Wednesday, January 28, 2009
অসীমার মৃত্যুঃ সত্যিটা আমরা কবে স্বীকার করবো?
ঘটনাটা এই রকম। মেয়েটি সুন্দরী-চিত্তাকর্ষক কিশোরী। পরিবার হত-দরিদ্র। দরিদ্র সুন্দরীমেয়েদের রাজরাণী বানানোর স্বপ্ন দেখিয়ে বেশ্যাবৃত্তিতে নামানোর ঘটনা নতুন কিছু নয়। খবরে প্রকাশ গত দশ বছরে বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গ থেকে পঁচিশ লাখ মেয়ে মুম্বাইয়ে পাচার হয়েছে। আরো ভালো করে বলা যাক। অধম এই বাঙালী জাতির জীবনে জীবিকা অর্জনের পথ কমেছে-কিন্তু কমেনি টিভিতে ভাল থাকার, ভাল জীবনের লোভনীয় হাতছানি। ফলে দুই বাংলার গ্রাম থেকেই পুরুষ যেমন জীবিকার দায়ে দেশ-গ্রাম ছাড়া, তেমনই অসহায় মেয়েদের ঠাঁই হয়েছে মুম্বাই, দুবাই এর বাজারে। হ্যাঁ জীবিকার জন্যে, গণিকাবৃত্তির জন্যে চিরকালই সবদেশেই এমন হয়ে এসেছে-কিন্তু তথ্য এটাও বলছে মুম্বাই এর বাজারে সব থেকে বেশী মেয়ে আসে নেপাল, বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে। পেটের তাড়না-কিছুটা ভালো থাকার হাতছানিত থাকেই। যে মেয়েগুলো আগে যায়, তারা দুদিন বাদে শাড়ি গহনা পড়ে ফিরে এসে গ্রামের অন্য মেয়েদের ফুঁসিয়ে নিজেই এজেন্ট হয়ে যায়। পশ্চিম ভারতের কিছু লোকের হাতে অগাধ টাকা-রক্ষিতা, গণিকা থেকে নর্তকী হওয়ার অনেক কাজই জুটে যায়। যারা একটু দেখতে ভাল, স্মার্ট তাদের জন্যে দুবাই এর কাজ বাঁধা! হত দরিদ্রের পরিবার-আগে পেটে ভাত জুটত না। এখন যখন মেয়ে মুম্বাই থেকে থোকটাকা পাঠাচ্ছে-তাদের বাবা-মায়েরা কি জানতে চাই, কি মূল্যের বিনিময়ে মেয়ে এইটাকা পাঠাচ্ছে? এদের কিভাবে এক দঙ্গল পুরুষদের পার্টিতে (কখনো সখনো মেয়েরাও থাকেন) নগ্ন করে নাচানো হয়-তারা নানান ক্লিপ গোটা ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ডে বিচরন করছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না-নারীত্বের কত অবমাননা, কত জ্বালা সহ্য করে এরা দেশের বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছেন। কারন, গর্বিত বুদ্ধিমান বাঙালীর জাতে সৌভাগ্যক্রমে জন্মেছেত, তাই পেটে ভাত নেই-দেহ বেচে খাওয়াই নিয়তি।
যাইহোক অসীমার গল্পটা অন্যরকম। মেয়েটি মুম্বাই গিয়ে কিছু টাকা, 'খ্যাতি' অর্জন করে ফিরেও আসে। যদ্দুর খবর পাওয়া যাচ্ছে-রেপুটেশনের দৌলতে বিদেশের টিকিটও মিলে গিয়েছিল। কিন্ত অপমানের জীবনে ফিরতে চাই নি অসীমা। এজেন্টরা টাকার থলি নিয়ে তার বাবা-মায়ের কাছে ঘুর ঘুর করছিল। ঘর থেকে তাকে মুম্বাইয়ে পাঠানোর চাপ ছিলই। এর মধ্যেই দ্বায়িত্বজ্ঞান হীন সাংবাদিকতা করে বসে এক বাঙালী দৈনিক। যখন এমনিতেই অসীমাকে নিয়ে সাতকানে গুঞ্জন, দুবরাজপুরের গ্রামে মুম্বাই ফেরত মেয়েদের "বৈভবশালী" জীবনের নেপথ্য কাহিনী ছাপা হল। ঘরে এবং বাইরে এত চাপ সহ্য করার ক্ষমতা বোধ হয় ছিল না এই কিশোরীর।
অসীমা আত্মহত্যা করলেই যদি এই ঘটনার শেষ হত-তাও মানা যেত-এমন কি হইল। কিন্তু বাঙালীত!-ঘোলা জলে মাছ তুলতে নেমে গেল আরেক দৈনিক-যারা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মুখপাত্র। যে আত্মহত্যা বিশ্লেষন করে বাঙালীর অধোগতির আত্মবিশ্লেষন করা ছিল আবিশ্যিক-তা না করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার খেলা দেখছি আমরা। অথচ পশ্চিম বঙ্গে বেকারত্বের এই হালের জন্যে সিপিএম এবং তৃণমূল-কারুর দায়ই খুব কম না।
অসীমার বাবার যদি আজ একটা ভদ্র চাকরী থাকত, তাহলে জেনে শুনে কি উনি মেয়েকে উলঙ্গ করে নাচতে পাঠাতেন? এই কথাটা ত কেও তুলছে না! পশ্চিম বঙ্গে বেকারীর হার ভয়াবহ। দিন মজুররা মোটে বছরে কুড়ি দিন কাজ পাই এই রাজ্যে। তাও মাত্র দিনে পঞ্চাশটাকা মজুরী। গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের দিনমজুররা পাচ্ছে বছরে ৮০ থেকে ৯০ দিন-মজুরী নব্বই টাকা। কারন কৃষি ছাড়া পশ্চিম বঙ্গে দিন মজুরদের গতি নেই-গুজরাটে অনেক শিল্প আছে। তাই কৃষিতে দিনমজুরদের চাহিদা এবং উপায় বেশী, যেহেতু শিল্পেও অনেকে দিনমজুরী খাটছে।
আমাদের একটুও ত বোঝা উচিত-দারিদ্র কোন অবস্থায় পৌঁছালে বাবা-মা নিজের মেয়েকে বেচে দিতে বাধ্য হয়? অসী্মা ত কোন ব্যাতিক্রম নয়। গত দশ বছরে এরকম দশলক্ষ অসীমাকে বেচে দিয়েছে বাঙালী বাবা মায়েরা। কি করবে? বছরে কুড়িদিন রোজ করে ত নিজেরেই ভাত জোটে না।
শিল্পায়ন না হলে পশ্চিম বঙ্গে আরো অসীমারা জন্ম নেবে। যারা শিল্পায়নের বিরোধিতা করছে জমির অজুহাতে-তাদের বাড়ির মেয়েদেরত আর অসীমা খাতুন হতে হয় না। তারা এই জ্বালা আর বুঝবে কি করে?
দুর্ভাগ্য আমাদেরই। পেটে ভাত থাকলে বাঙালী ইন্টেলেকচ্যুয়াল মাস্টারবেশন করতে ভালোবাসে। সেই বুদ্ধিদীপ্ত কামোত্তেজনায় কি আর হাভাতে অসীমাদের কথা এদের মনে থাকে?
Tuesday, January 27, 2009
জ়য় শ্রীরাম! দেশটা কি এবার হনুমানেরা চালাবে?
যাই হোক, প্রাসাদ আভভতারের সাথে তালিবানদের কোন পার্থক্য নেই সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে ধর্মের নাম ত ইসলাম বা হিন্দুত্ব হয় না। মানুষের আসল ধর্ম দুটি-পুরুষ এবং নারী। পুরুষের ধর্মের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে নারীর গর্ভের অধিকার সুরক্ষা করা। সেই গর্ভের দাবীর জন্যেই সমস্ত ধর্মের সৃষ্টি। ফলে নারী ফল খাবে না মদ খাবে, বোরখা পড়বে না বিকিনি পড়বে-তা ঠিক করে পুরুষ। আর বিবর্তনজনিত কারনে, মেয়েরা যেহেতু জানে, তারা নিজেরাই সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম, সেহেতু তারা পুরুষের আধিপত্য মেনে নিয়েছে আবাহমানকাল থেকে। মানে যথেষ্ঠ এগ্রেসিভ নয় মেয়েরা। সাধে কি মার্গারেট মিড বলেছিলেন-রেখেছ রমণী করে, কারন তুমি ভেবে বসে আছ কোন পুরুষ এসে তোমার জৈবিক উত্তরাধিকারের প্রোটেকশন দেবে। পুরুষ কি সেই সুযোগ ছাড়ে? কি সুন্দর ধর্ম ধর্ম ধূপ ছড়িয়ে মেয়েদের স্বাভাবিক অধিকারগুলো-যা পশুকূলেও স্বীকৃত। মানবকূলে নেই। কারন এখানে বাবারা নিশ্চিত করতে চান, সন্তান তার নিজের। এই হ্যাপাটা পশুকূলে নেই-মানব সমাজেও আগে ছিল না। কৃষিভিত্তিক সমাজে যবে থেকে পুরুষের এই ইচ্ছা চেপেছে, তবে থেকে ধর্মটা মেয়েদের গলার ফাঁস।
এই হনুমান শ্রেষ্ঠ প্রাসাদ আভভাতারের কথাই ভাবুন। কি সুন্দর বলে দিল ভারতীয় সনাতন ঐতিহ্যে মহিলারা মদ্যপান করে না-তাই যারা পাবে মদ্যপান করতে ঢুকেছিল তাদের পিটিয়েছে। তা ভারতের সনাতন ঐতিহ্যটা কি? ঋকবেদ? তাহলে ত বাপু, ওটা সুরাপান করে টালমাটাল হওয়ার বই। ওই বেদটির অনেক ছত্রেই পাওয়া যাবে নারীরা সুরাপান করে ইন্দ্রকে বলছে, তোমার মতন পুরুষ দাও! শুতে লাগবে! কি গেরোরে বাবা! ঋকবেদের মেয়েরা শুধু মদ্যপানেই থামে নি-মাল খেয়ে টসকে আবার সুন্দর পুরুষের শয্যাশায়ী হতে চেয়েছে! একদম খুল্লাম খুল্লা ওয়েস্টার্ন স্টাইল ভাই! আসলে তখনো আর্য্যরা ধান ক্ষেত দেখে নি-যাযাবরের জীবনে আছে। তাই যৌনতা আর মদ্যপান নিয়ে মেদেদের ওখানে কোন ইনহিবিশন নেই। কোন ছুৎমার্গ নেই।
কিন্ত এই শ্রীরাম সেনার আছে। আদের আদর্শ নারী সীতা। সতী সাবিত্রী সাদ্ধী। তখন আর্য্যরা কৃষিকাজ শিখে গেছে। জমি তার সম্মপ্তি। সেই জমির উত্তরাধিকার কে পাবে? সুতরাং সন্তান বিশুদ্ধ না হলে চলে কি করে? শুধু তার সাথেই শোবে-বাকীদের বেলায় মাটিতে চোখ রাখবে। স্বামী মারাগেলে চিতায় না গেলেও বিধবা থাকতেই হবে! কারন বিধবার বিয়ে হলে সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা! ফলে মনুবল্লেন বিধবাকে ভোগ কর-কিন্তু বিয়ে করতে দিও না! যাইহোক এই সতী সাবিত্রীর পবিত্রতার মূল কথা হল-সম্পত্তির উত্তরাধিকারের বিশুদ্ধতা। তাই চাই বিশুদ্ধ পুত্র। এতেব নারীকে ঘরে ঢোকাও। ছেলেদের সাথে মদ্যপান ত অনেক দূর।
যতদিন না নারী বুঝবে এই পৃথিবীতে ধর্ম দুটি-পুরুষ আর নারীর ধর্ম। হিন্দু-ইসলাম [বা অন্য ধর্ম] আসলেই নারীকে দাবিয়ে রাখার জন্যে একটি ধর্মের দুটি নাম। সেটি পুরুষের ধর্ম। ততদিন এই শ্রীরাম সেনাদের হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই। কারন মেয়েদের একটা সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই, এই শ্রীরাম সেনারদের হাতে নিজেদের সমর্পিত সীতা বলে ভাবে। নারীর চেতনা আগে মুক্ত হৌক।
Thursday, January 22, 2009
প্রণবকে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করে নিজেদের দুর্বলতাকেই স্বীকৃতি দিল কংগ্রেস
অবশ্য সোনিয়া করবেন ই বা কি? প্রিয় ছাড়া, এই রাজ্যে সবাই মানবে এমন নেতা ছিল না। কংগ্রেসের অবস্থা দেখলে বোঝার উপায় নেই-এই রাজ্যে তারা সাইন বোর্ড না আন্দোলন করার ইচ্ছা আছে। এত সত্ত্বেও ভোটে কংগ্রেস খুব খারাপ কিছু করছে না-কারন সাধারন রাজ্যবাসী সিপিএম এবং মমতা-দুই দলের ওপরেই খাপ্পা। বাম এবং বাম বিরোধি ভোট এর যে বিভাজন আগে ছিল-এখন তা ফিকে। কারন মমতা ব্যানার্জি অধুনা মাওবাদিদের নিয়ে তৃণমূলকে অতিবাম দল বানিয়েছেন। বাম মনোভাবা সম্পন্ন নক্সালরা-যাদের বন্দুক ধরার ক্ষমতা নেই-তারা ইদানিং দিদির আঁচল ধরে, তৃণমূল হয়েছেন। ফলে এখন পশ্চিম বঙ্গে তিনটি শ্রোত-বাম এবং উন্নয়ন পন্থী। এই মধ্যবিত্ত গোষ্ঠি মূলত সিপিএমের সমর্থক। বাম এবং ধণতন্ত্র বিরোধি ও ভূমিহীন কৃষক-এরাই এখন তৃণমূলের পিলার। যা আগে সিপিএমের এক চেটিয়া ছিল। এর সাথে আছে কিছু অন্ধ সিপিএম বিরোধি। এরা সবাই তৃণমূল।
এর বাইরে একটা বিশাল ভোটবেস ছিল-সেটা উন্নয়নপন্থী বাম বিরোধি মধ্যবিত্তদের ভোটার বেস। অন্যান্য রাজ্যে এটাই মেইন স্ট্রীম ভোট ব্যাঙ্ক। এই ভোটটা কংগ্রেসের টানার কথা। কিন্ত রাজ্য নেতাদের কি আর সেই সময় আছে? প্রিয়বাবু ভালোই শুরু করেছিলেন। কিন্ত তিনি অসুস্থ হতেই কংগ্রেস আবার সাইনবোর্ড টাঙিয়ে ঘুমাচ্ছে। এইভোট ব্যাঙ্কটা কংগ্রেস অনায়াসেই কনসলিডেট করতে পারত-যদি যোগ্য নেতা থাকত। প্রণব বাবুকে দিল্লীর দ্বায়িত্ব সামলাতে হয়। উনাকে ওপরে বসিয়ে কমিটি তৈরী করে কি এই কাজ হবে? নিদেন পক্ষে অধীর চৌধুরীকে ভোটের দ্বায়িত্বটা দিতে পারতেন সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু দলে এত অধীর-বিরোধি লোক-উনিই বা কি করবেন! আজকেই শুনলাম মালদহে কংগ্রেস ভাঙছে। এসব কিছুই হত না। যদি কংগ্রেস একটি উন্নয়ন মুখী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত। দিদি যেভাবে উন্নয়ন বিরোধি আন্দোলনে টাটাকে বাই বাই করেছেন-তাতে যারা পশ্চিম বঙ্গের উন্নয়ন দেখতে চান-এবং সিপিএমকে পছন্দ করেন না, তাদের ত একটা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে?? এটা ত কংগ্রেস তুলতে পারত? সেই সুদিন বোধ হয় পশ্চিম বঙ্গের ভাগ্যে নেই।
Tuesday, January 20, 2009
এক রাজপুত্রের অভিষেকের সাক্ষী
ওবামার ভাষন চলছে-লাখে লাখে লোক টিকিট সত্ত্বেও ঢুকতে পারে নি-হতভাগ্যের দল বাইরে থেকেই হাজার ফুট দূরে ফোকাস করছে
সুন্দর সোনালী রোদের সকাল-ঝলমলে কিন্ত তাপমাত্রা শুন্যের কিছু নীচে
ওয়াশিংটনের রাস্তা শুধুই লোকে লোকারন্য
Monday, January 19, 2009
ওবামা-তোমাকে পারতেই হবে!
ওবামাকে নিয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের যে আবেগ ভোটের দিন থেকেই দেখেছি-তা নিয়েই শুধু উপন্যাস লেখা যায়। অশেতাঙ্গদের উদ্দীপনাও কিছু কম ছিল না। আমার মনে আছে আমি ভোটার কেন্দ্রের কাছে ক্যামেরা নিয়ে ঘোরাফেরা করছিলাম-একটি কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী আমায় জিজ্ঞেস করেছিল-আপনি ভোটটা দিয়েছেন কি?? ভোট আজ দিতেই হবে। কারন পালাবদলের দিন তারা সবাই মিলে চাইছে।
ওবামা এখন পারসোনালিটি কাল্ট। স্ট্যালিন, হিটলারের মতন। সর্বত্র "বাচ্চাদের জন্যে ছবিতে ওবামা" বিক্রী হচ্ছে। আমার স্ত্রী থেকে কলীগ-সবাই মেসমেরাইজড। হিপনোটাইজ়ড। পারফেক্ট কথা বলেন। আমি অবশ্য চালুনি-খুঁত ধরাই আমার স্বভাব। ২+২=৪ অনেক ক্ষেত্রেই হয় নি বলে-আমি সংশয়বাদি। তবে আমেরিকাতে একটা পরিবর্তন আসবে-সদার্থক রাজনৈতিক পরিবর্তন আমরা দেখবো। ইনসুরান্সের জোঁকেরা আমাদের রক্ত চুষে খাবে না। এটুকু আশা করাই যায়। এইত সেদিন দুটো দাঁতের রুট ক্যানেল প্লাস ক্যাপিং করাতে হল। যেটা দাঁত বাঁচাতে নুন্যতম দরকার। আমার দাঁত প্রতি খরচ পড়ল চার হাজার ডলার। চার হাজ়ার ডলার খরচ করে যদি দাঁতের বেসিক ট্রিটমেন্ট করতে হয়-যা আমাদের ভারতে লাগে মোটে পাঁচশো ডলারের কাছাকাছি-তাহলে সাধারন মানুষ কোথায় যাবে? আমেরিকাতে যেদিকে তাকাই-সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির ডাকাতগুলো বসে আছে। ইন্সুয়ারান্স গুলো সবথেকে বড় ডাকাত। এরপর, ক্রেডিট কার্ড থেকে ক্রেডিট এজেন্সির চোরগুলোত আছেই। আপনি কোন ক্রেডিট ডীফল্ট না করলেও ভুয়ো সংস্থা আপনার বিরুদ্ধে ক্রডিট রিপোর্ট ধ্বংস করবে-যাতে টাইম টু টাইম আপনাকে ক্রডিট রিপোর্ট ৪০ ডলার দিয়ে চেক করতে হয়। কারা এসব করে? এর পেছনে কর্পরেট আমেরিকার হাত নেই? এটর্নী জেনারেলদের কাছে এসব ব্যাপারে চিঠি পাঠালে-উত্তর আসে-আমরা দেখছি। সব চোরের দল মিলে লুটেপুটে খাচ্ছে মধ্যবিত্তের পকেট। আপনারাই দেখলেন কিভাবে তেলের দাম ১৫০ ডলার ব্যারেল উঠে গেল! কেন? ফিউচার ট্রেডিং! নিউয়ার্কের স্টক এক্সচেঞ্জ পন্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রন করে। সেইসব পন্য যা ছাড়া মানুষ বাঁচে না। তবুও আমেরিকাতে কোন আন্দোলন নেই। আন্দোলন কিভাবে করতে হয় সেটাই এরা ভুলে গিয়েছিল। ওবামা কিছুটা হলেও এই ক্ষোভটাকে পরিবর্তনের আন্দোলনের রূপান্তরিত করেছেন।
আমিও সত্যিই জানি না কি ভাবে এই পরিবর্তন হবে। যারা এই সব ফটকাবাজি করে-তাদের অনেকেই ওবামা ক্যাম্পেইনে টাকা ঢেলেছেন। এইসব ফাটকাবাজদের কয়েকজনকে আমি ব্যাক্তিগত ভাবেই চিনি-এরা ভারতীয় এবং প্রাইভেট জেটেই চলাফেরা করেন। এবং এদের কোম্পানীতে "ক্লিনটন" নাম কনসাল্টিং এডভাইজার হিসাবেই দেখি। বলতে লজ্জা হয়-এরা সবাই আমার স্কুলের (আই আই টি) প্রাত্তন এবং নিজেদের নামে বিরাট বিরাট টাকায় জাতীয় ইন্সটিউট খুলেছেন ভারতে এবং এখানে। চুরির টাকায়, ডাকাতির টাকায় বিরাট বিরাট নাম এরা! এখানে হাজারটা ক্লাশ একশন ল্য স্যুট করেও এদের টিকি ছোঁয়া যায় না! কারন এরা " ক্যাপিটল হিলের বিশেষ অতিথি"।
ওবামা কি পারবেন এই নেক্সাস ভাঙতে? মন মানতে চাই না। হৃদয় চাইছে। একদিনের জন্যেও অন্তত একটা সলিড পলিটিশিয়ান দেখি-যিনি কিছুটা হলেও আমাদের ছেলে মেয়েদের জন্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখে যেতে পারবেন। আমরা ত মধ্যবিত্ত-গলতেই থাকি-তবুও আলোটাই জ্বলে থাকুক আজ।
Sunday, January 4, 2009
বাঙালী না ভারতীয়? বাঙালী না মুসলমান?
(১)
আমার ” বাংলাদেশ নির্বাচন নিয়ে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া ভিডীওটি” নিয়ে পশ্চিম বঙ্গের ফোরামগুলিতে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কারুর ভালো লাগবে-কারুর লাগবে না-সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিতর্কের মূলসূরটা অবশ্যই এই-বাঙালী অস্তিত্বটা তাহলে কি? আসলে ব্যার্থ রাজনীতির জাঁতাকলে দুই বাংলার অস্তিত্বেই এখন নাভিশ্বাস। জীবিকা নির্বাহের জন্যে বাধ্য হয়েই সবাই দেশের বাইরে। অথচ আমাদের সমস্যাটাকেও আমরা স্বীকার করতে চাইছি না। এমনকি আজকাল এপার বাংলা, ওপার বাংলা বলতেও ভয় হয়। পাছে ওদিকের ইসলামিস্টরা বলেন “ওসব আগে ছিল-এখন এটা বাংলাদেশ”। আর আমাদের দিকের নব্য হিন্দুত্ববাদিরা বলবেন বাংলাদেশীরা বাঙালী হল কবে? আসলে এরা একই মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ। মুদ্রার নাম ঘৃণা, অজ্ঞতা এবং আত্মবিস্মৃতি।
(২)
আগে ভারতীয় পরে বাঙালী-এটা আমাদের দিকের অনেকেই বলেন। এটা বাস্তবেও ঠিক না। সংবিধানের দিক দিয়েও ঠিক না। কারন আমি দেখি নাই বাঙালীদের [যারা প্রবাসী নয়] অবাঙালী বন্ধু সার্কল থাকে বলে। দু একজন থাকে। অস্তিত্বের যেখানে ৯০% বাঙালী-সেখানে আমি প্রথমে বাঙালী না-এটা অস্বীকার করাই প্রথম বোকামি। আর ভারতীয় বলে আলাদা কিছু সংবিধানে নেই। প্রথমেই বলা হয়েছে প্রতিটি জাতিসত্ত্বা তাদের সংস্কৃতির আলাদা বিকাশ করবে। তাদের ওপর অন্য কোন সংস্কৃতি রাষ্ট্র চাপাবে না। বাজেটে বাংলা ভাষার জন্যে পশ্চিম বঙ্গের বরাদ্দ বাংলাদেশের দেখে বেশী-৫০০ কোটি টাকা বছরে-যার জন্যে আমাদের এদিকের সরকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ভাল বাংলা সিনেমা স্পনসর করে। তনভীর মোকাম্মেল এই জন্যে আমার কাছে আক্ষেপ করেছিলেন। আসলে আমাদের রাজ্যের অবস্থা এমন খারাপ-আমাদের দিকের বাঙালীরা নিজের জাতিসত্ত্বায় লজ্জা পায়। এটা কোন তামিল বা তেলেগুদের মধ্যে দেখিনি। ওরা ২০ কোটি টাকা দিয়ে তেলেগু সিনেমা করেও টাকা তুলে নিচ্ছে-আমরা ৫ কোটি টাকার সিনেমা করার ও মুরোদ রাখি না। অথচ আমরা সংখ্যায় অনেক বেশী।
এই বাঙালী সত্ত্বাটা আমাদের মধ্যে হারিতে গিয়ে গোলমাল হয়ে গেছে। আমি আই আইটিতে দশ বছর ছিলাম। কোন দিন দেখিনি বাঙালী ছেলেরা অবাঙালীদের সাথে একসাথে থাকে বলে। দশ বছরে অন্তত ৯ টা উইং যে থেকেছি (উইং মানে ১০ টা ঘর নিয়ে একটা উইং হয়)। সেখানে বাংলাদেশী পেলেও অবাঙালী পাওয়া দুষ্কর। তাই বাঙালী সত্ত্বা ছাড়া যেখানে আমরা বাঁচতে পারি না-সেখানে বাঙালী সত্ত্বাকে অস্বীকার করার যে প্রবনতা দেখছি-সেটাই এদের ভুল পথের যাত্রী করেছে। এমন কি এই আমেরিকাতে বাঙালীদের মন্দির ও আলাদা-এরা শুধু কালী বাড়ি আর দুর্গাবাড়ি যায়-সেখানে শুধু বাঙালীরা আসে। অবাঙালী মন্দিরে এরা যায় না। দুর্গাবাড়ি গুলো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হওয়াতে-সেখানে দুচারটে মুসলমান ও পাওয়া যায়-কিন্তু অবাঙালী পাওয়া যাবে না। এসব দেখার পরেও লোকের চক্ষুদোয় হয় না। এসব যারা করে-তাদের এই কথা স্মরণ করালে বলবে আমি আঞ্চলিকতাবাদ প্রাধান্য দিচ্ছি-অথচ এরাই ভারতীয় ফোরামের থেকে বাংলার ফোরামেই আড্ডা মারে সারাক্ষন। কারনটা স্বাভাবিক-প্রাণের যোগ যাদের সাথে, তাদের সাথেই সবাই সময় কাটাতে ভালোবাসে। কিন্তু সেটা বললেই লোকে বলবে আঞ্চলিকতার দোষে দুস্ট!
(৩)
এটা বাঙালী মুসলমানদের জন্যেও সত্যি। মুসলমান বলে যে সত্ত্বা-তার ত কোন নির্মান নেই-সেটা শুধুই কাল্পনিক শত্রুর সাথে শুন্যে গদাযুদ্ধ। তাই বাঙালী মসজিদ ছাড়া তারা অন্য মসজিদে যেতে পারে না আমেরিকাতে। সে খাচ্ছে বাংলা, বলছে বাংলা, গান শুনছে বাংলা, প্রেম করছে বাংলা-আর আরবী ভাষায় দুটো লাইন মুখস্ত পড়লেই, মুসলমান হয়ে গেল! যা আরবী সংস্কৃতি ছাড়া কিছু নয়। লাখে লাখে বোরখা আমদানি করে, দাঁড়ির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে কি আরবী (পড়ুন মুসলমান) হওয়া যায়? এই কৃত্রিম “সত্ত্বার” বিরুদ্ধেই আমাদের বলে যেতে হবে। আমি আগেই বলেছি-হিন্দুত্ব কোন সত্ত্বাই নয়। কারন হিন্দুধর্মে সত্যের সন্ধান করতে বলে। তাতে কি কোন নৃতাত্ত্বিক সত্ত্বা তৈরী হয়? তেমনই মুসলমান শব্দটাও কোরানে নেই। আধ্যাত্মিক ইসলাম কি আরবী হতে বলে? জালালুদ্দিন রুমি কিন্তু অনেক দিন আগেই বলে গেছেন-আমি মুসলমান, খৃষ্ঠান, ইহুদি নই-আমি আল্লার পথে সত্যের, সৌন্দর্য্যের সন্ধান করি। সুফিদের সাথে বৈষ্ণব ধর্মের কোন পার্থক্য নেই। ধর্মের নীতিমালা, আচার বিচার মেনে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় একথা সুফীরা বলেন নি-তারা পরিস্কার ভাবেই বলেছেন ধর্মের ওপরে উঠতে পারলে-তবেই উচ্চতর উপলদ্ধির জগত পাওয়া সম্ভব। সেই আন্দোলনের পথে ধরেই আমরা দেখবো রবীন্দ্রনাথ, লালন ফকির এবং নজরুল ইসলাম “সবার ওপর মানুষ সত্যের” পথে অখন্ড বাঙালী জাতিসত্ত্বার স্বপ্ন দেখেছেন। তার কি কোন মূল্য নেই? কোন এক আদবানী বা কোন এক নিজামীর জন্যে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন আমরা বর্জন করবো? তাহলে আমাদের থাকবে কি?
ধর্ম দিয়ে যে সত্ত্বা তৈরী হয়-তার বাস্তব অস্তিত্ব নেই বলে-সেই অস্তিত্ব তৈরী করে রাজনীতি-বোঝায় আমাদের ওপর ওরা অত্যাচার করছে। এই ধার্মিক সত্তার নির্মান কৃত্রিম-এবং এর ধারক ও বাহক হচ্ছে রাজনীতিবিদরা। ভারতে বিজেপির রাজনৈতিক বক্তব্যে হিন্দুধর্মটা কি সেটা নিয়ে কোন আলোচনা দেখি না। শুধু চারিদিকে কলরব-বাংলাদেশ থেকে পাকিস্থানে হিন্দুরা বিপন্ন। জামাত থেকে ইসলামিক পার্টিগুলির ও একটাই রা-ইসলাম বিপন্ন! হিন্দুত্ববাদি আর ইসলামিস্টদের কথা বার্ত্তা, ক্যাডারদের ভাবধারা সব এক-হুবহু। অর্থাৎ যে অস্তিত্ব নেই-সেই অস্তিত্বকে জোর করে ঢোকানো হচ্ছে বাঙালীদের মনে। কারন বাঙালী সেন রাজাদের আমলেও হিন্দুত্ব চাপানোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে, পাকিস্থানে ইসলামি শাসন চালানোর বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে। বাঙালী প্রতিবাদি জাতি। আমাদের মনের গান আর প্রাণের আবেগের সাথে ওয়াহাবি ইসলাম বা উগ্র হিন্দুত্ব কোনদিনই খাপ খেতে পারে না।
একটা কথা মনে রাখবেন-যে বাঙালী আজ হিন্দু-কাল মুসলমান হতে পারে। উলটোটাও হতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই একটা বাঙালী অবাঙালী হতে পারে না। কারন বাঙালী অস্তিস্ত্ব তার ভাষার স্বাস প্রশ্বাসে।
(৪)
অথচ ঘরের সামনেই আমাদের উদাহরন ছিল। আজ ভারতে তামিল, তেলেগু আর কন্নররা এগিয়ে গেল। ওরা কি ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চেয়েছে? না কোন দিন ই চাই নি। অথচ তামিল নাডুতে ১৯৬০ সাল থেকেই সি এন আন্নাদুড়াই এর নেতৃত্বে তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের শুরু। এরা ছিল নাস্তিক-এবং এই আন্দোলন ছিল সর্বত ভাবে ধর্ম নিরেপেক্ষ আন্দোলন। ওদের আদর্শও ছিল কংগ্রেস বা বামপন্থি বা হিন্দুত্ববাদিদের থেকে অনেক আধুনিক। ফলে আজ তামিলনাড়ু একটি সফল রাজ্য। একজন তামিল চাইলে মাদ্রাসে ফিরতে পারে-অনেক চাকরী- অনেক সুবিধা। আর আমাদের মাদ্রাসে যেতে হয়। চিকিৎসার জন্যে বা চাকরির জন্যে। দ্রাভির জাতিয়তাবাদি আন্দোলনের পথেই তেলেগু দেশম এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশে। আজ হায়দ্রাবাদ ভারতের আধুনিকতম শহর। আই এ এস বা আই আই টি তে এখন তেলেগু ছাত্ররাই বেশী সফল। আবার তেলেগু সিনেমা হিন্দি সিনেমার সমান বাজেটে তৈরী হয়। আমাদের সিনেমা শিল্প ধুঁকছে। জাপান থেকে তামিল এবং তেলেগুদের দেখে, আমি নিশ্চিত-কোন নৃতাত্ত্বিক জাতি সত্ত্বা যদি নিজেদের অতীত নিয়ে আত্মবৃষ্মৃত হয়-তাহলে ভবিষ্যতের আধুনিকতাও তারা গ্রহন করতে পারে না। কোন সন্দেহ নেই তেলেগু বা তামিলরা জাতি হিসাবে যতটা এগোল-আমরা পেছলাম। ওরা কিন্তু ভাষা ভিত্তিক জাতিয়তাবাদের পথে হেঁটেই একটা বাঙ্গালোর, একটা হায়দ্রাবাদ, একটা মাদ্রাস ভারতকে উপহার দিয়েছে। আমরা শুধু দিয়েছি বন্ধ্য্যা সংস্কৃতির একরাশ লজ্জা-কিছু না বুঝেই কতগুলো রাশিয়ান ইতিহাসকে আঁকড়ে ধরার চেস্টা। অথচ তামিল জাতিয়তাবাদও প্রথমের দিকে কম্যুনিউস্ট আন্দোলন দ্বারা ভালো ভাবেই প্রভাবিত ছিল। তামিল জাতিয়তাবাদি আন্দোলন কিন্তু মার্ক্সবাদ-লেনিনিজমের ভালদিক গুলিই নিয়েছে। ব্যার্থতার দিকটা বর্জন করেছে। আর আমরা বাঙালীরা সেটাকে আত্মকরনের বদলে লাল শালুমোড়া নারায়ণ শীলা ভেবে পুজো করে চলেছি। গোটা পৃথিবী বদলাবে। আমাদের দিকের কমিনিউস্টরা লেনিন-স্টালিনকে পুজো দিতেই থাকবেন। এক অদ্ভুত সেলফ ডিনায়ালে ভোগে বাম-বাঙালী।
আজ বাঙালী জাতিয়তাবাদি শক্তি পশ্চিম বঙ্গে থাকলে মমতার আত্মঘাতি আন্দোলন সম্ভব হত না। বুদ্ধদেব প্রকাশ কারাতের ক্রীতদাসত্ব স্বীকার করে পশ্চিম বঙ্গের ক্ষতি করতে পারতেন না। দিল্লীর মুখ চেয়ে কংগ্রেসী নেতাদের বসে থাকতে হত না। আমাদের এই দুরাবস্থা অন্ধ্রে বা তামিলনাডুতে হবে না। নরেন মোদির মতন হিন্দুত্ববাদিও হিন্দুত্বের আলখাল্লা ছেড়ে গুজরাটি জাতিয়তাবাদের দিকেই হাঁটছেন। তাই গুজরাটের উন্নতির জন্যে মন্দির ভাঙতেও পিছপা হচ্ছেন না। আর আমাদের হিন্দুত্ববাদিরা সেই এক অস্তিত্বহীন হিন্দুত্ব সত্ত্বার পূজোই বিভোর।
অথচ তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকেই এটা শেখা যেত। আমি তেলেগুদের অনেক অনুষ্ঠানে গেছি আমেরিকাতে। সবাই তেলেগু হিসাবে গর্বিত-রাজ্যের জন্যে কিছু না কিছু করছেন। ওদের কেও আঞ্চলিকতাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। আমরা তুলি। এবং তারপরে হায়দ্রাবাদের চাকরির সন্ধানে যেতে হয়। তারপর সেখানে থেকে “প্রবাসী বাঙালী” তকমা চাপিয়ে দুর্গাপুজো কমিটিতে দলাদলি করে বাঙালী অস্তিত্বের ভজন-আরাধন।
আসলে “বুদ্ধিজীবির ভাং” বাঙালীর সবথেকে বড় রোগ। যা তাকে সম্পূর্ণ অন্ধ করেছে। ফলে আজ় সে আত্মঘাতি।
(৫)
বাংলাদেশেও যারা বাঙালী সত্ত্বা ছেড়ে ইসলাম বা বাংলাদেশ সত্ত্বায় আশ্রয় খুঁজছেন-তাদের জন্যেও একই কথা বলা যায়। অথচ বাঙালী এবং বাংলাদেশী সত্ত্বায় কোন সংঘর্ষ থাকাই উচিত না। কারন একটা জাতির জন্মই হল বাঙালী সত্ত্বার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু হচ্ছে-কারন বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ফরেদাররা বাংলাদেশী সত্ত্বার সাথে কয়েক মন ওজনের ইসলামকেও জুরে দিয়েছেন রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে। তা বাঙালী হতে পারে না। যেমন আমরা এদিকে লোকজনকে কোন ধর্মীয় সম্বোধন করি না। ঈশ্বর মঙ্গল করুন-এসব কথাবার্ত্তা পশ্চিম বঙ্গে আর শুনতে পাবেন না। অথচ বাংলাদেশে খোদা হাফেজ, আল্লা হাফেজ, সেলাম আলেকুম সর্বত্র শুনবেন। টিভি থেকে মাঠে ঘাটে। এগুলো আসলে ইসলামের নামে আরবী হনুকরনের অপপ্রচেষ্ঠা। এভাবে ইসলামের আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকেও ছোঁয়া যায় না-শুধু নিজেকে আত্মপ্রতারিত করা হয়। এটা নিছক ধর্মীয় পরিচয়ের সংকট ছাড়া কিছু নয়। অথচ কেমন আছেন? ভাল আছেন? ভাল থাকুন বলেই আরো অনেক ভাল ভাবে এই কাজ চালানো যায়। আলেকুম সেলামের বদলে “ভাল আছেন?” এরা বলেন না-আসলে সেই নিজের বাঙালী সত্ত্বায় লজ্জা পাওয়া-ইসলামের সত্ত্বায় গৌরব বোধ করে। এটা না তার নিজের জন্যে ভাল-না ভাল বাংলাদেশের জন্যে।
(৬)
যারা মনে করেন বিবর্তনের পথে সবই উড়ে যাবে বা আসল সমস্যা শ্রেনীদ্বন্দে-তাদের জন্যে দুটো কথা বলি। শ্রেনীর আসলেই কি কোন অস্তিত্ব আছে? আমার হাউসমেড মাসে দুবার মার্সডিজে চেপে ঘর পরিস্কার করতে আসে। আমাদের পোষাকি ভাষায় সে ‘ঝি‘। সে কি প্রলেতারিয়েত? প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই ধরনের শ্রেনী বিভাজ়ন আরো ধোঁয়াশার মধ্যে পড়বে। কারন কায়িক শ্রম, ক্রমশ যন্ত্রের দ্বারাই সাধিত হবে। কিন্তু ভাষাটা বাস্তব। কমরেডরা ভাবুন-ভাষা না শ্রেনী? কোনটার বাস্তব অস্তিত্ব বেশী? আর ভাষাত শুধু ভাষা নয়-ভাষার পেছনে থাকে আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস। প্রলেতারিয়েত যন্ত্রের সাথে বদলিয়ে বুর্জোয়া হবে-কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে বাঙালী কি অবাঙালী হবে?
যেদিক দিয়েই দেখি না কেন-আমাদের এই বাঙালী সত্ত্বা, এই নৃতাত্ত্বিক পরিচয় বাদে সমস্ত কিছু আদর্শবাদ-হিন্দুত্ব, ভারতীয়ত্ব, ইসলাম বা কমিনিউজমের চেয়ে অনেক বেশী বাস্তব। এবং দৃঢ়। একে অস্বীকার করে অন্য কিছু পাকামি করা মানে, আত্মঘাতের দিকে আরো এক পা অগ্রসর হওয়া।
আবার স্মরন করিয়ে দিই-
আজ যে কম্যুনিস্ট কাল সে ক্যাপিটালিস্ট হয়ে যেতে পারে। আকছার ই এমন হয়।
প্রলেতারিয়েত ও বুর্জোয়া হয়। আস্তিক নাস্তিক হয়-নাস্তিক, ঈশ্বরে বিশ্বাস খুঁজে পায়। বাঙালীদের রাজনৈতিক বিশ্বাস বদলায়। ধর্ম বদলায়। দেশ বদলায়। আজকের ভারতীয় বাংলাদেশী পাসপোর্ট কালকে আমেরিকান পাশপোর্ট হতে পারে।
কিন্তু একজন বাঙালী– বাঙালী সত্ত্বা বদলিয়ে অবাঙালী হয় না।কারন এই সত্ত্বা দেশ কাল আদর্শে বন্দী না। এই সত্ত্বা আমাদের প্রতিটা নিশ্বাসে। আমরা যে কোনদিনই অবাঙালী হতে পারবো না-শুধু এটুকু বুঝলেই-এইসব আটভাটের চেয়ে আমাদের জীবনে বাঙালী সত্ত্বার গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী-এবং সেই পথেই আমাদের ভবিষ্যত-এটা হয়ত অনেক সহজ হত বোঝা। এটাকে যত আমরা অস্বীকার করব-তত নীচে নেমে যাব।