি সেই হাওয়াতে দক্ষিনপন্থীরা নৌকা ভাসাবে। ফলে লেনিন বলশেভিক পার্টিকে সম্পূর্নভাবে বিরোধি পার্টির ভূমিকাতে নিয়ে আসেন দ্রুত জমি দখল করার জন্যে।
প্রশ্ন তুলবেন, আমি ধান ভাংতে কেন শিবের গীত গাইছি? আসলে মিউনিসিপাল নির্বাচনে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের ভূমিকা দেখে অনেকের মতন আমিও হতাশ কারন এদের সবাই ক্ষমতার ক্কীরভোগ খেতে চাইছে। কেওই সুষ্ঠ বিরোধি রাজনীতির মধ্যে দিয়ে জমি দখলের লড়াই এ বিশ্বাস করে না। কথাটা কংগ্রেসের নেতাদের জন্যেই আমি বেশী বলবো। তৃণমূলের বক্তব্য এই তরমুজি কংগ্রেসীগুলোর জন্যে পশ্চিম বঙ্গে সিপিএম এতদিন রাজত্ব করেছে। কথাটা খুব মিথ্যে না। এক কথা যেকোন কংগ্রেসীই স্বীকার করবেন। কিন্ত এটাও ঠিক উত্তরবঙ্গে সিপিএমকে কোনঠাসা করে রেখেছিল কংগ্রেসই। সুতরাং ব্যার্থতা আসলে কংগ্রেসের দক্ষিন বঙ্গের নেতাদের এবং ব্যার্থতার জন্যে দক্ষিন বঙ্গের নেতাদের কি হলো তাই নিয়ে জনগণের মাথা ব্যাথাও নেই। সেই ক্ষেত্রে তৃণমূল যা চেয়েছিল-সেটা দিয়ে দিলে কোন ক্ষতি হত না কংগ্রেসের। কারন তারা মেয়র পরিশদে না বসে তৃণমূলের বিরোধি পক্ষে যেতে পারতেন মিউনিসিপালিটিতে। সেটাই হত জমি দখলের উৎকৃষ্ট লড়াই। কারন তৃণমূলের নেতৃত্বের যা কোয়ালিটি এরা ক্ষমতায় আসলে ছড়াবেই-এবং তৃণমূল বিরোধিতা সম্পূর্ন সিপিএমের হাতে সেই দিন ছেড়ে দিলে কংগ্রেস আরো ডুবে যাবে।
কংগ্রেস জাতীয় পার্টি। যে পার্টির উর্দ্ধে সোনিয়া গান্ধীর মতন বিচক্ষণ নেত্রী - মনমোহন, চিদাম্বরম এবং প্রনব বাবুর মতন দক্ষ নেতারা সরকার চালান, সেই ১২০ বছরের পার্টি, মাত্র কটা আসন ছাড়ার জন্যে মাটি হারাত না। তৃণমূলকে আজকে যারা ভোট দিচ্ছে তাদের ৫% ও তৃনমূলের ডাই-হার্ড সমর্থক না। তারা গোঁড়া সিপিএম বিরোধি। কালকে সরকার চালাতে গিয়ে তৃণমূল যখন অপ্রিয় হত সেই ভোটগুলো কংগ্রেসেই আসত। শুধু ধৈর্য্য ধরে জনগণের পাশে থেকে বুঝতে হত তৃণমূল এবং সিপিএম বিরোধিতার জায়গাটা । মাঝখান থেকে এইভাবে পার্থী দেওয়ার জন্যে কংগ্রেসের সিপিএম বিরোধিতার সদিচ্ছাটাই ধাক্কা খেল।
তৃণমূল বিধানসভা, মিউনিসিপালিটি নির্বাচনে বেশী আসন চাইলে নিক। কংগ্রেস সেটা মেনে নিক-কেন্দ্রে যাদের হাতে ক্ষমতা তাদের কি সমস্যা আছে একট নির্বাচনে জমি ছেড়ে দিতে? ক্ষমতার আলিন্দ থেকে সিপিএমের দ্বীপ যেদিন র্নিবাপিত হবে, তৃণমূলের বিরোধি দলের ভুমিকাটাই এই রাজ্যের সব থেকে বড় জমি হবে। সেখানে সিপিএমকে চাষাবাদ করতে দিলে, ২০১৬ সালে আবার সেই সিপিএম ফিরবে।লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে বাধ্য -কারন কংগ্রেসের সাথে না থাকলে মুসলিমরা একটি ভোটও তৃণমূলকে দেবে না।
সুতরাং কংগ্রেসের কোন নেতাই স্ট্রাটেজিতে বিশ্বাস না করে, পাড়ার দাদাগিরিতে বেশী আস্থা রাখছেন। এতে কংগ্রেসের সংগঠন এই রাজ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এদের কারুর দূরদৃষ্টি নেই-কেও কেও হয়ত সিপিএম থেকে সুবিধাও খাচ্ছেন। সবই হতে পারে। এদের বোঝা উচিত এই রাজ্যে কংগ্রেসী রাজনীতি বলে কিছু নেই-আছে সিপিএম এবং এন্টিসিপিএম ভোট। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে ২০১১ সালে-তদ্দিন পর্যন্ত তৃণমূলকে না মানলে , খরকুটোর মতন উড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে।
২০১১ সালের পর কংগ্রেস তৃনমূল বিরোধিতার পথে গেলে, সেটা হবে স্ট্রাটেজি-আর এখন গেলে, তা হবে আত্মহত্যা।
Subscribe to:
Posts (Atom)